গ্রামীন ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত থাকবেঃবেগম খালেদা জিয়া

    0
    214

    আমারসিলেট24ডটকম,১৫জানুয়ারীঃ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আলোচনাই সব সমাধানের পথ। আমরা কোন সময়ই সংলাপের বিপক্ষে ছিলাম না। এখনও আমরা নির্দলীয় সরকারের অধীনে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন নিয়ে সংলাপে বসতে আগ্রহী। আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে ওয়েস্টিন হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তিনি । গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর এটাই খালেদা জিয়ার প্রথম সংবাদ সম্মেলন। এ সময় তিনি আগামী ১৮ জানুয়ারি শনিবার সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মদিন পালন ও ২৯ জানুয়ারি বুধবার সারাদেশে বিক্ষোভ দিবস ও শান্তিপূর্ণ কালো পতাকা মিছিল করবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। আর ২০ জানুয়ারি সোমবার রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কেন্দ্রীয় সমাবেশসহ সারাদেশে গণসমাবেশ করবে তারা। এ সময়ের মধ্যে তিনি দেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চল সফর করবেন বলেও জানান তিনি।
    আজ বিকেলে বেগম খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের আগে গত ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের ভোটের চিত্র নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র সাংবাদিকদের দেখানো হয়। ৪৫ মিনিট স্থায়ী এই তথ্যচিত্রে ভোটকেন্দ্রের ভোটারশূন্য অবস্থা, প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারসহ স্থানীয় জনসাধারণের বক্তব্য রয়েছে। পরে সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্যচিত্রের একটি সিডিও দেয়া হয়। এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি ঢাকায় অবস্থানরত কূটনীতিকদের এই প্রামাণ্যচিত্রটি দেখানো হয়েছিল। প্রামাণ্যচিত্র উপস্থাপনের আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান বলেন, গত ৫ জানুয়ারি প্রহসনের যে নির্বাচন হয়ে গেছে, যাতে ভোট দিতে মানুষজন যায়নি, এটি তারই প্রমাণ।
    সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেন, সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের ওপর এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, এর জন্য বিরোধীদলকে দায়ী করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। নিরপরাধ নেতাদের ওপর অত্যাচার বাড়ানো হয়েছে। অথচ সংবাদ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি এ ঘটনার সঙ্গে শাসকদলের লোকজনই জড়িত। এ সময় তিনি বলেন, গত ৫ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনে গণতন্ত্রের হত্যাকারী এ সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ নীরব প্রতিবাদ জানিয়েছে। তিনি বলেন, সমঝোতার জন্য আমরা তাদের বারবার আহ্বান জানিয়েছি। রাজনৈতিক বৈচিত্র্যের মধ্য দিয়েই জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার কথা বলেছি। কিন্তু তারা সে আহ্বানে সাড়া দেননি। আমরা তাদের আবারও সমঝোতার আহ্বান জানাচ্ছি।
    বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, তারা কারসাজির মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এ প্রহসনকে গণতন্ত্রকামী মানুষ মেনে নেয়নি। ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনে কেবল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দল নয়, মহাজোটের বাইরে অন্য কোনো দলই যোগ দেয়নি।  ভোটাররাও ভোটকেন্দ্রে যাননি। সারাদেশে গড়ে পাঁচ শতাংশ ভোটও পড়েনি। অথচ সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পড়ার ঘোষণা দিয়েছে। এভাবে প্রতারণা করে, সন্ত্রাস করে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে তারা বেশিদিন গায়ের জোড়ে ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। এখন তাদের আচরণ ও ভাষা অরাজনৈতিক, অশালীন ও বেসামাল হয়ে পড়েছে। তারা রাজনীতিকে কলুষিত করে ফেলেছে।
    ১৮ দলীয় জোট নেতা বলেন, নির্বাচনের নামে ৫ জানুয়ারির প্রহসন প্রমাণ করেছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি কতটা যৌক্তিক ছিল। প্রমাণ হয়েছে, দলীয় সরকারের অধীনে ভোট সুষ্ঠু হতে পারে না। প্রমাণ হয়েছে, কারসাজির এ প্রহসনের নির্বাচন দেশে বিদেশে গ্রহণযোগ্য নয়। দেশের মানুষ প্রমাণ করেছে, তারা এ সরকার চায় না। তারা তাদের পছন্দের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করতে চান।
    সাবেক প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, আমরা সহিংসতা ও হানাহানিতে বিশ্বাস করি না। আমরা গণতান্ত্রিক ধারায় রাজনীতি করতে চাই। সে পথ বন্ধ করলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তার দায় যারা বাধা দেয় তাদের। আমাদের আন্দোলন ক্ষমতার জন্য নয়। এ আন্দোলন গণতন্ত্রের জন্য, মৌলিক অধিকার ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য। আমাদের বিজয় অনিবার্য। এটা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
    বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ১৫৩ আসনে তারা কোনো নির্বাচনই করতে পারেনি। বাকি আসনগুলোতে জঘন্য কারসাজি ও জালিয়াতি করেছে। এটা গায়ের জোড়ে এক অবৈধ সরকার। এটাই আমাদের আন্দোলনের এক বিরাট সাফল্য। নির্বাচনের নামে তামাশার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ৫ জানুয়ারি ২২ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। গত পাঁচ বছরে প্রায় ২২ হাজার মানুষকে খুন করা হয়েছে। গুম করা হয়েছে কয়েকশ রাজনৈতিক নেতাকে। যৌথ বাহিনীর নামে শাসক গোষ্ঠীর সন্ত্রাসী বাহিনী নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা চালাচ্ছে। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ এভাবেই মানুষের ওপর হামলা করেছে। জনগণের সব অধিকার কেড়ে নিয়ে একদলীয় শাসন কায়েম করেছে। এবার তারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে বিরোধী দলীয় নেতাকে কোনো কারণ ছাড়াই গৃহবন্দি করেছে।
    খালেদা জিয়া বলেন, তারা সরকারে গেলে বেশ কিছু পদক্ষেপ হাতে নেবেন। পদক্ষেপগুলো হলো- সবার অংশগ্রহণে অবাধ ও শন্তিপূর্ণ পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা কঠোরভাবে দমন করা হবে, মেধা ও যোগ্যতাই হবে মূল্যায়নের মাপকাঠি, বিরোধী দলকে যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হবে, অখণ্ড জাতিসত্ত্বা গড়ে তোলা হবে, সংঘাতের রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে সুস্থ রাজনীতি ফিরিয়ে আনা হবে, সব দেশের সঙ্গে সহযোগিতা ও বন্ধুত্ব আরও জোড়দার করা হবে, বিচার বিভাগ ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করা হবে, সুশাসন ও আইনের শাসন নিশ্চিত করা হবে, নারী শিক্ষা, নারী অধিকার ও নারী ক্ষমতায়নকে প্রসারিত করা হবে, গ্রামীন ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত থাকবে, নোবেল জয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে যথাযথ মর্যাদা দেয়া হবে। এছাড়া বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের কর্মপরিকল্পনা নির্বাচনী ইশতেহারে বিশদভাবে তুলে ধরা হবে বলে তিনি জানান।