আত্রাইয়ে শীত ও কুয়াশায় শুকিয়ে বিবর্ণ বোরো বীজতলা

    0
    226

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২০জানুয়ারী,নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ): শস্য ভান্ডার খ্যাত নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় এবার ইরি বোরো চাষ প্রচন্ড শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে থমকে দাঁড়িয়েছে। চলমান শৈত্যপ্রাবাহ আর ঘন কুয়াশায় বোরো বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বীজতলার চারা গাছগুলো লালচে আর হলুদ হয়ে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকেরা সময়মতো বোরো আবাদ করতে পারবে কি না তা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন কৃষকরা। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন- চলমান শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশার কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণ সূর্যের আলো না পাওয়ায় বীজতলার চারা গাছগুলো ‘কোল্ড ইনজুরি’তে আক্রান্ত হয়ে মরে যাচ্ছে। এদিকে তীব্র শীতের কারণে দিনমজুররা মাঠে নামতে পারছে না। তাই নির্দিষ্ট সময়ে ইরি বোরো রোপণে দিন দিন ভাটা পড়ছে।
    প্রতিবছর ঠিক এই সময়ে ইরি বোরো চাষে কৃষকরা বীজতলা থেকে বীজ উত্তোলন, দিনরাত সেচ পাম্প খোলা এবং চারা রোপণে ব্যস্ত দেখা গেলেও এবার মাঠে সে দৃশ্য খুব অল্পই চোখে পড়ছে।
    সরেজমিনে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে প্রায় ৬০ শতাংশ ইরি বোরো বীজতলা শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বাড়েনি। লালচে হয়ে অনেক ক্ষেত্রেই শুকিয়ে যাচ্ছে। মাঠে কৃষকদের ইরি বোরো রোপণ করতে দেখা যাচ্ছে খুব কমই। সেচ পাম্পগুলো অল্পই চালু রয়েছে। অথচ এ মৌসুমে মাঠে মাঠে ইরি বোরো রোপণে কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত কৃষকদের ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। দিন রাত সেচ পাম্পগুলো খোলা থাকত। ট্রাক্টরে জমি চাষের দৃশ্য ছিল অহরহ। সকালে বীজতলা থেকে চারা উঠাতে ব্যাস্ত থাকত কৃষাণ-কৃষাণীরা।
    এ ব্যাপারে উপজেলার শাহাগোলা গ্রামের কৃষক মো: আজাদ আলী সরদার জানান, “তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে ইরি বোরোর চারা বড় হচ্ছে না। লালচে রং ধরে শুকিয়ে যাচ্ছে। চারাগুলো দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। দুর্বল চারায় ফলন ভালো হবে না।
    উপজেলার ভোঁপাড়া গ্রামের বোরো চাষী রাব্বানী জানান, “এসময় প্রতিদিন দিনমজুর হিসাবে অধিক টাকায় মাঠে ব্যাস্ত থাকলেও শীতের কারণে বর্তমানে ইরি বোরো রোপণ করা যাচ্ছে না। প্রচন্ড ঠান্ডার কারনে কিছুক্ষন রোপণ করার পর হাতে আর কাজ করার মত অনুভূতি পাওয়া যায় না। তাই বসে আছি। ওই গ্রামের সেচ পাম্পের মালিক মানিক সরকার জানান, “কৃষকরা মাঠে নামছে না। তাই জমির মালিকরাও ইরি বোরো চাষের জন্য জমি তৈরি করছে খুব কম। একারণেই প্রায় সময়েই সেচ পাম্প বন্ধ থাকছে। আগে এই সময়ে দিন রাত সেচ পাম্প খোলা থাকত।
    উপজেলার ভবানীপুর মির্জাপুর বাজারে কথা হলো কালিকাপুর ইউনিয়নের মদনডাঙ্গা ও আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের বজ্রপুর গ্রামের মো: আব্দুল মজিদ মন্ডলের সাথে তারাও জানালেন, বীজতলা লাল এবং শুকিয়ে যাওয়ার কথা। পাশাপাশি জানালেন, তীব্র শীতে মাঠে নামতে পারছে না দিনমজুররা। তাই ইরি বেরো চাষের গতি থমকে গেছে। শীত না কমলে মাঠে নামতে পারবে না কৃষকরা।
    এ ব্যাপারে উপজেলার ভবানীপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: শফি উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে এবং সূর্যের আলো কম থাকায় বীজতলার চারাগাছগুলো খাদ্য সরবরাহ না হওয়ার কারণে প্রথমে হলুদ এবং পরে লালচে হয়ে মরে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা কৃষকদের বীজতলাগুলো সাদা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া এবং বীজতলায় রাতে প্রচুর পরিমাণে পানি জমে রেখে সকালে সেই পানি বদলে আবার নতুন পানি রাখার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ছত্রাকনাশক থিয়োভিট পাউডার ব্যবহারের পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে।’
    এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কে এম কাউছার হোসেন জানান, ঘনকুয়াশা আর শীতের কারনে সূর্যের আলো না থাকায় বীজতলাগুলো লালচে হচ্ছে। ‘এখনও বীজতলায় বড় ধরণের তেমন ক্ষতির আশঙ্কা করছি না। আবহাওয়া কয়েক দিনের মধ্যে ভালো হয়ে গেল যে সব বীজতলার চারাগাছগুলো হলুদ ও লালচে হয়ে গেছে সেগুলো আবারও ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু চলমান শৈত্যপ্রবাহ দীর্ঘস্থায়ী হলে বীজতলার চারাগাছ নষ্ট হয়ে কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। তবে আমাদের মাঠকর্মীরা মাঠ পর্যায়ে থেকে বীজতলাসহ আক্রান্ত রবি শস্য নিবির পর্যবেক্ষণ ও কৃষকদের করণীয় বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করছে।