সুনামগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবসে বন্যার্ঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা

    0
    357

    সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবসে জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে বন্যার্ঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্টিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে শুক্রবার সকালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ন সড়ক প্রদক্ষিন করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেষে পুষ্পস্থবক অর্পন করেন জেলা প্রশাসক ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট, পৌর মেয়র নাদের বখত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শরিফুল ইসলাম, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল, সহকারি পুলিশ সুপার হায়াতুন্নবী, মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর, মুক্তিযোদ্ধা আলী আমজাদ, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ, মুক্তিযোদ্ধা আসাদুল্লাহ সরকার, মুক্তিযোদ্ধা নূরুল মোমেন, মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হায়দার চৌধুরী লিটন, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সালেহ আহমদ, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আবুল কালাম,তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্দু চৌধুরী বাবুল,সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট আবুল হোসেন, জেলা পরিষদ সদস্য ফৌজীআরা শাম্মী প্রমুখ।

    আনন্দ শোভাযাত্রায় ব্যান্ডপার্টির সদস্যরা মুক্তিরগানে সুর দিয়ে এক অন্যরকম আবহ তৈরি করে। তাছাড়া মহিষের গাড়ি, যোদ্ধাপরাধীদের প্রতীকী বিচার ও মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে হানাদারদের প্রতীকি আত্নসমর্পনের দৃশ্য ছিল দেখার মতো। মুক্তিযোদ্ধারা মাথায় বুকে বিজয়ফুল ব্যাজ ও মাথায় বিজয়ের ব্যাজ পড়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত কণ্ঠে জয় বাংলা ও জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে মুখরিত ছিল রাজপথ। আলোচনাসভায় মুক্তিযোদ্ধা জনতা সকল যোদ্ধাপরাধীর বিচার দ্রুত কার্যকর করার আহ্বান জানান। পরে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ফ্রি’ চিকিৎসা ক্যাম্প অনুষ্টিত হয়।
    প্রসঙ্গত,১৯৭১ সালের ৬ডিসেম্বর শুক্রবার এই দিনে সুনামগঞ্জ জেলা হানাদার মুক্ত হয়েছিল। এই দিনে দেশ মাতৃকার মুক্তির টানে বাংলার দামাল ছেলেরা জীবন বাজিঁ রেখে সারা বাংলাদেশের ন্যায় ববর্র পাকিস্তানী বাহিনীকে প্রতিরোধ করে তাহিরপুর উপজেলা থেকে বিতারিত করে হানাদার মুক্ত করেন মুক্তিযোদ্ধারা। শত্রু মুক্ত করে স্বাধীন বাংলায় লাল সবুজের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে মুক্তিকামী সোনার বাংলার সোনার ছেলেরা। সুনামগঞ্জ শহর কে পাকিস্তানী হানাদার মুক্ত করার জন্য মেজর মোত্তালিব,ক্যাপ্টেন যাদব,ক্যাপ্টেন রগুনাথভাট নগড়ে একটি পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী হানাদার বাহিনীর উপর আক্রমনের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি কোম্পানীতে বিভক্ত করা হয়। এ কোম্পানীকে যোগীর গাঁও,বি কোম্পনীকে হালুয়ারঘাট,সি কোম্পানীকে হাসনগর,ডি কোম্পানীকে ভাদের টেক,ই কোম্পানীকে মল্লিকপুর,এফ কোম্পানীকে কৃষœ তলা অবস্থান গ্রহন এবং তাদের যাবতীয় রসদ সংগ্রহ করার দায়িত্ব দেওয়া হয় এডিএম কোম্পানীকে। এছারাও অতিরিক্ত একদল মুক্তিযোদ্ধা কে বনগাঁও সদর দপ্তরে রাখা হয়। সন্ধ্যার সঙ্গে সঙ্গে যৌথ নেতৃত্বে মুক্তি যোদ্ধারা নতুন প্রভাত ছিনিয়ে আনার জন্য পাকিস্তানী বাহিনীর বুকে চুরান্ত আগাত করতে এগিয়ে আসে। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর শহরে পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণের পরিকল্পনা করেন মুক্তিযোদ্ধারা। সেই পরিকল্পনার
    অংশ হিসেবে ভোররাতে মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে বিভিন্ন দিক থেকে শহরে প্রবেশ করেন। পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের বিষয়টি বুঝতে পেরে রাতেই সুনামগঞ্জ শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা শহরে প্রবেশ করার পর স্থানীয় ছাত্র-জনতা মুক্তির আনন্দে শহরের রাস্তায় নেমে আসেন। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিকামী জনতার ‘জয়বাংলা’ স্লোগানে প্রকম্পিত হয় পুরো শহর। প্রতিবছর এই দিনটি আসলে নানা স্মৃতিচারণ করেন মুক্তিযোদ্ধারা।
    এই সংবাদ চারদিকে প্রচার হতে থাকলে জয় বাংলা শ্লোগানে মুখরীত হয়ে উঠে বাংলার আকাশ বাতাশ। সুনামগঞ্জ মুক্ত ঘোষনার পর শুরু হয় ত্রান ও পূর্নবাসনের কাজ। শহর ও পাশ্ববর্তি অঞ্চলে তত্বাবধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়
    মেজর মোত্তালিবকে। এছারাও যুদ্ধ বিধস্ত সুনামগঞ্জ এর মোকাবিলা করার জন্য দেওয়ান রেজা চৌধুরী কে চেয়ারম্যান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির সদস্যরা যুদ্ধাত্তর নানান সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট ছিলেন।