সুনামগঞ্জ ডিবি থেকে এসআই জামালকে আবারও ঢাকায় বদলি:দুদক কর্তৃক তদন্তের দাবী

    0
    224

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৮মে,মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়াঃ সীমাহীন দূর্নীতির অভিযোগ,মিথ্যা মামলার কারিঘর ও চার্জসীটদাতা হিসেবে বহুল আলোচিত বির্তকিত এসআই জামালকে সুনামগঞ্জ ডিবি থেকে আবারোও বদলি করে ঢাকা ডিএমপিতে পাঠানো হয়েছে।

    শুক্রবার সকালে ওই বির্তকিত  এসআই তার নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

    খোঁজ নিয়ে জানাযায়-আদালতে দায়েরকৃত ৩টি চাঁদাবাজি মামলার আসামী ও সীমান্তের চিহ্নিত চোরাচালানী  আজাদ মিয়া ও  সাজ্জাদ মিয়াকে দিয়ে সিন্ডিকেড গঠনের মাধ্যমে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে পুলিশি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তাহিরপুরে জুয়ারবোর্ড বসিয়ে প্রতিবোর্ড থেকে ৫ হাজার টাকা,যাত্রাগানের আসর বসানোর জন্য প্রতিরাতে ১০হাজার টাকা,ওই আসরে জুয়া ও মদ বিক্রির জন্য ১০হাজার টাকা,বিভিন্ন সময় এলাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত মাজারে ওরসে মদ-গাঁজা বিক্রির জন্য প্রতিরাতে সম্মানী ৫হাজার টাকা, যাদুকাটা নদীরপাড় কেটে বালি বিক্রির জন্য প্রতি ইঞ্জিনের নৌকা থেকে ২হাজার টাকা, পাটলাই নদীতে কয়লা পরিবহণের সময় প্রতি নৌকা থেকে ২হাজার টাকা,বাংলা কয়লা থেকে প্রতিটনে ২শ টাকা,ওপেন ভারতীয় মদ-গাঁজা বিক্রির জন্য মাসে ১০হাজার টাকা, হেরোইন-ইয়াবা বিক্রির জন্য মাসে জন্য ৫০হাজার টাকা,হাট-বাজারে ওপেন ভারতীয় নাসির উদ্দিন বিড়ি বিক্রির জন্য প্রতিমাসে ২০হাজার টাকা চাঁদা উত্তোলন করতেন।

    এছাড়া তাহিরপুর সীমান্তের লাউড়েরগড়,রাজাই,করইগড়া,বারেকটিলা,যাদুকাটা নদী,চানপুর, টেকেরঘাট,লাকমা,লালঘাট,বাঁশতলা,জঙ্গলবাড়ি ও বাগলী এলাকা দিয়ে চোরাই পথ দিয়ে কয়লা,মদ,গাঁজা,হেরোইন, ইয়াবা পাচাঁরের জন্য আজাদ ও সাজ্জাদকে দিয়ে অলিখিত টেন্ডার দিয়েছেন,এবং চোরাই কয়লার প্রতিবস্তা থেকে ৫০টাকা হারে চাঁদা উত্তোলন করাসহ মাদক পাচাঁরের জন্য সাপ্তাহিক ও মাসিক মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা উত্তোলন করেছেন চোরাচারানী ও চাঁদাবাজ আজাদ,সাজ্জাদ ও জম্মত আলীকে দিয়ে।

    এদের যন্ত্রনায় অতিষ্ট এলাকার ভূক্তভোগী মানুষ থানায় মামলা রেকর্ড করতে গেলে প্রতি মামলায় ৫হাজার টাকা,সেই মামলা তদন্ত করতে গাড়ি ভাড়া ও খাওয়া খরছসহ আরো ৫হাজার টাকা,চার্জসীট বা ফাইনাল রিপোর্ট করাতে গিয়ে ৫০হাজার থেকে ১লক্ষ টাকা পর্যন্ত সালামী দিতে হয়েছে তাকে। এসআই জামাল ও তার দুই সহযোগী আজাদ,সাজ্জাদের বিভিন্ন অনিয়ম দূর্নীতি নিয়ে দৈনিক মানবকণ্ঠ ও মাইটিভির সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া সংবাদ প্রকাশ করেন। এরফলে ক্ষুদ্ধ হয়ে এসআই জামাল আজাদ ও সাজ্জাদ বাহিনীকে দিয়ে সাংবাদিক মোজাম্মেলের কাছে ক্ষতিপূরণ বাবদ চাঁদা চায়। তাদের কথামতো চাঁদা না দেওয়ায় তার উপর হামলা করে। এঘটনায় আহত সাংবাদিক মোজাম্মেল হামলাকারী আজাদগংদের বিরুদ্ধে আদালতে চাঁদাবাজীর মামলা দায়ের করেন।

    কিন্তু এসআই জামাল তার সহযোগী চাঁদাবাজী মামলার প্রধান আসামী আজাদ ও সাজ্জাদকে রক্ষা করার জন্য দায়েরকৃত মামলাগুলো ফাইনাল রিপোর্ট করান। এসব ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে জাতীয়, বিভাগীয় ও স্থানীয় আঞ্চলিক দৈনিক ও অনলাইন প্রত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে সংবাদ প্রকাশ হয়। আর প্রকাশিত সংবাদের জের ধরে পরিকল্পিতভাবে এসআই জামাল তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত ওসির দায়িত্ব নিয়ে আজাদের ছেলে অপুকে পরিকল্পিত ভাবে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে এঘটনাকে এসিড নিক্ষেপ সাজিয়ে সাংবাদিক মোজাম্মেলের নামে হয়রানীমূলক মিথ্যা এসিড মামলা এফআইআর করেন এবং কোন প্রকার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষি প্রমান না থাকার পরও সাংবাদিক মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে সাজানো মিথ্যা মামলায় উদ্দেশ্যমূলক অসত্য চার্জশিট আদালতে দাখিল করেন।

    পরে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে সাংবাদিক ও এনজিও সংস্থার একাধিক প্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত একটি তদন্ত কমিটি সরজমিন তদন্ত করে তথাকথিত এসিড মামলার সাথে সাংবাদিক মোজাম্মেলের কোন সম্পৃক্ততা খোঁজে পায়নি। তদন্ত কমিটির একজন দায়িত্বশীল সাংবাদিক প্রতিনিধি জানান,প্রকাশ্য দিবালোকে থানায় গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদকালে ওসি আনিসুর রহমানের সামনে এসআই জামাল নিজেও আজাদের মামলাটি মিথ্যা বলে স্বীকার করেন এবং তারা বলেছেন সম্পূর্ণ মিথ্যা জানার পরও চাপের মুখে মিথ্যা এসিড মামলায় চার্জসীট দিতে হয়েছে।

    এব্যাপারে মানবাধিকার কমিশনের সুনামগঞ্জ জেলা সমন্বয়কারী আল-হেলাল বলেন-আমাদের নিরপেক্ষ তদন্তে বর্ণিত এসিড মামলার ঘটনাটি একেবারেই মিথ্যা বানোয়াট ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক বলে প্রমাণিত হয়েছে। এলাকার এমপি,জেলা পুলিশ সুপার ও তাহিরপুর থানা ওসি আনিসুর রহমানের কাছে মিথ্যা এসিড মামলাটির বিস্তারিত তথ্য উপাত্ত অবগত করার পরও এফআইআরকারী এসআই জামাল নিজে তদন্ত কর্মকর্তা সেজে সম্পূর্ণ অসৎউদ্দেশ্যে হয়রানীমূলক বানোয়াট অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেছেন।

    মিথ্যা মামলার বাদী আজাদ ও চার্জসীটদাতা এসআই জামালের বিরুদ্ধে কমিশনের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সীমান্তের বড়ছড়া গ্রামের কয়লা শ্রমিক আব্দুল হান্নান,আব্দুর রহমান,আলী হোসেন,সখিনা বেগম,দিলারা বেগম ও লাউড়েরগড় গ্রামের ব্যবসায়ী রহমত আলী,জজ মিয়া,লাল মিয়া বলেন-এসআই জামালের নির্দেশে বড়ছড়ার বুরুঙ্গছড়া এলাকায় বাংলা কয়লা থেকে ও শাহআরোফিনের মেলায় চাঁদাবাজি করতে গিয়ে আজাদ ও সাজ্জাদ দুইবার গণধৌলাই খেয়েছে। তাহিরপুর উপজেলা প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক,দৈনিক ইত্তেফাক সংবাদদাতা আলম সাব্বির বলেন-চাঁদাবাজির ঘটনায় গণধৌলাইয়ের পর সালিশে ১০হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে,এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে আরো একাধিক চাঁদাবাজিসহ আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে।

    তাহিরপুরের যাদুকাটা নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা বলেন-নদীর তীর সংলগ্ন মানিগাঁও,ঘাগটিয়াসহ আরো কয়েকটি এলাকায় আবাদি জমি ও নদীর পাড় কেটে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের কোয়ারী তৈরির জন্য প্রতি কোয়ারী থেকে ৫হাজার টাকা হারে চাঁদা নিয়েছেন এসআই জামাল। আর চাঁদাবাজি মামলার আসামী আজাদ মিয়ার মাধ্যমে নিরপরাধ লোকজনকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে আদায় করেছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। এছাড়াও হাট-বাজারে মদ-গাঁজা ও নাসিরউদ্দিন বিড়ি বিক্রির মৌখিক টেন্ডার দেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম দূর্নীতির আশ্রয়ে এসআই জামাল রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যান। রাজধানী ঢাকা,বিভাগীয় শহর সিলেট ও তার গ্রামের বাড়ি জৈন্তায় তৈরি করেছেন একাধিক বাড়ি,কিনেছেন দামী গাড়ি,করেছেন একাধিক ব্যাংক একাউন্ট। বিভিন্ন অনিয়ম,দূর্নীতির কারণে এর আগে এসআই জামালকে তাহিরপুর থেকে ৩বার অন্যত্র বদলী করা হয়।

    অন্যান্য বার তাকে একই থানায় বদলি করা হলেও এবার তাকে শাস্তিমূলক ভাবে তাহিরপুর থানা থেকে সুনামগঞ্জ ডিবিতে বদলি করা হয়। এতে তার দূর্নীতির পরিমান আরো বেড়ে যাওয়ায় ২য়বারের মতো আবারোও সুনামগঞ্জ থেকে বদলি করে ঢাকা ডিএমপিতে পাঠানো হয়েছে। ডিএমপিতে বদলীর বিষয়টি নিশ্চিত করে সুনামগঞ্জ ডিবির ইন্সপেক্টর দুলাল আহমদ বলেন,তিনি বদলী হয়ে বৃহস্পতিবারই ঢাকার উদ্দেশ্যে সুনামগঞ্জ ত্যাগ করেছেন। এব্যাপারে জানতে চেয়ে এসআই জামালের মুঠোফোনে কল করলে তিনি নিজেও বদলীর বিষয়টি স্বীকার করেন। দুদক কৃর্তক তদন্তপূর্বক এসআই জামালের যাবতীয় কর্মকান্ড,অবৈধ অর্থ-সম্পত্তি ও বাড়ি-গাড়ির হিসেব-নিকাস নিয়ে তার বিরুদ্ধে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিস্ট প্রশাসনের কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন তাহিরপুর ও সুনামগঞ্জ জেলার ভুক্তভোগী জনসাধারণ।