ইউনূসের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার

    0
    251

    আমারসিলেট24ডটকম,০৯ সেপ্টেম্বর  : গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকাকালে অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওয়েজ আর্নার হিসেবে তার বৈদেশিক আয় সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পর্যালোচনার পর আজ সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

    এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে  নিয়ম ভেঙে আয়কর অব্যাহতি নেয়া, বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিধি লঙ্ঘন এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ আনা হচ্ছে। বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংকালে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব  মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভুঁইয়া।
    সংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ইউনূসের বিরুদ্ধে কর সংক্রান্ত বিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেবে এনবিআর। আর ব্যাংকের অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগ। তিনি বলেন, প্রয়োজন মনে করলে এনবিআর ও ব্যাংকিং বিভাগ আইন মন্ত্রণালয়ের আইনি সহায়তা নিয়ে আইনি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। সিদ্ধান্ত হলেও কত দিনের মধ্যে ইউনূসের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে, তা ঠিক হয়নি বলেও জানান তিনি।
    ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকার মামলা করবে কি না জানতে চাওয়া হলে সরাসরি উত্তর না দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব  বলেন, প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, মন্ত্রিসভা এ প্রতিবেদন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে। যেসব অনিয়ম হয়েছে, সেসব বিষয়ে দেশের প্রচলিত আইনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০০৪ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ইউনূস ১৩৩টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মানী, ১০টি পুরস্কার এবং ১৩টি রয়্যালটি পেয়েছেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে বলে জানান তিনি।
    মোশাররাফ হোসাইন বলেন, ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের দায়িত্বে থাকার সময় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপলক্ষে বিদেশে গেছেন। ২০০৪ সালের জুলাই থেকে ২০১১ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে তিনি বিদেশ সফরে সম্মানী, পুরস্কার ও রয়্যালিটি বাবদ ৫০ কোটি ৬১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৮৮ টাকা আয় করেছেন। এর ওপর তিনি মোট ১২ কোটি ৬৫ লাখ ৪৬ হাজার ৩৯৭ টাকা আয়কর অব্যাহতি নিয়েছেন।
    প্রতিবেদনে আইআরডি বলেছে, আয়কর অব্যাহতির যে সুবিধা ইউনূস নিয়েছেন তা বিধিসম্মত হয়নি। গ্রামীণ ব্যাংক আইনে ব্যাংককে আয়কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, ব্যাংকের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে নয়। গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক এমডি ইউনূসকে সরকারি কর্মচারী উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, পাবলিক সার্ভেন্ট’ হিসাবে বিদেশ যাওয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেয়ার আবশ্যকতা থাকলেও তিনি তা নেননি।
    ইউনূসের এসব অর্থের বিষয়ে আয়কর রিটার্নে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করা হয়নি দাবি করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তাকে শর্ত সাপেক্ষে আয়কর রির্টার্ন দেয়া হয়েছিল। অনেক ক্ষেত্রেই ওই শর্ত লঙ্ঘিত হয়েছে। তার প্রতিষ্ঠানের আয়কর রিটার্নে এ তথ্যগুলো আসেনি। তিনি জানান, আয়কর রিটার্নে সঠিকভাবে তথ্য পরিবেশন না করা আইনের লঙ্ঘন। যারা এ রিটার্ন তৈরি করেছেন, তারা যেমন এজন্য দায়ী এবং এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী হিসাবে তিনিও (ইউনূস) এ দায় এড়াতে পারেন না।
    মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দায়িত্বে থাকাকালে ইউনূস ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার পারিবারিক প্রতিষ্ঠানকে স্বল্প সুদে ঋণ দেন। এখানে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট আছে। তাই ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে বলে এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বিধি ভেঙে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গ্রামীণ কল্যাণে তহবিলে স্থানান্তর করা হয়েছে বলেও এনবিআরের অনুসন্ধানের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে।
    মোশাররাফ বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের চাকরিবিধি অনুসারে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বয়স ৬০ বছর। তারপরও তিনি (ইউনূস) ওই পদে বহাল ছিলেন। কোয়ান্টাম মেরিট (চুক্তি বহির্ভুত সময়ে যদি কোনো কাজে কেউ নিয়োজিত থাকে) তাহলে ওই সময়ের জন্য শুধু বেতন-ভাতা পাবেন, অন্যান্য সুবিধা পাবেন না। রিপোর্টে বলা হয়েছে, তিনি বেতন-ভাতা ছাড়াও অন্যান্য সুবিধা গ্রহণ করেছেন। কাজেই অন্যান্য সুবিধা গ্রহণ করাটাও বিধিবহির্ভূত হয়েছে।
    প্রসঙ্গত গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকাকালে ড. ইউনূস ওয়েজ আর্নার হিসেবে কত টাকা বিদেশ থেকে এনেছেন এবং তিনি তা আনতে পারেন কি না, এনে থাকলে কী পরিমাণ কর অব্যাহতি নিয়েছেন- ইত্যদি বিষয় খতিয়ে দেখতে ২০১২ সালের ২ আগস্ট এনবিআরকে প্রতিবেদন দিতে বলে মন্ত্রিপরিষদ। এর ভিত্তিতে এক বছর তদন্ত চালিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ বা আইআরডি। সোমবার আইআরডির পক্ষ থেকে প্রতিবেদনটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হয়।