ঝালকাঠির নলছিটিতে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার ৯ জন

    0
    272

    বরগুনা,ঝালকাঠি,১৬ আগস্ট : ঝালকাঠির নলছিটিতে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার হয়েছেন নয়জন।এই নয়জন নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সদস্য বলে পুলিশ সন্দেহ করছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে, এঁরা সবাই জঙ্গি সংগঠন তাআমীর উদ-দীন বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত। নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের হুজির সাবেক চিফ  কমান্ডার (সামরিক শাখার প্রধান) মুফতি আবদুর রউফ তাঁদের নেতা।মুফতি রউফ নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে হুজি থেকে বেরিয়ে গড়ে তোলেন আরেক জঙ্গি সংগঠন তাআমীর উদ-দীন বাংলাদেশ।

    তিনি ২০০৬ সালে গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে আছেন। সংগঠনটি আবার সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে ঢাকায় একাধিক গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে।পুলিশ জানিয়েছে, গত বুধবার রাতে নলছিটি উপজেলার কামদেবপুরের খাদেমুল ইসলাম কওমি মাদ্রাসার মসজিদে অভিযান চালিয়ে নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় একটি গ্রেনেড, চারটি রামদা, কয়েকটি পুস্তিকা, কম্পিউটার কম্পোজ করা সাংগঠনিক নির্দেশিকা ও আটটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়।ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিদুল ইসলাম জানান, উদ্ধার করা গ্রেনেডটি অকেজো মনে হচ্ছে।

    মরচে পড়ায় গ্রেনেডটি কোন দেশের তৈরি, তা পড়া যাচ্ছে না। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার সরমঙ্গল গ্রামের আবুল বাসার মৃধা (৪০), পূর্ব সরমঙ্গল গ্রামের মিনহাজুল আবেদীন (১৯), মজুমদারকান্দি গ্রামের আবদুল আজিজ (২৮), গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার জাকোর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম (৪৩), ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার নাচনমহল গ্রামের মশিউর রহমান (৩২), মালুহার গ্রামের নুরুল ইসলাম (২৫), বাকিবিল্লাহ (২০), হারদল গ্রামের সোহাগ হাওলাদার (৩২) ও কাঠালিয়া উপজেলার আওরাবুনিয়া গ্রামের মো. জুবায়ের (২৫)।

    তাঁদের গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।এঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করা হয়েছে। দুই মামলায় নয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। আদালত ১৮ আগস্ট রিমান্ড শুনানির তারিখ ধার্য করেছেন। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা শুদ্ধভাবে কোরআন পড়ানোর নাম করে ওই মাদ্রাসার মসজিদে জঙ্গি প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিলেন। এঁদের মধ্যে দলনেতা মশিউর রহমান প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, কারাবন্দী জঙ্গিনেতা মুফতি আবদুর রউফের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে। কিছুদিন আগেও তিনি কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে মুফতি রউফের সঙ্গে দেখা করেছেন। এ ছাড়া মশিউর প্রায়ই কারাগারের কারারক্ষীদের মুঠোফোনের মাধ্যমে কারাবন্দী রউফের সঙ্গে কথা বলেন।

    পুলিশের একটি সূত্র জানায়, কারাবন্দী মুফতি আবদুর রউফের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে গ্রেপ্তারকৃত মশিউর জঙ্গিদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছিলেন। প্রশিক্ষণকেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য নলছিটির মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলকে বেছে নেন তিনি। এ ছাড়া মশিউরের সঙ্গে জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) নেতা তালহার যোগাযোগ ছিল। এর আগে তাঁরা দুজন পার্বত্য চট্টগ্রামের গহিন অরণ্যে প্রশিক্ষণকেন্দ্র গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। মুফতি রউফের নেতৃত্বে তাআমীর উদ-দীন প্রতিষ্ঠার পর ভালুকার ওই মাদ্রাসাটি  ছিল প্রধান আস্তানা। এখানে বাংকার খনন করে সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো জঙ্গিদের।

    ২০০৬ সালের ২ আগস্ট এ মাদ্রাসায় র‌্যাব অভিযান চালিয়ে মুফতি রউফসহ ২৫ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার এবং বিপুল পরিমাণ প্রশিক্ষণসামগ্রী উদ্ধার করে। আফগানিস্তানে সোভিয়েতবিরোধী যুদ্ধে অংশ নেওয়া মুফতি রউফ এ দেশে হুজির প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটির চিফ কমান্ডার ছিলেন। পরে তিনি হুজি ছেড়ে তাআমীর উদ-দীন প্রতিষ্ঠা করেন। এসব তথ্য মশিউর জানেন বলে স্বীকার করেন। একই সঙ্গে দাবি করেন, রউফ গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাআমীর উদ-দীন ভেঙে গেছে। মাদারীপুরের টেকেরহাট মোড়ে অবস্থিত  তামীরুল কোরআন নামে নুরানি শিক্ষা বোর্ডের প্রধান সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়।

    সেই সূত্রে নলছিটির ওই মাদ্রাসায় নুরানি কোরআন শিক্ষার কর্মসূচি চালু করার জন্য চেষ্টা করছিলেন। সিরাজুল ইসলামও বুধবার রাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁর বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে। আর টেকেরহাটের অদূরে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার মজুমদারকান্দি গ্রামে মুফতি আবদুর রউফের বাড়ি। কামদেবপুর গ্রামের আবদুর রাজ্জাক বলেন, ঈদের ছুটির পর মাদ্রাসা এখনো চালু হয়নি।তাঁরা শুনেছেন সেখানে বাইরের কিছু লোক এসে কোরআনশরিফ পড়ানোর নুরানি প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তাই এলাকার মানুষ এ নিয়ে মাথা ঘামায়নি।