হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ মতিঝিলের শাপলা চত্বরে শুরু হয়েছে

    0
    414

    হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ আজ শনিবার সকাল ১০টায় মতিঝিলের শাপলা চত্বরে শুরু হয়েছে। মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর আমির ও কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আল্লামা নূর হোসাইন কাশেমী। মহাসমাবেশে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দিচ্ছেন। এই সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।  Hefajat
    সমাবেশে বক্তারা কথিত ‘নাস্তিকদের’ শাস্তি দাবি করে বক্তব্য দেন। শাস্তির ব্যবস্থা না করলে রেলপথ, নৌপথ অবরোধসহ বড় ধরনের কর্মসূচির হুমকি দেন তাঁরা।
    রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে নেতা-কর্মীদের চাঙা রাখতে ফাঁকে ফাঁকে গান ও স্লোগান চলে। মহাসমাবেশে আগতদের অবস্থান শাপলা চত্বর থেকে দক্ষিণ দিকে আর কে মিশন সড়ক, পশ্চিম দিকে দৈনিক বাংলা মোড় ও অন্যদিকে আরামবাগ মোড় ছাড়িয়ে গেছে।
    পুলিশের মতিঝিল অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার তারেক আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, লংমার্চ ও মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে মতিঝিল এলাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, আশপাশের এলাকায়ও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে।

    হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি :
    ১. সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন বাতিল করা।
    ২. আল্লাহ, রাসুল (দ:) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুত্সা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস।
    ৩. কথিত শাহবাগি আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক-মুরতাদ এবং প্রিয় নবী (দ:)-এর শানে জঘন্য কুত্সা রটনাকারী ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করা।
    ৪. ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা।
    ৫. ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা।
    ৬. সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতত্পরতা বন্ধ করা।
    ৭. মসজিদের নগর ঢাকাকে মূর্তির নগরে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করা।
    ৮. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধাবিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করা।
    ৯. রেডিও-টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাড়ি-টুপি ও ইসলামি কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসিঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করা।
    ১০. পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিষ্টান মিশনারিগুলোর ধর্মান্তকরণসহ সব অপতত্পরতা বন্ধ করা।
    ১১. রাসুলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদ্রাসার ছাত্র ও তৌহিদি জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং গণহত্যা বন্ধ করা।
    ১২. সারাদেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ ও মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধমকি, ভয়ভীতি দানসহ তাঁদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করা।
    ১৩. অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত সব আলেম-ওলামা, মাদ্রাসাছাত্র ও তৌহিদি জনতাকে মুক্তিদান, দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণসহ দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।

    হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশে আগত লোকজনকে প্রাথমিক চিকিত্সাসেবা দিচ্ছে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম।
    মতিঝিলের শাপলা চত্বরকে কেন্দ্রে রেখে আশপাশের এলাকায় মোট ছয়টি অস্থায়ী চিকিত্সা ক্যাম্প বসিয়েছে ড্যাব।

    ড্যাবের পক্ষ থেকে নটর ডেম ছাড়াও দৈনিক বাংলা মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব, টিকাটুলি মোড়, মগবাজার মোড় ও রায়সাহেব বাজার মোড়ে চিকিত্সা ক্যাম্প বসানো হয়েছে।
    ড্যাব ছাড়াও দৈনিক বাংলা মোড়ে খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে একটি চিকিত্সা কেন্দ্র বসানো হয়েছে।
    এনডিএফে পক্ষ থেকে মোট চারটি ক্যাম্প বসানো হয়েছে। কালভার্ট রোড ছাড়াও এফবিসিসিআইয়ের সামনে, বলাকা চত্বরে ও পল্টন মোড়ে আরও তিনটি টিম রয়েছে। মহাসমাবেশে আগত লোকজনকে প্রাথমিক চিকিত্সা দেওয়া হচ্ছে।

    জাতীয় পার্টি রাজধানীর ৪০টি পয়েন্টে হেফাজতের নেতা-কর্মীদের পানি পান করায়। সকালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ আবদুল্লাহপুরে জাতীয় পার্টির ক্যাম্পে পানি পান করাতে যান। এরপর তিনি খিলক্ষেত, বিমানবন্দর সড়ক, বিশ্বরোড ও মহাখালী কাঁচাবাজারের পাশে এসে দলের পানি পান করানো কর্মসূচি দেখেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন দলের মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার।

    রাজধানীর প্রবেশমুখসহ অন্তত ২২টি পয়েন্টে খাবার, ওষুধ ও পানি সরবরাহ করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

    গতকাল শুক্রবার দেশ কার্যত অচল হয়ে পড়ে। গতকাল সকাল থেকে দেশের বেশির ভাগ এলাকার ঢাকামুখী যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঢাকা থেকেও ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোনো বাস।
    নাশকতার আশঙ্কায় চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৮টি ট্রেনের চলাচল বাতিল করা হয়েছে।
    গতকাল বরিশাল অঞ্চল থেকে ঢাকামুখী কোনো লঞ্চ ছাড়েনি। দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার খ্যাত কাওড়াকান্দি থেকে মাওয়া নৌপথে ফেরি, লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে সারাদেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে রাজধানী ঢাকা।

    আজ রাজধানীর শাহবাগে সমাবেশ করবে গণজাগরণ মঞ্চ।
    গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা থেকে আজ সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিসহ ২৩টি সংগঠন। একই সঙ্গে গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা থেকে ২২ ঘণ্টা রাজপথ-রেলপথ-নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ।
    আজকের হরতাল-অবরোধ ও সমাবেশের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী বিরাজ করছে চরম উত্কণ্ঠা। এ নিয়ে জনমনে চলছে নানা বিশ্লেষণ ও আলোচনা-সমালোচনা।

    লংমার্চে সহিংসতা হলে সরকার কঠোর হবে। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব রকম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এ ছাড়া, লংমার্চে অংশগ্রহণকারীদের দীর্ঘ সময় রাজধানীতে অবস্থান করতে দেবে না সরকার। তবে হেফাজতে ইসলাম শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব ধরনের সহায়তা দেবে। সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলে এ মনোভাব জানা গেছে।

    আজ ঢাকার রাজপথে সক্রিয় থাকবে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। রাজধানীর সব ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে মিছিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদের।
    ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী জানান, জনগণের জানমাল রক্ষায় আওয়ামী লীগের কর্মীরা রাজপথে থাকবেন, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মিছিল হবে।