৬ ডিসেম্বরের এই দিনে পাক হানাদার থেকে শ্রীমঙ্গল মুক্ত হল

    0
    533

    নিজস্ব প্রতিনিধিঃ  আজ ৬ ডিসেম্বর, পাকিস্তানী হানাদার ও তাদের দোসরদের কবল থেকে শ্রীমঙ্গল মুক্ত দিবস। ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় দিবস হলে ও ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বরের এই দিনে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থানা পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয়েছিল। তবে এই মুক্তি খুব সহজে আসেনি এর আগে হানাদার বাহিনীর সাথে রক্তক্ষয়ী লড়াই করে শহীদ হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা।
    স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিলের পর থেকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলে হত্যা করেছিল অর্ধশতাধিক মুক্তিযোদ্ধাসহ অসংখ্য নারী-পুরুষদের। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শহীদ শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণে সূচিত অসহযোগ আন্দোলন শ্রীমঙ্গলে তীব্র রূপ নেয়। অফিস-আদালতসহ শ্রীমঙ্গলের চা শিল্পে সৃষ্টি হয় অচলাবস্থা।দীর্ঘ ৯ মাস পাক হানাদার বাহিনী দেশব্যাপী গণহত্যা ও নির্মম নির্যাতন চালিয়েছিল।

    শ্রীমঙ্গলে ফিনলে টি কোম্পানির ভাড়াউড়া চা বাগান এলাকায় বধ্যভূমিতে ৪৭ জন চা শ্রমিককে একসঙ্গে দাঁড় করিয়ে গুলি ছুঁড়ে হত্যা করেছিল পাক-হানাদার বাহিনী,এ সময় দেশীয় রাজাকাররা তাদের সহযোগিতা করে।ভাড়াউড়া চা বাগানে যেতে কলেজ সড়কে নির্মিত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিসৌধ আজও তার সাক্ষী বহন করে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে। এ ছাড়া শ্রীমঙ্গল পৌর শহরের হবিগঞ্জ রোডের ওয়াপদার অফিসের পিছনে একটি এলাকায় মানুষ খুনের নির্ধারিত জায়গা তৈরি করা হয়েছিলো।

    এ ছাড়াও বর্তমান বিজিবি সেক্টর এলাকায় সাধু বাবার বটতলা খ্যাত (বর্তমান নামকরণ বধ্যভূমি-৭১) বেশ কয়েকটি স্থানে পাক বাহিনী গণহত্যা চালিয়েছিল।প্রকাশিত ইতিহাস সুত্রে জানা যায়,পাক হানাদার বাহিনীর হাতে শ্রীমঙ্গলে প্রথম শহীদ হয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মুকিত লস্কর। এরপর একে একে শহীদ আনিস মিয়া (রিক্সা চালক), ছাত্রলীগ নেতা লামুয়া গ্রামের শহীদ মইনউদ্দিন, শহীদ শম্ভু ভূমিজ, শহীদ সমীর সোম, শহীদ আব্দুস শহীদ, শহীদ সুখময় পাল, শহীদ সুদর্শন, শহীদ আলতাফুর রহমান আরোও অনেকেই ।
    এছাড়া পাকবাহিনী পালিয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে তাদের শেষ নির্যাতনের শিকার হন চা-শ্রমিক নেতা ও চা-শ্রমিকদের মধ্যে প্রথম গ্র্যাজুয়েট পবন কুমার তাঁতী। পাক-হানাদার বাহিনী পবনকে হত্যা করে ওয়াবদার পাশে ভুরভুরিয়া ছড়ায় তার লাশ ফেলে যায়। এ ছাড়া শ্রীমঙ্গল পৌর শহরের হবিগঞ্জ রোডের ওয়াবদার অফিসের পিছনে একটি ছড়ায় ও বর্তমান বিজিবি সেক্টরের সাধু বাবার বটতলা খ্যাত (বর্তমান নাম : বধ্যভূমি-৭১) বেশ কয়েকটি স্থানে পাক বাহিনী গণহত্যা চালিয়েছিল। আর সেখানে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ নিকুঞ্জ সেন, সমীর সোম ও অর্জুন দাসসহ বহু বীরসেনানীকে।
    মুক্তিযুদ্ধের এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মরনপন লড়াই ও ভারতের সীমান্ত থেকে মুক্তি বাহিনী ক্রমশ ক্যাম্প অভিমুখে এগিয়ে আসার খবরে পাক বাহিনী ভীত হয়ে পড়ে। অবস্থার বেগতিক দেখে ৬ ডিসেম্বর ভোরবেলা তারা পালিয়ে মৌলভীবাজরে আশ্রয় গ্রহণ করে এর মাধ্যমেই মুক্ত হয় শ্রীমঙ্গল শহরসহ অন্যান্য এলাকা উড়ানো হয় স্বাধীন বাংলাদেশের রক্তীম পতাকা।

    উল্লেখ্য স্থানীয় কয়েকটি সুত্রে জানা যায় শ্রীমঙ্গলে মহান মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে যিনি প্রথম শহীদ হন তিনি হচ্ছে লামুয়া গ্রামের হরমুজ উল্লাহ্ তবে এ বিষয়ে দ্বিমত ও রয়েছে তাই আরও গবেষণা প্রয়োজন। পরে ৭১ সালের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে শ্রীমঙ্গলে সাধু বাবার বটতলার পাশে (বিজিবি ক্যাম্পের পাশে) ২০১০ সালের ১০ ডিসেম্বর মাসে নির্মাণ করা হয় বধ্যভূমি-৭১ নামের একটি স্মৃতিস্তম্ভ।