“সৃষ্টির মিল অমিল”

    0
    263

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৪জুন,রুবাইয়্যাত সাইফুলঃ  প্রকৃতির দান বা অবদান কিংবা এর অপূর্ব সৃষ্টি বলে কিছু নেই। এগুলো বাজে কথা, ভুয়ো দর্শন এবং নাস্তিক, মুরতাদ, সেকুলার ও বামপন্থী তথা ধর্মবিদ্বেষীদের ধর্মনাশা সংলাপ, বস্তাপচা উক্তি ও ভ্রান্ত মতবাদ মাত্র! বরং প্রকৃতি এবং এর ঘরে-বাইরের সবই একমাত্র মহান আল্লাহপাকের সৃষ্টি ও মেহেরবানী। সকল বৈচিত্র্য তাঁরই কুদরত বা অবদান। তিনিই সকল ক্ষমতার আসল মালিক বা মূল উৎস। তিনি যাকে যতোটা চান – ক্ষমতা দান করেন। তেমনি, তাঁর দু’টি সৃষ্টি হচ্ছে, অজগর ও অ্যানাকন্ডা। সঠিক গবেষণা, পর্যাপ্ত তথ্য ও আগ্রহের অভাবে এবং নানা গুজবে কান দিয়ে অনেকেই পৃথিবীর এ সেরা দু’রকম সাপকে ভুল বুঝে আছে। ছোট্টবেলায় রবি গুহ মজুমদারের লেখা ও শচীন দেন বর্মনের গাওয়া বিশের দশকের জনপ্রিয় একটি গান বহুবার শুনতে হয়েছে। গানটি হচ্ছে,

    আমি সইতে পারি না বলা।
    মন নিয়ে ছিনিমিনি সইবো না!
    আমি তো জেনেছি, ঝঞ্ঝাট প্রেম
    অন্তরে আনে ঝঞ্ঝা!
    আমি তো বুঝেছি, পৃথিবীতে নেই
    দিবা নিশি চায় – মন যা!
    তাই নিয়ে খুশি হয়ে যে থাকে থাক!!
    আমি তো জেনেছি, বন্ধুর পথে
    মেলে নাকো কোনো বন্ধু!
    আমি তো বুঝেছি, প্রেম সিন্ধুতে
    জলও নেই এক বিন্দু!
    তাই নিয়ে খুশি হয়ে যে থাকে থাক!!

    শচীনদার (১৯০৬-১৯৭৫ খৃঃ) কন্ঠে সত্যিই গানটি শুনতে চাইলে, এখানে ক্লিক করুন:

    https://www.youtube.com/watch?v=pqt5vpHRRJQ

    ইদানীং বেশ কিছু ওয়েব পেইজ ও অন-লাইন পত্র-পত্রিকায় অজগর ও অ্যানাকন্ডা নিয়ে ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি দেখে, আমিও আর সইতে না পেরে, ঐ গানটির একটি লালিকা (প্যারোডি) কীভাবে যেনো আমার আনাড়ি মনে রচনা করে ফেলেছি! দেখুন:

    আমি সইতে পারি না চাপা।
    সাপ নিয়ে ছিনিমিনি সইবো না!
    আমি তো জেনেছি, অজগর-অ্যানাকন্ডা
    অন্তরে আনে শঙ্কা!
    আমি তো বুঝেছি, সাপ দু’টিতে নেই
    না জেনে বলে – লোকে যা!
    এই নিয়ে সুখি হয়ে যে থাকে থাক!!
    আমি তো জেনেছি, অ্যানাকন্ডা সাপের
    নেই তো কোনোই আন্ডা!
    আমি তো বুঝেছি, অজগর সাপের
    ডিম ছাড়া হয় না, কোনো বাচ্চা-কাচ্চা!
    এই নিয়ে সুখি হয়ে যে থাকে থাক!!

    এটিই আমার প্রথম গান-রচনা! তাও আবার লালিকা!! কাজেই, ভুল হলে, আমায় ক্ষমা করতে কসুর করবেন না যেনো। তবে, এখানেই শেষ নয়, বরং অজগর ও অ্যানাকন্ডা নিয়ে অসহনীয় গুজব থেকে নাজাত পেতে সাপ-বিশেষজ্ঞ না হয়েও সামান্য পুঁজিতে অনধিকার চর্চা করতে হলো। সাপ দু’টির পুরো পরিচিতি তুলে ধরি নি। কেননা, সে সময় আমার এবং সেসব পড়ার সময় আপনাদেরও নেই। তাই, এদের মাঝে মূলত বিজ্ঞানসম্মত মিল-অমিলগুলোই তুলে ধরেছি। আশা করি, পণ্ডিতরা আমার এ স্পর্ধাও মাফ করবেন, সন্ধানীরা লাভবান হবেন এবং আমার তথ্যগুলোর চুলচেরা বিশ্লেষক, নিরীক্ষক ও সমালোচকরা আরো উপকৃত হবেন! কিন্তু সাবধান! ঘাঁটতে ঘাঁটতে শেষে এমন ভয়ঙ্কর দু’ জাতের সাপ নিয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর দুঃসাহস দেখাতে গিয়ে কেউ বিপদে পড়লে, আমায় আবার দুষবেন না যেনো! তখন কিন্তু সব দোষ আপনার!!

    কাজের কথায় আসি, অনেকে মনে করেন যে, অজগর ও অ্যানাকন্ডা বুঝি একই রকম সাপ। আসলে, তা নয়। উভয়ের মাঝেই বেশ মিল-অমিল রয়েছে। মিলগুলো হচ্ছে:

    এরা ১) বিষধর নয়; ২) আমিষভোজী; ৩) প্রায় নিশাচর; ৪) ঝানু সাঁতারু; ৫) অন্যান্য সাপের মতোই শুনতে পায় না; ৬) খোলস ছাড়ে; ৭) একা চলতে পছন্দ করে; ৮) সাধারণত ধাওয়া করে না, বরং ওঁত পেতে শিকার করে; ৯) শিকারকে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে না চিবিয়ে মাথার দিক থেকে ধীরে ধীরে গিলে খায়; ১০) মানুষকে সাধারণত এড়িয়ে চলে; ১১) একবার পর্যাপ্ত খাবার খেয়ে একটানা এক বছরের বেশি না খেয়ে থাকতে পারে; এদের – ১২) ২টি করে ফুসফুস রয়েছে; ১৩) শতাধিক দাঁত আছে; ১৪) স্ত্রীটি পুরুষটির চেয়ে বড় হয়; ১৫) পেছনে পায়ের ধ্বংসাবশেষ (নমুনা) ও পেলভিস বোন (কোমরের নিচের হাড়) রয়েছে; ১৬) অন্যান্য সাপের মতোই রক্ত ঠান্ডা; ১৭) চামড়া দিয়ে মানিব্যাগ, হাতব্যাগ, ভেনেটি ব্যাগ, প্রসাধনী ব্যাগ, বেল্ট, ঘড়ির বেল্ট, জুতো, বুটজুতো ইত্যাদি তৈরী হয় এবং ১৮) পোষ মানানো সম্ভব।

    আর অমিলগুলো হলো:

    ০১। দু’টি দু’ পরিবারের সদস্য। গ্রীক শব্দ পাইথনের (Python) বাংলা হচ্ছে, অজগর বা ময়াল। এদের পাইথনিদায়ে (Pythonidae) নামক সাপ-পরিবারের সদস্য ধরা হলেও এখনকার গবেষণা বলছে, এরা ব্রোঘাম্মেরাস (Broghammerus) নামক সাপ-পরিবারের সদস্যও হতে পারে। এখন এদের ৮ রকমের ২৬টি প্রজাতি রয়েছে। এদের মাঝে জালি বা রাজ অজগরই সবচেয়ে বড়।

    অন্যদিকে, সিংহলী শব্দ হেনাকানডে (Henakanday) অর্থ: বিকট সাপ। আর তামিল শব্দ অ্যানাইকোনড্রান (Anaikondran) অর্থ: হাতী-ঘাতক। এ দু’টি শব্দের যে কোনোটি থেকে অ্যানাকন্ডা (Anaconda) শব্দটি এসেছে; যদিও শ্রীলংকা অ্যানাকন্ডাদের মাতৃভূমি নয়! কিন্তু ইউরোপীয় পর্যটকদের কল্যাণে এদের এ নাম হয়েছে। এরা বোয়া (Boa) নামক সাপ-পরিবারের সদস্য। এখন এদের ৪টি প্রজাতি রয়েছে। এদের মাঝে সবুজ অ্যানাকন্ডাই সবচেয়ে বড়।

    ০২। অজগর (এক সাথে শতাধিকও) ডিম পাড়ে। অন্যদিকে, অ্যানাকন্ডা (এক সাথে শতাধিকও) বাচ্চা দেয় । (এটিই প্রধান পার্থক্য)

    ০৩। অজগর হচ্ছে, পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা সাপ ও সরীসৃপ। এরা প্রায় ৩৩ ফুট লম্বা, ১৪৫ কেজির বেশি ভারী ও ৩ ফুটের বেশি চওড়া হতে পারে। অন্যদিকে, অ্যানাকন্ডা হলো, পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী ও চওড়া সাপ। এরা ২২৭ কেজির বেশি ভারী, প্রায় ৪ ফুট চওড়া ও প্রায় ২৮ ফুট লম্বা হতে পারে। তবে, উভয়ের এ আকার নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে।

    ০৪। অজগর মূলত স্থলচর ও প্রায় গেছো প্রাণী; পানিতেও বিচরণ করে। তবে, পানিতে শিকার করে না। অন্যদিকে, অ্যানাকন্ডা জলচর প্রাণী। তবে, কখনো ডাঙায় বিচরণ করে এবং গাছেও চড়তে পারে।

    ০৫। অজগর ডাঙায়, গাছে ও পানিতে সমান চটপটে। অন্যদিকে, অ্যানাকন্ডা পানিতে চটপটে। কিন্তু ডাঙায় ও গাছে মন্থর।

    ০৬। অজগরের মাতৃভূমি হচ্ছে, মূলত এশিয়া, আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া। উত্তর আমেরিকায় এরা বিরল। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফোরিডার এভারগ্লেডেস ন্যাশনাল পার্কের অজগরগুলো প্রবাসী তথা বার্মিজ। অন্যদিকে, অ্যানাকন্ডার মাতৃভূমি হলো, মূলত দক্ষিণ ও খানিকটা উত্তর আমেরিকা।

    ০৭। তুলনামূলকভাবে – অজগর বেশিদিন বাঁচে। বন্দীদশায় এর ৪৮ বছর তক বাঁচার রেকর্ড আছে। অন্যদিকে, অ্যানাকন্ডা কমদিন বাঁচে। বন্দীদশায় এর ২৮ বছর তক বাঁচার রেকর্ড আছে।

    ০৮। আত্মরক্ষায় ও শিকার করতে গিয়ে অজগর ভিন্ন পরিবেশে সহজে মিশে যেতে রঙ বদলে ফেলতে পারে। অন্যদিকে, তখন অ্যানাকন্ডা ভিন্ন পরিবেশে সহজে খাপ খাওয়াতে পারলেও রং বদলাতে পারে না।

    ০৯। অজগরের মাথায় একাধিক হাড় আছে। অন্যদিকে, অ্যানাকন্ডার মেরুদণ্ড ছাড়া তেমন হাড় নেই বললেই চলে।

    ১০। অজগরের দাঁত বড় বড় এবং এরা কামড় দেয় ও হিংস্র। অন্যদিকে, অ্যানাকন্ডার দাঁত ছোট ছোট এবং এরা তেমন কামড়ায় না ও প্রায় নিরীহ।

    এবার, সাপ সংক্রান্ত কিছু গুজবের মুণ্ডুপাত করবো!

    আমাদের সমাজে বড় একটি গুজব চালু রয়েছে যে, সাপ নাকি জিহ্বা দিয়ে শুনতে পায়! একদম মিথ্যে কথা!! জেনে রাখুন, সাপ কখনো শুনতে পায় না, অর্থাৎ ওর কোনো কান বা শোনার যন্ত্র নেই। তাই, ওর কাছে এ পৃথিবী একেবারেই নীরব। বেশ তো, তাহলে সাপুড়ের বাঁশীর সুরে সাপ মাথা দোলায় কেন? সেটা অন্য কারণে। বাঁশীর সুরের তালের সঙ্গে সাপের মাথা দোলানোর কোনো সম্পর্ক নেই। ওর চোখের সামনে কোনো জিনিস স্থির থাকলে, ওর চোখও স্থির থাকে; সামান্য নড়লে, ওর চোখও নড়ে। ফলে, ওর মাথাও দোলে। সাপ আসলে, সাপুড়ের বাঁশীকে শত্রু ভেবেই অমনটি করে। সুতরাং সাপুড়ে যদি না বাজিয়েও বাঁশীটি ওভাবে দোলাতে থাকে – তাহলেও সাপের মাথা দুলবে; কোনোই হেরফের হবে না।

    অজগর ও অ্যানাকন্ডার লম্বাই নিয়ে বহু গুজব রটেছে! এ পর্যন্ত নানা রিপোর্টে প্রায় ৩৩ ফুট লম্বা অজগর এবং প্রায় ২৮ ফুট লম্বা অ্যানাকন্ডার কথা জানা যায়; যদিও মাপার সময়ে ওরা জীবিত ছিলো না এবং এ মাপ নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে! জেনে রাখুন, ১৯০০ সালের দিকে মার্কিন রাষ্ট্রপতি থিওডোর রুজভেল্ট ঘোষণা দেন যে, কেউ ৩০ ফুট বা এর চেয়ে লম্বা জীবিত ও সুস্থ যে কোনো সাপ হাজির করতে পারলে, তাকে নগদ ১,০০০ (এক হাজার) ডলার পুরস্কার দেওয়া হবে! এরপর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটি (সাবেক নাম: নিউইয়র্ক জুলোজিক্যাল সোসাইটি) এ পুরস্কারের দাম ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) ডলার ধার্য করে। কিন্তু আজো এ পুরস্কার কেউ নিতে পারে নি! অর্থাৎ এখনো এ চ্যালেঞ্জ বহাল রয়েছে। কাজেই, কখনো কোথাও যদি দেখেন যে, কেউ ঐ মাপের কোনো সাপ থাকার দাবি করছে বা কাহিনী শোনাচ্ছে কিংবা এ নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে – তখনি বুঝবেন যে, ডালমে কুচ কালা হ্যায়! ক’টি মেছাল দিচ্ছি –

    ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে ইন্দোনেশীয় পত্রিকা রিপাবলিকার সূ্ত্রে বেশ ক’টি সংবাদ সংস্থা ফলাও করে প্রচার করে যে, সুমাত্রা দ্বীপের কুবু উপজাতীয় গ্রামবাসী একটি বিরাট জীবিত অজগর ধরেছে এবং সরকারীভাবে মেপে দেখা গেছে, ওটা প্রায় ৪৯ ফুট লম্বা, ৪৪৭ কেজি ভারী ও ২ ফুট ৮ ইঞ্চি চওড়া! ওরা সাপটিকে দেবতা ভাবছে!! সাপটি মাসে ৩/৪টি কুকুর খায়!! জাভা দ্বীপের কুরুগসেভু পার্কে সাপটি প্রদর্শনের জন্যে ঐ গ্রামবাসীর অনুমতি পেতে সাপুড়েদের বেশ ক’মাস অপেক্ষা করতে হয়।

    কিছুদিন পর, বিখ্যাত বৃটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান গুমর ফাঁস করে দেয়! এর কর্তৃপক্ষ রিপোর্টার পাঠিয়ে আসল খবর সংগ্রহ করে ৫ই জানুয়ারী ২০০৪-এ জানায় যে, তাদের লোক ফ্র্যাগরেন্ট ফ্লাওয়ার নামের ঐ অজগরটি মেপে দেখে, ওটা মাত্র ২১ থেকে ২৩ ফুট লম্বা এবং ওর ওজন মাত্র ১০০ কেজি!

    অজগরটির মাপে যখন গরমিল হলো – তখন সাপুড়ে ইমাম দারমান্তো নানা খোঁড়া যুক্তি দিতে লাগলেন। তিনি গার্ডিয়ানের রিপোর্টারকে বললেন: “দেখুন, আপনি অবশ্যই বুঝবেন যে, একটি অজগরের লম্বাই পরিবর্তনশীল। আবহাওয়া, এইমাত্র সে কী খেয়েছে এবং যখন খোলস ছাড়ে – এসব কারণে ফ্র্যাগরেন্ট অনেক ছোট-বড় হতে পারে। কিছুদিন আগেও সে খাঁচার অর্ধেকটা পেঁচিয়ে ছিলো। প্রায় ৬ সপ্তাহ ধরে সে কিছু খায় না এবং মাত্র খোলস ছেড়েছে বলেই সে এখন অতো বড় নেই। তাই, ওর দেহ এ মুহূর্তে পুরোপুরি আঁটসাঁট হয়ে আছে। যখন পুরোপুরি লম্বা হবে – তখন সে অনেক নরম হবে এবং আমি আমার আঙুল ওর দেহে অনেকটা দাবাতে পারবো। আর তখন ওর দেহ অনেক মোটা তথা প্রায় ২ ফুট চওড়া হবে।”

    কিন্তু গার্ডিয়ান রিপোর্টার আগলিয়ানবাই জানান: “… ফ্র্যাগরেন্ট প্রায় ৪৯ ফুট লম্বা হলে, সে হতো পৃথিবীর সবচেয়ে ভীতিদায়ক প্রাণী! আমি ওকে ওখানে ২১ থেকে ২৩ ফুট পর্যন্তই মেপেছি। …”

    রয়টার্সের একজন ফটোগ্রাফারও কুরুগসেভু পার্কে গিয়ে “টক অব দ্য টাউন” হওয়া অজগরটি মেপে একই ফলাফল, অর্থাৎ ওটা ২১ ফুট বলে জানান।

    দ্য গার্ডিয়ান সিডনী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অজগর-বিশেষজ্ঞ রিচার্ড শাইনের বরাতে আরো জানায়: উনি অজগর নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেছেন। ওগুলো বানর, শুকর এমনকি শজারু খেলেও কুকুর খায় নি। বিস্তারিত জানতে পড়ুন:http://www.snopes.com/critters/wild/bigsnake.asp

    এবারে, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির এক কাণ্ড বলছি। ওদের পত্রিকা দ্য পিপল’স ডেইলিতে একবার একটি অস্বাভাবিক অজগরের ছবি দিয়ে খবর ছাপলো যে, চীনের জিয়াংজি প্রদেশের গুইপিং শহরের বাইরে স্থানীয় কর্মীরা পৃথিবীর বিরাট ঢিপিগুলো খুঁড়ে বনের ভেতর দিয়ে নতুন রাস্তা বের করতে গেলে, দু’টি সাপ এসে হাজির হয়! একটি সাপ ৫৫ ফুট লম্বা, প্রায় ৩০০ কেজি ভারী এবং বয়স ১৪০ বছর। ওটি বুলডোজারের আঘাতে দুর্ঘটনার শিকার হয়। তখন সোনা বোয়া প্রজাতির অপর সাপটি সম্ভবত (বুলডোজারটি) কামড়ে ধরে। ফলে, কর্মীরা ভাগতে থাকে। যাহোক, বুলডোজারটির চালক বলছে, “সে ভয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত (প্যারালাইজড) হয়েছে। যখন কর্মীরা ফিরে আসে – তখন সে (চালক) এতোই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো যে, সামান্যই নড়াচড়া করতে পেরেছিলো।” ঘটনাক্রমে একটি হাসপাতালে সে সম্ভবত হার্ট-এটাকে মারা যায়! এ গল্প এবং সংশ্লিষ্ট ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে স্থানীয় সরকার পুরো ঘটনা ও ছবিটি ধাপ্পাবাজি বলে উড়িয়ে দেয়। কেননা, ঐ এলাকায় বোয়া জাতীয় সাপ নেই বললেই চলে। বিস্তারিত জানতে পড়ুন:

    file:///D:/Science/Snakes/Bogus%20Story-01.htm

    http://fearlessbuddy.blogspot.com/…/photo-of-huge-55ft-snak…

    দক্ষিণ আমেরিকা যখন ইউরোপের উপনিবেশ ছিলো – তখন থেকেই অ্যানাকন্ডা নিয়ে অনেক গল্প-গুজব রটতে থাকে। যেমন- ১৬৪ ফুট লম্বা অ্যানাকন্ডাও নাকি আছে! যাহোক, ১৯০৭ সালে বলিভিয়া-ব্রাজিল সীমান্তে অভিযান চালিয়ে বৃটিশ গোলন্দাজ অফিসার, পুরাতত্ত্ববিদ ও দক্ষিণ আমেরিকান অনুসন্ধানী পার্সি ফাওসেট দাবি করেন যে, উনি নাকি সেখানে ৬২ ফুট লম্বা এক বিরাট অ্যানাকন্ডা দেখেছেন ও গুলি করেছেন! ১৯৪৪ সালে কলম্বিয়ার খনিজ তেল অভিযানকারীরা দাবি করে, তারা নাকি সেখানে একটি অ্যানাকন্ডা শিকার করে মেপে দেখেছে যে, ওটা প্রায় ৩৭.৫ ফুট লম্বা! সে সময়ে মার্কিন বিজ্ঞানী ভিনসেন্ট রোথও দাবি করেন যে, তিনি নাকি একটি অ্যানাকন্ডা শিকার করে মেপে দেখেছেন যে, ওটা নাকি ৩৩.৮ ফুট লম্বা! আরো কেচ্ছা রয়েছে। কিন্তু এগুলোর পক্ষে দাবিদাররা কখনো কোনো প্রমাণ দিতে পারে নি। তাই, বিজ্ঞানীরা এসব গালগল্প বলেই উড়িয়ে দিয়েছেন। মনে রাখবেন, একটি সাপ টেনেটুনে ওর অন্তত চার ভাগের এক ভাগ এবং মরা সাপের চামড়া পাকা করার সময়ে টেনে দেড় গুণ লম্বা করা যায়। কাজেই, এগুলো ওর আসল মাপ নয়, বরং কোনো সাপ-বিজ্ঞানী নিজে কোনো সাপ না মাপা পর্যন্ত – ওর আসল লম্বাই জানাটা সহজ নয়।

    একটি মজার প্রশ্ন করে শেষ করছি! আচ্ছা বলুন তো, অজগর বনাম অ্যানাকন্ডা লড়াই হলে, কে জিতবে? উত্তরটি কঠিনই। লড়াই না হওয়া তক বলা মুশকিল। অজগর যেমনি লম্বা – অ্যানাকন্ডা তেমনি ভারী ও চওড়া। তবে, অ্যানাকন্ডা অজগরের চেয়ে গায়ে-গতরে শক্তিশালী বটে। তাই, লড়াইতে অ্যানাকন্ডারই এগিয়ে থাকার কথা। কিন্তু দু’টি বয়স্ক সাপ, অর্থাৎ একটি ২৫ ফুট লম্বা ও ৮০ কেজির বেশি ভারী রাজ অজগর বনাম ১৮ ফুট লম্বা ও ১৮০ কেজির বেশি ভারী সবুজ অ্যানাকন্ডা যদি সত্যিই মুখোমুখি হয় – তাহলে যুক্তি বলছে, অতো বড় অজগরকে গিলে ফেলা অ্যানাকন্ডাটির পক্ষে কঠিন, বরং ঐ সবুজ অ্যানাকন্ডাটিকে জালি অজগর গিলে ফেলতে পারবে! তাছাড়া, অজগরের বড় বড় দাঁতের কাছে অ্যানাকন্ডার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দাঁত পাত্তাও পাবে না। এ নিয়ে একবার একটি জরিপ চালানো হয়েছিলো। তাতে ৫৫% জন বলছে, রাজ অজগর জিতবে। আর ৪০% জন বলছে, সবুজ অ্যানাকন্ডা জিতবে। আর ৫% জন সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয় নি।

    আমি মনে করি, রাজ অজগর জিতবে। সে আমার দেশী বলে যে বলছি – তা নয়, বরং আমার যুক্তি হচ্ছে, অ্যানাকন্ডা অজগরের চেয়ে শক্তিশালী বটে। কিন্তু অজগর অ্যানাকন্ডার চেয়ে চটপটে, বুদ্ধিমান ও হিংস্র। তাছাড়া, ওর বড় বড় দাঁতগুলোও ওকে এ লড়াইয়ে এগিয়ে রাখবে। মনে হয়, অ্যানাকন্ডা অজগরকে আঘাত করার আগেই অজগর নিজেকে সামলে নিয়ে ওর বড় বড় দাঁতগুলো দিয়ে অ্যানাকন্ডাকে কামড়ে ধরবে। আর তেমনটি হলে, অ্যানাকন্ডার আর রক্ষা নেই। যাহোক, এসবই অনুমান। আসলে, দু’টোর লড়াই না হওয়া পর্যন্ত সত্যিই বলা মুশকিল যে, কে জিতবে। আপনি কী মনে করেন?(লেখাটি হুবহু দেওয়া হল)