সুনামগঞ্জে প্রশাসকের কার্য্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধার অবিনব প্রতিবাদ

    0
    430

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০১ডিসেম্বর,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ   সুনামগঞ্জের মহান মুক্তিযোদ্ধে অংশ গ্রহনকারী এক বীর মুক্তিযোদ্ধার ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিবাদের জেলা জুড়েই আলোচনার ঝড় বইছে। এই প্রতিবাদ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর নিজের স্বার্থে নয় জেলার প্রতিটি স্কুল,কলেজ নিয়মিত উপস্থিত থাকলেও ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস না হওয়ায় কারনে। অসচ্ছল এই মুক্তিযোদ্ধা অভাবের তাড়নায় পৌর শহরের তেঘরিয়া পীরবাড়ি এলাকায় কোন রখমে স্ত্রী,ছেলে ও মেয়ে নিয়ে দিন পার করছেন। সম্প্রতি তিনি সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজে অনার্স ২য় বর্ষে পড়–য়া মেয়ে সানজিদার দ্বিতীয় বর্ষের নির্বাচনী পরীক্ষার বিষয়ে তার কাছ থেকে জানতে চান পরীক্ষা কেমন হয়েছে। মেয়ে জানায় পরীক্ষা তেমন ভাল হয় নি। ভাল না হওয়ার কারনে জানতে চাইলে মেয়ে জানায়,ইংরেজী নন ক্রেডিট ও রসায়ন পরীক্ষা ভাল হয় নি। আরো জানায়,নিয়মিত ক্লাস করলেও এই দুই বিষয়ে কলেজে নিয়মিত পাঠদান না হওয়ায় পরীক্ষা খারাপ হয়েছে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারনে মেয়েকে প্রাইভেট পরাতে না পারায় মনের কষ্টে তিনি বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ১৫মিনিটে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলামের কার্য্যালয়ের সামনের মেঝেতে বসে ২ঘন্টা ব্যাপী অনশন শুরু করেন। জেলা প্রশাসকের কার্য্যালয়ের সকল কর্মকর্তাগন অনশনের কারন জানতে চেয়ে অণশন ভেঙ্গে অফিসে এসে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি জেলা প্রশাসক ছাড়া কারো সাথেই কথা বলতে নারাজ।

    খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক সকল কাজ ফেলে মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীরের সাথে কথা বলার জন্য বেলা সাড়ে ১১টার সময় আসেন। পরে জেলা প্রশাসক তাকে অনুরোধ করে অনশন ভেঙ্গে তার কার্য্যালয়ে নিয়ে গিয়ে একান্তে কথা বলেন। জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম মালেক হুসেন পীরের মুখ থেকে সব কথা শুনে তাকে একটি লিখিত আবেদন করার জন্য অনুরোধ জানান। এছাড়াও এই বিষয়ে গুরুত্বের সাথে তর্দন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর বলেন,আমার চলার মত একটাই অবলম্বন তা হল মুক্তিযোদ্ধা ভাতা। তা দিয়ে কোন রখমে আমার সংসার চালাই। ছেলে মেয়ের পড়া শুনার খরচ চালাতে গিয়ে আমি হিমসিম খাই। সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজে অনার্স ২য় বর্ষে পড়–য়া মেয়ের দ্বিতীয় বর্ষের নির্বাচনী পরীক্ষার বিষয়ে সানজিদার কাছ থেকে জানতে গিয়ে জানতে পাই নিয়মিত ক্লাস করলেও ইংজেী ও রসায়ন কলেজে ক্লাস হয় না। মেয়েকে এই দু বিষয়ে প্রাইভেটও পড়াতে পারে নি। যার জন্য তার পরীক্ষা খারাপ হয়েছে। নিয়মিত ক্লাস হলে পরীক্ষা খারাপ হত না। তাই প্রতিবাদে আমি এমন অনশন শুরু করেছিলাম। জেলা প্রশাসক আমাকে লিখিত ভাবে আবেদন করার জন্য বলেছে। আবেদনের প্রেক্ষিতে তর্দন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে আমাকে আশ্বাস্ত করেছেন।

    জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম বলেন,বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর আমার কার্য্যালয়ের দরজার সামনে অনশন শুরু করেন। আমার কার্য্যালয়ের কর্মকর্তাগন সবাই অনশন ভঙ্গ করে অফিসে বসে কথা বলার জন্য বলেন। তাতে তিনি রাজি হননি। আমি খবর পাওয়া মাত্রই ছুটে এসে উনার অনশন ভাঙ্গিয়ে সব কথা শুনেছি। সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজে অনার্স ২য় বর্ষে পড়ুয়া মেয়ের দ্বিতীয় বর্ষের নির্বাচনী পরীক্ষার ইংরেজী ও রসায়ন পরীক্ষা খরাপ হয়েছে কলেজে পাঠদান না হওয়ায়। আমরা এই বিষয়ে খোঁজ খবর নিব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করব। সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজে অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আব্দুস ছাত্তার বলেন,আমার কলেজে শিক্ষক সংকট রয়েছে। রসায়ন বিভাগে ক্লাস হয় না শিক্ষক সংকট থাকার কারনে, কিন্তু ইংরেজী বিভাগে শিক্ষক আছে নিয়মিত ক্লাস ও হয়। ক্লাস হয়নি এই বিষয়ে আমাদের কাছে কখনো কেউ জানাইনি। আর শিক্ষকরা যদি ক্লাস না করে থাকে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।