সুনামগঞ্জে দৈনিক যুগান্তর থেকে বির্তকিত আজাদ আউট,মহিম ইন

    1
    414

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৬জুলাইঃ সুনামগঞ্জে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার জেলা প্রতিনিধির পদ থেকে অবশেষে বির্তকিত হাবিব সারোয়ার ওড়ফে আজাদ মিয়াকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সীমান্ত চোরাচালান, একাধিক চাঁদাবাজি মামলা, ইভটিজিং, শিশু বলৎকার করা ও পত্রিকার নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি করাসহ বিস্তর অভিযোগ থাকার কারণে তার স্থলে নিয়োগ পেয়েছেন চ্যানেল আই এর জেলা প্রতিনিধি এডভোকেট একেএম মহিম।
    আদালতে দায়েরকৃত মামলা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, জেলার তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের কামড়াবন্দ গ্রামের বিশিষ্ঠ সুদি ব্যবসায়ী বদ মিয়ার ছেলে হাবিব সারোয়ার হরফে আজাদ মিয়া এলাকার বিভিন্ন হাট-বাজারে ব্লু ফিল্ম চালাতো। জুয়া খেলা, মদ-গাঁজা ও হেরুইন সেবন করাসহ রাস্তাঘাটে মেয়েদের ইভটিজিং করা ছিল তার নিত্যদিনের অভ্যাস। একারণে তাকে গলায় জুতার মালা পড়ানোসহ অনেকবার গণধৌলাই দিয়েছে এলাকাবাসী। এসব কর্মকান্ডে অতিষ্ট হয়ে আজাদ মিয়াকে তার বাবা থানায় সোপর্দ করে। এঘটনায়  আজাদ মিয়া তার বাবাকে মারধর করলে তাকে তেজ্য করে দেন। পরে সে এলাকা ছেড়ে সিলেট গিয়ে রিক্সা চালায়। দীর্ঘদিন পর আবার এলাকায় ফিরে এসে তাহিরপুর থানার এসআই জামালকে নিয়ে সীমান্তে গড়ে তুলে একটি চোরাচালান সিন্ডিকেট। উপজেলার লাকমা, লালঘাট, টেকেরেঘাট, চানপুর, লাউড়েরগড়, বাগলী ও চাঁরাগাঁওসহ আরো একাধিক পয়েন্ট দিয়ে প্রতিরাতে অবৈধভাবে হাজার, হাজার বস্তা কয়লা পাচাঁর শুরু করে। এবং প্রতি কয়লার বস্তা থেকে বিজিবি ক্যাম্পের নামে ৭০টাকা, এসআই জামালের নামে ২০টাকা, তার নিজের নামে ১০টাকা, তার ছোট ভাই সাজ্জাদ মিয়া, শালা তারেক মিয়া, স্ত্রী মনোয়ারা বেগমসহ স্থানীয় প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের নাম ব্যবহার করে আরো ২০টাকা চাঁদা উত্তোলন করে বলে  অভিযোগে জানা যায়।

    এছাড়া আরও জানা যায়, সীমান্তের বিভিন্ন পাহাড়ীছড়া থেকে কুড়ানো বাংলা কয়লা থেকে প্রতিটনে ১শত টাকা, মদ-গাজা পাচাঁরের জন্য সপ্তাহে ২হাজার টাকা, হেরুইন-ইয়াবা পাচাঁরের জন্য ৫হাজার টাকা, চুরি করে ভারতে লোক উঠনোর জন্য জনপ্রতি ৩শত টাকা, যাদুকাটা নদী দিয়ে ভারত থেকে পাথর পাচাঁরের জন্য প্রতি বারকি নৌকা থেকে ১শত টাকা, এনদীতে সেইভ মেশিন চালানোর জন্য প্রতি মেশিন থেকে ২শত টাকা, নদীর তীর কেটে বালু উত্তোলনের জন্য প্রতি নৌকা থেকে ১হাজার টাকা হারে চাঁদা নেওয়াসহ এলাকার বিভিন্নস্থানে প্রতিরাতে জুয়ার বোর্ড বসিয়ে এসআই জামালকে নিয়ে প্রতিবোর্ড থেকে ৫শত টাকা হারে ওপেন চাঁদা উত্তোলন করেছে, এবং মামলায় ফাঁসিয়ে নিরীহ মানুষদের ব্ল্যাকমেইল ও হয়রানী করে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ আদায় করে আজাদ ও এসআই জামাল রাতারাতি হয়ে যায় আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ।

    রাজধানী শহর ঢাকা,বিভাগীয় শহর সিলেট ও জেলা শহরসহ নিজ এলাকা নির্মাণ করে একাধিক বাড়ি। কিনেন দামী গাড়ি ও পান করেন দামী সিগারেট,মদ। এলাকায় বেড়ে যায় তাদের অবৈধ ক্ষমতার দাপট। তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক, উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবুল হোসেন খাঁ ও উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি,চাঁরাগাঁও কয়লা আমদানী কারক সমিতি সভাপতি জয়ধর আলী কাছে ৫লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে আজাদ মিয়া।

    এঘটনায় আজাদের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানের ছেলে পারুল খাঁ বাদী হয়ে গত ২৯শে জানুয়ারী কোট পিটিশন চাঁদাবাজি মামলা নং-১০/২০১৫ইং ও কয়লা সমিতির সভাপতির ছেলে নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ২২শে জানুয়ারী কোর্ট পিটিশন চাঁদাবাজি মামলা নং-০৮/২০১৫ইং দায়ের করেন। আদালত মামলাগুলো তদন্তের জন্য তাহিরপুর থানায় পাঠালে আজাদের সহযোগী এসআই জামাল উদ্দিন বিষয়টি দামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। এবং আজাদ মিয়াকে বোগল দাবা করে এলাকায় ওপেন ঘুরা ফেরা করে। এসব ঘটনায় প্রেক্ষিতে দূর্নীতিবাজ এসআই জামালকে তাহিরপুর থানা থেকে প্রথমে সুনামগঞ্জ ডিবিতে তারপর ঢাকা ডিএমপিতে বদলী করে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। এতে আজাদ মিয়া ক্ষুদ্ধ হয়ে এলাকায় চাঁদাবাজির পরিমান বৃদ্ধি করে দেয়।

    চলতি বছরের ১৭মার্চ সীমান্তের লাউড়েরগড়ে শাহ আরোফিনের মেলায় চাঁদাবাজি করতে গণধৌলাই খেয়ে সালিশে ১০হাজার টাকা জরিমানা দেওয়াসহ ২৭মার্চ বড়ছড়া শুল্কষ্টেশনে মহিলা কয়লা শ্রমিকদের কাছে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে আবারো গণধৌলাইয়ের শিকার হয়। এছাড়াও ২০০৫সালে ৩ জুলাই সীমান্তের রাজাই এলাকায় চোরাই কয়লা থেকে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে স্থানীয় জানতার হাতে ও ২০০৮সালের ১৪ই নভেম্বর বাদাঘাট বাজারে চাঁদাবাজির ঘটনায় ছাত্রদল নেতারা আজাদ ও ভাই সাজ্জাদকে আরো ২বার গণধৌলাই দেয়। আজাদের অবৈধ কর্মকান্ড নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার সাংবাদিক রাজু আহমেদ রমজানকে তুলে নিয়ে মারধর করে। পরে নির্যাতিত সাংবাদিক রাজু তাহিরপুর থানায় জিডি নং-৬৩১,তারিখ:২০/০৪/১১ইং দায়ের করলে,তাকে উল্টো মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানী করে।

    এসআই জামাল ও আজাদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরে দৈনিক মানবকণ্ঠ ও মাইটিভির জেলা প্রতিনিধি মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়ার কাছে ক্ষতি পূরণ বাবদ ১লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে। চাঁদা না দেওয়ায় হামলা চালিয়ে ১টি ডিবি ক্যামেরা,আধা ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন ও নগদ টাকা-পয়সা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়।

    এঘটনায় সাংবাদিক মোজাম্মেল বাদী হয়ে আজাদ ও সাজ্জাদসহ ১০জনের বিরুদ্ধে গত ২০১৩সালের ১৩ই মে সুনামগঞ্জ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দন্ডবিধি আইনের ৪২০/৩৮৫/৩৮০/৩২৫/৩২৪/৩০৭ ও ৩৪ ধারায় মামলা নং-৪৪/২০১৩ইং দায়ের করেন। আর এই মামলা থেকে রক্ষা পেতে আজাদ মিয়া তার ছেলেকে আগুন দিয়ে পুড়ে এসআই জামালকে দিয়ে সাংবাদিক মোজাম্মেলের নামে মিথ্যা এসিড মামলা দায়ের করে। এলাকার বিভিন্নস্থানে উপজেলা প্রশাসনের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগে গত ২৫/০৪/২০১১ইং ০৫.৯০৫…০৬.০৩.০৩১. ২০১১নং স্মারকে আজাদ ও সাজ্জাদকে তাহিরপুরের ইউএনও মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন।

    ২০০৭ সালের ৬ আগষ্ট স্থানীয় উত্তর বড়দল ইউনিয়নের গুটিলা গ্রামে জমি রেকর্ডের নামে ঘুষ বাণিজ্য করায় তাহিরপুর থানার দূর্নীতি মামলা নং-৩,ধারা-১৬২/১১৪ দঃবিঃ এর আসামী সেটেলম্যান্ট অফিসার মোহাম্মদ আলী হোসেনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করলে, চাঁদাবাজ আজাদ মিয়া লেজ গুটিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। আজাদ মিয়া ও তার ভাই সাজ্জাদ মিয়ার চাঁদাবাজীতে অতিষ্ঠ হয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুজাহিদ উদ্দিন আহমদ গত ০৪/০৫/২০১১ইং জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। বড়ছড়া কয়লা আমদানী কারক সমিতির অর্থ সম্পাদক ব্যবসায়ী কুদ্দুছ মিয়ার কাছে চাঁদা চাওয়ায় আজাদ ও সাজ্জাদের বিরুদ্ধে আদালতে চাঁদাবাজি মামলা নং-১১৫/২০১১ইং দায়ের করেন।

    তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরী হাজী এলাহি বক্স উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমানের কাছে ২০হাজার টাকা চাঁদা চাওয়ায়,স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও শিক্ষকবৃন্দ গত ১১এপ্রিল ২০১২ইং তারিখে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রতিবাদ জানান। ২০০৪সালের ১৪মার্চ এক হিন্দু শিশুকে বলৎকারের ঘটনায় সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবে আজাদ মিয়ার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে ওই নির্যাতিত শিশুর মা।

    এছাড়া ২০১৪সালের ১৮জানুয়ারী রাতের আধাঁরে মোটর সাইকেল চালকের স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল হোসেন খান বলেন, থানার সাবেক এসআই জামালের সহযোগীতায় চাঁদাবাজ আজাদ মিয়া সীমান্তের স্মাগলিং পয়েন্টগুলোতে দীর্ঘদিন যাবত আধিপত্য বিস্তার করে মদ, গাঁজা, হেরুইন, অস্ত্র পাচাঁর করাসহ পুলিশ, বিজিবি ও সাংবাদিকদের নামে চোরাচালানীদের কাছ থেকে মাসোহারা, সাপ্তাহিক ও দৈনিক চাঁদা উত্তোলন করতো।

    তাকে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা থেকে বহিস্কার করায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাহিরপুরবাসীর পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। চারাগাঁও কয়লা আমদানী কারক সমিতির সভাপতি জয়ধর আলী, ব্যবসায়ী হাসিম মিয়া, নজরুল ইসলামসহ আরো অনেকে বলেন, চাঁদাবাজ আজাদ মিয়া নিজেকে র‌্যাবের অফিসার, কখনো বিজিবির সিও, আবার কখনো বড় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সীমান্তের নদীপথ, বাংলা কয়লা, পাথর, বালি থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা চাঁদা উত্তোলন করাসহ মাদক ও হুন্ডির ব্যবসা করছে।

    তাহিরপুর উপজেলা প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক আলম সাব্বির বলেন, সাংবাদিক নামধারী শিশু বলৎকার ও চোরাচালানী আজাদ মিয়াকে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী প্রয়োজন।
    এব্যাপারে দৈনিক যুগান্তরের বর্তমান জেলা প্রতিনিধি চ্যানেল আই এর এডভোকেট একেএম মুহিম বলেন, গত ১রা জুলাই কর্তৃপক্ষ আমাকে নিয়োগ দেওয়ার পর জানতে পারলাম সাবেক প্রতিনিধি হাবিব সারোয়ার আজাদ নিজেকে কখনো বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি, কখানো তাহিরপুর উপজেলা প্রতিনিধি আবার কখনো স্টাফ রিপোর্টার বলে পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছে। এবিষয়টি আমি আমার কর্তৃপক্ষকে অবগত করব।
    এব্যাপারে জানতে হাবিব সারোয়ার আজাদ মিয়া ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারের বারবার কল দেওয়ার পরও ফোন নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।