আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘লড়াই’ করবেন মিসরের সেনাপ্রধান

    0
    331

    আমারসিলেট24ডটকম,১৩জানুয়ারীঃ শেষ পর্যন্ত আপন খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এলেন মিসরের সেনাপ্রধান ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসি। মুরসিকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের পর অন্তরালে থেকে দেশ পরিচালনা করে আসা সিসি গত শনিবার জানিয়েছেন, আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘লড়াই’ করবেন তিনি। শনিবার কায়রোতে মিসরের নতুন সংবিধানের ওপর গণভোটের ঘোষণা দেয়ার সময় সিসি তার এই অভিপ্রায়ের কথা জানান। একই সঙ্গে তিনি আগামী মঙ্গল ও বুধবার দেশটির নতুন প্রণীত সংবিধানের পক্ষে ভোট দেয়ার জন্য মিসরীয়দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। দেশটির নতুন সংবিধানের জন্য মাত্র ১৩ মাসের মধ্যে দ্বিতীয় গণভোট এটি। এই সংবিধান পাস হলে মিসরের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তথ্যসূত্রঃআল-জাজিরা, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, সিনহুয়া, জি-নিউজ
    মিসরের রাজধানী কায়রোয় সামরিক বাহিনীর এক অনুষ্ঠানে শনিবার জেনারেল সিসি বলেন, ‘দেশের জনগণের অনুরোধ এবং সেনাবাহিনীর সমর্থন পেলেই কেবল আমি নির্বাচনে লড়ব। কারণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা কাজ করছি।’
    সিসির এই ঘোষণাই পরিষ্কার করে দিয়েছে, তিনি মিসরে আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ছেন। মিসরীয় সেনাবাহিনীর একটি অভ্যন্তরীণ সূত্র নিশ্চিত করেছে, জেনারেল সিসি প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই করলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পূর্ণ সমর্থনই পাবেন। এ ছাড়া মিসরের নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য গঠিত গণপরিষদের চেয়ারম্যান আল-হায়াত জানিয়েছেন, তিনিও চান জনপ্রিয় দাবি মেনেই সিসি মিসরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। তিনি বলেন, ‘জনগণের দাবির প্রতি আমাদের অবশ্যই সমর্থন থাকতে হবে। তারা তাকে (সিসি) চায় এবং এটি তার ওপর বর্তেছে, যা এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। জনগণ বলছে, তারা সিসিকে চায় এবং আমাদের এটা মেনে নিতেই হবে।’
    সিসির নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণার মধ্য দিয়েই মূলত দেশটির প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার আসল উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়ে গেল। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছরের এপ্রিলেই হতে পারে মিসরের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এই নির্বাচনে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায়, সিসিই হতে যাচ্ছেন মিসরের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট; অন্তত বেশিরভাগ মিসরীয়র এমনই ধারণা। যেসব মিসরীয়র বিশ্বাস, তাদের দেশকে বিরাজমান সঙ্কট থেকে টেনে তোলার জন্য একটি শক্ত হাত প্রয়োজন, তাদের সমর্থন জেনারেল সিসিই পারবেন বলে আভাস দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
    উল্লেখ্য, মুরসির শাসনামলের এক বছর বাদ দিলে বারবারই মিসরের প্রেসিডেন্ট হয়ে এসেছেন সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। তাই আগামী নির্বাচনেও সিসি জয়ী হতে যাচ্ছেন, এ বিষয়ে দ্বিমত করার লোক খুব কম
    প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াইয়ের ঘোষণা দেয়ার পাশাপাশি জেনারেল সিসি শনিবার মিসরের জনগণকে দেশটির নতুন প্রণীত সংবিধানের পক্ষে গণভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আগামী মঙ্গল ও বুধবার এই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। মিসরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন মেনা’য় প্রচারিত এক বিবৃতিতে জেনারেল সিসি মিসরের জনগণের প্রতি ‘জাতীয় কর্তব্য পালনের জন্য’ সাংবিধানিক গণভোটে অংশ নিয়ে ‘গণতন্ত্রের পথ’কে সঠিক দিকে নিয়ে যাওয়া ও একটি ‘আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের পথে এগিয়ে যাওয়ার’ আহ্বান জানান। উল্লেখ্য, মিসরে বর্তমানে পাঁচ কোটির বেশি নিবন্ধিত ভোটার রয়েছেন।
    মিসরের এই সাংবিধানিক গণভোট মাত্র ১৩ মাসের ব্যবধানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দ্বিতীয় ভোট। এর আগে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুরসির শাসনামলে ৬৪ শতাংশ মিসরীয় জনতার ভোটে একটি সংবিধান পাস হয়। কিন্তু ২০১৩ সালের ৩ জুলাই মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর সেই সংবিধানও বাতিল করে মিসরের সেনাবাহিনী। এর পরই নতুন করে আরো একটি সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছে। নতুন এই সংবিধান পাস হলে মিসরের প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনের পথে সব বাধা দূর হবে।সুত্রঃযায়যায়দিন।