হঠাৎ করেই পদ্মা সেতু পরিদর্শনে দুই বোন

0
522
হঠাৎ করেই পদ্মা সেতু পরিদর্শনে দুই বোন

আমারসিলেট ,বিশেষ প্রতিনিধিঃ ২০২১ সালের শেষ দিন শুক্রবার ৩১ ডিসেম্বর পদ্মা সেতু পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ছোট বোন শেখ রেহানা। সকাল সাতটার দিকে ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি পদ্মা সেতু পরিদর্শন করেছেন। প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকায় নির্মিত ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতেও প্রথমবারের মতো গেলেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় শুক্রবার ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ্মা সেতু পরিদর্শনের ছবি প্রকাশ করেছেন।
জানা যায়, এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হয়েছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তবে মন্ত্রী, এমপি, উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কেউ এ সফরে ছিলেন না।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) মো. শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদ্মা সেতু সফরের বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে জানানো হয়। তবে তিনিসহ কর্মকর্তাদের কেউ এ সফরে ছিলেন না। তাই তিনি সফরের বিস্তারিত জানেন না।
পদ্মাসেতু প্রকল্পের একজন প্রকৌশলী গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদ্মা সেতুতে আসছেন- এ খবর তারা আগে থেকে জানতেন না। শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে প্রধানমন্ত্রী ও শেখ রেহানা মাওয়ায় আসেন। প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর তাদের নিয়ে পদ্মাসেতুতে ওঠেন। প্রধানমন্ত্রী সেতুর ওপরে গাড়ি থেকে নেমে শেখ রেহানাকে পাশে নিয়ে নিয়ে ছবি তোলেন। দুই বোন সেতুর রেলিং ধরে পদ্মা নদী দেখেন।

এই প্রকৌশলী জানান, প্রধানমন্ত্রী তার ছোট বোনকে সঙ্গে নিয়ে সেতুর সাত নম্বর পিলার থেকে ১৮ নম্বর পিলার পর্যন্ত প্রায় পৌনে দুই কিলোমিটার পথ হাঁটেন। পরে আবার গাড়িতে ওঠেন। গাড়িবহর সেতু পার হয়ে পদ্মার জাজিরা প্রান্তে যায়। সেখানে প্রধানমন্ত্রী নাস্তা করেন। এরপর গাড়িতে আবার ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। ফেরার পথে ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু গাড়িতে পার হন প্রধানমন্ত্রী।

প্রসঙ্গত, ২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মাসেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন শেখ হাসিনা। এর পর ছয় বছর কেটে যায় সেতু মাওয়া-জাজিরা নাকি আরিচা-গোয়ালন্দে হবে, এ সিদ্ধান্ত নিতে। পরে ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় পদ্মা সেতু প্রকল্প অনুমোদন পায়। তখন ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার কোটি টাকা।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর পদ্মা সেতু প্রকল্প গতি পায়। একই সঙ্গে ট্রেন ও গাড়ি চলার ব্যবস্থা রাখতে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দ্বিতল সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় শেখ হাসিনা সরকার।

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন,নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করবে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর সেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন তিনি। প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকায় ২০১৮ সালের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করার লক্ষ্য ছিল। কিন্তু নকশা জটিলতা ও বৈরী প্রকৃতির কারণে নির্মাণ কাজ নির্ধারিত গতিতে হয়নি। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বরে সেতুর ৪১টি স্প্যান স্থাপনের মাধ্যমে পদ্মা দুই পাড় যুক্ত হয়। পদ্মা সেতু পূর্ণ আকার পায়। কর্তৃপক্ষের গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত পদ্মা সেতুর কাজ ৯৬ ভাগ শেষ হয়েছে। সেতুর ওপর সড়ক নির্মাণে পিচ ঢলাইয়ের কাজ চলছে। যা আগামী এপ্রিলে শেষ হবে। সেতু বিভাগ জানিয়েছে, আনুষাঙ্গিক কাজ শেষে আগামী জুনে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে পদ্মা সেতু।

২০১৯ সালের ২৩ মার্চ টুঙ্গীপাড়া থেকে হেলিকপ্টারে ফেরার সময় আকাশ থেকে পদ্মা সেতু পরিদর্শন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। স্বপ্নের এ সেতুতে শুক্রবারই প্রথমবারের উঠলেন শেখ হাসিনা।