ঈদুল আজহার পর সরকারের পতন ঘটানোর ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি

    0
    239

    আমারসিলেটটোয়েন্টিফোর,০৬ সেপ্টেম্বর  : পবিত্র ঈদুল আজহার পর সরকারের পতন ঘটানোর ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আবদুল্লাহ আল নোমানের সভাপতিত্বে জোটের মহাসচিবদের বৈঠকের পর এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, চলমান রাজনৈতক সংকট সমাধানে সংলাপ না হলে ঈদের পরপরই সরকারপতনের জন্য তীব্র আন্দোলন শুরুর করা হবে। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ১৮ দলীয় জোটের শরীক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, খেলাফত মজলিশের মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের, লেবার পার্টির মহাসচিব হামদুল্লা আল মেহেদী, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির যুগ্মমহাসচিব এমএম আমিনুর রহমান, বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক শামিমুর রহমান শামিম, জামায়াতের কর্ম পরিষদ সদস্য ডা. রেদোয়ান উল্লাহ শাহেদীসহ ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা।
    বর্তমান প্রশাসনকে দলীয় অনুগত উল্লেখ করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, প্রশাসনকে সরকার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করতে চায়। হেফাজতকে কেন্দ্রে করে প্রশাসন যেভাবে সরকারের সাফাই গাইছে তাতে মনে হচ্ছে এটি দলীয় প্রশাসন। এ প্রশাসনের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না, দলীয় সরকারের অধীনেও কোনো নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। এমনকি এরশাদও এ নির্বাচনে অংশ নেবেন না বলে উল্লেখ করেন নোমান।
    সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি দেশের বিভিন্ন স্থানে আটটি গণসমাবেশ করবে। তিনি বলেন, সমাবেশগুলো দেখেই এ ফ্যাসিস্ট সরকার নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে বাধ্য হবে। নরসিংদীর গণসমাবেশ আমাদের এ প্রক্রিয়ারই প্রথম পদক্ষেপ। এ সময় তিনি সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিধান রেখে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
    বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ১৮ দলীয় জোটের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন আমাদের পেছনের যাওয়ার সুযোগ নেই। এ আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে জনমত গড়তে আট জেলায় খালেদা জিয়ার জনসভার কর্মসূচি শুরু হচ্ছে আগামী সপ্তাহে। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর রবিবার প্রথম জনসভাটি হবে নরসিংদীর বালুর মাঠে। তিনি আরো বলেন, নির্দলীয় সরকার নিয়ে অর্থবহ সংলাপ হতে হবে। কোনো লোক দেখানো সংলাপে বিএনপি অংশ নেবে না।
    সংবাদ সম্মেলনে নোমান বলেন, আমরা সরকারকে বলতে চাই, এখনো সময় আছে- সংকট সমাধানে নির্দলীয় সরকারের ব্যবস্থা সংবিধানে সংযোজনের উদ্যোগ নিন। তিনি বলেন, সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংবিধানে নানা সংশোধনী এনে দলীয় সংবিধানে পরিণত করেছে। দলীয়করণ করে প্রশাসনের নিরপেক্ষতাকে বিনষ্ট করেছে। আমরা মনে করি, এ অবস্থায় বর্তমান প্রশাসনের অধীনে কোনোভাবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।
    আন্দোলন নির্বাচনের অংশ, নির্বাচন আন্দোলনের অংশ উল্লেখ করে নোমান বলেন, সরকার যদি সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করতে চায় তাহলে আমরা অংশগ্রহণ করব। তবে লোক দেখানো আলোচনার কথা বললে আমরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের পথই বেছে নেব। আন্দোলনের মাধ্যমে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে নীল নকশা করা হয়েছে তা ভেঙে দেওয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
    বিএনপির এ সিনিয়র নেতা বলেন, আমরা আশা করছি, নরসিংদীর জনসভাটি জনসমুদ্রে পরিণত হবে। সেভাবে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ওই জনসভা উপলক্ষে মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহের সৃষ্টি হয়েছে।নেত্রী এই জনসভায় গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেবেন। তিনি জানান, আগামী রবিবার দুপুর ২টায় জনসভা শুরু হবে। বিরোধী দলীয় নেতা নরসিংদীর উদ্দেশ্যে গুলশানের বাসা থেকে রওনা হবেন বেলা ১টায়।
    সংবাদপত্রসহ ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার স্বাধীনতা নেই মন্তব্য করে নোমান বলেন, সত্য প্রকাশের অভিযোগে আমার দেশ ও দিগন্ত টেলিভিশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বেসরকারি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান অধিকারের সম্পাদক  আদিলুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। নামে সংসদীয় সরকার হলেও এটি বাকশালের চেয়েও জঘন্য সরকার বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ বিভিন্ন নেতা কর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে।
    ১৮ দলীয় জোটের মহাসচিবদের বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামী মজলিশের শূরার সদস্য রেদোয়ান উল্লাহ শাহেদী, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, খেলাফত মজলিশের মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য খন্দকার সিরাজুল ইসলাম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে নরসিংদীতে বেগম খালেদা জিয়ার জনসভা সফল করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।