গুনমুগ্ধ সব্যসাচী’র লেখনীতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ন্সেহাস্পদ

    0
    472

    এক মানবিক রাজনীতিবিদের মা, মাটি ও মানুষ ভাবনা

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৮জুলাইঃ বৃহত্তর সিলেটের পাঠক নন্দিত অনলাইন সংবাদপত্র ‘আমার সিলেট’র পাঠকদের জন্য আজ একটু অন্যরকম স্বাদের প্রবন্ধ উপস্থাপন করলাম। সাধারণত সমাজ সচেতনতা, নৈতিক শিক্ষা বা প্রেরণাধর্মী লেখার অভ্যাস থাকলেও, গতানুগতিকতা থেকে একটু ছুটি নিয়ে আত্মিক তাগিদে এ প্রবন্ধ লেখার অবতারণা। বিগত ২৫শে ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখের ‘বাংলাদেশ প্রতিদিনে’ প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে চোখ আটকে গেল। ‘আমার মা’ শিরোনামে প্রকাশিত লেখাটি পড়ে অশ্রুসজল হয়ে পড়েছিলাম। পুরো বোধগম্যতা হেতু একবার, দুবার, তিনবার পড়লাম, বারবার পড়ে আবেগাপ্লুত হয়ে তৎক্ষনাৎ সিদ্ধান্ত নিলাম লেখকের বরাবরে অভিমত ব্যক্ত করব। কোন সাত -পাঁচ বা নেতিবাচক ভাবনার বেড়াজালে মনকে না ফেলে, ই-মেল মারফত প্রেরণ করলাম নিজের অভিমত ও অভিব্যক্তি।

    প্রেরণ করার খানিকক্ষণ পর চিন্তা করলাম এত বড় মাপের মানুষ, আমি তো নস্যি … , মেইল করা কি ঠিক হল! সমস্ত ইতিবাচক চিন্তার যাঁতাকলে দুর হয়ে গেল ক্ষণিকের জন্য ভেসে আসা নেতিবাচক ভাবনা। কিছুদিন পর, ইনবক্সে গিয়ে তো দেখি, রিপ্লাই? আমার চোখ তো ছানাবড়া! এ কি দেখছি আমি! কিছুক্ষণ চোখ বুলিয়ে, আবারো তাকালাম। সত্যি সত্যিই তো রিপ্লাই। এরপর একদিন আমার ফোনে কল। আমি কি কথা বলব! আবেগ, উত্তেজনা ও খুশির বশে শারীরিক কম্পনকে আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলাম না।

    বিটিভিতে প্রচারিত জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ছোটবেলায় দেখা অনলবর্ষী বক্তা, জাতীয় নেতাদের অন্যতম, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের দুর্দিনের পরিক্ষীত নেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন স্বয়ং আমার সাথে স্বসম্মানে কথা বলছেন, কুশল বিনিময় করছেন, খোঁজ খবর নিচ্ছেন, অভয় দিচ্ছেন, আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। মফস্বলের অতি সাধারণ ছেলে হিসেবে এই মাহেন্দ্রক্ষণটুকু ছিল আমার কাছে স্বপ্নের মত। তাঁর সাথে কথোপকথন সেরে, সোজা অসুস্থ মায়ের কাছে ছুটে যাই। মা’কে বলি পুরো বিবরণ।

    আমার বিধবা মা যে কতটুকু উৎফুল্ল হয়েছিলেন তা লেখনীর মাধ্যমে বোঝানোর ক্ষমতা আমার নেই। মা’কে বললাম যদি যাই উনার সাথে দেখা করতে, কি নেব? তিনি, মৃদু কন্ঠে উচ্চারণ করলেন, কলম। আজ যখন লিখছি, আমার ‘মা’ আর বেঁচে নেই। দীর্ঘ সাড়ে তিন বছরের পঙ্গুত্ব জীবনের অবসান ঘটেছে বিগত ২৪ জুন ২০১৭। মৃত্যুর কিছুদিন আগে আমার দুঃসময়ের আলোকবর্তিকা জাতীয় এই নেতার প্রতি জানিয়েছেন কৃতজ্ঞতা ও অন্তস্থল থেকে অস্ফুট স্বরে বেরিয়েছে আর্শীবাদসুচক ধ্বনি।

    লেখকঃসব্যসাচী পুরকায়স্থ মিথুন,সাবেক শিক্ষার্থী,এমসি কলেজ,

    যাইহোক, আমিও একদিন, জাতির জনকের অত্যন্ত ঘনিষ্ট ও স্নেহাস্পদ রাজনৈতিক সঙ্গীর সাথে সাক্ষাৎ ও দোয়া গ্রহণের উদ্দেশ্যে তাঁর সুযোগ্য সহকারীর সাথে যোগাযোগ রেখে শ্রীমঙ্গল থেকে ঢাকার উদেশ্যে রওয়ানা দেই। ঢাকায় গিয়ে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করি। তাঁর এলাকার সকল শ্রেণীর মানুষের সাথে যে তাঁর আত্মিক মেলবন্ধন ও তিনি যে প্রকৃত রাজনৈতিক – সামাজিক আশ্রয়স্থল এবং প্রতিশ্রুতিশীল বরেন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তার প্রমাণ পেলাম সাতসকালে সাক্ষাৎপ্রার্থী জনগনের ভিড় ও উৎসাহ দেখে। প্রায় পঁচাত্তর বয়সে প্রখর তাঁর স্মৃতিশক্তি। আমার নাম বলতেই চিনে ফেললেন, আগত অন্যান্যদেরকেও বললেন আমার গল্প। আমার ও পরিবারের বারবার খোঁজ খবর নিচ্ছেন। আমি দাঁড়িয়ে শুধু তাকে অবলোকন করছি, মানুষের সাথে তাঁর অন্তরঙ্গতা অনুধাবন করছি। এ রকম অভিভাবকতুল্য লোক আমাদের জাতীয় জীবনে ঢের বেশী দরকার।

    তিনি আমাকে নিয়ে ভীষণ উদগ্রীব হয়ে পড়লেন। অবাক হয়ে এখনো ভাবছি বাংলাদেশের একজন মন্ত্রী ও অত্যন্ত উঁচু মানের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আমার মতো একজন সাধারণ ঘরের ছেলের পাশে ছিলেন! আছেন। তাঁর চিন্তা-চেতনায় আমার নাম ঘুরে ফিরে আসছে। আমাকে নিয়ে কথা বলছেন পরিচিত শুভাঙ্খাখীদের সাথে। এটাই তো আমার জীবনের পরম পাওয়া। আসলে তখন আমি বোধ করলাম এ ধরনের মানুষের নিকট শ্রেণীবিভাজন বা আপন-পর বলতে কিছু নেই। এঁদের কোন সম্প্রদায় নেই, গোষ্টি নেই; এঁরা মানুষের জন্য নিবেদিত ও সার্বজনীন এবং শ্বাশ্বত রাজনীতিবিদ।

    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সামাজিক -রাজনৈতিক দর্শন যার মধ্যে প্রোথিত তিনি বাংলার প্রতিটি সভ্য ও প্রগতিশীল মানুষকে সমভাবে ভালোবাসবেন, সেটাই তো স্বাভাবিক। কারন, উনাদের ভিতরে ব্যক্তিগত চাওয়া – পাওয়ার কিছু নেই। যাইহোক, তিনি আমাকে অত্যন্ত ¯েœহমাখা মনে আতিথ্য সহকারে সহায়তা করলেন, বারবার খোঁজ নেন। যদিও ব্যক্তিগত পারিবারিক প্রতিকুলতার জন্য তাঁর দেওয়া বে-সরকারী চাকুরীটি করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। আমার উপলব্ধি তিনি আমার মা’য়ের জন্য ব্যাকুল ছিলেন। মৃত্যুসংবাদ শোনার পরও ফোন করে স্বান্তনা ও অভয় দিয়েছেন। আসলে শুধু আমার মা নয়, তাঁর মমতাময়ী মা নন, বাংলার সকল দুঃখী মায়েদের জন্যই তাঁর মন কাঁদে। তিনি আর কেউ নন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত আস্থাভাজন রাজনৈতিক সচিব ও সহচর, ১৯৬৮-৬৯-এ গণজাগরণ ও ছাত্র আন্দোলনের অগ্রনায়ক, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের অন্যতম, প্রবীণ সংসদ সদস্য ও বর্তমান সরকারের মাননীয় বাণিজ্য মন্ত্রী শ্রদ্ধেয় তোফায়েল আহমেদ।

    আন্তর্জাল ও বিভিন্ন ইতিহাস ঘেঁটে যা পেলাম তা এককথায় অসাধারণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে এমএসসি পাস করা এ রাজনীতিবিদ ১৯৬৬-৬৭ মেয়াদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলের (বর্তমানে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) নির্বাচিত সহ-সভাপতি (ভিপি) ছিলেন। ১৯৬৮-৬৯-এ গণজাগরণ ও ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন তিনি ডাকসুর ভিপি হিসেবে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ১৯৬৬ – ১৯৬৯ পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ৩৩ মাস কারাগারে আটক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’র সব রাজবন্দিকে নিঃশর্ত মুক্তিদানে সারা বাংলার তৃণমূল পর্যন্ত তুমুল গণআন্দোলন গড়ে তোলে এবং ’৬৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ বঙ্গবন্ধু মুজিবসহ সব রাজবন্দিকে মুক্তিদানে পাক স্বৈরশাসককে বাধ্য করেন। ৬৯-এ ছাত্র গণআন্দোলনে জনাব তোফায়েল আহমেদের নাম বাংলার আকাশে বাতাসে রণিত হয়েছে, প্রাসাদ থেকে গরিবের কুঠির পর্যন্ত একইভাবে উচ্চারিত হয়েছে। জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি তোফায়েল আহমদ যা ১৯৬৯ সালে পল্টন ময়দানে ঘোষণা করা হয়। ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে ভোলার দৌলত খাঁ-তজুমদ্দিন-মনপুরা আসন থেকে তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

    ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের মুক্তিযুদ্ধে তিনি মুজিব বাহিনীর অঞ্চল ভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত চার প্রধানের একজন ছিলেন। এরপর সংগ্রামী জননেতা তোফায়েল আহমেদ জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের একজন বলিষ্ঠ সংগঠকে পরিণত হন। স্বাধীনতাযুদ্ধ পূর্ব ছাত্র ও গণআন্দোলনে সফল নেতৃত্ব প্রদান করায় তোফায়েল আহমেদ দেশবাসীর অকুণ্ঠ ভালোবাসা ও আস্থা অর্জন করেন। যা আজো সিলেট থেকে ভোলা, টেকনাফ থেকে তেতুঁলিয়া পর্যন্ত প্রবীণ গনমানুষের অন্তরে প্রবাহমান। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সচিবের দায়িত্ব লাভ করেন। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭৫ সালের পর তিনি দেশের বিভিন্ন কারাগারে প্রায় ০৫ বছর কারান্তরীন ছিলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রত্যাবর্তনের আন্দোলনে তোফায়েল আহমেদের অবদান উল্লেখ করার মতো।

    বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বন্দি অবস্থায় তোফায়েল আহমেদ অমানুষিক দৈহিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। তাঁকে তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সর্বমোট সাতবার কারাগারে অন্তরীণ হতে হয়েছে। জেল-জুলুম-হুলিয়া তার রাজনৈতিক জীবনে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ছিল। ছাত্রাবস্থা থেকে আজ অবধি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনায় তিনি অবিচল রয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সফরে তাঁর সফর সঙ্গী হন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়ন, অটোয়াতে কমনওয়েলথ সম্মেলন, লাহোরে অনুষ্ঠিত ওআইসি সম্মেলন, আলজেরিয়ায় অনুষ্ঠিত জোটনিরপেক্ষ সম্মেলন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন এবং জ্যামাইকায় অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগদান। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় লাভ করেন।

    জাতীয় সংসদের সংসদীয় বিতর্কে তাঁর ভাষণে সারা বাংলার মানুষের গনতান্ত্রিক অধিকার আদায় ও রাজনৈতিক বিচ্যুতি, মিথ্যা ও হটকারিতাকে বাক্যবাণে জর্জরিত করে তুলতে পেরেছিলেন। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর গুনমুগ্ধ, বঙ্গবন্ধুও ছিলেন তাঁর ভরসা ও প্রেরণার উৎস। কিছুদিন আগে ঢাকায় গিয়ে ঘুরে আসলাম ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত ৩২ নং বাড়িটি যা বর্তমানে ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর’ নামে পরিচিত। শুধু ঘুওে দেখা নয়… গভীর শুণ্যতা অনুভব করলাম। সেই মহান বাঙালি, স্বাধীনতার পুরোধা জাতির পিতার পুরো বাড়িতে গুলির দাগ, সিঁড়িতে রক্তের দাগ (যেখানে প্রতিদিন কাঁচা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়) আমাকে গভীরভাবে ব্যাথিত করেছে।

    প্রায় ০২ (দুই) ঘন্টা নীচতলা থেকে বাড়ির ছাদ পর্যন্ত দেখেছি আর সারাক্ষণ বোবাকান্নায় নিজেকে ব্যস্ত রেখেছি। ভাবছিলাম, ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাসফরের জন্য তো এটি আদর্শ জায়গা। বৃহত্তর সিলেট বিভাগ তো বটেই, সারাদেশের বিভিন্ন স্কুল/কলেজ শিক্ষক-ছাত্রছাত্রীদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, প্রকৃত শিক্ষাসফরের উদেশ্য অর্জনের জন্য জাতির জনকের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর’ নির্বাচন করুন। নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশের শেকড়কে জানুক, জ্ঞান ও সঠিক ইতিহাস সমৃদ্ধ হয়ে আগামীর বাংলাদেশে সাফল্যের শিখরে আরোহন করুক।

    এছাড়া, বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সীমানায় নতুন ভবনে সাজানো আছে মুক্তিযুদ্ধের পুর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ের আলোকচিত্র, বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদ। সেসব খবর থেকেই আত্মস্থ করলাম, বঙ্গবন্ধু গরিব-দুঃখী মানুষকে অকাতরে সাহায্য করতেন। বঙ্গবন্ধুর মতোই তাঁর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বুদ্ধিজীবি-কবি-সাহিত্যিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক, দুস্থ, গরীব বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, অসুস্থ ছাত্র-ছাত্রী, সংখ্যালঘু, নৃতাত্বিক ও চা বাগানের শ্রমিক এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্টি, অটিস্টিক শিশু সহ সমাজের অবহেলিত মানুষদেরকে প্রতিনিয়ত সাহায্য করে থাকেন। ঠিক তেমনি, প্রায় পঞ্চাশ বছরের রাজনৈতিক জীবনে অনেকটা সময় জাতির জনকের সংস্পর্শে থাকায় তোফায়েল আহমেদের মধ্যে আজো প্রবাহমান বঙ্গবন্ধুর মানবিক ব্যাপারটি।

    রাজনীতি ছাড়াও ব্যক্তিগত আচরণে অমায়িক, এই সংগ্রামী রাজনীতিকের পরোপকার, বদান্যতা, অসাম্প্রদায়িক মনোভাব তার জীবনকে করেছে মহিমান্বিত। রাজনৈতিক জীবনে ব্যাপক সংগ্রাম ও বিস্তর বন্ধুর পথ অতিক্রম করে, আজও তিনি তার অব্যাহত সংগ্রামী জীবনে সততা, মেধা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও বাগ্নিতা দিয়ে সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে মানুষের জন্য রাজনীতির অভিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন।

    যতটুকু জেনেছি, পারিবারিকভাবে বিশেষ করে মা ও বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে দানের শিক্ষা পেয়ে দেশের যেকোন প্রান্তের বিপদগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ান তোফায়েল আহমেদ। রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি, নিষ্ঠা, শ্রম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, সামাজিক দায়িত্বের মাধ্যমে দলীয় কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের ভালোবাসা ও অকুন্ঠ সমর্থন পেয়ে একজন অন্যতম জাতীয় নেতা হিসেবে গণমানুষের মনে স্থান করে নিয়েছেন। বাংলাদেশে জনাব তোফায়েল আহমেদের মানের এবং সময়ের রাজনীতিবিদদের সংখ্যা এখন একেবারেই কমে এসেছে।

    এমন রাজনীতিক দলের সম্পদ; এঁদের দেশ ও জাতির প্রয়োজন। তাঁর সামাজিক দায়বদ্ধতা ও আমজনতার সাথে অন্তরঙ্গতার আরো দুটি উদাহরণ উল্লেখ না করলেই নয়। গণমাধ্যম মারফত জানলাম, স্কয়ার হাসপাতালের সামনে তপ্ত রোদে শিশু সন্তানকে নিয়ে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এক ভদ্রলোককে গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোথায় যাবেন?’ ভদ্রলোক পান্থপথ বললে… তিনি বললেন আমার গাড়িতে উঠুন, আমি ওইদিক দিয়েই যাচ্ছি। ঐ ব্যক্তি হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন কিছুক্ষণ, তারপর উঠে বসলেন মন্ত্রীর পাশে। বাচ্চাকে তিনি আদর করলেন অনেকক্ষণ। উপহার কেনার জন্য দিলেন কিছু টাকা। অতি সম্প্রতি, ভোলায় বিদ্যুৎ লাইনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিষ্ঠুর পরিনতির শিকার হয় লিয়া নামের একটি মেয়ে। লিয়ার বাম হাত ও দুই পায়ের দুটি করে আঙ্গুল কেটে ফেলায় পঙ্গু হয়ে যায়। মন্ত্রী মহোদয়, তাঁর নাতনী ও নাতনীর সমবয়সী লিয়াকে তাঁর কোলে নিয়ে বসান এবং লিয়াকে আদর করে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি লিয়ার আধুনিক সকল চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করবেন বলে জানান। শুধু তাই নয় তিনি ব্যক্তিগতভাবে ও সংগ্রহ করে আর্থিক অনুদান পঙ্গুত্ববরনকারী লিয়াকে প্রদান করার ব্যবস্থা করেন।

    বাণিজ্যমন্ত্রীর এমন উদার মহানুভবতায় লিয়ার মা, বাবা অশ্রুসজল হয়ে পড়েন। (সুত্রঃ পরিবর্তন.কম) এছাড়া বিগত ২রা এপ্রিল, ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থেকে অধহৃত হয়েছিল সুমাইয়া নামে একটি ছোট্ট শিশু। তিনি সে শিশুটির উদ্ধারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন, নামাজ শেষে মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট দু’হাত তুলে দোয়া করেছেন শিশুটির জন্য। উদ্ধারের পর সুমাইয়া আর নাতনী প্রিয়ন্তীকে কোলে নিয়ে আবেগঘন আদর করেছেন। শিশুটির পিতাকে বেসরকারী চাকুরীর ব্যবস্থাসহ আর্থিকভাবে সহায়তা করেছেন। (সুত্রঃ বিডি-প্রতিদিন.কম) সুতরাং, রাজনীতিবিদ নিয়ে যাদের নেতিবাচক মানসিক অবস্থা, আশা করি তাদের ভাবনা জগত থেকে একটু একটু করে সরতে বসেছে নেগেটিভ মাইন্ড সেট।
    এ তো গেল, সমাজের জন্য তাঁর কর্মের ফিরিস্তি।

    এই তো মাসখানেক হয়, জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা যখন প্রস্তাবিত বাজেটকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগ সরকারের সফল অর্থমন্ত্রী, সম্মানিত ব্যক্তি, সর্বজন শ্রদ্ধেয় আবুল মাল আবদুল মুহিতের উদ্দেশ্যে সভ্যতার মানদন্ড পেরিয়ে সম্পুর্ণ অপ্রত্যাশিত ও তীর্যকভাষায় বক্তব্য রেখেছিলেন ঠিক এর পরদিনই রাজনৈতিক সহকর্মী হিসেবে ক্লিন ইমেজের অর্থমন্ত্রীর পাশে থেকে অকুতোভয় বাণিজ্য মন্ত্রী, যুক্তিযুক্ত মন্তব্য ও ইতিহাস থেকে তথ্য নিয়ে পাল্টা উত্তর দিয়ে সকল বিরুপ ও অসংযত সমালোচককে স্তব্ধ করে দিয়েছেন। দেশের জনগনের প্রতি বার্তা দিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু কণ্যা জনবান্ধব পদক্ষেপই গ্রহণ করবেন। হয়েছেও তাই! সুতরাং, আমাদের দেশে এমন জনবান্ধব মানবিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের প্রয়োজন সবসময়।
    এমনি আরো অনেক দৃষ্টান্ত হয়তো রয়েছে যা আমার অজানা। তোফায়েল আহমদ এর মত একজন সার্বজনীন জননেতা মানবিক আচরণের মাধ্যমে জনগণের পাশে থাকতে পারেন এটা তার প্রমাণ এবং তাঁর এরুপ ব্যক্তিগত জনহিতকর কর্ম দলীয়ভাবে পুরো আওয়ামীলীগের ভাবমুর্তিকে সারাদেশে আরো দীপ্তিমান করবে। পারিবারিক জীবনে তিনি তাঁর মা’র প্রতি খুবই অনুরক্ত, আজো তিনি তাঁর মাকে অনুভব করেন জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে। তিনি প্রকৃত মাতৃভক্ত, তাঁর মত অকুতোভয় রাজনীতিবিদ, বাংলার সুর্য্যসন্তানকে জন্ম দিয়েছেন ফাতেমা খানম নামের এক মহিয়সী জননী।

    যিনি, অশ্রুসিক্ত নয়নে দেখেছেন ও সয়েছেন বীর পুত্রের কারাগারে যাওয়ার দিনগুলো। নিজের মা’য়ের প্রতি ভালোবাসা থেকে তোফায়েল আহমেদ ভোলার বাংলাবাজারে স্থাপন করেছেন ’ফাতেমা খানম বৃদ্ধাশ্রম’ যেখানে বাংলাদেশের যেকোন অ লের অবহেলিত বৃদ্ধ মায়েরা পেতে পারেন ¯েœহের পরশ, সম্পুর্ণ বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা ও বিনোদনের মাধ্যম এবং পড়ন্ত জীবনের শেষবেলা কাটানোর জন্য মৌলিক চাহিদাসমুহ।

    ইতোমধ্যে, বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ‘তোফায়েল আহমেদ ট্রাষ্ট’ এ সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন প্রদান করেছেন। তাছাড়া, তিনি এত ব্যস্ততার মধ্যেও ইতিহাসসমৃদ্ধ কলাম লেখেন দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, ভোরের কাগজ, সমকালসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে। আমরা যারা নতুন প্রজন্ম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী, জাতির পিতার স্বপ্ন ‘সোনার বাংলার’ বাস্তব রুপদানে নিবেদিত তারা বাংলাদেশের ’৭১ পুর্ববর্তী ও পরবর্তী সঠিক ইতিহাস জানতে নিয়মিত চোখ রাখতে পারি তাঁর কলামগুলোতে।

    সঠিক ঐতিহাসিক জ্ঞানার্জণ কাজে লাগবে চলমান ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণে ও সুরক্ষায়। পরিশেষে, আমি কৃতজ্ঞ, অভিভূত, মুগ্ধ… পাঠক আপনি? ভালো থাকবেন স্যার। আপনি দীর্ঘজীবী হোন। স্মৃতির মানসপটে রাখার জন্য শুধু একটি ছবির অভাববোধ হয়। হয়তো, কোন একদিন আপনাকে আবদার করে বসব, স্যার। আপনার মতো রাজনীতিবিদ বাংলাদেশে এখনো বড় বেশী প্রয়োজন। আপনাদের লেখনী বা জীবনালেখ্য থেকে অর্জন করা শিক্ষা ও দীক্ষা, আমাদের ভবিষ্যৎ পথ চলার পাথেয়।
    প্রবন্ধ লেখকঃ সব্যসাচী পুরকায়স্থ মিথুন,সাবেক শিক্ষার্থী,এমসি কলেজ, সিলেট।