সোয়াইন ফ্লুঃবেনাপোল স্থলবন্দরে সরকারি নির্দেশ উপেক্ষিত

    0
    220

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০১ মার্চ,এম,ওসমানঃ ‘সোয়াইন ফ্লু’ প্রতিরোধে দেশের চেকপোস্ট ও বন্দরগুলোতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হলেও বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে সে নির্দেশনা উপেক্ষিত হচ্ছে।

    ভারত থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রী, ট্রাকচালক ও হেলপারদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য টিম গঠন ও থার্মাল স্ক্যানার দেওয়া হলেও কোনো কাজে আসছে না। এমনকি কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের দেওয়া মাস্কও ব্যবহার করছেন না তারা। এখানে কোনো মেডিকেল অফিসারসহ টিমের চিকিৎসকদের না থাকার অভিযোগ রয়েছে। তবে দু’তিন জন স্বাস্থ্য সহকারীকে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাক, চালক ও হেলপাররা স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই এ বন্দর দিয়ে প্রবেশ করছেন বাংলাদেশে।

    ফলে ‘সোয়াইন ফ্লু’ আতঙ্ক বাড়ছে বেনাপোলসহ সারা দেশে। সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে বৃহস্পতিবার চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন এলাকা পরিদর্শন করেছেন যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শাহদাৎ হোসেন।

    তিনি জানান, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ‘সোয়াইন ফ্লু’ আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রতিনিয়ত মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৯ শতাধিক। তবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে মৃতের সংখ্যা মাত্র ৩ জন। ভারতের সঙ্গে বিস্তৃত সীমান্ত এলাকা ও একাধিক বন্দর থাকায় বাংলাদেশ অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যে কারণে ১৮ ফেব্রুয়ারী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বৈঠকে ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত চেকপোস্ট ও বন্দরগুলো দিয়ে আসা যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ দেয়। চেকপোস্টে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য টিম বসানো হলেও তারা সব যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে না। যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপার জন্য বসানো থার্মাল স্ক্যানারটির মনিটরসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ কাজ না করায় সেটাও চালু করা হয়নি।

    চেকপোস্টে নিয়োজিত শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার জোতিষ চন্দ্র রায় জানান, ২০ ফেব্রুয়ারী থেকে ‘ইবোলা’ ভাইরাসের পাশাপাশি তারা ‘সোয়াইন ফ্লু’ রোধে কাজ করছেন। এখনো সম্ভাব্য কোনো রোগী পাওয়া যায়নি। ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের সেবাকর্মীদের মাঝে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও উপকরণ (মাস্ক) বিতরণ করা হয়েছে।

    তিনি আরও জানান, বেনাপোল চেকপোস্টে রবিবার পর্যন্ত মাত্র তিনজনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১জনের বাড়ি খুলনায়, ১জনের ঢাকা ও অপরজনের বাড়ি ভারতের রানাঘাটে। এ তিন যাত্রীর শরীরে ‘সোয়াইন ফ্লু’র কোনো ভাইরাস পাওয়া যায়নি। তবে আমরা সকর্ত আছি। প্রত্যেক যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ আসেনি। সেসব যাত্রীদের ভাইরাসের লক্ষণ পাওয়া যাবে তাদের পরীক্ষা করা হবে। যে কারণে ঢালাওভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে না।

    শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ইবোলা’ ভাইরাস আক্রান্তদের শনাক্তকরণে এখানে ৫ সদস্যের মেডিকেল টিম কাজ করছে। তবে ‘সোয়াইন ফ্লু’ আক্রান্তদের শনাক্তকরণের মৌখিক নির্দেশনা তারা পেয়েছেন। কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের।

    চিকিৎসকদের না থাকার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘মেডিকেল টিমের প্রধান হিসেবে ডা. এনাম উদ্দিনকে সেখানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সেখানে থাকেন না তিনি।’

    বেনাপোলে ৫ সদস্যের মেডিকেল টিম কাজ করছে জানিয়ে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শাহদাৎ হোসেন জানান, ‘সোয়াইন ফ্লু’ প্রতিরোধে ও সতর্কতায় টিমটি দুই শিফটে কাজ করছে। কোনো মেডিকেল অফিসারকে বেনাপোলে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।

    এদিকে বন্দর ও ইমিগ্রেশনের সংশ্লিষ্টরা জানান, ট্রাকে করা হচ্ছে না প্রতিরোধক কোনো স্প্রে। ভারত থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রী ও রফতানি পণ্যবাহী ট্রাকের চালক ও হেলপাররা ‘সোয়াইন ফ্লু’তে আক্রান্ত কিনা তা পরীক্ষা করা হচ্ছে না।

    সরেজমিন চেকপোস্ট এলাকায় রবিবার সকালে উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার ডা. জ্যোতিষ চন্দ্র ও প্রণয় কুমারকে পাওয়া গেলেও কোনো মেডিকেল অফিসারকে পাওয়া যায়নি। চিকিৎসকদের অনিয়মিত থাকার কথা স্বীকার করেছেন ইমিগ্রেশন ও শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তারা।

    ‘সোয়াইন ফ্লু’ রোধে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের ১৭টি মাস্ক দেওয়া হয়েছে। তবে ইমিগ্রেশনে কর্মরতদের অনেককেই মাস্ক পরা অবস্থায় কাজ করতে দেখা যায়নি।

    এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইমিগ্রেশনে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা বলেন, ‘গরমের কারণে দীর্ঘ সময় মাস্ক ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ভারত থেকে আসা যাত্রীদের ‘সোয়াইন ফ্লু’র ব্যাপারে সতর্ক করা হচ্ছে।’

    তবে ইমিগ্রেশনের কার্যাদি সম্পন্ন করে বেরিয়ে আসা কয়েকজন যাত্রীর (ভারত থেকে আসা) সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘সোয়াইন ফ্লু’র ব্যাপারে তাদের কোনো কথা বলা হয়নি। এমনকি তাদের কোনো প্রকার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়নি।

    ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা মতে তারা কাজ করছেন। মাস্ক দেওয়া হয়েছে, সেটা তারা ব্যবহারও করছেন। তবে মাস্কটি বেশি মোটা হওয়ায় দীর্ঘসময় ব্যবহার করা কঠিন হয়। এজন্য মাঝে মাঝে খুলে রেখে কাজ করেন তারা। তবে ভারতীয় যাত্রী আসলে, তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় মাস্কটি পরিধান করে নেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা।’

    এদিকে ২৫০ শয্যার যশোর জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘সোয়াইন ফ্লু’ রোধে বন্দরে আরও বেশি সতর্ক হওয়া দরকার। আমাদের জনগণ তেমন সচেতন নয়। তাই ভারত থেকে কোনো রোগী যদি দেশে প্রবেশ করে তাহলে প্রচুর মানুষ আক্রান্ত হবে। যা কন্ট্রোল করা কঠিন হয়ে পড়বে। ফলে ‘সোয়াইন ফ্লু’ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন।’