চীনের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন

    0
    455
    চীনের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আজ রোববার জাতির উদ্দেশে দেওয়া তাঁর প্রথম ভাষণে ‘রেনেসাঁর’ ডাক দিয়েছেন। তিনি চীনা জাতির মহাজাগরণকে সফল করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার অঙ্গীকারও করেন।
    বিবিসি জানায়, ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় গণসম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে শি জিনপিং পার্টির সভ্যদের অপচয় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুর্বার লড়াইয়ের আহ্বান জানান।
    এক সংবাদ সম্মেলনে চীনের নতুন প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং বলেন, স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধিই হবে নতুন সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসের মধ্য দিয়ে দলটির ১০ বছর মেয়াদি নেতৃত্বের দায়িত্বভার পুনর্বণ্টিত হলো।
    দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদে উজ্জীবিত হয়ে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তাঁর ভাষণে বলেন, ‘ব্যক্তির পরিশুদ্ধির মধ্য দিয়েই কেবল সৎ সরকার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।’ ভাষণে তিনি ইতিবাচক পররাষ্ট্রনীতির ওপর গুরুত্ব দেন।
    সেনাবাহিনীর উদ্দেশে শি জিনপিং বলেন, যুদ্ধে জয়লাভ ও জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য তাদের সত্যিকারের সামর্থ্য অর্জন করতে হবে। বর্তমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘চীনা স্বপ্ন’ পূরণে জাতিকে অবশ্যই অধ্যবসায়ী হতে হবে।
    আজ কংগ্রেসে প্রায় ২৫ মিনিটের ভাষণে জিনপিং বলেন, দুর্নীতি কমিউনিস্ট পার্টির জন্য হুমকি। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট হু জিনতাওসহ সাবেক নেতাদের অসমাপ্ত কাজ চালিয়ে যাওয়া এবং দলের অতীত অর্জনসমূহ উদযাপনের ওপর জোর দেন নতুন প্রেসিডেন্ট।
    গত নভেম্বরে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার চীনের পার্লামেন্ট শি জিনপিংকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে।
    রয়টার্স জানায়, প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং তাঁর ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের অঙ্গীকার করেছেন। তিনি মনে করেন, দেশ দুটির উচিত পারস্পরিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও ইতিবাচক অবস্থান গ্রহণ করা।
    কেকিয়াং বলেন, নানাক্ষেত্রে ভিন্নমত থাকলেও বিশ্বের বৃহত্তম ও দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির এই দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক অর্থনৈতিক ভিন্নমতগুলো দূর করা উচিত। চীনের নতুন নেতৃত্ব সম্পর্ক জোরদারের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে যাতে দুই দেশের জনগণ মৌলিক স্বার্থের উন্নতি এবং বৈশ্বিক শান্তি ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।
    যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে গত বছর ৫০ হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়। যদিও যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে ওয়েবসাইট হ্যাকিং, নিজ দেশে বেইজিংয়ের বিনিয়োগে বিরোধিতাসহ নানা অভিযোগ তোলে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কোম্পানি ও সরকারি দপ্তরের ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ে চীনের সামরিক বাহিনীর হাত আছে—ওয়াশিংটনের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কেকিয়াং বলেন, ‘আমার মনে হয় পরস্পরের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ না তুলে সাইবার নিরাপত্তা বাড়ানোর ব্যাপারে কাজ করার দিকে আমাদের নজর দেওয়া উচিত।’
    প্রায় দুই ঘণ্টার এই সংবাদ সম্মেলনে কেকিয়াং নতুন নেতৃত্বের অর্থনৈতিক নীতি কেমন হবে, তা নিয়েও কথা বলেন। কেকিয়াং বলেন, ‘আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হবে টেকসই অর্থনীতির গতি ধরে রাখা।’ এ সময় তিনি অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সরকারি ক্ষেত্রে সংস্কার আনার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন দিক সংস্কারের পর নতুন নীতিগুলো সমন্বিত করা প্রয়োজন। এই সমন্বিত নীতিই হবে চীনের অর্থনীতির নতুন চালিকাশক্তি।
    কেকিয়াং বলেন, ‘সংস্কার আমাদের দেশের জন্য উদ্বেগেরও কারণ হতে পারে। কিন্তু আমাদের হাতে বিকল্প নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘চীনের এই সংস্কারনীতিতে পরিবেশ উন্নয়ন, খাদ্য ও পানির নিরাপত্তার বিষয়গুলোও যুক্ত হবে। এ ছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমানো, স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের দিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।’
    সংস্কারের বিষয়ে কেকিয়াংয়ের উদ্বেগের ব্যাপারে ব্যাংক অব আমেরিকার চীনবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ টিং লু বলেন, নতুন প্রধানমন্ত্রী ভালোই জানেন যে সংস্কারের ক্ষেত্রে মূল বাধা হলো এতে মতাদর্শের চেয়ে স্বার্থের বিষয়টি বেশি প্রাধান্য পাবে।
    গত নভেম্বরে চীনের ক্ষমতাসীন দল কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী পদে মনোনীত হন কেকিয়াং। গত শুক্রবার চীনের পার্লামেন্টে তা পাস হয়। china president