অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ক্লাস এইট থেকে অন্ধকার জগতে প্রবেশ ঐশীর

    0
    308

    আমার সিলেট ২৪.কম, ১৯ গস্ট  : অষ্টম শ্রেণী থেকেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে ঐশী। এমন তথ্যই দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম।সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ডিবি পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।

    ডিবির যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, রিমান্ডের প্রথম দিন চলছে। এ ঘটনায় আমরা ওই তিনজনসহ আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এদের মধ্যে ঐশীর বন্ধু-বান্ধবী, নিকটাত্মীয়, বাসার দারোয়ান, বাবার কলিগদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।তিনি জানান, শুধু হত্যার পরিকল্পনাই নয়, এতে ঐশীর সম্পৃক্ততার প্রমাণও পাওয়া গেছে। তবে সে ছাড়া আরো কতোজন হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল তা এখনও জানা যায়নি। হত্যার আগে কফির সাথে দশটি ঘুমের টেবলেট মিশিয়ে খাইয়ে বাবা-মাকে অচেতন করে ঐশী। টেবলেটগুলো সে কোথা থেকে সংগ্রহ করেছে তাও উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।

    মনিরুল ইসলাম আরো জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঐশী জানিয়েছে, ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোর পর বাবা তার রুমেই ঘুমাচ্ছিলেন। আর মা ও ছোটভাই ওহী মাস্টার বেডরুমে ঘুমাচ্ছিল। মাকে মারার সময় বাবা জেগে ওঠেন। তবে তিনি ঘুমের ঘোরে থাকায় বুঝে উঠতে পারেননি। ওইসময় ওহী জেগে ওঠায় তাকে বাথরুমে আটকে রাখা হয়। হত্যার পর বাবা-মার মরদেহ কাঁধে করে বাথরুমে নিয়ে যায় ঐশী ও কাজের মেয়ে সুমি। হত্যায় খঞ্জরের (দুই দিকে ধারওয়ালা ছুরি) মতো একটি অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।

    ঐশীর বন্ধু পারভেজকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান মনিরুল। পারভেজ তদন্ত কর্মকর্তাদের জানিয়েছে, ঐশীর সঙ্গে তার দুই মাসের পরিচয়। ঐশী ড্রাগ অ্যাডিকটেড ছিল। এর মধ্যে ইয়াবা ও অন্যান্য ড্রাগও নিত সে। ঐশী মাঝেমধ্যেই আত্মহত্যার চেষ্টা করতো বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।তবে রাতে তার দুই বন্ধু গাড়ি নিয়ে বাসায় ঢোকে- ঐশীর এমন স্বীকারোক্তির কোনো রেকর্ড বাসার দারোয়ানদের কাছ থেকে পুলিশ পায়নি বলে জানান তিনি।ঐশীকে রিমান্ডে নেয়ায় তার বয়স নিয়ে যে বিতর্ক শুরু হয়েছে সে প্রসঙ্গে যুগ্ম-কমিশনার বলেন, তার জন্ম তারিখের কোনো রেকর্ড এখনও পাইনি। সেই সঙ্গে তার পাসপোর্টও আমাদের কাছে এখনও আসেনি। তবে পারিবারিকভাবে জানা যায়, ঐশীর জন্ম ১৯৯৫ সালে।

    উল্লেখ্য, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকার চামেলীবাগের একটি ফ্ল্যাট থেকে মাহফুজ ও তার স্ত্রী স্বপ্নার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। দুই সন্তান ঐশী ও ওহী এবং গৃহকর্মী সুমিকে নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন তারা।রোববার দুপুর ১ টা ২৫ মিনিটে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামিদের হাজির করেন। তিনি প্রত্যেক আসামিকে ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন। অপরদিকে আসামিদের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল করে জামিনের আবেদন করেন।বিকাল ৩ টা ৫ মিনিটে এ মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ১৫ মিনিট শুনানি শেষে মহানগর হাকিম মিজানুর রহমান জামিনের আবেদন নাকচ করে প্রত্যেককে ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।রিমান্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন- ঐশির বন্ধু মিজানুর রহমান জনি ও কাজের মেয়ে সুমি।

    ঐশী তার “সুইসাইডাল নোট” এ ১২ পৃষ্ঠা জুড়ে যা লিখেছিল

    ঐশী মা-বাবাকে হত্যার আগে আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তাই তার পড়ার খাতার ১২ পৃষ্ঠা জুড়ে লিখেছিল সুইসাইডাল নোট! খাতাটি এখন গোয়েন্দার হাতে। সেখানেই পাওয়া গেছে ঐশীর আত্মহত্যার ইচ্ছা আর বাবা-মায়ের ওপর ক্ষোভের কারণ। তবে চিঠিটি সে নির্দিষ্ট কাউকে উদ্দেশ্য করে লেখেনি। লেখার আগে সে ভেবেছে নিশ্চয়ই কেউ এটি পড়বে। দুই বছর আগে খারাপ বন্ধুদের সঙ্গে মিশে বখে যায় ঐশী। কিন্তু তার বাবা-মা বিষয়টা বুঝতে পারেন তিন মাস আগে। সেই থেকে বাসার বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। এরই মধ্যে বার, ড্যান্সপার্টি, ডিজে পার্টি থেকে এমন কোনো কাজ ছিল না যার সঙ্গে তার সম্পৃক্তা নেই। ইয়াবা, মদসহ বিভিন্ন নেশায় আসক্ত থাকতো সে। পড়াশোনার চেয়ে ঐশীর কাছে এগুলোর প্রধান্যই ছিল বেশি। মূলত অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর ক্লাস এইট থেকে তার অন্ধকার জগতে প্রবেশ শুরু। স্কুলের বন্ধুদের হাত ধরেই এ পথে পা বাড়ায় ঐশী। এক সময় ডিজে পার্টির নিয়মিত ড্যান্সারে পরিণত হয়। ঐশীর সঙ্গে আটক মিজানুর রহমান রনি ছিল ঐশীর ড্যান্স পার্টনার। রাজধানীর বিভিন্ন হোটেলে তার ছিল তার অবাধ যাতায়াত। আর বাবা-মা বেঁচে থাকলে স্বাধীনভাবে এসবের কোনো কিছুই করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। তাই সে তাদের চিরতরে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
    বাবা-মাকে হত্যার আগেই সুইসাইডাল নোট লেখে ঐশী। স্কুলের খাতার ১২ পৃষ্ঠা জুড়ে লেখা সেই নোটে উঠে এসেছে তার মনের একান্ত কিছু কথা। সে বলেছে, তার বাবা-মা তাকে বোঝার চেষ্টা করেনি কখনো। তারা দোষ-ত্র“টি খুঁজে বের করেছে কিন্তু ভালো দিকগুলো দেখার চেষ্টা করেনি কখনো। সুইসাইডাল নোটে ঐশী লিখেছে-
    প্রিয়,
    আমি জানি না এই চিঠি আমি কাকে লিখছি। তারপরও কাউকে না কাউকে কিছু একটা বলতে খুব ইচ্ছে করছে। আমি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। খুবই কঠিন সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পর আরও কঠিন মনে হচ্ছে। বুক ভেঙে যাচ্ছে। আত্মহত্যার কারণ আমি কাউকে বলতে চাইছি না। একজনের দুঃখ সাধারণত আরেকজন কখনোই মন থেকে বুঝতে পারে না। আমার আত্মহত্যার কারণ তোমার কাছে খুবই অপ্রয়োজনীয় ও হাস্যকর মনে হতে পারে। সুতরাং সেই ঝামেলায় গেলাম না। আমার এ চিঠিটাকে সুইসাইডাল নোট বলা যেতে পারে। তুমি নিশ্চয় অবাক হচ্ছো, জীবনের শেষ কথাগুলো আমার আত্মীয়-স্বজন, বাবা-মাকে না জানিয়ে কোনো অপরিচিত কাউকে কেন জানাচ্ছি ! তারা কোনোদিনও আমাকে বুঝতে পারেনি। আমার অনেক খারাপ দিক আছে- সেই খারাপ দিকগুলো চালাকি করে বুঝে ফেলা ছাড়া ভালো দিকগুলো কখনোই তারা বোঝার চেষ্টা করেছে কি-না সন্দেহ!
    আমার এ চিঠিটি তাদের দেখাতে লজ্জা এবং ঘৃণা লাগে। কারও প্রতি আমার কোনো রাগ নেই। মানুষকে দোষ দিয়ে কী লাভ বলো! প্রত্যেকেরই তো নিজস্ব চিন্তাধারা, আশা থাকে। প্রত্যেকেই চায় তার ইচ্ছা পূরণ হোক। শুধু যেটা বুঝতে পারে না অন্য মানুষের যে আশা-আকাঙ্খা থাকতে পারে। আনন্দের একটি নির্দিষ্ট কারণও থাকতে পারে।
    আমি জানি, তারা আমাকে অনেক ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা নিয়ে প্রশ্ন তোলার বা দোষ ধরার ইচ্ছা, রাগ, শক্তি কোনোটাই আমার এখন আর নেই। শুধু একটাই আফসোস থেকে গেল- জীবনে অনেক স্বপ্ন ছিলো কোনোটাই পূরণ করতে পারলাম না। এ পৃথিবীর মানুষ সবাইকে বুকের মাঝে নিয়ে যে স্বপ্নগুলো দেখেছিলাম সবই কেমন যেন ধুয়ে-মুছে গেল, সব শেষ। আচ্ছা সব কিছু এমন হয়ে গেল কেন, বলোতো?
    ভাইয়া/আপু
    আমিতো মানুষকে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম! পৃথিবীকে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম! মানুষের হাসি-কান্না, আনন্দ ভালো লাগা, অনুভূতি, প্রেম, সবচেয়ে বড় কথা- মানুষকে ভালোবাসা। পৃথিবীর নানা জায়গার সৃষ্টি এতো সুন্দর যে বেহেস্তকেও যেন হার মানায়। কেন শেষ পর্যন্ত এখানে বাস করে যেতে পারলাম না! কেন এসব উপভোগ করে যেতে পারলাম না শেষ সময় পর্যন্ত!
    আমি জানি, এর উত্তর একমাত্র ঈশ্বর ছাড়া আর কারো কাছে নেই। হয়তো বা ঈশ্বরের কাছেও নেই! আমি সবসময় শুনে আসছি, তুমি যদি মন দিয়ে কোনো কিছু চেয়ে থাকো তবে অবশ্যই তা পাবে। আমার স্বপ্ন আশা-আকাঙ্খাগুলো আমি কী মন দিয়ে চাইনি! শুধু মন দিয়ে চাওয়া এই স্বপ্নগুলো পূরণ করার জন্য কত কষ্টই না করলাম। মানসিকভাবে, শারীরিকভাবে। শারীরিক কষ্টটা হয়তো অন্যের দৃষ্টিতে এত বেশি হবে না। আমার জন্য তা অনেক ছিলো। আহ, ওহ, মানসিক কষ্টের কথা বলতে গিয়ে আমার হাত কাঁপছে। একটা সময় ছিলো, এমন কোনোদিন যেত না যে আমি কাঁদতাম না। জীবনের দুইটা বছর নষ্ট হয়ে গেল। দুইটা বছর একা একা কাটালাম। এ দুইটা বছর যে কিসের ভেতর দিয়ে গিয়েছি, আমি আর ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ জানে না।

    হাজার কষ্টের মধ্যেও একটা জিনিস চিন্তা করে স্বস্তি পেতাম। অন্তত আর কেউ না থাকুক ঈশ্বর আমার পাশে থাকবে। আর কেউ না বুঝুক, উনি আমার কষ্টটা বুঝবেন। আমি এখনও জানি তিনি আমার পাশে আছেন। যা হোক এসব কথাবার্তা বলা এখন অর্থহীন। মনের ভেতর এক অজানা উল্লাস হচ্ছে। কেন জানি মনে হচ্ছে, মৃত্যুর পর আমার পছন্দের জায়গায় চলে যাব। জায়গাটা পৃথিবীর মতোই হবে। কিন্তু এ পৃথিবীতে আমার স্বপ্নগুলো এখনো পূরণ হয়নি। যেগুলো পূরণ করতে হবে। মানুষ কেমন আজব প্রাণী তাই না! আশা (হোপ) মানুষ ছাড়তে পারে না। মরতেও চাই আশা নিয়ে।

    আমি জানি না মৃত্যুর পর কী হবে! দেখা যাক কী হয়! আসলে মৃত্যুর পরের জীবন বলতে হয়তো কিছুই নেই! শুধুই মাটির সঙ্গে মিশে যাবো। তাহলে তো সবই শেষ। যা হোক, মৃত্যুর পর যদি কিছু নাও পাই, এই পৃথিবীতে যতটুকু সময় কাটিয়েছি, আমার এ ছোট্ট জীবন, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। তুমি হয়তো বা মনে করতে পারো, এ পৃথিবীতে এসে তো কিছুদিন পর আত্মহত্যাই করলাম। সময় নিশ্চয় ইহকালে ভালো কাটেনি, তাহলে কৃতজ্ঞ হওয়ার কী আছে? ন্যাকামির আর জায়গা পাই না! কি জানি!
    ভাইয়া/আপু,
    কেন জানি ভালো লাগে। পৃথিবীতে এসে অনেক কষ্ট পেয়েছি ঠিকই, সবচেয়ে বড় কষ্টটা হলো আশা শেষ হয়ে যাওয়ার কষ্ট। তীব্র হতাশা মাথার ওপর ভেঙে পড়ার কষ্ট। মানুষ কি আশা ছাড়া বাঁচতে পারে বলো, এই একটা জিনিসই তো আছে! যা কি-না বহুদিন পর্যন্ত আঁকড়ে ধরে রাখা যায়। কিন্তু আমি যদি বলি পৃথিবীতে আমার জীবনের সময়গুলোতে কোনো সুখ স্মৃতি নেই- তাহলে তো মিথ্যা বলা হবে। কত ভালো, কত আনন্দ, কত কি-ই না আছে! কত সুন্দর মানুষের হাসি, সেই সুখগুলো, কোনো ছেলেকে প্রথম ভালো লাগা- সেই অনুভূতিগুলো।

    পছন্দের আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দেয়ার সেই সময়গুলো, পৃথিবীর ইতিহাস পড়ে, সুন্দর জায়গার দৃশ্য দেখে অভিভূত হওয়ার সময়গুলো….কত কি-ই না আবিস্কার করলাম! পৃথিবীর ব্যাপারে, মানুষের জীবনের ব্যাপারে। মানুষের জীবন সম্বন্ধে কত সুন্দর সুন্দর তথ্যই না জানলাম। এর থেকে সুন্দর জিনিস আর কি-ই বা হতে পারে! মানুষের তৈরি কত অদ্ভুত-চমৎকার জিনিসই না দেখার সৌভাগ্য হলো।
    ঈশ্বরের বিশাল ও তুলনাহীন সৃষ্টি দেখতে পারলাম। এই জায়গাটায় না আসলে এসব কীভাবে জানতাম! কীভাবে দেখতাম! মরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর এখন সবকিছুই সহজ মনে হচ্ছে। এক ধরনের স্বস্তি বোধ করছি। সবচেয় বেশি স্বস্তি বোধ করছি জীবন যুদ্ধ আর আমাকে করতে হবে না। জীবনযুদ্ধে হেরে গেলাম এই কথাটা আগে শুধু বইতে পড়তাম। তখন অনুভব করতে পারিনি, এখন বুঝতে পারছি জীবনযুদ্ধে হেরে যাওয়া আসলে কী জিনিস। আমি সব সময় শুনে এসেছি, যারা আত্মহত্যা করে তারা নাকি দোজখে যায়। জিনিসটা কেন জানি বিশ্বাস করতে পারি না। কারণ যে মানুষটা এখন স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে, তার ভেতরে কী পরিমাণ হতাশা, কষ্ট, দুঃখ থাকলেই না জানি সে এমন একটা কিছু করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে! এই জায়গাটাকে আমরা কতই না ভালোবাসি।
    হাজার কষ্টের মধ্যেও লড়াই করে যাই শুধুমাত্র এই জায়গাটাতে টিকে থাকার জন্য, একটু সুখে থাকার জন্য। একটা মানুষের বুক কতটা ভেঙে গেলে এ ধরনের, এই সাধের জীবন, পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে! তার বুক ভাঙা কষ্টের কি কোনো দাম নেই। পৃথিবীর যেখানে আমরা এক টুকরো সুখের জন্য কত কিছুই না করি, এত কষ্ট পাওয়ার পরও। ঈশ্বর কী এতোটাই পাষাণ! কি দোষ করেছিলাম আমি। জীবনের কথা না হয় বাদই দিলাম। আমি এমনকি খারাপ কাজ করেছিলাম যে, কোনো কিছুই সত্যি হতে দেখলাম না। মাঝখান দিয়ে জীবনে আরো যে যুদ্ধ করে যাব সেই উপায়টাও শেষ হয়ে গেল। ঈশ্বর বুঝি আসলেই পাষাণ।
    লেখার মতো আরো অনেক কিছুই আছে। কিন্তু আর কিছুই লিখতে পারছি না। জ্বরের জন্য হাত কাঁপছে। শরীর জ্বলন্ত আগুনের মতো গরম। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে। এখন যে কেউ একজন গায়ে হাত রাখবে এমন কেউ নাই। থেকেও যেন নাই। এই কথাটা সত্যি- মানুষ পৃথিবীতে আসে একা, চলেও যায় একা। হায়রে পৃথিবী! কত ভালোবাসার, কত সাধের! আমি ভাববো এক সময় পৃথিবী নামে আমার পরিচিত একটা ছেলে ছিলো!