স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতি থেকে মুক্ত থাকার আহবানঃরাষ্ট্রপতির

    0
    187

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৫ডিসেম্বরঃ রাষ্ট্রপতি আলহাজ্জ মোঃ আবদুল হামিদ  দেশে  লাখ লাখ শহীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার এবং স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতি থেকে মুক্ত থাকার আহবান জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি স্বাধীনতার পয়তাল্লিশতম দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার বাসসকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের মানুষের কাছে আমার প্রত্যাশা তারা মুক্তিযুদ্ধের সত্য ইতিহাস জানবেন। স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃতি থেকে তারা মুক্ত হবে। তাদের মধ্যে আদর্শ-নীতি থাকবে। তারা আদর্শবান হলে বাংলাদেশের ভবিষ্যত উজ্জ্বল। রাষ্ট্রপতির এই বিশেষ সাক্ষাৎকার পূর্ণাঙ্গভাবে নিম্নে তুলে ধরা হলো।

    প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার অনুপ্রেরণা কোথা থেকে পেলেন? কোন নির্দিষ্ট ঘটনা রয়েছে কীনা একটু বলবেন।
    রাষ্ট্রপতি: এটা হলো, সাধারণ যে মানুষ তাদের জন্য এ প্রশ্নটা প্রযোজ্য। কারণ হলো মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে, যাওয়ার ব্যাপারটা তাদের জন্য ছিলো। যারা সাধারণ মানুষ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলো না। আমি যেহেতু তখন ছাত্র নেতা ছিলাম, পরবর্তীতে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছি, প্রেক্ষাপট আমার জানা। আমি স্কুলে যখন পড়ি তখন থেকে ছাত্রলীগে যোগ দান করি, ১৯৫৯ সালে। ৬১ সালে মেট্রিক পাস করে কলেজে ভর্তি হই, আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন করি। ৬২তে শিক্ষা আন্দোলন করি। আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলাম, নেতৃত্বে ছিলাম। পরে ১৯৬৬ সালে যখন বঙ্গবন্ধু ছয় দফা দিলেন। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা দিছে যে, সেখানে স্বাধীনতার ঘোষণার কথা বলে নাই। কিন্তু ছয় দফাটা এমনই একটা অবস্থা ছিলো… ছয় দফা প্রস্তাবটা মেনে নেয়া মানে… স্বায়ত্তশাসনের কথা যদিও বলা আছে, অনেকাংশে এটা স্বাধীনতার মত হয়ে যেত। আমরা বক্তৃতা যখন দিছি, ছয় দফা মেনে নিতে হবে, নাহলে পাকিস্তানের সঙ্গে কথা নেই। না হলে একদফায় যেতে হবে। এ ধরনের কথা আমরা ছাত্ররা বলছি, আওয়ামী লীগ তখন বলে নাই। আমরা ছাত্ররা বরং একধাপ আগায়া বলছি, ছয় দফা না মানলে একদফা হয়ে যাবে। একদফাতো বুঝেনই, স্বাধীনতা। এটা কিন্তু ৬৬ সাল থেকেই আমরা ছাত্র জনসভায় বলছি।

    এর মধ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা গেল, বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য আমরা আন্দোলন করলাম। ১১ দফা হলো। বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করলাম। এসব ইতিহাস সবই জানেন। ৭০ সালের নির্বাচনে আমাকেও বঙ্গবন্ধু নোমিনেশন দিল। ছয় দফার পরে কিন্তু আমাদের মেন্টাল প্রস্তুতি ছিলো। বঙ্গবন্ধুকে আগরতলা মামলা দিয়ে যে অবস্থায় ফেলছে… আমাদের তখন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারা কিশোরগঞ্জ ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারিকে কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতারা কিছুটা ইঙ্গিত দিছে। এ কারণে খালি আমি না অনেক ছাত্রনেতাই বক্তৃতায় বলছে, ছয় দফা মানো, না হয় এক দফা। ছাত্ররা বলছে, নট দি আওয়ামী লীগ।

    প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রথম পরিচয় কীভাবে…
    রাষ্ট্রপতি: উনার সঙ্গে প্রথম পরিচয়টা ১৯৬৪ সালে। ছাত্র রাজনীতি করি। ঢাকায় বা স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক ছিলো না। ছাত্র আমরা আলাদা, ছাত্রই। তবে আওয়ামী লীগের কোন জনসভা হলে সেখানে আমরা যাইতাম। আমাদের বললে আমরা মাইক মাইরা দিতাম। তারা অনেক সময় নিতে চাইতেন না তবুও এধরনের কাজে আমাদের নিতেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, পূর্বপাকিস্তান ছাত্রলীগের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে না। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেতো প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু ১৯৬৪ সালে বঙ্গবন্ধু যখন কিশোরগঞ্জে গেল, আওয়ামী লীগকে রিভাইভ করার জন্য। তখন আমরা স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলাম । আমরা বললাম, আমরা কিছু নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে চাই। তারা বললো, না ছাত্রদের দেওয়া যাবে না। সিনেমা হলের মধ্যে একটা মিটিং হয়েছিলো। এখনকার অবস্থাতো তখন ছিলো না। যখন আওয়ামী লীগের মুরুব্বিরা বলছে, তোমরা আসতে পারবে না। এটা সিদ্ধান্তের বাইরে। এখন হলেতো হুড়মুড় করে ঢুকে পড়তো। তখন আমরা ঢুকি নাই। তবে এর প্রতিবাদের দুই-আড়াইশ’ ছাত্র নিয়ে বাইরে অবস্থান নিলাম। বঙ্গবন্ধু যখন বের হয়ে আসলো… যেহেতু আমি কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। আমি আগায়া গিয়া সালাম দিয়া বললাম, এই ব্যাপার, আমি এই। বললাম, আমরাতো আপনার বক্তব্য শুনতে চাইলাম। যাইবার দিলো না। হল অনেকটা খালি রইলো। উনি তখন আমার পিঠ চাপড়ায়া বললো, আরে তোমাদের নিয়েই আমার সব। তোমাদেরই সবকিছু করতে হবে। কাজ করে যাও। এ ধরনের ইন্সপারেশন দিয়া অনেক কথা বললেন। এই হলো উনার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা। দাঁড়িয়ে থেকেই ১৫-২০ মিনিট আলাপ করছি। তখন ছাত্ররা সব পিছনেই ছিলো। সবারই, সাসনে যারা ছিলো মাথায় হাত দিছে। খুব আপন করে নিছে। ওই সাক্ষাতে আমরা সবাই খুব ইমপ্রেসড হয়েছিলাম। ছাত্রলীগ যে করি, উনার আদর্শ নিয়ে যে রাজনীতি করি, এর একটা আত্মতৃপ্তি পেলাম। এই উনার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা। আগরতলা মামলা থেকে বের হওয়ার পর আমি ৩২ নম্বর গিয়ে উনার সঙ্গে দেখা করছি।

    আবার ৭০ সালের জানুয়ারি মাসে কিশোরগঞ্জে একটা জনসভা দিলাম। তখন আমি ছাত্রলীগের সভাপতি না। বলি আওয়ামী লীগ করি কিন্তু ওয়ার্কিং কমিটিতে নাই। কিন্তু ছাত্রসংগঠন পুরোটাই আমি নিয়ন্ত্রণ করি। ওই জনসভার আগে কিশোরগঞ্জ মহকুমা আওয়ামী লীগ একটা মিটিং করলো। জনসভার জন্য অভ্যর্থনা কমিটি করা হলো। আওয়ামী লীগের সভাপতিকে চেয়ারম্যান করা হলো। আমাকে করলো সদস্য সচিব। বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ হলো। বঙ্গবন্ধু শুনলেন। ওই মিটিংয়ের মাসখানেক পর আমি আবার ঢাকা গেলাম। ৩২ নম্বরে গেলাম। হঠাৎ উনি (বঙ্গবন্ধু) বলে বসলেন‘হামিদ তোকেতো ইলেকশন করতে হবে।’ আমি তখন ছাত্র রাজনীতি করি। ইলেকশন হবে জানি কিন্তু আমি যে প্রার্থী হব এসব মাথায় ছিলো না। … পরে বাড়ি গিয়ে আমার বাবারে বললাম। প্রথমে উনি রাজি হলেন না তবে পারে রাজি হলেন।