৫ কিশোরীর মৃত্যুঃরহস্য বাড়ছে ইঙ্গিত সমকামিতারও

    0
    245

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৬ফেব্রুয়ারীঃ শোকে পাথর জামবনির নায়েক পাড়া৷ বিষ খেয়ে গ্রামের পাঁচ কিশোরী কেন স্বেচ্ছায় মৃত্যু ডেকে আনল, ভেবে মাথা কুটছে গ্রাম৷ সোমবার রাতে ওদের দেহ উদ্ধার হয় গ্রামেরই এক তেঁতুলগাছের তলায়৷ অথচ সকালেও তো ওদের কেউ কেউ গরু চড়িয়েছে, ভাত খেয়ে দুপুরে ঘুমিয়েছে, বিকেলে শামুকের খোল ছাড়িয়ে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে পুকুর পাড়ে গিয়েছিল৷ সেই ওরাই কেনও পরস্পরের হাতে ওড়না বেঁধে একসঙ্গে আত্মহত্যা করল, বুঝতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশও৷ ওদেরই একজন বিষের জ্বালায় ছটফট করতে ওড়নার বাঁধন খুলে গ্রামে ছুটে এসে খবরটি জানিয়েছিল৷ কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গেলেও পাঁচ জনকে জীবিত অবস্থায় পাননি গ্রামবাসীরা৷

    বিভ্রান্তি বাড়ছে বেঁচে থাকা পূজা নায়েকের ঘন ঘন বয়ান বদল নিয়েও৷ সোমবার সন্ধ্যায় ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে নিয়ে আসার পর সে বলেছিল, গ্রামের লোকে তাদের খারাপ ভাবে৷ ওড়ো গ্রামের নায়েক পাড়া ঘুরে অবশ্য সে কথার সত্যতা বোঝা যায়নি৷ ধড়সা দেশবন্ধু আদর্শ বিদ্যামন্দিরের ভারপ্রান্ত প্রধান শিক্ষক সুমনকুমার পাল বলেন,’পূজা ও সোমা আমাদের স্কুলে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিল৷ খুব শান্ত প্রকৃতির ছিল ওরা৷’ গ্রামের বাসিন্দা নেপাল খুঁটিয়া বলেন, ‘ওদের আচরণ কোনদিন খারাপ লাগেনি আমাদের৷’ মঙ্গলবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়ার পর পূজা অবশ্য বলেছে অন্য কথা৷ পুলিশ জানিয়েছে, জেরায় পূজা বলেছে যে কয়েক দিন আগে গ্রামে শিবরাত্রির মেলায় ঝাড়খণ্ড থেকে সরস্বতীর হবু স্বামী ও বন্ধুরা এসেছিল৷ সেখানে অভিভাবকরা তাদের দেখে বকাবকি করেছিল৷ পূজাকেও মারধরও করেছিল৷
    কিন্তু আত্মহত্যা কেন? রহস্য বাড়ছে ক্রমশ৷ ইঙ্গিত রয়েছে সমকামিতারও৷ পূজা সোমবার সেই সম্ভাবনা উস্কে বলেছিল, ‘আমরা পরস্পরকে ভালোবাসতাম৷ কেউ কাউকে ছেড়ে থাকার কথা ভাবতে পারতাম না৷’ ছাড়াছাড়ির সম্ভাবনা অবশ্য তৈরি হয়েছিল৷ মৃতদের একজন সরস্বতীর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে৷ বেবির বিয়ের কথাবার্তা চলছে বলে জানান গ্রামবাসী মুক্তিপদ দাস৷ ঝাড়খণ্ডের এক যুবকের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক করেছে সরস্বতীর পরিবার৷ তাঁর বাবা বিশ্বনাথ নায়েক ও মা বুধন দেবী নিমন্ত্রণ করতে আত্মীয়দের বাড়ি গিয়েছেন৷ তাঁদের কাছে মেয়ের মৃত্যুর খবরই পৌঁছয়নি এখনও৷ সরস্বতীর দাদু কর্ণ নায়েক বলেন, ‘পড়াশোনায় ছেড়ে দিয়েছিল। আমার নাতনি সরস্বতীর মত নিয়েই বিয়ে ঠিক করা হয়েছিল৷ ১৫ হাজার টাকার বরপণও মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ কেনও যে ও মরল বুঝতেই পারছি না৷’

    বাড়ির উঠোনে খাটিয়ায় বসে গতকাল থেকে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছেন মৃত সোমা নায়েকের মা জ্যোত্স্না দেবী৷ কান্নার সুরে নিজে নিজেই বলছেন, ‘তোরা মনের কথা ক্যানে বললি নাই গো৷ তোদের যেমন জোড় ছিল, তেমন মিল ছিল গো৷’ মৃত পালং নায়েকের বোন নন্দিনী বলেন, ‘দিদিরা একসঙ্গে থাকতো৷ ওদের কাছে আমরা গেলে তাড়িয়ে দিত৷’ মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন পুজার ঠাকুমা প্রমীলা নায়েক বলেন, ‘কোনো ছেলের সঙ্গে ভাব-ভালোবাসাও ছিল না আমার নাতনির৷ ওরা ছয় জনই সব সময় একসঙ্গে ঘুরত৷’ পুলিশ তদন্তে ধরা পড়েছে পরিকল্পনা করেই আত্মঘাতী হয়েছে ওরা৷ পরস্পরের হাত ওড়নায় জড়িয়ে ঝোপঝা.ড ঘেরা পুকুর পাড়ে বসে প্লাস্টিকের কাপে জলে বিষ গুলে কুড়কুড়ের সঙ্গে খেয়েছিল ছয় জনই৷

    জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সমীর ধলের বক্তব্যেও সমকামিতার ইঙ্গিত স্পষ্ট৷ মৃতদের গ্রামে এসে ওদের পরিবার ও গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলার পর সমীরবাবু বলেন, ‘অসম বয়সের হলেও ছয় জনের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব ছিল৷ নিজেদের মধ্যে কোনো  প্রতিশ্রীতি থেকেই হয়তো পরিকল্পনা মাফিক এ রকম চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারে ওরা৷ পুলিশ তদন্ত করে দেখুক৷’

    সোমবারের পর মঙ্গলবারও ওড়ো গ্রামে তদন্তে গিয়েছিলেন ঝাড়গ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অজিত সিং যাদব৷ তিনি তদন্ত নিয়ে মুখ খুলতে চাননি৷ বলেছেন, ‘আমরা পরিবারগুলির পাশে আছি৷’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘আমার সার্ভিস জীবনে এমন জটিল কেস দেখিনি৷ পরিবারগুলি কিছু বুঝতে পারছে না৷ গ্রামের লোকের কাছে কোনো  ক্লু নেই৷ সমকামের পরিণতি বলে মনে হলেও সিদ্ধান্তে আসতে পারছি কই?’ পুলিশ মনে করছে, সুস্থ হওয়ার পর পুজাকে জেরা করে হয়তো আত্মহত্যার আসল কারণ জানা যেতে পারে৷

    ওড়নার ফাঁস খুলে পুকুর পাড় থেকে পালিয়ে পূজা গ্রামের মোড়ে গোপাল খুঁটিয়ার দোকানের সামনে এসে শুয়ে পড়েছিল সোমবার সন্ধ্যায়৷ গোপালবাবু বলেন,’হঠাৎ দেখি পূজা মাটিতে পড়ে ছটফট করছে৷ ও বলছিল, ওরা সবাই বিষ খেয়েছে৷ বেবিকে তোমরা বাঁচাও৷’ মর্মান্তিক এই ঘটনার পর মঙ্গলবার গ্রামের দোকানও কেউ খোলেননি৷ উনুন জ্বলেনি কোনো বাড়িতে৷ মৃত পালং নায়েকের বাবা তানু নায়েক বলেন, ‘ছোট থেকে হার্টের সমস্যা রয়েছে বলে পালংয়ের বিয়ে দিইনি৷ গতকাল সকালে ও গরু চরিয়েছে, ভাত খেয়েছে, দুপুরে ঘুমিয়েছে, বিকেলে শামুক ছাড়িয়ে কাপড় নিয়ে ওরা একসঙ্গে পুকুরে গিয়েছিল৷’সূত্রঃওয়েবসাইট