সৌদি আরবের সর্বশেষ খবর

    0
    361

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,৩০জানুয়ারী,ডেস্ক নিউজঃ সৌদি আরবের সর্বশেষ খবর হলো, দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের সময় আটক হওয়া ধনকুবের প্রিন্স আলওয়ালিদ বিন তালাল মুক্তি পেয়েছেন। নভেম্বর মাসে ওই অভিযান শুরু হয়েছিল। প্রিন্স তালালের পারিবারিক সূত্রগুলো রয়টার্স বার্তা সংস্থাকে বলেছে, রিয়াদের একটি বিলাসবহুল হোটেল থেকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রিন্স তালাল ওই হোটেলে মুক্তি পাওয়ার আগে ৩০ মিনিট রয়টার্সকে যে সাক্ষাৎকার দেন তা প্রকাশিত হয়েছে।
    তাতে তিনি বলেছেন, তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি এবং তিনি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন
    সালমানকে সমর্থন করেন। সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হলো
    প্রশ্ন : আপনি এখানে কেন?
    উত্তর : এখানে আরও বেশ কয়েকজন আছেন। আমরা সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি, কারণ আমিও সরকারের একটি অংশ। আমি সৌদি শাসক পরিবারেরও অংশ। আমাদের আলোচনা চলছে। আমার বিশ্বাস, আর অল্প ক’দিনের মধ্যেই আমরা সবকিছু শেষ করে আনতে পারব।

    প্রশ্ন : আপনার বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ আনা হয়েছে?
    উত্তর : কোনো অভিযোগ নেই। সরকার ও আমার মধ্যে কিছু বিষয়ে শুধু আলোচনা হচ্ছে। অনেক বিষয় আছে, যা আমি এখনই প্রকাশ করতে পারব না। প্রথমে আপনাকে আশ্বস্ত করছি যে, এই গল্পের প্রায় শেষ পর্যায়ে আমরা পৌঁছে গেছি। তবে আমি ভালো আছি, কারণ আমি তো আমার নিজের দেশেই আছি। নিজের শহরেই আছি। আমার মনে হচ্ছে, আমি আমার বাড়িতেই আছি। এখানে কোনো সমস্যা নেই। সবকিছু ঠিক আছে।
    যেসব কারণে আপনি আমার সঙ্গে কথা বলছেন এর সবই গুজব, যা বিশেষ করে বিবিসিতে এসেছে। এতে আমি খুব হতাশ হয়েছি। খোলামেলাভাবে বলতে গেলে এর সবই মিথ্যা। এই হোটেলে আমি সবসময়ই ছিলাম এবং এখানে সবকিছুই ঠিক আছে। আমি ব্যায়াম করছি, সাঁতার কাটছি, হাঁটাচলা করছি। আমার ডায়েট খাবারও পাচ্ছি। এখানে প্রতিদিন আমার পরিবারকে ডেকে পাঠাই। এটা আমার অফিসের মতো। আমার ব্যক্তিগত অফিস, রাজ পরিবারের অফিস, আমার কিছু দেশসেবার কাজÑ সবকিছুর সঙ্গেই আমার যোগাযোগ আছে। সবকিছুই ঠিকঠাক মতো চলছে।

    প্রশ্ন : বিশেষ কোন গুজবে আপনি হতাশ হয়েছেন?
    উত্তর : বলা হয়েছে যে, আল ওয়ালিদকে অন্য জায়গায় অর্থাৎ কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। এসব খবর খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমি বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একটি সাক্ষাৎকার দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম এবং এই সাক্ষাৎকারটি আমি এখনই দিচ্ছি, কারণ নানাধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। এসব একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। এসব একগাদা মিথ্যা কথা।

    প্রশ্ন : তাহলে কোন অভিযোগের কারণে আপনাকে এখানে আটকে রাখা হয়েছে?
    উত্তর : দেখুন, আমি খুব শীর্ষস্থানীয় একজন ব্যক্তি, জাতীয়ভাবে, আঞ্চলিকভাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবেও। আমি অনেক প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত। আমার গোপন করার কিছু নেই। আমি এখানে খুব ভালো আছি, আরাম করছি। আমি এখানে শেভ করি, যেমন বাড়িতেও করি। নাপিত এখানে এসে চুল কাটে। সত্যি করে বলি, আমার মনে হয় যে, আমি বাড়িতেই আছি। এখানে বিশেষ কিছু নেই। খুব সাধারণ কিছু বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। আমি সরকারকে বলেছি, তারা যত দিন চায় আমি এখানে থাকব। কারণ আমি চাই সত্যটা বেরিয়ে আসুক।

    প্রশ্ন : কিন্তু দুর্নীতিবিরোধী অভিযান তো চলছে।
    উত্তর : দুর্নীতিবিরোধীÑ এটা একটা বড় কথা। এখানে অনেকেই আছেন, যাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই আনা হয়নি। কারণ আমি জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে এত সব প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত আছি, এত সব স্বার্থ, আমি তাদের বলেছি, আপনারা আপনাদের সময় নিন। সবকিছু খতিয়ে দেখুন। তারপরই সব ঠিক হয়ে যাবে।
    আসলে আমি আরও কিছুদিন আগেই এখান থেকে চলে যেতে পারতাম। আমাকে এ রকম প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে; কিন্তু আমি না করে দিয়েছি। বলেছি সবকিছু সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমি এখান থেকে যাব না। কারণ সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাওয়া খুবই জরুরি। আর সেটাই হতে যাচ্ছে।

    প্রশ্ন : আপনার সঙ্গে কোন ধরনের বোঝাপড়া নিয়ে আলোচনা হচ্ছে? সরকার আপনার কাছে কত অর্থ চাইছে? তারা কি সম্পদ চায়, নাকি কোম্পানিতে ভাগ চাইছে?
    উত্তর : এ রকম কথা আসলে আমিও পড়েছি। সরকার নাকি আমার কাছ থেকে ৬০০ কোটি ডলার এবং কিংডম হোল্ডিংয়ের বড় একটা অংশ নিতে চাইছে। কিন্তু এসব মিথ্যা। আসলে আমি এসব নিয়ে কোনো কথা বলতে চাইনি। কিন্তু আমাকে নির্যাতন করার কথা যখন বলা হয়েছে, তখনই আমি এ সাক্ষাৎকারটি দিতে রাজি হই।

    প্রশ্ন : আপনি চলে যাওয়ার সময় কি আর্থিক বোঝাপড়া হতে পারে?
    উত্তর : সে রকম কিছুর দরকার নেই। আমি ফাঁস করতে পারব না। কারণ এখানে দুটো পক্ষ আছে। এখনও পর্যন্ত ভালোই আলোচনা হয়েছে। যখন আমার মতো একজন হাই প্রোফাইল ব্যক্তিকে ঘিরে কিছু সন্দেহ তৈরি হয়, তখন সেগুলো পরিষ্কার করে ফেলা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সারা বিশ্বেই আমার বিনিয়োগ আছে। পুরোপুরি সত্যতা নিশ্চিত করেই আমি এখান থেকে যাব। ধীরে ধীরে আমার তার দিকেই অগ্রসর হচ্ছি।

    প্রশ্ন : এটা কীভাবে সমাধান হতে পারে বলে আপনি আশা করছেন? আপনি কি কোনো ধরনের ডোনেশন দেবেন?
    উত্তর : সরকারের সঙ্গে আমরা এখন আলোচনা করছি। তাদের সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনায় আপনাকে আসতে দিতে পারি না। তবে আমরা সে রকম একটা চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছে গেছি।

    প্রশ্ন : এখানে কি রাজনীতির কোনো ভূমিকা আছে? আপনার বাবা প্রিন্স তালালের কোনো বিষয় কি আছে যে, তিনি চান না যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতায় আসুক? নাকি এটা শুধুই দুর্নীতির বিষয়?
    উত্তর : এখানে রাজনীতির কিছু নেই। অর্থনীতি বা দুর্নীতির সঙ্গেও কিছু নেই। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমি এখানে আছি। আছি সত্যটাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। এই সত্য ১০০ ভাগ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমি এখানে থাকতে চাই। আমি বলতে পারি আমরা এর ৯৫ শতাংশ অর্জন করেছি।

    প্রশ্ন : রিজ হোটেল ছেড়ে যাওয়ার পর কী হতে পারে বলে আমি আশা করেন? আপনি কি সৌদি আরবেই থাকবেন?
    উত্তর : আমি সৌদি আরব ছেড়ে যাব নাÑ এটা নিশ্চিত। এটা আমার দেশ। আমার পরিবার, আমার সন্তান, আমার নাতি-নাতনিরাও এখানে। এখানে আমার সহায়সম্পত্তি আছে। বাদশাহ, যুবরাজ কিংবা সৌদি আরবের প্রতি আমার যে আনুগত্য, সেটা নিয়ে কোনো আপস নয়।
    প্রশ্ন : আপনি কি আপনার কোম্পানির লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে পারেন?
    উত্তর : হ্যাঁ, কিংডম হোল্ডিংয়ের প্রতিনিধিরা যখনই কথা বলতে চেয়েছেন তারা আমার সঙ্গে কথা বলতে এখানে এসেছেন। যখনই দরকার হয়েছে আমি তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। কখনও প্রতিদিন আবার কখনও দুই-একদিন পর পর এবং আমার পরিবারের সঙ্গেও। এই তো ছেলের সঙ্গে, মেয়ের সঙ্গে আজ কথা বললাম। আমার নাতনিদের সঙ্গেও আমি আজ কথা বলেছি।

    প্রশ্ন : আপনি কি মনে করেন, সৌদি আরবে আপনার বাড়ির মালিকানা আপনারই থাকবে?
    উত্তর : হ্যাঁ। দোষ প্রমাণিত হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রত্যেক মানুষই নির্দোষ। আমি জানতাম আপনি এ রকম একটা প্রশ্ন করতে পারেন। আমি একজন সৌদি নাগরিক এবং রাজ পরিবারের সদস্য। আমি জানি, লোকজন জিজ্ঞেস করছেন, আল ওয়ালিদ এখানে কেন। এটা জানতে চাইছে, কারণ এটার কোনো অর্থ হয় না। আমি দান করি, দেশপ্রেমের মতো কাজ আছে আমার। এখানে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে এবং এটা এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে।

    প্রশ্ন : মুক্তি পাওয়ার পর আপনি কী করবেন?
    উত্তর : সেই আগের মতোই। অন্য কিছু নয়। আমি বাইরে যাব। আমি আমার অফিসে যাব। সাপ্তাহিক ছুটির দিন আমি মরুভূমিতে যাব এবং নিরামিষাশ হিসেবে আমি আমার জীবন চালিয়ে যাব।

    প্রশ্ন : এই বিষয়টি কি বিচার পর্যন্ত গড়াতে পারে এবং আপনি কি জেলে যেতে পারেন?
    উত্তর : বিচারের কোনো সম্ভাবনা নেই। জেলের প্রশ্নও আসে না।

    প্রশ্ন : যে প্রক্রিয়াটা চলছে আপনি কি মনে করেন এটা সৌদি আরবের জন্য ভালো?
    উত্তর : আমার মনে হয় তারা পক্ষপাতহীন ও সৎভাবেই কাজ করেছেন। সৌদি আরবে যে দুর্নীতি আছে সেটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, দুর্নীতিবিরোধী এক ব্যক্তিও এ পাকের মধ্যে পড়ে গেছে। বহু লোক এখানে এসেছেন, প্রায় ৩০০ এর মতো। আমার মনে হয়, এদের বেশিরভাগই এখন মুক্ত এবং সত্যি কথা বলতে বেশিরভাগই নির্দোষ। বাকিদের জন্য সমঝোতা হয়েছে। তবে সেটা শুধু তাদের ও সরকারের মধ্যে।
    গত দশকে প্রচুর অর্থের অপচয় হয়েছে। সরকারের কোনো কোনো ব্যক্তি দুর্নীতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। আমার মনে হয়, এসব আগাছা উপড়ে ফেলা ভালো। এর মধ্য দিয়ে সৌদি আরব আরও পূতপবিত্র হয়ে উঠবে। আমি শুধু বলব, আমি বাদশাহ এবং যুবরাজ যে নতুন সৌদি আরব তৈরির জন্য কাজ করছেন আমি তাতে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছি।
    বিবিসি বাংলা অবলম্বনে।