৩কোটি টাকাসহ মুয়াজ্জিন গ্রেপ্তারের পর মূল হোতা

    0
    257

    আমারসিলেট24ডটকম,১৫অক্টোবরঃ আজ বুধবার সকাল ৭টার দিকে রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা থেকে বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা ‘গ্রুপ ফোর’র টাকা চুরির মূল হোতা শহিদুল হক শান্তনুকে (২৪) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ান-৭ (র‌্যাব)। শান্তনু ছিলেন গ্রুপ ফোরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মী। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার সরকারি সিটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মসজিদের মুয়াজ্জিন বশিরুল আলমের (২৮) শয়ন কক্ষ থেকে ২ কোটি ৯৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধারের পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মুয়াজ্জিনকে গ্রেপ্তারের খবর গণমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে শান্তনু পালিয়ে যায় বলে দাবি করে র‌্যাব।

    গ্রেফতার হওয়া মুয়াজ্জিন তার স্বীকারোক্তিতে জানান, জীবনে একসঙ্গে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত দেখেছি। তা-ও ব্যাংকে। গ্রামে জমিজমা বিক্রির সময় দেখেছিলাম তার চেয়েও কম। কিন্তু একসঙ্গে ২ কোটি টাকা দেখিনি কখনও। আর এখানে তো আড়াই কোটিরও বেশি বলা যায়। সেদিন এত টাকা দেখে ঢোক গিলতে পারছিলাম না। তবে সত্যি বলছি। “আমি এ চুরির বিষয়ে জানলেও নিজে জড়িত নই”।

    জিজ্ঞাসাবাদে বশিরুল আলম পুলিশকে জানান, ঘটনার মূল হোতা শহিদুল হক ওরফে শান্তনু (২৪) তার পূর্বপরিচিত। সে নরসিংদীর আদিয়াবাদের হোসেন আলী ভূঁইয়ার পুত্র। বেশ কিছুদিন ধরেই শান্তনু এ চুরির ছক আঁকছিল।
    গভীর রাতে চুরি করে পরদিন সকাল সাড়ে ৭টায় সে তিনটি চালের বস্তায় চোরাই টাকা নিয়ে তার বাসায় আসে। পরে উভয়ে বসে টাকাগুলো প্যাকেটবদ্ধ করে দু’টি ট্রলিব্যাগে সংরক্ষণ করে রাখে। শান্তনু বর্তমানে পলাতক। বশিরুল আলম বলেন, টাকাগুলো নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। শান্তনু বলেছিল সে ঢাকায় চলে যাবে। কিছুদিন আত্মগোপন করে থাকবে। তারপর সুযোগ বুঝে দেশের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করবে।

    নিজেদের আর্থিক অবস্থার বিষয়ে মুয়াজ্জিন বলেন, অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল থাকলে কি আর এখানে আসতাম।বিশ্বাস করুন, আমি টাকাগুলো চুরি করতে যাইনি। শান্তুনু চুরি করেছে। তবে আমি বিষয়টি জানতাম। প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি। পরে সে যখন টাকার বস্তা নিয়ে এলো তখন ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে মনে হলো আমি যেন তা স্বপ্নে দেখছি।

    এ বিষয়ে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল হাফ ছেড়ে বলেন, ঘটনাটির পর থেকে ভীষণ চাপে ছিলাম। টার্গেট ছিল যতদ্রুত টাকাগুলো উদ্ধার করবো। শেষমেশ আমরা সফল হয়েছি। কিন্তু আসল চোর ওই প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মী শান্তনু পালিয়ে গেছে। আশা করছি সে ধরা পড়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, ৩ কোটি টাকা রাখার ব্যাপারে পুলিশ বিভাগ আগে থেকে কিছুই জানতো না। এত টাকা রাখার আগে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে জানিয়ে রাখা ভাল।

    পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার গভীর রাতে নগরীর খুলশী থানায় নিরাপত্তা সহায়তাদানকারী সেরকারি প্রতিষ্ঠান গ্রুপ ফোর সিকিউরিটিজের অফিস থেকে তিন কোটি টাকা চুরি হয়। ঘটনার পরপরই প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র ম্যানেজার তারেক মনসুর বাদী হয়ে মামলা করেন।

    উল্লেখ্য,রোববার ভোররাতের দিকে নগরীর খুলশীর ৪ নম্বর সড়কের ১৫/২ নম্বর ভবনে প্রতিষ্ঠানটির টাকার ভল্ট খুলে তিন কোটি টাকা চুরি করে কে বা কারা। পরে ভল্টের গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজ পর্যবেক্ষণে চুরির বিষয়টি ধরা পড়েছে। মুখোশধারী এক চোর ভল্টের নকল চাবি ব্যবহার করে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

    মূলত বিভিন্ন অফিসের টাকা-পয়সা নিরাপদে পরিবহন করার কারণে তাদের ভল্টে এত টাকা রাখা হয়েছিল। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় ঘেরা পুরো অফিসে সার্বক্ষণিকভাবে একজন ফ্রন্ট ডেস্ক অপারেটর আছেন। তার কাছে ভল্টের চাবি থাকে। ভল্টের সিকিউরিটির জন্য সার্বক্ষণিকভাবে দু’জন নিরাপত্তারক্ষীও থাকেন।

    ভল্টে মোট জমা টাকার পরিমাণ ছিল ৫৪ কোটি টাকা। পরে অফিসার নিজাম উদ্দিন ও আবুল আরমান ফজলুল করিম ভল্ট খুলে হিসাব করে তিন কোটি টাকা কম দেখতে পান। বিষয়টি তারা সঙ্গে সঙ্গে উপরের মহলকে জানালে খবরটি ছড়িয়ে পড়ে। পরে গোপন ক্যামেরায় দেখা যায়, মুখোশধারী এক লোক চাবি দিয়ে ভল্টের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে। সাদা প্লাস্টিকের বস্তায় টাকা ভর্তি করে বের হয়ে যায় দ্রুত।

    ঘটনার পরপরই নড়েচড়ে বসে পুলিশ। তারা অভিযান চালাতে শুরু করে। এক পর্যায়ে নিশ্চিত হয় প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তাকর্মী শান্তনু এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। সোমবার গোপন রাত ৩টায় পুলিশ প্রথমে হানা দেয় শহরের সদরঘাট থানার সরকারি সিটি কলেজ জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন মোঃ বশিরুল আলমের বেডরুমে। সেখানেই পাওয়া যায় দুই কোটি ৯৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।গ্রেপ্তার করা হয় বশিরুল আলমকে। তার পরিচয়ও পাওয়া গেছে। তিনি কক্সবাজারের মহেশখালীর দরিষার পাড়ার বাসিন্দা। তার পিতার নাম মৃত নজির আহমদ।