অর্থনৈতিক সম্ভাবনার সিলেটে কর্মসংস্থান হবে লক্ষাধিক লোকের

    0
    414

    “সিলেট হাই-টেক পার্ক,শেরপুর স্পেশাল ইকোনমিক জোন,হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক,বাল্লা স্থল বন্দর”

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৪অক্টোবর,মিনহাজ তানভীর,বিশেষ প্রতিবেদকঃ বৃহত্তর সিলেট যেমন পর্যটকদের আকর্ষণীয় এলাকা তেমনি বৈদেশিক আয়ের ও উজ্জ্বল সম্ভাবনার দ্বার।ঠিক তেমনি দেশের অন্যান্য এলাকার সাথে বর্তমান সরকার আধুনিক নানা বাণিজ্যের প্রসার ঘটাচ্ছে এই অঞ্চলে।বিগত সময়ে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্য প্রকল্পের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে জেলা পর্যায়ে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তুলতে “হাই-টেক পার্ক, সিলেট (সিলেট ইলেক্ট্রনিক্স সিটি) প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়।সিলেটের পাশাপাশি খুলনা, বরিশাল, রংপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, কক্সবাজার, ময়মনসিংহ, জামালপুর, নাটোর, গোপালগঞ্জ ও ঢাকায়ও হবে আইটি পার্ক।

    এসব জেলায় মোট ১২টি আইটি পার্ক (হাই-টেক পার্ক) স্থাপন করত ‘জেলা পর্যায়ে আইটি পার্ক/ হাই-টেক পার্ক স্থাপন (১২ জেলায়)’ শীর্ষক প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

    জানা গেছে “হাই-টেক পার্ক, সিলেট–এর প্রাথমিক অবকাঠামো নির্মাণ” শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে ডিসেম্বর ২০১৮ সালের মধ্যে যা জানুয়ারি ২০১৬ সাল থেকে শুরু হয়েছে।  এটি সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার খলিতাজুরি বিলেরপাড় মৌজায় ১৮৭১২.৫৫ লক্ষ টাকা ব্যায়ে হতে যাচ্ছে,বিগত ০৮ মার্চ ২০১৬ খ্রি. হাই-টেক পার্ক/ ইলেক্ট্রনিক্স সিটির সহায়ক প্রাথমিক অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হয়েছে যা বিশ্ব মানের বিনিয়োগ পরিবেশ এবং সুযোগ সুবিধাদি সৃষ্টির মাধ্যমে দেশী-বিদেশী আন্তর্জাতিক পর্যায়ের আইটি/আইটি এস প্রতিষ্ঠান এবং ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানকে এ পার্কে আকৃষ্টকরণসহ আইসিটি পেশাজীবীদের জন্য চাকুরীর ক্ষেত্র তৈরী করবে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ-ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হলে শুধু সিলেটেই এ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৫০০০০ লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে সরকারি সুত্রে জানা গেছে।

    প্রসঙ্গত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানান, ২০২১ সাল নাগাদ আমরা যে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা ও ডিজিটাল ইকোনমি গড়ে তোলার চেষ্টা করছি এবং আইসিটি খাতে ৫ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় ও ২০ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছি, জেলা পর্যায়ে ১২টি আইটি পার্ক (হাই-টেক পার্ক) প্রতিষ্ঠার আজকের এই প্রকল্প অনুমোদন সে সব উদ্যোগকে অন্যতম ভিত্তি দেবে।

    উল্লেখ্য করা যেতে পারে যে,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ১৫ মার্চ আইসিটি বিভাগ পরিদর্শনকালে আইসিটি ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রথমে দেশের প্রতিটি বিভাগে এবং পরবর্তীতে প্রতিটি জেলায় পর্যায়ক্রমে হাই-টেক পার্ক স্থাপন করার নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা পর্যায়ে আইটি পার্ক (হাই-টেক পার্ক) স্থাপন শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং “হাই-টেক পার্ক সিলেট এরই অংশ।

    সিলেট এর সম্ভাবনা শেরপুরে স্পেশাল ইকোনমিক জোনঃ

    মৌলভীবাজারের শেরপুরে স্পেশাল ইকোনমিক জোন প্রকল্পের সমীক্ষা কার্যক্রম শেষ হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় এ সমীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সমীক্ষা অনুযায়ী, শেরপুরে অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলা হলে এখানে বিভিন্ন শিল্পকরখানা স্থাপন ও অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি প্রায় ৪০ হাজার ৭০৬ জন লোকের কর্মসংস্থান হবে।প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন অথরিটি একটি কর্মশালায় এ তথ্য দেন। এতে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন প্রধান অতিথি এবং প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বিশেষ অতিথি ছিলেন। কর্মশালায় পূর্তমন্ত্রী বলেন, সরকার দারিদ্র্য দূরীকরণ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে সর্বোচ্চ গুরম্নত্ব দিচ্ছে। অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলার উদ্যোগ গোটা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সংশিস্নষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিলেট বিভাগের ৪টি জেলার মধ্যমণি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুর নদীবন্দর এলাকা। সরকারের ঘোষণা অনুসারে এ এলাকায় বিশেষ অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। প্রকল্প বাসস্তবায়নের লক্ষে সাপোর্ট টু ক্যাপাসিটি বিল্ডিং অব বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটির কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী শেরপুর নদীবন্দর ও পার্শবববর্তী এলাকার বাহ্যিক ও সামগ্রিক অবস্থা পরিদর্শন করেছেন। জানা যায়, ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেকের বৈঠকে দেশের পাঁচটি স্থানে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সিদ্ধানত্দ গ্রহণ করা হয়। এই বিশেষ অঞ্চলগুলোর মধ্যে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুর একটি ছিল।এই বিশাল কর্মযজ্ঞের ধারাবাহিকতায় মৌলভীবাজারের শেরপুরে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার লৰ্যে সামগ্রিক অবস্থা পর্যবেৰণে প্রতিনিধিদলে আরো ছিলেন প্রাইভেট সেক্টর ডেভেলপমেন্ট সাপোর্ট প্রজেক্ট (ওয়ার্ল্ড ব্যাংক) ট্রান্সপোর্ট এঙ্পাট চিনশাল রাউনিয়ার, জাপান ডেভেলপমেন্টের চিফ ইকোনমিস্ট ড. সুইচি চোবায়াশিসহ ৬ জন। তাদের সঙ্গে ছিলেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক কামরম্নল হাসান। তারা এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে পর্যবেৰণ করেন। ব্যবসায়ীরা জানান, শেরপুর নৌবন্দর এলাকাকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হলে বিভাগের সব কটি জেলার মানুষ বিভিন্নভাবে লাভবান হবে। বিশেষ করে, সিলেটের বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, সুনামগঞ্জের জগনন্নাথপুর, দিরাই, শালস্না; হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ, আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলার বিশাল জনগোষ্ঠী ও ব্যবসায়ী মৌলভীবাজারের শেরপুর নদীকেন্দ্রিক যাতায়াত করে থাকেন। প্রবাসী বিনিয়োগ ও ব্যবসাবন্ধব পরিবেশ বিবেচনায় দীর্ঘদিন ধরে শেরপুর বন্দর এলাকাকে দ্রুত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার দাবি জানিয়ে আসছিলেন মৌলভীবাজার চেম্বারের নেতারা।

    হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কঃ

    অপরদিকে হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে বাড়ছে কর্মসংস্থান সম্ভাবনা। পার্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত তিন বছরে ১৮ হাজার  মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে। বর্তমানে কারখানাতে ৩৭টি ‘প্রোডাকশন লাইনে’র মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে।হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল এসব তথ্য দেন। তিনি জানান, আগামী বছর নাগাদ আরো ৮ থেকে ১০টি প্রোডাকশন লাইন কারখানায় যুক্ত হবে। এতে অতিরিক্ত আরো প্রায় পাঁচ থেকে সাত হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ফলে আগামী বছর এই কারখানার কর্মীসংখ্যা ২৫ হাজার হতে পারে।

    দেশের শীর্ষ স্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ হবিগঞ্জের ওলিপুরে ২১৭ একর এলাকাজুড়ে হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গড়ে তোলে। কারখানায় বর্তমানে নানা সরঞ্জামসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী উৎপাদিত হচ্ছে।

    চুনারুঘাট বাল্লা স্থল বন্দরঃ

    ২০১৭ সালের মাঝামাঝি বাল্লা স্থল বন্দর পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তী।উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের বাল্লা সীমান্তের কেদারাকোট নামকস্থানে বাল্লা স্থল বন্দরের সম্ভাব্যতা যাচাই করতেই তিনি এসেছেন বলে সাংবাদিকদের অবহিত করেন।
    এ সময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিরাজাম মুনিরা, স্থানীয় চেয়ারম্যান হুমায়ুন খাঁন ও বাল্লা স্থল বন্দর আমদানি রপ্তানি কারক সমিতির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তপন চক্রবর্তী বলেন, বাল্লা স্থল বন্দরের আধুনিকায়ন প্রকল্পটি ইতোমধ্যেই একনেকে পাশ হয়েছে।একনেকের প্রস্তাব হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে জমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন হবে এবং ২০১৮ সালের শুরুতে অবকাঠামো তৈরির কাজ শুরু হবে।সেখানে ও বহু লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।সচেতন মহলের প্রত্যাশা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে এবং  প্রকল্প গুলোর কাজ সম্পূর্ণ হলে বৃহত্তর সিলেট একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক  জোনে পরিনত হবে সাথে সাথে দেশের লক্ষাধিক দক্ষ অদক্ষ নারী পুরুষের কর্মসংস্থান হবে।