শাহ আহমদ শফীকে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে পুলিশ

    0
    403
    হেফাজতের তাণ্ডবে পল্টন-মতিঝিলে ধ্বংসস্তূপ
    হেফাজতের তাণ্ডবে পল্টন-মতিঝিলে ধ্বংসস্তূপ

    ঢাকা, ০৬ মে :হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফী পুলিশের উপস্থিতিতে রাজধানীর লালবাগের জামিয়াতুল আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।  
    আজ সোমবার বেলা সোয়া তিনটার দিকে লালবাগ মাদ্রাসা থেকে একটি গাড়িতে করে তিনি বিমানবন্দরের দিকে রওনা হন। এ সময় শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে দলের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী, শফীর ছেলে আনাছ মাদানীসহ পাঁচজন ছিলেন। লালবাগ অঞ্চলের উপকমিশনার হারুণ অর রশিদ এ খবর জানান। তবে শফী চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হলেও অন্যদের কোথায় নেওয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে তিনি কিছু জানাননি।
    ঘটনাস্থলে উপকমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, আমি তো আসলে আপনাদের দেখেই এলাম। পরে ঘরে গিয়ে দেখি উনি বাড়ি যাবেন। এ সময় সাংবাদিকেরা পুলিশকে জিজ্ঞেস করেন, রুদ্ধদ্বার বৈঠকে কী কথা হলো? উপকমিশনার সাংবাদিকদের জানান, তেমন কোনো কথা হয়নি। উনি বাড়ি যাবেন। বিমানবন্দরে যাবেন।
    হেফাজতের নেতা মো. খোরশেদ আলম জানান, ডিবি পুলিশ আল্লামা শফীকে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
    শাহ আহমদ শফীকে যখন লালবাগ মাদ্রাসা থেকে পুলিশ নিয়ে যায়, তখন ওই এলাকায় মানুষের ভিড় জমে। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যে কান্নার রোল ওঠে।
    রাজধানীর লালবাগের জামিয়াতুল আরাবিয়া মাদ্রাসার ভেতরে আজ দুপুর ১২টার দিকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ঢোকে। সেখানে থাকা হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রায় তিন ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।
    পুলিশের এই দলের নেতৃত্ব দেন লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশিদ। মাদ্রাসায় প্রবেশের আগে তিনি দাবি করেন, পুলিশের ওপর হামলা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়ে, মানুষ খুন করে কিছু লোক ভেতরে লুকিয়ে আছে।
    হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফীও ওই মাদ্রাসায় ছিলেন। হেফাজতের আরও অনেক কেন্দ্রীয় নেতা সেখানে ছিলেন।

     

    কাঁচপুরে হেফাজত-পুলিশ সংঘর্ষ, নিহত ১০

    নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড-কাঁচপুর এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আজ সোমবার ভোর থেকে পুলিশের সঙ্গে হেফাজতের কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পরে বিজিবির সদস্যরাও পুলিশের সঙ্গে যোগ দেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিক্ষিপ্তভাবে সংঘর্ষ চলছিল। এতে পুলিশ ও বিজিবির তিন সদস্যসহ ১০ জন নিহত হয়েছেন।

    পুলিশবিজিবির সদস্যসহ নিহত ১০
    নিহতেরা হলেন পুলিশের কনস্টেবল ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার ফিরোজ (৩৫) ও ভাঙ্গা উপজেলার জাকারিয়া (২৮), বিজিবির নায়েক সুবেদার শাহ আলম (৪০), সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল এলাকার সাইফুল ইসলাম, মাসুম, হান্নান মিয়া, বাবু গাজী, জসীমউদ্দিন, মারজানুল ইসলাম (১৬) এবং চট্টগ্রামের মাদারবাড়ির কাভার্ডভ্যানের সহকারী মিজান।
    ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিত্সা কর্মকর্তা সালাম বলেন, পুলিশের দুই ও বিজিবির এক সদস্যকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে।

    হেফাজতের তাণ্ডবে ‘সবুজ’ হারাল মতিঝিল-পল্টন

    আজ সোমবার ভোরে রাজধানীর বিজয়নগর এসে মনে হয়েছিল, রাতে সেখানে টর্নেডো বয়ে গেছে। রাস্তায় ও আশপাশে পড়ে আছে আস্ত গাছ ও গাছের ডালপালা। সিটি করপোরেশনের কর্মীরা গাছ সরানোর কাজ করছেন। পল্টন-বিজয়নগর সড়কের বিভাজকের ওপর যে গাছগুলো ছিল, এর অনেকগুলোই নেই। এক রাতের ব্যবধানে অনেক দিনের চেনা জায়গাটি শওকতের কাছে অচেনা মনে হচ্ছিল।
    কোনো টর্নেডো নয়, হেফাজতের কর্মসূচির নামে রাতভর তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে ওই এলাকা। পল্টন মোড়ে প্রীতম হোটেলের সামনে থেকে বিজয়নগর মোড় পর্যন্ত এলাকায় ছোট-বড় অন্তত ৭০টি গাছ কাটা হয়েছে নির্বিচারে। সেখানে ১৫ বছরের পুরনো অনেক গাছও ছিল, যেগুলো কাটা হয়েছে করাত দিয়ে। উপড়ে ফেলা হয় অনেক ছোট গাছ।
    রাজধানীর ওই রাস্তাতেই কিছু মাঝারি আকারের গাছ ছিল। ইট-পাথরের ঢাকার পল্টন-মতিঝিল এলাকার প্রাণ ছিল এই গাছগুলো। অথচ গতকাল বিকেল থেকে গাছ কেটে সড়ক অবরোধ করে আগুন জ্বালিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন হেফাজতের কর্মীরা। বিজয়নগর মোড় দখলে নিয়ে তাঁরা মধ্যরাত পর্যন্ত চালান তাণ্ডব।
    মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে যেভাবে নির্বিচারে গাছ কেটে সড়ক অবরোধ করে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা তাণ্ডব চালিয়েছিলেন, এর সঙ্গে গতকালের কর্মকাণ্ডের অনেক মিল দেখা গেছে। অবরোধের নামে সে সময় দেশের ১০টি জেলার প্রধান সড়কের পাশে প্রায় ২০ হাজার গাছ ধ্বংস করেছেন জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা।
    আজ বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, তখনো রাস্তার আশপাশে অনেক গাছ, গাছের ডালপালা পড়ে আছে। সিটি করপোরেশনের কর্মীরা সেগুলো সরানোর কাজ করছেন।
    স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, ওই এলাকায় ১৫ বছরের অনেক পুরোনো গাছ কেটে ফেলা হয়েছে, উপড়ে ফেলা হয়েছে। তিনি জানান, ওই এলাকায় এখন আবার নতুন করে গাছ লাগানো হবে।
    হেফাজতের কর্মীদের তাণ্ডবে গাছ নিধনের ঘটনা দুঃখজনক বলে মনে করছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মতিন। তাঁর মতে, এই হামলায় কেবল নগরের সৌন্দর্যই নয়, নষ্ট হয়েছে নগর কাঠামো ও পরিবেশ।
    ঢাকা শহরে এমনিতেই সবুজের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম মন্তব্য করে আবদুল মতিন বলেন, ‘গাছের ওপর কেন আক্রোশ, সেটি আমি বুঝি না। রাজপথে গত কয়েক বছরে অনেকগুলো গাছ বেশ বড় হয়েছিল। কিন্তু যেভাবে এগুলো নষ্ট করা হলো, তা সত্যি দুঃখজনক।’ আবদুল মতিন বলেন, ঢাকায় পার্ক নেই বললেই চলে। ভবন নির্মাণে গাছের সংখ্যা কমে গেছে। সে জন্য কার্বণ ডাই-অক্সাইড শোষণ কম হচ্ছে। তাই এভাবে গাছ না কেটে শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা হলে তা হবে সবার জন্য ভালো।

    তিন পুলিশ নিহত, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা: আইজিপি

    হেফাজতের হামলায় আজ সোমবার ও গতকাল রোববার পুলিশের তিন সদস্য নিহত হয়েছেন। পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, অশুভ চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
    আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে হাসান মাহমুদ খন্দকার এ কথা বলেন।
    পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেন, গতকালের ঘটনার পর দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছে।
    হাসান মাহমুদ খন্দকার জানান, গতকাল ও আজ হেফাজতের হামলায় পুলিশের ৩০ জন সদস্যকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে চিকিত্সা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চারজন ও নারায়ণগঞ্জে সাতজন পুলিশ সদস্যকে চিকিত্সা দেওয়া হচ্ছে।

    তিন জেলায় বাস ধর্মঘট প্রত্যাহার

    খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে বাস মালিক ও শ্রমিকদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুর ১২টায় ওই তিন জেলায় বাস চলাচল শুরু হয়েছে।
    ‘নছিমন-করিমন-মাহেন্দ্র-আলমসাধু’ বন্ধের দাবিতে খুলনা অঞ্চলের বাস মালিক ও শ্রমিকদের ডাকে ৩ মে বাগেরহাটে, ৪ মে খুলনায় ও ৫ মে থেকে সাতক্ষীরায় বাস-মিনিবাস ধর্মঘট শুরু হয়।
    খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাহাদত্ হোসেন জানান, তাঁদের দাবি নিয়ে গতকাল খুলনা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে নছিমন-করিমন বন্ধের জন্য তাঁকে সময় দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সুপারের প্রতিশ্রুতির পরিপ্রেক্ষিতে এ ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে।
    খুলনার পুলিশ সুপার গোলাম রউফ জানান, এ অঞ্চলে নছিমন-করিমন নিয়ে অন্যান্য পরিবহনের বিরোধ বহু দিনের। এ পরিবহনগুলোর সঙ্গে দরিদ্র মানুষের আয়-রোজগার জড়িত। তাদের পাশাপাশি বাস মালিকদের স্বার্থও দেখতে হবে। তাই নছিমন-করিমনকে শুধু মালামাল পরিবহন করতে ও মাহেন্দ্রকে প্রধান সড়কের বাইরে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

    হেফাজতের তাণ্ডবে পল্টন-মতিঝিলে ধ্বংসস্তূপ

    ঢাকা, ০৬ মে : হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা গতকাল রোববার বিকেল থেকে আজ সোমবার ভোর পর্যন্ত রাজধানীর মতিঝিল, নয়াপল্টন, বায়তুল মোকাররম, দৈনিক বাংলা মোড় ও ফকিরাপুল এলাকায় ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছেন। তাঁদের তাণ্ডবে এই এলাকাগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
    গতকাল হেফাজতের কর্মীরা পল্টন মোড় থেকে দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত দুই পাশে ফুটপাতের সব দোকান পুড়িয়ে দিয়েছেন। র্যাংগস টাওয়ারে অবস্থিত কেএফসি, রবি ও দৈনিক ‘সকালের খবর’ এবং মুক্তি ভবনে সিপিবির কার্যালয় ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছেন তাঁরা।
    হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন, আজাদ প্রোডাক্টস, আইডিয়াল প্রোডাক্টের শোরুমে আগুন দেওয়া হয়েছে। তিনটি এটিএম বুথ ভাঙচুর ও বেশ কয়েকটি গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছেন হেফাজতের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা সড়ক বিভাজকগুলো গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। সড়কের পাশে ও মাঝে থাকা শতাধিক গাছ কেটে ফেলেছেন। গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি, সড়ক বিভাজক দিয়ে তাঁরা পল্টন মোড় থেকে শাপলা চত্বর পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কে ব্যারিকেড সৃষ্টি করেন।
    গত রাতের নারকীয় সেই তাণ্ডবের বর্ণনা দিতে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটের সামনের ফুটপাতের দোকানদার ইব্রাহিম বলেন, ‘এমন তাণ্ডব দেখিনি আগে। আমার সব কিছুই শেষ। পুঁজি তো হারাইছি, ঋণের টাকা কীভাবে শোধ করমু জানি না।’
    কান্নাভেজা কণ্ঠে ইব্রাহিম জানান, দুটি দোকানে দীর্ঘদিন ধরে নামাজের টুপি, তসবিহ, জায়নামাজ বিক্রি করতেন তিনি। প্রায় পাঁচ লাখ টাকার মালামাল ছিল দোকানে। কিন্তু গতকাল সবই পুড়িয়ে দিয়েছেন হেফাজতের কর্মীরা। গত রাতের নারকীয় সেই তাণ্ডবের বর্ণনা দিতে গিয়ে ইব্রাহিম বলেন, ‘আমরা দুপুরবেলা থেকেই দোকানের কাছে আসতে পারিনি। কখনো হেফাজতের কর্মীরা, কখনো পুলিশ আমাদের বাধা দেয়। রাতে যেভাবে সব পুড়েছে, তখন জান বাঁচানোই ফরজ মনে করেছি।’
    ইব্রাহিমের হিসাব অনুযায়ী, দক্ষিণ গেটে প্রায় ৩০টি দোকান পুড়েছে। যেখানে আগুন থেকে কোরআন শরিফ, জায়নামাজ, টুপি, তসবিহ কোনো কিছুই বাদ যায়নি।
    বায়তুল মোকাররম ফুটপাত দোকান মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ শামীম খান জানান, প্রায় ৩০০ দোকান আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে। প্রতিটি দোকানে প্রায় ছয় লাখ টাকার জিনিসপত্র ছিল। অনেক মালিক তাঁদের দোকানে নগদ টাকাও রেখেছিলেন।
    ফুটপাতের দোকানগুলো থেকে বায়তুল মোকাররমের স্বর্ণের দোকানও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সেখানকার নিরাপত্তারক্ষীরা জানান, নিচে ১০টি স্বর্ণের দোকানে আগুন লাগে। পরে দোতলায় চারটি স্বর্ণের দোকানে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পুড়ে যাওয়া ফেমাস জুয়েলার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফছার হোসেন মৃধা বলেন, ‘আমরা দোকানের শাটার খুলতে পারছি না। খোলা গেলে পরিস্থিতি বুঝতে পারব।’
    আজ সকাল থেকে নয়াপল্টন, দৈনিক বাংলা মোড়, ফকিরাপুল, মতিঝিলের শাপলা চত্বর, পল্টন মোড়ের সড়কে ইটের স্তূপ, গাছপালা ও বিদ্যুতের পড়ে থাকা খুঁটি সরানোর কাজ করছেন সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন যৌথভাবেই পরিচ্ছন্নতার কাজ করছে।
    সিটি করপোরেশনের সম্পদ বিনষ্টের অভিযোগে মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান। তিনি বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে এ কাজ করা হয়েছে। করাত দিয়ে কেটে সৌরবিদ্যুতের খুঁটি ফেলে দেয়া হয়েছে। ১৫ বছরের গাছ কাটা হয়েছে। এ জন্য আমরা স্থানীয় সরকার বিভাগ মামলা করব।’

    পবিত্র কোরআন শরিফে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ড দাবি হানিফের

    ঢাকা, ০৬মে : আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ পবিত্র কোরআন শরিফে অগ্নিসংযোগ করায় হেফাজতের বিরুদ্ধে মামলা করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

    আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, হেফাজতে ইসলাম কোনো ধর্মীয় দল নয়। ওরা জামায়াত-শিবিরের বি-টিম হিসেবে কাজ করছে। গতকাল রাতে রাজধানীতে হেফাজতে ইসলামের অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
    মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, কোনো ধর্মীয় দল ধর্মের দোহাই দিয়ে পবিত্র কোরআন শরিফ ও ইসলামি বই পোড়াবে; এটা কোনো মুসলমান বিশ্বাস করতে পারে না। এদের নৈরাজ্য আর সহ্য করা হবে না। গত রাতে তাদের মতিঝিল থেকে যেভাবে বিতাড়িত করা হয়েছে, সেভাবে সব জায়গায় তাদের প্রতিহত করা হবে।
    প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, যখন বায়তুল মোকাররমের স্বর্ণের দোকান লুটপাট হচ্ছে, হাউস বিল্ডিংসহ পল্টন, গুলিস্তানের ফুটপাতের দোকানগুলো পোড়ানো হচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে খালেদা জিয়া দলীয় নেতা-কর্মীদের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়াতে না বলে হেফাজতের পাশে দাঁড়াতে বলেছেন। এর মাধ্যমে তিনি হেফাজতের সন্ত্রাসী কার্যক্রম আরও উসকে দিয়েছেন। এটা জাতির জন্য লজ্জাকর। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, হেফাজতের ঢাকা অবরোধ ও খালেদা জিয়ার ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম সবগুলোই পরিকল্পিত। বিএনপির প্রশ্রয় না পেলে হেফাজত কখনো এভাবে সারা দেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারত না। সুতরাং এ সহিংসতার দায় বিরোধীদলীয় নেতা কখনো এড়াতে পারেন না।
    সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ।

    বিএনপিকে সংঘাতের পথ ছেড়ে আলোচনায় বসার জন্য আহ্বান : ওয়ার্কার্স পার্টি

    ঢাকা, ০৬ মে : বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো বিরোধীদল বিএনপিকে সংঘাতের পথ ছেড়ে আলোচনায় বসার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। আজ পার্টির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে সমাধানে পৌঁছনোর জন্য ওয়ার্কার্স পার্টি প্রথম থেকেই সংলাপের কথা বলে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি এ ব্যাপারে যে আহ্বান জানিয়েছেন দেশবাসী তাকে স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু দুভার্গ্যজনকভাবে বিএনপি ও বিরোধীদল নেত্রী ঐ আলোচনা অনুষ্ঠানে সাড়া না দিয়ে বরং তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিতে আটচল্লিশ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে কার্যতঃ তারা সংঘাত-সংঘর্ষের পথকেই বেছে নিলেন। ওয়ার্কার্স পার্টির বিবৃতিতে বলা হয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য নির্বাচনের কোন বিকল্প নাই। সেই নির্বাচন কিভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ হতে পারে তার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা ছাড়া অন্য কোন উপায়ে সমাধানে পৌঁছান যায় তা বোধগম্য নয়। বস্তুতঃ আলোচনার বিপরীতে সংঘাতের পথ গ্রহণ করে বেগম জিয়া ও বিএনপি নির্বাচন ও নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরকেই অস্বীকার করছেন। ওয়ার্কার্স পার্টির বিবৃতিতে বলা হয় এর ফলশ্র“তিতে অন্য কোন পরিস্থিতি উদ্ভব হলে তার দায়িত্ব বেগম জিয়া ও বিএনপিকেই নিতে হবে। ওয়ার্কার্স পার্টির বিবৃতিতে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বসার জন্য বিএনপির প্রতি পুনরায় আহ্বান জানান হয়।

     

    শোক বিবৃতি

    বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড আনিসুর রহমান মল্লিক আজ এক বিবৃতিতে প্রবীণ কমিউনিস্ট নেত্রী ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সুহৃত নিবেদিতা নাগের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার সহায়তার কথা এদেশবাসী কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

     

    কমিউনিস্ট পার্টির অফিসে হামলার তীব্র নিন্দা

     

    বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড আনিসুর রহমান মল্লিক কথিত হেফাজতে ইসলামের ছদ্ম আবরনে জামাত-শিবির ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির অফিসে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। বিবৃতিতে তারা বলেন, শাপলা চত্বরে সমাবেশের অনুমতি নিয়ে হেফাজতের নেতারা সেখানে বক্তৃতা করলেও তাদের সশস্ত্র কর্মীরা বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট দখলের তাণ্ডব চালায়। তাদের হামলা অগ্নিসংযোগে কমিউনিস্ট পার্টির কার্যালয়ের সামনের ফুটপাতের গরিব দোকানদারদের বইসহ বিভিন্ন মালামাল ভস্মিভূত হয়েছে। বিবৃতিতে তারা হেফাজতের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

     

    উদ্ধারকারী এজাজ উদ্দীনের মৃত্যুতে ওয়ার্কার্স পার্টির শোক
    এজাজকে জাতীয় বীর ঘোষণা ও সাভার ভবন ধসের
    সকল উদ্ধারকর্মীদের বিশেষ সম্মাননা প্রদানের আহ্বান

    বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড আনিসুর রহমান মল্লিক এক বিবৃতিতে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন সাভার ভবন ধসে আটকে পড়া মানুষদের স্বেচ্ছায় উদ্ধার কর্মে নিয়োজিত প্রকৌশলী এজাজ উদ্দীন কায়কোবাদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ এজাজ উদ্দীন জাতীয় বীর আখ্যা দিয়ে বলেছেন মানুষের বিপদে তিনি যে সহমর্মিতার নিদর্শন রেখে গেলেন তা অনুকরণীয়। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন সাভার ভবন ধসের ঘটনায় উদ্ধারকর্মীরা সাহস, কর্তব্যনিষ্ঠা ও মানবতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু দুভার্গ্যজনক হলেও সত্য যে বিরোধীদল বিএনপি ঔ উদ্ধারকর্মীদের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নাই কেবল, তাদের বিরুদ্ধে লাশ গুমেরও অভিযোগ এনেছেন। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন বেগম জিয়ার এই রাজনৈতিক অভিযোগ সাভার উদ্ধারকর্মে সাধারণ মানুষের অনবদ্য ভূমিকাকে ম্লান করবে না। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ এজাজকে জাতীয় বীর ঘোষণার ও সাভার ভবন ধসের সকল উদ্ধারকর্মীদের বিশেষ সম্মাননা প্রদান করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান হয়। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ এজাজের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

     

    ঢাকা শহরে মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ

    ঢাকা শহরে আজ সোমবার বেলা ১১টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সব ধরনের মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। ডিএমপির উপকমিশনার (জনসংযোগ) মাসুদুর রহমান এ কথা জানান।
    গতকাল রোববার ঢাকা অবরোধ করতে এসে রাজধানীতে ধ্বংসযজ্ঞ চালায় হেফাজতের সমর্থকেরা। গতকাল সকাল থেকে তাঁরা প্রায় আট ঘণ্টা ধরে মতিঝিল-পল্টনের দুই বর্গকিলোমিটার এলাকায় ব্যাপক ভাঙচুর, হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেন।
    গতকালের সহিংস ঘটনার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ আজ সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করার ঘোষণা দেয়। এ ছাড়া আজ বেলা তিনটায় বিএনপি নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি দেয়।
    এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হলো।

     

    ১৪ দলের আজকের কর্মসূচি স্থগিত

    ১৪ দলের আজ সোমবারের নির্ধারিত সব কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ আজ সব ধরনের সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
    গতকাল রাজধানীতে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের প্রতিবাদে আজ বেলা তিনটায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ১৪ দলের বিক্ষোভ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এ ছাড়া ঢাকা মহানগরের প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডে মহানগর আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ-মিছিল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
    আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাশ প্রথম জানান, একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে ডিএমপির নিষেধাজ্ঞার প্রতি সম্মান জানিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।