চলচ্চিত্র “নৃ”র ৮৫ ভাগ চিত্রায়ন শেষ

    0
    280

    আমার সিলেট  24 ডটকম,০৫নভেম্বরঃ চলতি মাসেই (নভেম্বর) শেষ হবে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র “নৃ” র চিত্রায়ন।  শুদ্ধতার অঙ্গিকার আর বিভেদ ছাপিয়ে মাখামাখি হওয়ার গল্প নিয়ে রাসেল আহমেদ রচিত ও পরিচালিত এই সিনেমা চিত্রায়নের  ৮৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে ইতিমধ্যে। বর্তমানে বরিশালের বিভিন্ন লোকেশনে বাকি অংশের কাজ চলছে। প্রযোজনা সংস্থা থিম থিয়েটার উইজার্ড ভ্যালীর পাঠানো এক ই-বার্তায় মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

    প্রথম দুদফায় (গত ফেব্রুয়ারি  ও মার্চে) মোট ২০ দিনে সিনেমার ইনডোরের অধিকাংশ কাজ শেষ করেছিলো নৃ ইউনিট। তাই এবারের বেশিরভাগ কাজই আউটডোর নির্ভর। গত ২৫ অক্টোবর বরিশালের বানারীপাড়ার নরোত্তমপুর গ্রামে এ দফার কাজ শুরু হয়। প্রথম দু দিন বৈরি আবহাওয়ায় বিঘিনত হয় কাজ। তৃতীয় দিনে বৃষ্টি কমলেও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। টানা ৬০ ঘন্টার হরতালে বিঘিœত হয় স্যুটিং। এ সময় পুলিশী হয়রানীরও স্বিকার হন “নৃ” ইউনিটের সদস্যরা। এসব বাঁধা পেরিয়েই বানারীপাড়াসহ বরিশাল মহানগরীর এপিফানী গির্জা, মহা-শ্মশান, নগর উপকণ্ঠের ঐতিহাসিক জলাধার দূর্গাসাগর এবং এর আশেপাশের এলাকায় কাজ হয়েছে। কিন্তু বেড়ে গেছে খরচ।

    এ নিয়ে আলাপকালে নির্মাতা রাসেল বলেন, ‘এ লটের স্যুটিংয়ের অধিকাংশই আউটডোর। আর কারিগরি দিকটাও অন্য দুলটের থেকে ভারি। তাই প্রতিদিনের প্রডাকশন খরচও প্রচুর। অথচ শুরুতেই পড়লাম বৈরি আবহাওয়ার খপ্পরে। আউটডোর প্রধান প্রডাকশন টানা দু’দিন তাঁকায়ে ছিল আকাশের দিকে। প্রবল অনিশ্চয়তা কাটিয়ে তিন নম্বর দিনে উঁকি দিল সূর্য। সাদা মেঘের ওড়াওড়ি দেখে দুই দিনের বিশাল অংকের প্রডাকশন লস ভুলে আমার মনটাও উড়তে লাগলো। কিন্তু আবার বাধাঁ, হরতাল। উপেক্ষা করে ত্যাঁদড়ের মত ঝাঁপ দিলাম স্যুটিংয়ে।

    রাসেল বলেন,  ঝাঁপ না দিয়ে আমার কোন উপায় ছিলো না। অলরেডি বাজেট ঝামেলায় পরে গেছি বিশাল ইউনিট নিয়ে। পরিশ্রম আরও বাড়িয়ে দিলাম আমরা। কিন্তু এবার বাঁধা আসতে লাগলো খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে। প্রশাসনের উচ্চপদে চাকুরীরত বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করে সাহায্য চাইলাম। রাজনৈতিক অস্থিরতায় তারাও খুব একটা কিছু করতে পারল না। পরে অবশ্য বরিশালের পুলিশ কমিশনারের নজরদারি আমাদের স্বস্তি দিয়েছে।রাসেল আরো বলেন, ‘অনেক বাফার টাইমের কারনে বড় সড় টাকার ঘাটতিতে পরলেও কাজের ব্যাপারে একটুও ছাড় দেয়া হয়নি। প্রায় দেড়শ জনের ইউনিটের প্রত্যেকে প্রচন্ড অমানুষিক পরিশ্রম করেছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।

    চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি বরিশালের রহমতপুরে নৃ র চিত্রায়ন শুরু হয়। প্রায় দেড়শো মিনিটের মত হবে এ চলচ্চিত্রের শরীর। চলচ্চিত্রের মুখ্য চরিত্র বিশুর ভূমিকায় অভিনয় করছে আট বছরের শিশু শিল্পী ইয়াসীন।  বরিশাল মহাশ্মশানের পুরানো দুই চাল দিলীপ কুমার পাল ও  রাঁধা বল্লভ শীল ছাড়াও এতে আরো আছেন তাসনুভা তামান্না, সিরাজুম মুনীর টিটু, সৈয়দ দুলাল, এস এম তুষার, দুখু সুমন, হ্যাভেন খান, জান্নাতুল বাকি আদর প্রমুখ।ওই চন্ডাল জুটির জীবন দর্শন ও ভাবনা নিয়ে অর্ধযুগ আগে শুরু হওয়া গবেষণার প্রেক্ষিতে প্রসূত এ চলচ্চিত্রে  বরিশালের মাধবপাশার ঐতিহাসিক জলাধার দূর্গাসাগরের প্রচলিত মিথ আর বাংলার সহজিয়া, দরদিয়া এবং মরমিয়া বোধও মাখামাখি হয়েছে। গণমানুষের কাছে এ চলচ্চিত্রের বার্তা পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে গত জুনে আয়োজিত মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে নির্মাতা দাবি করেছিলেন, বাবা-মা-দাদা-দাদী-মামা-চাচা-খালা-খালু-বন্ধু-বান্ধব-আরশী-পরশী-আন্ডা-বাচ্চাসহ পরিবারের সকলকে নিয়ে হলে গিয়ে বাদামভাজা চিবুতে চিবুতে নিশ্চিন্তে উপভোগ করার মত সিনেমা হবে নৃ।

    জানা গেছে, নৃ তৈরীর কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ারও উপক্রম হয়েছিলো বেশ কয়েকবার। মূলত চলচ্চিত্রের নির্মাতা ও উইজার্ড ভ্যালীর কর্ণধার রাসেল আহমেদের পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রির টাকায় শুরু হয়েছিলো এর কাজ। ছয় মাসের প্রস্তুতির পর ২০ দিনের সুট্যিংয়ের জন্য অর্থও ছিলো  নিতান্ত  অপ্রতুল। অর্থসংকটের দরূন গত এপ্রিলে স্যুটিং বন্ধ হয়ে যায়। এমন সময়ে উইজার্ড ভ্যালী’কে সাথে আর্থিক সহযোগিতা দিতে এগিয়ে আসেন সৌদি প্রবাসী ব্যবসায়ি ডা. আরিফুর রহমান। মূলত ফেসবুক পেইজের কল্যাণেই তার সাথে নৃ টিমের যোগাযোগ হয়। আর ‘  বরিশাইল্যাইজম তাকে এই টিমের পাশে এনে দেয়। সম্পূর্ণ বরিশালকেন্দ্রীক হওয়ার কারণেই চলচ্চিত্রটির পাশে দাঁড়াবার ইচ্ছা পোষণ করেন বরিশালের সন্তান  ডা. আরিফ।”নৃ”র  চিত্রায়নে তিনটি ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে। মূল চিত্রগ্রাহক- ড্যানিয়েল ড্যানি। সাথে অন্য দুই ক্যামেরা সঞ্চালক ঈয়ন ও দঈত আন্নাহাল। সিনেমার শিল্প নির্দেশক হিসাবে আছেন থিওফিলাস স্কট মিল্টন। শব্দগ্রহণ করছেন- এমআই সাইফ। পোষাক ও পরিচ্ছদ দেখেছেন শাহরিয়ার শাওন। এছাড়া সম্পাদনার দায়িত্বে আছেন- সামির আহমেদ।