স্ব-উদ্যোগে চাষাবাদ করে জৈন্তাপুরে স্বাভলম্বি ৬শত পরিবার

    0
    430

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৪জানুয়ারী,রেজওয়ান করিম সাব্বির,জৈন্তাপুর প্রতিনিধিঃ সিলেট জৈন্তাপুর উপজেলার পূর্ব-রুপচেং, হর্নি, পাখিবিল, কামরাঙ্গী, কালিঞ্জি ও বাইরাখেল গ্রামের প্রায় ৬শতাধিক কৃষকরা পরিবার বরবটি,  শিম, করলা চাষ করে সাভলম্বি হয়েছে। এক সময়ে সীমান্তের হত দরিদ্র কৃষক ভাগ্যের চাকা ঘুরতে সব্জি চাষে প্রাণপণ চেষ্টা করতে শুরু করে। পরবর্তিতে এক দুই জন করে এখন গ্রামের প্রত্যেকটি কৃষক পরিবার সব্জি চাষ শুরু করে। বর্তমানে ৮টি গ্রামের প্রায় ৬শতাধিক পরিবার সারা বৎসর জুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির সব্জি চাষ করেছে। তবে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর জৈন্তাপুর থেকে সরকারী ভাবে পায়নি কোন আর্থিক সাহায্য ও রোগ বালাইয়ের পরামর্শ। বর্তমানে পানি সংকটের কারনে স্থানীয় পুটিখালে ১টি সুইচ গোইট নির্মানের দাবী কৃষক পরিবার গুলোর।

    সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় জৈন্তাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী নিজপাট ইউনিয়নের পূর্ব-রুপচেং, হর্নি, পাখিবিল, কামরাঙ্গী, কালিঞ্জি ও বাইরাখেল গ্রামের প্রায় ৪শত কৃষক পরিবার এবং চারিকাটা ইউনিয়নের বালিদাঁড়া, ইটাখাল, তুমইর, বাউরী টিলার প্রায় ২শত পরিবার ধান চাষের জমিতে বৎসরের ১০মাস বিভিন্ন প্রজাতির সবজি চাষ করেন আসছে। বর্তমানে ৮টি গ্রামে প্রায় ৫শত একর ধানের জমিতে বরবটি, শিম, করলা চাষ করে লাখপতি হওয়ার স্বপ্ন পূরন হয়েছে। পূর্ব-রুপচেং গ্রামের জামাল উদ্দিন, হর্নি গ্রামের সামুছুল খলিল আহমদ, পাখিবিল গ্রামের কুটি মিয়ার, ফারুক আহমদ, পাখিবিল গ্রামের ইছুব আলীর, আতিকুল হক. কামরাঙ্গী গ্রামের আব্দুস ছাত্তারের সাথে আলাপকালে প্রতিবেদককে জানান- গত ৪বৎসর যাবত নিজ উদ্যোগে ৩৩ শতাংশ পৈত্রিক ভূমিতে ধানের পরিবর্তে বিকল্প পদ্ধাতিতে বিভিন্ন ঋতুর সাব্জি যেমন লাউ, শিম, করলা, বরবটি সহ নানান রকমের সব্জি নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে চাষ করছেন। বর্তমানে তিনি ১একর ভুমিতে বরবটি চাষ করে প্রায় ১লক্ষ টারকার উপরে ফলন পেয়েছে।

    এছাড়া একই জমিতে অল্প খরচে শিম চাষ করেছেন ফলে শিম হতে আশানুরুপ ফলন পাবেন। সপ্তাহের ৩দিন করে তিনি ৬শ হতে ১হাজার কেজি পর্যন্ত দেশি জাতের বরবটির ফলন পায়েছেন। কৃষক আশা প্রকাশ করে বলেন বরবটি করলা শিম সহ অন্যান্য সহায়ক সব্জির বাগান দেড় থেকে ২মাস পর্যন্ত ফলন পাবেন তাতে ৪/৫লক্ষ টাকা উপর্জন হবে। কৃষক আরও বলেন ধানের চাইতে সব্জি চাষ বেশি লাভজনক। বাগান করতে বীজ, সার, কীটনাশক সহ মাচা তৈরী করতে প্রায় ৪৫হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। বর্তমানে মার্চার উপর নতুন করে উন্নত জাতের শিম গাছ লাগিয়েছেন তাতে গাছ ফল ধরতে শুরু করেছে। শিম, বরবটি এবং করলা চাষ তারা লাভবান হবেন। তাদের দাবী পানি সংকটের কারনে মারাত্বক অসুবিধায় পড়তে হয়।

    ৮টি গ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ের কৃষকদের সাথে আলাপকালে তারা বলেন- শুনেছি সরকার কৃষকদের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহনে করে থাকে। এছাড়া পরিত্যাক্ত ভুমি কৃষির আওতায় নিয়ে আসার জন্য ভতিুকি দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা কোন কিছু পাই না। উপজেলায় কৃষি বরাদ্ধ যা আছে সব দরবস্ত ইউপির অধিনে নিয়ে যাওয়া হয়। আমাদের দাবী যদি স্থানীয় পুটিখালে একটি সুইচ গোইট নিমার্ণ করে দেওয়া হয় কিংবা স্থানীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে বিআরডিপি প্রকল্পের আওতায় বড়গাং নদী হতে পানী সরবরাহের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় তাহলে পানির সমস্যা দূর হবে। এছাড়া অব্যবহৃত জমি গুলোকে ফসলের আওতায় নিয়ে আসতে পারবে এবং গোটা ৬ গ্রামের বাসিন্ধারা আরও সাভলম্বি হবে বলে আশাবাঁধ ব্যক্ত করেন। বর্তমানে সীমান্ত অ লের বরবটি, শীম, করলা সহ অন্যান্য সব্জী সিলেটের বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ এবং সিলেট বিভাগের ছোট বড় সব বাজারে আমাদের সরবরাহ হয়ে আসছে।

    উপজেলা কৃষি বিভাগের কোন সহযোগিতা যেমন প্রশিক্ষণ রোগ বালাই সম্পর্কে জ্ঞান, কৃষিকার্ড বা সরকারী সাহায্যের পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন সাহায্য দুরের কথা, প্রকৃত কৃষক হয়েও কোন কৃষি কার্ড পাননি, আর ২-১জন ৭-৮ বৎসর যাবৎ কার্ড থাকলেও বীজ, সার, কীটনাশক তারা কখনও পাননি। তারা আরও বলেন কৃষক নয় এমন ব্যক্তিরা কৃষি অফিসারের সাথে আতাত করে সরকারি সুবিধা ভোগ করেছে।

    এ ব্যপারে জৈন্তাপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন-অনেকেই এসএমই সদস্য ভূক্ত নন। তাই তিনি সরকারী ভাবে কোন আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন না, তবে আমি ঐসব এলাকায় যাই এবং কৃষকদের সুপরামর্শ সহ বিভিন্ন রোগ-বালাই সম্পর্কে ও প্রতিকারের পরামর্শ দিয়ে থাকি। তবে পানির জন্য অনেক জায়গা অনাবদি পড়ে আছে। পুটিখালে একটি সুইচ গেইট করা হলে কিংবা বিকল্প পদ্ধতীতে পানির ব্যবস্থা করে দিলে তাহলে কৃষকরা উপকৃত হবে এবং অনাবাদি জমি গুলো কৃষির আওতায় আসবে।