অভিবাসীকে একজন মানুষ হিসাবে বিবেচনা করতে হবেঃপ্রধানমন্ত্রী

    0
    165

    আমারসিলেট24ডটকম,২৮এপ্রিলপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেক অভিবাসীকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেরউপাদানের পরিবর্তে একজন মানুষ হিসাবে বিবেচনা করতে হবে। তিনি বলেন, তাদেরকেশুধুমাত্র অর্থনৈতিক কার্যক্রম বা উৎপাদনের উপাদান হিসেবে দেখলে চলবে না।তাদেরকে মানুষ হিসেবে গণ্য করতে হবে। অন্যান্য নাগরিকের মত তাদের জন্যও সকলসুযাগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। আজ সোমবার রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে‘২০১৫-পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডায় অভিবাসন সংক্রান্ত দুদিন ব্যাপী বৈশ্বিকবিশেষজ্ঞ সভায়’ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ ওসুইজারল্যান্ডের যৌথ উদ্যোগে এ সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রীআবুল হাসান মাহমুদ, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এএইচএম মোস্তফা কামালউপস্থিত ছিলেন। জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলের আর্ন্তজাতিক অভিবাসন ওউন্নয়ন বিষয়ক প্রতিনিধি স্যার পিটার সুথারলেন্ডর একটি ভিডিও বার্তা এঅনুষ্ঠানে উপস্থাপন করা হয়।শেখ হাসিনা বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গেসঙ্গে সমাজ এবং অর্থনীতি বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে।প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং উৎপাদন ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের সাথে সাথে মৌলিকসেবার চাহিদা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। যা বৈশ্বিক মানব স্থানান্তরের গতিধারাকেনিয়ন্ত্রণ করছে। পাশাপাশি অভিবাসী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সামাজিকনিরাপত্তা প্রদানের মত বিষয়গুলো জোরালো হচ্ছে। বাংলাদেশের মত পরিবেশ নাজুকএবং উন্নয়নশীল দেশগুলো এসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে একথা উল্লেখ করেতিনি বলেন, এসব চ্যালেঞ্জ কার্যকরভাবে মোকাবিলার জন্য সকল উন্নয়নপরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে অবশ্যই জনগণকে রাখতে হবে। জনগণের মর্যাদা এবংকল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে। যেসব মানুষ একস্থান থেকে অন্যস্থানে গমন করছেন, তাদের ক্ষেত্রেও এটা সমানভাবে প্রযোজ্য।প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, অনেক দেশেরমত বাংলাদেশও জাতীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ে ২০১৫-পরবর্তী এজেন্ডায় টেকসই উন্নয়নলক্ষমাত্রা বা এসডিজিএস এর অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি অত্যন্তÍ গুরুত্বের সাথেতুলে ধরছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সামাজিক এবং অর্থনৈতিক খাতে, বিশেষকরে, দারিদ্র্য বিমোচন ও নারীর ক্ষমতায়নে প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছেউল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও ৬ শতাংশেরও অধিক হারে আমাদেরজিডিপি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। অতি দরিদ্রের সংখ্যা২৯ শতাংশে হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ইতোমধ্যেই ৩১ শতাংশ অর্জন করেছি। শেখহাসিনা বলেন, তিনি অভিবাসীদের সাথে কথা বলে বুঝতে পেরেছেন, অভিবাসনপ্রক্রিয়াকে আরো নিরাপদ, নিয়মতান্ত্রিক এবং কল্যাণমূলক করা প্রয়োজন। আমাদেরআলোচনার কেন্দ্রে থাকতে হবে অভিবাসীদের অধিকারের বিষয়টি। উৎস এবং গন্তব্যউভয় দেশে অভিবাসন এবং অভিবাসী কর্মীদের ইতিবাচকভাবে তুলে ধরতে হবে। আমাদেরজনগণকে বলতে হবে, অভিবাসন সব সমাজের জন্যই একটি প্রয়োজনীয় উপাদান।এক্ষেত্রে তিনি ৬টি বিষয়ের প্রস্তাব করে বলেন, এগুলো সম্ভাব্য লক্ষ্য এবংসূচক হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

    উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলো হচ্ছে-
    ১ম প্রস্তাবঃ২৫ কোটির কাছাকাছি অভিবাসী আজ বিশ্বব্যাপী কাজ করে, বসবাস করেন অথবা ভ্রমণকরেন। নিজ দেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে তারা অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। দেশেফেরার সময় তারা কাজ ও জীবনের যেসব অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এবং ধ্যান-ধারণা নিয়েফিরে আসছেন, তার মাধ্যমেও নিজ দেশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।
    ২য় প্রস্তাবঃমানুষের এক স্থান থেকে অন্যস্থানে গমন অবশ্যম্ভাবী। টেকসই অর্থনৈতিককর্মকাণ্ডের জন্য মানুষের অধিক হারে স্থানান্তরের প্রয়োজনীয়তা ক্রমাগতভাবেইগুরুত্ব পাচ্ছে। বিশেষ করে উন্নত দেশসমূহের জনসংখ্যার দৃশ্যপট পরিবর্তন এরঅন্যতম কারণ। একজন অভিবাসী কর্মীকে উন্নয়নের অনুঘটক হিসেবে দেখতে হবে এবংপ্রক্রিয়াটিতে প্রতিটি ব্যক্তির মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হবে।
    ৩য় প্রস্তাবঃএকজন অভিবাসীকর্মী যখন বিদেশে যান, তখন তাকে সামাজিক-আবেগিক-সাংস্কৃতিকক্ষেত্রে এক ধরনের ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। বিশেষ করে অভিবাসী নারী এবংবালিকাদের ক্ষেত্রে এটা বেশি করে প্রযোজ্য। নিজ সমাজেও তাদের বিভিন্ন ধরনেরভুল ধারণার মুখোমুখি হতে হয়। তাদের জন্য আরও সুন্দর এবং সহায়ক পরিবেশ তৈরিকরতে হবে।
    ৪র্থ প্রস্তাবঃবাংলাদেশের মত দেশে ক্রমাগতভাবেবৃদ্ধিপ্রাপ্ত যুব জনসংখ্যার কর্মসংস্থান সৃষ্টি একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ।বিশ্বকে এই প্রশিক্ষণযোগ্য যুব জনশক্তিকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।উন্নত দেশগুলোকে এশিয়া এবং আফ্রিকার যুব জনসংখ্যাকে জ্ঞান ও দক্ষতা বিষয়েপ্রস্তুত করতে এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশে আমরা এই বিশালসংখ্যক যুবক এবং যুবমহিলার দ্রুত প্রশিক্ষণের জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছি।
    ৫ম প্রস্তাবঃ২০১৫-পরবর্তী উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনায় অংশীদারিত্ব এবং সহযোগিতা দু’টিগুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমাদের সীমাবদ্ধতা এবং সম্পদের অপ্রতুলতা সত্বেও আমরাসহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সম্পদ ও সামর্থের যোগান দিয়েযাচ্ছি। স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে সহায়তা প্রদানের জন্য উন্নত দেশগুলোকে আরবেশি করে তাদের অর্থ-জ্ঞান-প্রযুক্তি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
    ৬ষ্ঠ প্রস্তাবঃ২০১২সালে রিও-তে অভিবাসীদের সব ধরনের অধিকার প্রদানের বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ঐকমত্য পোষণ করেছিল। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রতিটি অভিবাসীপুরুষ ও নারীর অধিকারকে সমর্থন দিতে হবে।

    বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে এমনউপায় চিহ্নিত করার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাতে অভিবাসন দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখতে পারে, প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়, অসমতাহ্রাস করে এবং বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়নে সহায়ক হয়। তিনি বলেন, অভিবাসনপ্রক্রিয়ায়, অভিবাসীদের বিশেষ করে নারী ও বালিকাদের জন্য সহায়ক পরিবেশসৃষ্টি করতে হবে। অভিবাসী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য গুণগত মৌলিকশিক্ষা, ভকেশনাল ও কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও উৎস ওগন্তব্য উভয় দেশে যাতে তারা অবদান রাখতে পারেন, সেজন্য অভিবাসীদের সব ধরনেরপ্রস্তুতিমূলক বিষয়ে সহায়তা প্রদান এবং অর্থ প্রেরণসহ অভিবাসীদের সব ধরনেরখরচের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনএবং টেকসই ও সামগ্রিক উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলোর সঙ্গে এগুলোওতপ্রোতভাবে জড়িত। এসব বাস্তবায়নের মাধ্যমেই আগামী ১৫ বছরে টেকসই উন্নয়নলক্ষ্যমাত্রা, এসডিজি এস সব দেশের জন্য একটি দূরদর্শী এবং বৈপ্ল¬বিক লক্ষ্যহিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। তিনি মনে করেন, এগুলো সর্বজনীন এবং প্রতিটিদেশের ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতি ও চাহিদা বিবেচনায় সমস্যার সামগ্রিক সমাধানপ্রয়োজন।
    প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের মার্চ মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত জনমিতিসংক্রান্ত ‘বৈশ্বিক নেতৃত্ব’ বৈঠকে শেখ হাসিনা উন্নয়নের উপর অভিবাসনেরপ্রভাব বিষয়ে যে মতামত দিয়েছিলেন তার উল্লেখ করেন। উন্নত ও উন্নয়নশীলদেশগুলোর বৈশ্বিক জনসংখ্যার পরিবর্তন এবং এর ফলাফলজনিত চ্যালেঞ্জ কীভাবেকল্যাণকরভাবে মোকাবিলা করতে পারে এবং পাশাপাশি অভিবাসন এবং স্থানান্তরেরসুফল কিভাবে কাজে লাগানো যায়, সে বিষয়ে তখন তিনি তার বক্তব্য তুলে ধরেছিলেন।