হুঁশিয়ারি সংকেতঃমংলা-পায়রা-৭,চট্টগ্রাম বন্দর-৬,কক্সবাজার-৪

    0
    393

    “অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় “ফণী” বাংলাদেশে আঘাত হানলে দেশের অনেক নিম্নাঞ্চল জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে”

    ব্যাপক শক্তি নিয়ে উড়িষ্যা উপকূলের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী। বাংলাদেশে মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে সাত নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আর চট্টগ্রাম বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত এবং কক্সবাজার এর জন্য ৪ হুঁশিয়ারি সংকেত থাকবে।

    আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান খান বলেছেন, ঘূর্ণিঝড়টি আগামীকাল শুক্রবার দুপুরের দিকে ভারতে আঘাত হানার আশঙ্কা বেশি। আগামীকাল সকাল থেকে বাংলাদেশে এর প্রভাবে বৃষ্টি এবং ঝড়ো বাতাস থাকবে। আগামীকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে। এর প্রভাবে ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।

    “ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার বাতাসের শক্তি হাজার কিলোমিটার ব্যাসের বিস্তার নিয়ে এ ঝড় শুক্রবার দুপুর নাগাদ উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করতে পারে।”

    এদিকে আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, বর্তমানে পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী এখন চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১,০৬৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১,০২৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯১৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯২৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে।

    ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিমির মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিমি, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

    উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ সাত নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

    উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ছয় নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

    কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

    উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

    সারাদেশে নৌ চলাচলে নিষেধাজ্ঞাঃ বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিএ-এর সচিব কাজি ওয়াকিল নেওয়াজ বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, সারাদেশে সকল নৌ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং উদ্ধারকারী জাহাজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেইসাথে সারাদেশে সকল কর্মকর্তা কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

    ভারতে আতঙ্ক,সতর্কতাঃ বিবিসির সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ফণী নিয়ে চরম আতঙ্ক তৈরি হয়েছে । আগামীকাল মধ্যরাতের দিকে ঝড়টি উপকূলে আঘাত করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তীর্থ শহর পুরী সহ আটটি জেলায় ব্যাপক সতর্কতা জারী করা হয়েছে।

    কলকাতা থেকে উড়িষ্যা হয়ে দক্ষিণ ভারত-গামী ৭০টিরও বেশি ট্রেনের সার্ভিস গতকাল থেকে বন্ধ হওয়া শুরু হয়েছে। পুরি এবং আশপাশের জেলাগুলো পর্যটকদের চলে যেতে বলা হয়েছে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবেলা বাহিনীর শত শত কর্মীকে উড়িষ্যায় পাঠানো হয়েছে।

    বাংলাদেশে যে প্রস্তুতিঃ এদিকে ঘূর্ণিঝড় ফণীকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কেন্দ্র। দেশের সবগুলো প্রস্তুতি কেন্দ্রকে ইতোমধ্যেই সতর্ক করা হয়েছে।

    ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচীর বরগুনা অঞ্চলের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার সরদার বিবিসি বাংলাকে বুধবার বলেছেন, “আমাদের এলার্ট করা হয়েছে। কী কী করণীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।”

    “সে অনুযায়ী আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। স্বেচ্ছাসেবকদের বলা হয়েছে তারাও সতর্ক আছে।”

    তিনি বলেন, “পরিস্থিতির যদি অবনতি হয় তাহলে মাইকিংসহ লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনতে মাঠে নামার কাজও শুরু হবে। সূত্র: বিবিসি বাংলা

    যে সমস্ত নিম্নাঞ্চল জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারেঃ বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় “ফণী” বাংলাদেশে আঘাত হানলে দেশের বিভিন্ন এলাকার দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

    বৃহস্পতিবার সকালে আবহাওয়ার অধিদফতরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (ক্রমিক নম্বর-২৮) এ তথ্য জানানো হয়েছে।

    বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

    ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর,
    ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা সমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘন্টায় ৯০-১১০ কি. মি. বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

    এজন্য উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।