৩০০কোটি টাকা মূল্যের বাড়ি আত্মসাতের মামলায় গ্রেপ্তার মওদুদ

    0
    232

    মিসেস ইনজে মারিয়া ফ্ল্যাজ ও তাঁর স্বামী মোঃ এহসান যুদ্ধের পর পরই দেশ ত্যাগ করেনএরপর প্লটটি পরিত্যক্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত করে সরকারস্বাধীনতার পর ওই নারী (ইনজে মারিয়া) বাংলাদেশে আসার কোনো দালিলিক প্রমাণ না থাকার পরও মওদুদ আহমদ তাঁর পাওয়ার অব অ্যাটর্নিতে তা উল্লেখ করেন

    আমারসিলেট24ডটকম,২১জানুয়ারীঃ  গুলশানে ৩০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের সরকারি বাড়ি আত্মসাতের অভিযোগে দায়েরকৃত দুর্নীতি মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক হারুন অর রশীদ বর্তমানে কারাগারে থাকা ব্যারিস্টার মওদুদকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। মামলার তদন্তের প্রয়োজনে আসামিকে কারা ফটকে তিন দিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করেন তিনি।
    ঢাকার মহানগর হাকিম মোস্তাফিজুর রহমান আসামিকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। একইসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রার্থিত আবেদন শুনানির জন্য আগামী ২৭ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন। ঢাকার সিএমএম আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রসিকিউটিং শাখার কর্মকর্তা আবদুর রশীদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
    প্রসঙ্গত গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর দুদকের উপপরিচালক হারুনুর রশীদ রাজধানীর গুলশান থানায় মওদুদ আহমেদ ও তাঁর ভাই মনজুর আহমেদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন।
    মামলায় বলা হয়, ‘১৯৬০ সালের ২৪ আগস্টে গুলশান আবাসিক এলাকায় অবস্থিত এক বিঘা ১৩ কাঠা আয়তনের (হোল্ডিং নং ১৫৯) প্লটটি পাকিস্তানি নাগরিক মোঃ এহসানকে হস্তান্তর করে তৎকালীন ডিআইটি (বর্তমানে রাজউক)। পরে লিজ গ্রহীতার প্রত্যার্পণ সংক্রান্ত আবেদনের ভিত্তিতে তাঁর স্ত্রী অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক মিসেস ইনজে মারিয়া ফ্ল্যাজের নামে ওই প্লটটি ৬৫ সালে লিজ দলিল হিসেবে রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়। সরকারি পরিত্যক্ত সম্পত্তি তালিকা প্রণয়ন সংক্রান্ত মিনিস্ট্রি অব ক্যাবিনেট অ্যাফেয়ার্স জারির আগেই মিসেস ইনজে মারিয়া ফ্ল্যাজ ও তাঁর স্বামী মোঃ এহসান যুদ্ধের পর পরই দেশ ত্যাগ করেন। এরপর প্লটটি পরিত্যক্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত করে সরকার। স্বাধীনতার পর ওই নারী (ইনজে মারিয়া) বাংলাদেশে আসার কোনো দালিলিক প্রমাণ না থাকার পরও মওদুদ আহমদ তাঁর পাওয়ার অব অ্যাটর্নিতে তা উল্লেখ করেন।
    মওদুদ আহমদ ওই সম্পত্তি আত্মসাতের অসৎ উদ্দেশ্যে নিজেকে মিসেস ইনজে মারিয়া ফ্ল্যাজ প্রদত্ত আম মোক্তার নামার (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) দাবিদার দেখানোর জন্য ১৯৭৩ সালের ২ আগস্ট একটি আমমোক্তারনামা তৈরি করে নিজের কাছে রাখেন এবং পরে সুবিধামতো সময়ে এটি ব্যবহার করেন। নানা কৌশলে বাড়িটি দখলে নিয়ে নিজেকে ইনজে মারিয়া ফ্ল্যাজের ভাড়াটিয়া হিসেবে দেখিয়ে উক্ত বাড়িতে এখন পর্যন্ত বসবাস করছেন।
    এরপর ১৯৭৮ সালে তৎকালীন সরকারে যোগদান করে প্রথমে সরকারের মন্ত্রী ও ১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মিন্ত্রসভায় উপপ্রধানমন্ত্রী থাকার সময় নিজের ক্ষমতার অবৈধ প্রভাব বিস্তার করে বাড়িটিকে পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য গুলশান এভিনিউর ১৫৯ নং হোল্ডিংয়ের প্লটটির মূল্য মাত্র ১০০ টাকা দেখিয়ে নিজ নামে বরাদ্দ নেন। ১৯৮০ সালে প্লটটি রেজিস্ট্রি করা হয়। এরপর ১৯৮৪ সালে ইনজে মারিয়া কর্তৃক জনৈক মহসিন দরবারের নামে একটি আমমোক্তারনামা সম্পাদন দেখানো হয়। ১৯৮৫ সালে ইনজে মারিয়া মারা গেছেন জেনেও মহসিন দরবার নামের ব্যক্তিকে দিয়ে মৃত ব্যক্তির আমমোক্তার হিসেবে ৮৫ সালে বাড়িটি মওদুদের সহোদর ভাই মনজুর আহমদের নামে চুক্তি সম্পাদন দেখানো হয়।
    মওদুদ তাঁর ভাই মনজুর আহমদকে অবৈধভাবে উক্ত বাড়ির কথিত মালিক বানানোর কাজে একে অন্যকে সহায়তা করার মাধ্যমে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অপরাধ করেছেন মর্মে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
    উল্লেখ্য, ব্যারিস্টার মওদুদ বর্তমানে কারাগারে আছেন।আর তাঁর ভাই মনজুর আহমদ রয়েছেন লন্ডনে।