সুনামগঞ্জে “আব্দুজ জহুর” সেতুর উদ্ভোধন:আনন্দের বন্যা

    0
    395

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২০আগস্ট,মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া: সুনামগঞ্জে অবশেষে উদ্ভোধন করা হল ৭১.১৩কোটি টাকা ব্যয়ে সুরমা নদীর উপর নির্মিত ৪০২.৬১মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট “আব্দুর জহুর” সেতু। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সেতুটির উদ্ভোধন ঘোষনা করেন। এরপর দুপুরে খুলে দেওয়া হয় বহু ত্যাগ ও প্রতীক্ষিকার কাংখিত স্বপ্নের সেতুটি। শুরু হয় যানবাহন চলাচল। সেতুটি উদ্ভোধনের পর থেকে জেলার ৫টি উপজেলার ২০লক্ষাধিক মানুষের মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে। বিভিন্ন উপজেলায় আনন্দ মিছিল করাসহ মিষ্টি বিতরণ করা হচ্ছে।
    তথ্য নিয়ে জানাযায়, বাংলাদেশ সরকার ও জেডিসিএফ অর্থায়নে ২০০৫সালে ১লা অক্টোবর সুনামগঞ্জ-কাচিরগাতি-বিশ্বম্ভরপুর সড়কের সুরমা নদীর উপর সেতু নির্মানের জন্য ২৩কোটি ৫৯লাখ ৬০হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই বরাদ্দের পর ২০০৬-২০০৭ অর্থ বছরে সুনামগঞ্জ পৌরশহর সংলগ্ন মল্লিকপুর এলাকায় সুরমা নদীর উপর ১১৫মিটার দৈঘ্য বিশিষ্ট সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই অর্থ সংকটের অজুহাতে সেতুটির নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

    এঘটনায় ফুঁসে উঠে জেলার সর্বস্তরের জনসাধারণ। সেতুটির কাজ সম্পন্ন করার দাবীতে শুরু হয় জেলাজুড়ে আন্দোলন। সাবেক এমপি মতিউর রহমান চৌধুরী,বর্তমান এমপি এডভোকেট পীর ফজলুল হক মিসবাহ সংসদে সুরমা সেতুর সমস্যার বিষয়টি বারবার তুলে ধরেন। অবশেষে যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সরেজমিন সেতু এলাকা পরির্দশন করে সেতুটির কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার আশ্বাস দেন। এরপর ২০১২সালের অক্টোবর মাসে নকশা পরিবর্তন করে সুরমা সেতুর দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে ৪০২.৬১মিটার করা হয়। এবং ব্যয় ধরা হয় ৬৪কোটি ৫৪লাখ টাকা। এই অর্থ বরাদ্দের পর একাধিক ঠিকাদারী প্রতিষ্টান অনিয়ম দূর্নীতির মধ্যদিয়ে গত ৩বছরে সেতুটির পাইলিং ও দুইপাশের মাটি সংযোগ কাজ শেষ করে। বাকি থাকে সেতুর মাঝের অংশের সংযোগ। আর এই সংযোগ দিতে গিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্টান আবারও নানান টালবাহানা করে সেতুর বরাদ্ধ বাড়ায়।

    অনেক গড়িমসির পর সম্পতি সেতুটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়। বর্তমানে সেতুটির সর্বসাকুল্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৭১.১৩কোটি টাকা। কিন্তু এই সেতুটির জন্য প্রায় ১০বছর সীমাহীন দূভোর্গ পোহাতে হয়েছে জেলার তাহিরপুর,বিশ্বম্ভরপুর,জামালগঞ্জ,ধর্মপাশা -মধ্যনগর ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ২০লক্ষ মানুষকে। তাদের বহু প্রতিক্ষিত এই সেতুটির নাম প্রথমে নদীর নাম অনুযায়ী “সুরমা সেতু” রাখা হলেও পরবর্তীতে তা পরিবর্তন করে জেলা আওয়ামীলীগ নেতা ও সাবেক এমপি মরহুম “আব্দুজ জহুর সেতু” নামকরণ করা হয়।

    জেলাবাসীর র্দীঘ দিনের স্বপ্নের নদী সুরমার উপর নির্মিত “আব্দুর জহুর” সেতুটি উদ্ভোধনের পর থেকে নদীর দুইতীরের বাসিন্দাসহ জেলাবাসীর মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে। বিভিন্ন উপজেলায় আনন্দ মিছিল করাসহ মিষ্টি বিরতণ করা হচ্ছে। তবে সেতুটি টোল মুক্ত রাখার দাবী জানান জেলার অবহেলিত ৫টি উপজেলার ২০লক্ষাধিক জনসাধারণ।
    এব্যাপারে জেলার তাহিরপুর উপজেলা থেকে সেতু দেখছে আসা সাংবাদিক রমেন্দ্র নারায়ন বৈশাখ,আলম সাব্বির,বাবরুল হাসান বাবলু,কামাল হোসেন,জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া বলেন, সুরমা নদীর উপর নির্মিত সেতুটি নদীর দুইপাড়ের বাসিন্দাদের একত্রিত করে দিয়েছে। খেয়া নৌকায় করে নদী পারাপারের জন্য এখন আর ঘন্টারঘন্টা সময় অপেক্ষা করতে হবেনা। তবে সেতুটি টোল মুক্ত রাখার দাবী জানাচ্ছি।
    সুনামগঞ্জ সদরের বাউল শিল্পী আল-হেলাল,এনজিও কর্মী মুজিবুর রহমান,বাদাঘাট বাজারের ডাক্তার গোলাম আহমদ,ডাক্তার হাফিজ উদ্দিন ও শিক্ষক মোকতার হোসেন বলেন,সুরমা নদীর উপর নির্মিত আব্দুজ জহুর সেতুটি চালু হওয়াতে মনে হচ্ছে গলা থেকে কাটা নেমে গেছে। কারণ জরুরী কোন কাজের জন্য নদী পার হতে গেলে খেয়া নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে করতে নদীর তীরেই অনেক কাজ সমাপ্ত হয়ে যেত।
    বাদাঘাট ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক জুনাব আলী,জয়নাল আবেদীন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলী মর্তুজা,আলী আহমদ বলেন, সুরমা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের মাধ্যমে আমাদের র্দীঘ দিনের লালিত স্বপ্নপূরন হয়েছে। এই সেতুর জন্য আমাদেরকে র্দীঘদিন অপেক্ষা করার পাশাপাশি পোহাতে হয়েছে সীমাহীন দূভোগ।
    ধর্মপাশা উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালিত খান ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ বলেন,সেতুটি নির্মাণ হওয়াতে অবহেলিত সুনামগঞ্জ জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রসারিত হওয়ার পাশাপাশি জনসাধারনের চরম দূভোগ লাগব হয়েছে।
    সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে সেতুটি উদ্ভোধন করেছেন,তবে সেতুটিতে আপাদত টোল মুক্ত রাখা হচ্ছে।

    এবং জনসাধারণের সুবিধার্থে ভবিষ্যতেও যেন টোল না থাকে সেজন্য প্রস্তাব পাঠানো হবে এবিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন, অর্থপ্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান,পীর মিসবাহ এমপি,মুহিবুর রহমান মানিক এমপি,মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি,জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি সাবেক এমপি মতিউর রহমান,সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা মুকট প্রমুখ।