১৬টি বছর পর পাকিস্তানকে আবার হারাল বাংলাদেশ

    0
    226

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৭এপ্রিলঃ  অবর্ণনীয়, অতুলনীয় অনুভূতি আর অপার আনন্দ। মিরপুর স্টেডিয়াম জুড়ে সমুদ্রের গর্জন। পর্বত প্রমাণ ভার মুক্তির আনন্দে ভাসছে গোটা বাংলাদেশ। প্রায় দেড় যুগ ধরে জমতে থাকা গ্লানির আস্তরণ জয়ের বাতাসে উড়ে গেল।

    ক্রিকেট মাঠে পাকিস্তানকে দ্বিতীয়বার না হারাতে পারার গল্পটা এখন অতীত। ১৬ বছরের বন্ধ্যাত্ব ঘুচিয়ে দিলেন সাকিব-তামিম-মুশফিকরা। শুক্রবার পাকিস্তানকে ৭৯ রানে পরাজিত করেছে বাংলাদেশ। ড্যান কেক তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।

    সর্বশেষ ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে ৩১ মে ইংল্যান্ডের নর্দাম্পটনে পাকিস্তানকে ৬২ রানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। তারপর কেটে গেছে ১৬টি বছর। অনেকবার কাছাকাছি এসেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হারের কষ্টই বয়ে বেড়াতে হয়েছে টাইগারদের।

    ২০১২, ২০১৪ সালে পরপর দুটি এশিয়া কাপের আসরই তার জলজ্যান্ত উদাহরণ। শুক্রবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আর ভুল করেননি সাকিবরা। অবশেষে হারের লজ্জা দিতে পেরেছে তারা পাকিস্তানকে।

    বিশ্বকাপের ছোঁয়ায় বদলে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। বিশ্বকাপ পরবর্তী প্রথম ম্যাচেই যার প্রদর্শনী করলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। এদিন নিজেদের ২৯ বছরের ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথমবার এক ম্যাচে দুই ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি প্রথমবার দেখল বাংলাদেশ। সেঞ্চুরি করেছেন তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। এদিন ওয়ানডেতে নিজেদের দলীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটাও গড়েছে বাংলাদেশ। জোড়া সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ ৬ উইকেটে করে ৩২৯ রান। জবাবে ৪৫.২ ওভারে ২৫০ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। মুশফিকুর রহীম ম্যাচ সেরা হন।

    ৩৩০ রানের টার্গেটটাই এই পাকিস্তানের জন্য বিষম চাপ ছিল। পাকিস্তানের ৫৩ রানের জুটি ভেঙে বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছেন আরাফাত সানি। নাসির হোসেন দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেছেন সফরাজ আহমেদের। তিনি ২৪ রান করেন। অভিজ্ঞ হাফিজ বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি। রানআউট হয়েছেন ৪ রান করে। তৃতীয় উইকেটে হারিস সোহেলের সঙ্গে ৮৯ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক আজহার আলী। তবে তাকে ফিরিয়েছেন তাসকিন ইনিংসের ২৮তম ওভারে। আজহার ৭২ রান করেন।  দলীয় ১৭৫ রানে হারিস সোহেলকে ফেরান তাসকিন। তিনি ৫১ রান করেন। পঞ্চম উইকেটে ৪২ রানের জুটিতে প্রতিরোধ গড়েছিলেন রিজওয়ান ও ফাওয়াদ। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে ফাওয়াদ (১৪), সাদ নাসিমকে আউট করেন আরাফাত সানি।

    ম্যাচ হেলে পড়ে বাংলাদেশের দিকে। ওয়াহাব রিয়াজ বোল্ড হন তাসকিনের বলে। একপ্রান্ত আগলে লড়াই করা রিজওয়ান ৬৭ রান করে রুবেলের শিকার হন। বাংলাদেশের পক্ষে আরাফাত সানি ৩টি, তাসকিন ৩টি করে উইকেট নেন।

    এর আগে তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের ওপেনিং জুটিতে ভালো শুরুও পেয়েছিল স্বাগতিকরা। তাদের ৪৮ রানের জুটি ভাঙে সৌম্য সরকার রানআউট হলে। তিনি ২০ রান করেন। বিশ্বকাপের হিরো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ উইকেটে থিতু হতে পারেননি। তিনি ৫ রান করে রাহাত আলীর বলে বোল্ড হন। তামিম-মুশফিকের জুটিতেই বড় স্কোরের সিড়িটা ধরে বাংলাদেশ। তৃতীয় উইকেট জুটিতে তারা ১৭৮ রানের জুটি গড়েন। যা তৃতীয় উইকেটে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের জুটি। এর আগে ১৭৪ রানের জুটি ছিল  বিজয়-মুশফিকের, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে খুলনায় ২০১২ সালে।

    এই জুটি আবার পাকিস্তানের বিপক্ষেও বাংলাদেশের সেরা। আগে ১২৮ রানের জুটি ছিল অলক কাপালি ও রাজিন সালেহর ২০০৩ সালে। আর বাংলাদেশ-পাকিস্তান দ্বৈরথে তৃতীয় সেরা। সর্বোচ্চ ২০৩ রানের জুটি পাকিস্তানের মঈন উল আতিক ও ইজাজ আহমেদের গড়া ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামে।

    ৪৭ রানে সাদ নাসিমের হাতে জীবন পাওয়া তামিম হাফ সেঞ্চুরি করেন ৭৫ বলে। পরেই খোলস ছাড়িয়ে স্বরুপে ফিরেন তামিম। ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরিটা করেন ১১২ বলে। ওয়ানডেতে দুই বছর পর সেঞ্চুরি পেলেন তিনি। সর্বশেষ সেঞ্চুরি ছিল ২০০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডেতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিয়ান এখন তামিম। সর্বোচ্চ ছয়টি সেঞ্চুরি আছেন সাকিব আল হাসানের। ১৩৫ বলে ১৩২ রান (১৫ চার, ৩ ছয়) করে ওয়াহাব রিয়াজের বলে আউট হন তিনি।

    উইকেটে এসে শুরু থেকেই ব্যাট হাতে ঝড়ো ব্যাটিং করা মুশফিক হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন ৪২ বলে। পরে তিনিও সেঞ্চুরি করেন ৬৬ বলে। যদিও ব্যক্তিগত ৩৫ রানে তার সহজ ক্যাচ ফেলেছেন জুনায়েদ খান।

    ওয়াহাব রিয়াজের দ্বিতীয় শিকার হওয়ার আগে মুশফিক খেলেন ৭৭ বলে ১০৬ রানের (১৩ চার, ২ ছয়) নান্দনিক ইনিংস। পরে সাকিবের ৩১, সাব্বিরের ১৫ রানে তিনশো ছাড়ানো স্কোর পায় বাংলাদেশ। পাকিস্তানের ওয়াহাব রিয়াজ ৪টি উইকেট নেন।