১০ই মহররমঃআজ শাহাদাতে কারবালা

    0
    243

    আমার সিলেট  24 ডটকম,১৫নভেম্বরঃ আজ ১০ই মহররম। পবিত্র আশুরা।সত্য মিথ্যার চির যোদ্বের দিন। ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম হৃদয়বিদারক ও মর্মস্পর্শী ঘটনার দিন। বিশ্ব ইতিহাসেও দিনটি স্বীকৃত নির্মমতার জন্য। আজকের দিনে ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে পৃথিবীর নির্মমতম ঘটনার অবতারণা হয়।এই দিনে ইসলামের মুখুশ পরা  ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দঃ)-এর প্রিয় দৌহিত্র সাইয়্যেদুনা হজরত ইমাম হোসেন (রাঃ) মাত্র ৭২ জন সহযোগী নিয়ে শহীদ হন। তার আগে ইয়াজিদ বাহিনীর ঘাতকরা একে একে হত্যা করে ইমাম হোসেন (রাঃ) এর সফর সঙ্গী  ও সকল নিকটাত্মীয়কে। মুসলিম জাহানের তৎকালীন স্বঘোষিত খলিফা ইয়াজিদ দায়িত্ব তুলে দেয়ার কথা বলে কুফা নগরীতে আমন্ত্রণ জানায় হযরত ইমাম হোসেন (রাঃ) কে। পথে কারবালা প্রান্তরে পরিকল্পিতভাবে অবরুদ্ধ করা হয় তাদের। তৃষ্ণার্ত ইমাম হোসেন (রাঃ) কে ফোরাত নদীর পানি পর্যন্ত পান করতে দেয়া হয়নি। তার সব সঙ্গী ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শহীদ হওয়ার পর নির্মম সীমারের হাতে শহীদ হন বেহেস্তি নারীদের সর্দার বিবি ফাতেমা (রাঃ)’র পুত্র মহানবীর(দঃ) প্রিয় দৌহিত্র সায়্যেদুনা ইমাম হোসেন (রাঃ) । ইয়াজিদ ঘোষিত পুরস্কারের লোভে সীমার এ বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড ঘটায়। কারবালার ঘটনা ছাড়াও আরও অনেক কারণে ১০ই মহররম মুসলিম বিশ্বে তাৎপর্যমণ্ডিত। ইসলামের ইতিহাসে এদিনে অনেক ঘটনা ঘটেছিল। এদিনেই আল্লাহতায়ালা এ পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং এদিনেই পৃথিবী ধ্বংস করবেন। এদিনে অনেক নবী-রাসুল (আঃ) জন্মগ্রহণ করেন। আদিপিতা হযরত আদম (আঃ)এর পৃথিবীতে আগমন এদিনে ।এদিনই হযরত নুহ (আঃ)ও তার সঙ্গীরা ভয়াবহ প্লাবন থেকে মুক্তি পান। হযরত ইউনুস (আঃ)মাছের পেট থেকে মুক্তি পান। প্রায় ১৪শ’ বছর ধরে সারা বিশ্বের মুসলমান ১০ই মহররমের শোককে শক্তিতে পরিণত করতে রোজা রাখেন। দোয়া, দরুদ,শিরনী মহররমের মর্সিয়া আর মাতমের মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এদিনটি পালন করে থাকেন। এদিনটি তাই একদিকে মুসলমানদের জন্য শোকাবহ, অন্যদিকে তাৎপর্যমণ্ডিত। সারা বিশ্বের মতো এ দেশেও নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাজিয়া মিছিল ও মাতম করে গায়ের রক্ত ঝরান শিয়া সমপ্রদায়। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে । কর্মসূচির মধ্যে আছে তাজিয়া মিছিল, আলোচনা সভা ও মিলাদ (দঃ)মাহফিল।দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ এডভোকেট, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রা বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট তার বাণীতে বলেন, পবিত্র আশুরা সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য এক তাৎপর্যময় শোকাবহ দিন। সত্য প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে হযরত ইমাম হোসেন (রাঃ) ও তার ঘনিষ্ঠ সহচরবৃন্দ এদিনে ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে কারবালায় শহীদ হন। তার এই আত্মত্যাগ মানব ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে আছে। কারবালার শোকাবহ ঘটনার স্মৃতিতে ভাস্বর পবিত্র আশুরার শাশ্বত বাণী তাই আমাদেরকে অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে উদ্বুদ্ধ করে এবং সত্য ও ন্যায়ের পথে চলার প্রেরণা যোগায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, পবিত্র আশুরা মানব ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। বিভিন্ন কারণে এ দিনটি বিশ্বের মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। ১০ই মহররম মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দঃ)এর প্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেন (রাঃ) ও তার পরিবারবর্গ কারবালা প্রান্তরে শাহাদাতবরণ করেন। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের এ আত্মত্যাগ মুসলিম উম্মাহর জন্য এক উজ্জ্বল ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। আমাদের জাতীয় জীবনে সকল অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় আশুরার মহান শিক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে আমি সবার প্রতি আহ্বান জানাই। বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার বাণীতে বলেন, ১০ই মহররম সারা বিশ্বে মুসলমানের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। সমাজ ও রাষ্ট্র সত্য ও ন্যায়ের জন্য ইমাম হোসেন (রাঃ) এর ত্যাগ বাংলাদেশসহ বিশ্বের মুসলমানদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। তিনি বলেন, অন্যায়-অবিচার, অন্যায্য ও অবৈধ অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়া মানুষের কর্তব্য।