ঘূর্ণিঝড় মহাসেন : দক্ষিণাঞ্চলে ২৩ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত

    0
    279

    ঘূর্ণিঝড় মহাসেন : দক্ষিণাঞ্চলে ২৩ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত
    ঘূর্ণিঝড় মহাসেন : দক্ষিণাঞ্চলে ২৩ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত
    বরিশাল, ১৫ মে : বরিশালের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি আঞ্চলিক কার্যালয় দক্ষিণাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় মহাসেন মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এলক্ষ্যে ২৩ হাজার ৭০ জন স্বেচ্ছাসেবক মাঠে প্রস্তুত রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় মহাসেন আঘাত হানলে উপকুলীয় অঞ্চলের জনসাধারণকে নিকটবর্তী সাইক্লোন সেন্টারে নিরাপদে আশ্রয় গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। আর এসব সাইক্লোন সেন্টারের মধ্যে ভোলায় রয়েছে ২০০ ৪৯ টি, বরগুনায় ৩২৪টি, বরিশালে ১৮০টি, মঠবাড়িয়ায় ৩৩টি, দশমিনায় ৩৬টি, গলাচিপায় ৬২টি ও শরণখোলায় ৭৪ টি। এসব সাইক্লোন সেন্টারে দুর্যোগকালীন সময়ে দুর্গতদের সব ধরনের সহায়তা দেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
    ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্র জানায়, দক্ষিণাঞ্চলের ৫টি জেলা অর্থাৎ ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুরের ১৭টি উপজেলার ১৩২টি ইউনিয়নে সিপিপির ৪৬১৪ জন সংকেত প্রচারণাকারী স্বেচ্ছাসেবক বিপদসংকেত প্রচার অব্যাহত রেখেছেন। পাশাপাশি উদ্ধার কাজ পরিচালনা, প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান, আশ্রয় কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ বিভাগসহ ৫টি বিভাগ করা হয়েছে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করার জন্য। আর প্রতি বিভাগে ৪৬১৪ জন করে মোট ২৩ হাজার ৭০ জন প্রশিক্ষিত ও যন্ত্রপাতি সম্মিলিত সিপিপির স্বেচ্ছাসেবকরা প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচীর সকল ওয়্যারলেস সেট চালু ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে এ সকল স্বেচ্ছাসেবকরা একযোগে কাজ করবে বলে সূত্র জানায়।
    এ ব্যাপারে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক মো: আব্দুর রশীদ আজ বুধবার বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় মহাসেন মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এলক্ষ্যে এ অঞ্চলের প্রত্যেক ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণ ও হালনাগাদ তথ্য সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হচ্ছে।
    বরিশাল আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র অবজারর্ভার মফিজুল ইসলাম জানান, আজ সকাল ৯টা থেকে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরিশাল, বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলায় ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি এসব এলাকার সমুদ্র ও নদ নদীতে সব ধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তিনি জানান, আজ রাত ১০টার দিকে ঘূর্র্ণিঝড় মহাসেনের প্রাথমিক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টার দিকে মহাসেন এ অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
    লঞ্চ চলাচল বন্ধ : ঘূর্ণিঝড় মহাসেন মোকাবেলায় বরিশালে সতর্ক বার্তা
    বরিশাল, ১৫ মে : বরিশালের অভ্যন্তরীণ সকল রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরে ৭নং বিপদ সংকেত দেখানোর পরিপেক্ষিতে এই ঘোষণা দেয়া হয়। আজ দুপুর ২টার পর থেকে বরিশালের অভ্যন্তরীণ ১৩টি রুটের প্রায় অর্ধশত লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বন্দর বিভাগ।
    বরিশাল বন্দর বিভাগের উপ-পরিচালক আবুল বাসার মজুমদার জানান, পরবর্তী নির্দেশনা ছাড়া অভ্যন্তরীণ রুটসহ ঢাকা-বরিশালগামী সর্বপ্রকার নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। একইভাবে সন্ধ্যার পর বরিশাল-ঢাকা রুটে চলাচলকারী সকল লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখার জন্য মালিক পক্ষকে নোটিশ দেয়া হয়েছে।
    এদিন দুপুরে বিআইডব্লিউটিএর নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে এ নোটিশ দেয়া হয়। যে কোন দুর্ঘটনা এড়াতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পাশাপাশি যে সকল নৌযান নদীর মধ্যে রয়েছে তাদেরকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে নোঙর করার নির্দেশ দিয়েছে। মাছ ধরার ট্রলার এবং ছোট নৌকা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা ছাড়া নদীতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মহাসেন এখন মংলা বন্দর থেকে ৮শ ৯৫ কিলোমিটার দূরবর্তী স্থানে দক্ষিণ, দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে।
    ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুত কমিটির বরিশাল আঞ্চলিক কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, বাতাসের গতিবেগ এখন ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার বেগে বইছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মহাসেন আঘাত হানবে উপকূলীয় অঞ্চলে।
    এদিকে খেপুপাড়া রাডার স্টেশন থেকে জানা গেছে, সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায় এখন সাত নম্বর হুসিয়ারী সংকেত বলবৎ আছে। সমুদ্র উত্তাল বলে পনের জাহার জেলেকে নিরাপদ স্থানে অবস্থান নেয়ার জন্য মাইকিং হচ্ছে।
    সকালে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক অমিতাভ সরকার জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে ১১০টি মেডিকেল টিম, গবাদি পশু রক্ষার্থে ৪৮টি মাটির কেল্লা, ৩৬০টি সাইক্লোন শেল্টার ব্যবহারের উপযোগী করা হয়েছে। এছাড়াও জেলাসহ উপজেলা ও ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে সোচ্ছার এবং এদের অধীনে স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য। এদিকে সাগর মোহনা গলাচিপাতে বইছে আতঙ্ক। এখানে গলাচিপা পোল্ডার যেটি গলাচিপা পৌরসভা এবং চারটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই বাঁধ স্থানীয়দের জবর দখলে থাকায় এখন হুমকীর মুখে। এই গলাচিপা ছাড়াও বরিশাল বিভাগের শরণখোলা, মঠবাড়িয়া, দশমিনা ও বাউফল চিহ্নিত করা হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে। তবে পটুয়াখালীর স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে সত্তরের জ্বলোচ্ছাস থেকে সিডর, আয়লা, নার্গিস মোকাবেলা করায় এসব বিষয় নিয়ে তাদের তেমন ভীতি নেই। তাদের জীবনযাত্রা অন্য পাঁচটা দিনের ন্যায় স্বাভাবিক আছে।