আমার সিলেট ডেস্ক,২২ আগস্ট : রাজধানীর চামেলীবাগে নিজ বাসায় পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যাকা–ের ঘটনায় আটক ওই দম্পতির একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমান অপ্রাপ্তবয়স্ক কিনা, তা জানার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। বয়স পরীক্ষার জন্য ঐশী ও গৃহকর্মী সুমীকে গতকাল বুধবার বিকাল সোয়া ৩টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর ঐশী ও সুমীকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে আবার গোয়েন্দা কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
ঐশী রহমানকে গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরুর পর তার বয়স নিয়ে প্রশ্ন ওেেঠ ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ ঐশীকে রিমান্ডে নেয়ার সমালোচনা করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানও। এই সমালোচনার মধ্যে বয়স পরীক্ষার জন্য ঐশীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয় গোয়েন্দা পুলিশ।
অন্যদিকে অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী ঐশীর বয়স ওই বিদ্যালয়ের নথি অনুযায়ী ১৮ বছর হয়নি। তবে ঐশী গত শনিবার পল্টন থানায় আত্মসমর্পণের সময় নিজের বয়স ১৮ বছর বলেছিল বলে জানান ওই থানার উপ–পরিদর্শক (এসআই) শফিউল্লাহ প্রধান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, বয়স পরীক্ষার জন্য দুপুরে ঐশীকে নিয়ে আসে গোয়েন্দা পুলিশ। প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী বিভিন্ন পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হয় জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, ‘দ্রুত’ এ পরীক্ষার ফলাফল জানা যাবে। ঐশীর বাবা পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান এবং মা স্বপ্না
রহমানের লাশের ময়নাতদন্তও করেছিলেন ডা. সোহেল।
এক্সরে বিভাগের সহকারী টেকনোলজিস্ট শাহজাহান সিরাজ সাংবাদিকদের জানান, ঐশী ও সুমি প্রত্যেকের কোমর, হাত, হাঁটু, পায়ের গোড়ালি এবং কাঁধের এক্সরে করা হয়েছে। তাছাড়া ঐশীর শরীর থেকে রক্ত এবং প্রস্রাব সংগ্রহ করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল বুধবারও ঐশীকে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাদ করা হয়। তবে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা সুমির চেয়ে ঐশীকে জিজ্ঞাসাবাদে সময় দিয়েছে বেশি। ঐশীর দেয়া তথ্যের সঙ্গে সুমির সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ঐশী তাদের কাছে বাবা–মার হত্যাকা– নিয়ে দুই রকম কথা বলেছে। একবার বলেছে, সে একাই হত্যা করেছে। আরেকবার বলছে, ২ বন্ধু জনি ও সাইদুলই তার বাবা–মাকে হত্যা করেছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ঐশী গোয়েন্দাদের কাছে বারবার মিনতি করেছে, তাকে যেন সংশোধনের জন্য সুযোগ দেয়া হয়। সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চায়। এ পর্যন্ত সে যা করেছে তার সবই ভুল ছিল।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম–কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আলোচিত এই হত্যাকা–ের কারণ ও জড়িতদের শনাক্ত করার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন শুধু ঐশীর ২ বন্ধুর বিষয়টি সামনে রয়েছে। ঐশীর বন্ধু সাইদুল ও জনিকে আটক করতে পারলে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিশু আইনের বিধানকে সামনে রেখে আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় চামেলীবাগের ফ্ল্যাটে মাহফুজ ও স্বপ্নার ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায়। দুই সন্তান ও এক শিশু গৃহকর্মী নিয়ে তারা ওই বাসায় থাকতেন। পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, ছোট ভাই ঐহী ও গৃহকর্মী সুমীকে নিয়ে ঐশী বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। পরদিন ঐহীকে খালুর বাসায় ফেরত পাঠালেও সে আসেনি।
ঐশীর সন্ধান না পেয়ে এই হত্যাকা–ের বিষয়ে তাকে সন্দেহ করে পুলিশ। এরপর গত শনিবার ঐশী নিজেই ধরা দেয়ার পর রোববার আদালতের মাধ্যমে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেয় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে ঐশী হত্যাকা–ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে দাবি পুলিশের।
ঐশীকে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের সমালোচনা করে মানবাধিকার কমিশনসহ বিভিন্ন সংগঠন অভিযোগ করেছে, এর মাধ্যমে শিশু অধিকার আইন লঙ্ঘন হয়েছে। ঐশীর পাশাপাশি শিশু গৃহকর্মীকে রিমান্ডে নেয়ারও সমালোচনা উঠেছে।