সুনামগঞ্জে কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

    0
    358

    বিজিবির সোর্স পরিচয়ধারী বিভিন্ন মামলার আসামীদের নিয়ন্ত্রণে সীমান্ত
    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৬ডিসেম্বর,মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া: সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তে চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করছে বিজিবির সোর্স পরিচয়ধারী বিভিন্ন মামলার জেলখাটা আসামীরা। তারা সিন্ডিকেডের মাধ্যমে ভারত থেকে অবাঁধে পাচাঁর করছে কয়লা,চুনাপাথর,বোল্ডার পাথর,নুরি পাথার,কাঠ,কমলা,ঘোড়া,মদ,গাঁজা, হেরুইন,ইয়াবা,নাসিরউদ্দিন বিড়ি ও অস্ত্র। এর ফলে কোটিকোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

    গতকাল রোববার সকালে ও শনিবার সরেজমিন গিয়ে দেখাযায়,বিজিবির নাকের ঢগার উপর দিয়ে সীমান্তের টেকেরঘাট,রজনীলাইন,বুরুঙ্গাছড়া ও চাঁনপুর এলাকা দিয়ে বিজিবির সোর্স পরিচয়ধারীরা ভারত থেকে অবৈধভাবে চুনাপাথর পাচাঁর করে ট্রলিতে করে যাদুকাটা নদীর বারেকটিলার খেয়াঘাটের তীরেসহ টেকেরঘাট শহীদ মিনারের নিচে কয়লা ডিপুর নদীর ঘাটে,চানপুর নয়াছড়া বালুর চরে,রজনীলাইন ১২শ পিলারে সংলগ্ন স্থানে ও বরুঙ্গাছড়ায় সকিনা মেম্মারের বাড়ির পিচনে নিয়ে মজুত করছে। অন্যদিকে লালঘাট,লাকমা, টেকেরঘাট দিয়ে ভারত থেকে বড়বড় বোল্ডার পাথর ভেঙে ট্রলিতে করে অবাঁধে পাচাঁর হচ্ছে।

    এর পাশাপাশি ওইসব এলাকা দিয়ে রাতে অবাধে কয়লা পাচাঁর করা হচ্ছে। এছাড়া কলাগাঁও,চাঁরাগাঁও দিয়ে প্রতিদিন লক্ষলক্ষ টাকা মূল্যের নুরিপাথর ও বোল্ডার পাচাঁর করা হচ্ছে। অথচ এখানে রয়েছে ৩টি শুল্কষ্টেশন। বাংলাদেশ ও ভারতের শেষ সীমানায় অবস্থিত সীমানা পিলার হতে ১৫০গজ দূরে উভয় দেশের লোকজন অবস্থান করার আইনগত নিয়ম থাকলেও এখানে তা মানছেনা কেউ। চোরাচালানের সুবিধার্থে জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন সরকারী জায়গা দখল করে বাড়িঘর নির্মাণ করেছে অনেক সোর্স ও চোরাচালানীরা। কিন্তু দেখার কেউ নেই।
    এব্যাপারে বড়ছড়া ও চাঁরাগাঁও শুল্কস্টেশনে বৈধ কয়লা ও পাথর ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়রা জানান,সীমান্তের টেকেরেঘাট বিজিবি ক্যাম্পের সোর্স পরিচয়ধারীরা হলো লাকমা গ্রামের চোরাচালান মামলার জেলখাটা আসামী শহিদ মিয়া,দিলোয়ার মিয়া,বদিউজ্জামান,মোক্তার মিয়া,কামরুল মিয়া,বড়ছড়া গ্রামের সোনালী মিয়া,রজনী লাইন গ্রামের মরা সিদ্দিক,মতি মিয়া,আক্কল আলী।

    বালিয়াঘাট ক্যাম্পের সোর্স পরিচয়ধারীরা হলো পাটলাই নদীর চাঁদাবাজির মামলার জেলখাটা আসামী দুধেরআউটা গ্রামের জিয়াউর রহমান জিয়া,সেলিম মিয়া,বিজিবি ওপর হামলাকারী ও চাঁদাবাজি মামলা জেলখাটা আসামী লালঘাট গ্রামের কালাম মিয়া,লাকমা গ্রামের আব্দুল হাকিম ভান্ডারী ও ইদ্রিস আলী। চাঁরাগাঁও ক্যাম্পের সোর্সরা হলো,লালঘাট গ্রামের জানু মিয়া,আব্দুল আলী ভান্ডারী,চাঁরাগাঁও এলসি পয়েন্টের জলিল মিয়া,কলাগাঁও গ্রামের তোতা মিয়া,ল্যাংড়া জামাল।

    চাঁনপুর ক্যাম্পের সোর্সরা হলো মদ পাচাঁর মামলার জেলখাটা আসামী চাঁনপুর গ্রামের আবু বক্কর,সীমান্ত সন্ত্রাসী ও বিভিন্ন মামলার আসামী সম্্রাট মিয়া,আবুল মিয়া,কয়লা চোরাচালান মামলার জেলখাটা আসামী রাজাই গ্রামের নুরুল ইসলাম ও জম্মত আলী,জুলহাস মিয়া। লাউড়গড় ক্যাম্পের সোর্সরা হলো,যাদুকাটা নদীর চিহ্নিত চাঁদাবাজ ও মাদক পাচাঁর মামলা জেলখাটা আসামী নূরু মিয়া,রফিকুল ইসলাম নবীকূল ও আব্দুল গফ্ফার।

    এ সকল সোর্স পরিচয়ধারীরা সীমান্তের টেকেরঘাট বিজিবি সংলগ্ন ৩টি,লাকমার ৬টি,লালঘাটের ৪টি,চাঁরাগাঁয়ের ২টি,কলাগাঁয়ের ৩টি,জঙ্গলবাড়ির ২টি,বুরুঙ্গাছড়ার ২টি ও রজনীলাইনের ২টি চোরাই পথসহ চাঁনপুর নয়াছড়া,গারোঘাট,রাজাই,বারেকটিলা ও লাউড়গড় এলাকার দিয়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে পাচাঁরকৃত কয়লার প্রতিবস্তা থেকে ১২০টাকা,প্রতিট্রলি চুনাপাথর থেকে ২০০টাকা,বোল্ডার পাথর ও নূরি পাথর প্রতিট্রলি ১শত টাকা,প্রতি পিচ কাঠ থেকে ৭০টাকা,প্রতি ঘোড়া ৩হাজার টাকা,পাটলাই নদীতে কয়লা পরিবহণকারী ইঞ্জিনের নৌকা থেকে ৩শত থেকে ৫শত টাকা হারে চাঁদা উত্তোলন করাসহ মদ,গাঁজা,হেরুইন,ইয়াবা,কমলা ও নাসিরউদ্দিন বিড়ি পাচাঁরের জন্য সাপ্তাহিক ১৫থেকে ২০হাজার টাকা চাঁদা উত্তোলন করছে।

    এছাড়াও সোর্সরা বিজিবি ক্যাম্পের ম্যাসের হাট-বাজার করে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের রান্না করার জন্য পাহাড় থেকে লাকড়ি পর্যন্ত সংগ্রহ করে দেয়। এদের সীমান্ত চোরাচালান নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে সুনামগঞ্জ ২৮ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়কের তৎপরতায় স্থানীয় ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা লোক দেখানো অভিযান চালায় কিন্তু অবৈধ মালামাল ও সোর্স পরিচয়ধারী বিভিন্ন মামলার আসামীদের আটক করেনা। যার ফলে সীমান্তে তারা ওপেন রাজত্ব করছে।
    অথচ এসকল সোর্সদের কারণে লাকমা ও টেকেরঘাট দিয়ে কয়লা পাচাঁর করতে গিয়ে গুহায় চাপা পড়ে এপর্যন্ত ৫জনের মৃত্যু হয়েছে। লালঘাটে কয়লার গুহায় চাপা পড়ের ১জনের মৃত্যু হয়েছে। চাঁরাগাঁয়ে পাথর ও কয়লা আনতে গিয়ে পাহাড়ী ছড়ায় পড়ে ২জনের মৃত্যু হয়েছে। লাউড়গড় দিয়ে কয়লা ও পাথার আনতে গিয়ে বিএসএফের তাড়া খেয়ে যাদুকাটা নদীতে ডুবে এপর্যন্ত ৫জনের মৃত্যু হয়েছে।

    চাঁনপুরে কয়লার গুহায় চাপা পড়ে ও বিএসএফের তাড়া খেয়ে ৩জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বিএসএফের হাতে আটক হয়ে নির্যাতিত হওয়াসহ জেল খেটেছে আরো শতাধিক শ্রমিক। এসব মর্মান্তিক ঘটনা ঘটার পরও আজ পর্যন্ত সোর্স পরিচয়ধারী চোরাচালানীদের গ্রেফতারের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
    এব্যাপারে বড়ছড়া ও চাঁরাগাঁও শুল্কস্টেশনের কয়লা ব্যবসায়ী উসমান মিয়া,রাসেল আহমদ, জুবায়ের হোসেন ও দিলোয়ার হোসেনসহ আরো অনেকেই বলেন,বিজিবির নামে তাদের সোর্সদের উৎকোচ দিলেই অবৈধ মালামাল বৈধ হয়ে যায়,আর না দিলে করা হয় হয়রানী।
    নাম প্রকাশ না করার শর্তে টেকেরঘাট,লাকমা,লালঘাট ও চাঁরাগাঁও গ্রামের কয়লা ও পাথর শ্রমিকরা বলেন,সাংবাদিকদের লেখালেখির ভয়ে বিজিবি সদস্যরা সরাসরি না এসে চোরাচালানীদের সাথে আলোচনা করে তাদের সোর্সদের মাধ্যমে চাঁদা উত্তোলন করছে।
    চাঁনপুর,লাউড়েরগড় ও মানিগাঁও গ্রামের শ্রমিক মনা মিয়া,রিয়াজ উদ্দিন,ফজল মিয়া,আশরাফ মিয়া,দিন ইসলাসহ আরো অনেকেই বলেন,বিজিবিকে টাকা দিলে অবৈধভাবে ভারতের ভিতরে গিয়ে কাজ করা যায়। আর না দিলে জিরো পয়েন্ট থেকে ১৫০গজ এর পরিবর্তে ৫শ গজ বাহিরে কাজ করলেও তা অবৈধ হয়ে যায়।

    চাঁনপুর সীমান্তের নয়াছড়া ও টেকেরঘাট,রজনীলাইন,বুরুঙ্গাছড়া দিয়ে অবৈধভাবে চুনাপাথার পাচাঁরের ব্যাপারের চাঁনপুর বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার আব্দুল হাকিম ও টেকেরঘাট ক্যাম্প কমান্ডার আব্দুল হালিম বলেন,স্থানীয় চেয়ারম্যান ও উপর মহলের সাথে আলোচনা করে ওদেরকে চুনাপাথর,নুরিপাথার,বোল্ডার পাথর ও কয়লা নেওয়া সুযোগ দেওয়া হয়েছে পত্রিকা লিখলে আমাদের কিছুই হবেনা।

    চাঁরাগাঁও বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার হাবিলদার আসাদ বলেন, সিও স্যারে নির্দেশে কয়লা পাচাঁর সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়ে লালঘাট ও কলাগাঁও,চাঁরাগাঁও এলাকা দিয়ে বোল্ডার ও মরা পাথরসহ নুরিপাথর নেওয়া সুযোগ দিয়েছি।
    এব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৮ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক গোলাম মহিউদ্দিন বলেন,সীমান্তে বিজিবির কোন সোর্স নেই,সোর্স পরিচয় দিয়ে বিজিবির নামে কেউ চাঁদাবাজি করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়াসহ চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।