সুদখোরদের বেড়াজালে চা শ্রমিকঃনির্যাতনের ভয়ে বাড়ি ছাড়া

    0
    248

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,মার্চ,তালুকদার তৌফিকঃ বাহুবল উপজেলার চা বাগান গুলোতে সুদখোরদের বেড়াজালে পা দিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে গরীব ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। উপজেলার চা বাগানগুলোতে নিরীহ গরীব চা শ্রমিক পরিবারগুলোর মাঝে দাদন ব্যবসায়ীরা জমজমাট ভাবে তাদের ব্যবসা চালিয়ে গেলেও এলাকাবাসী বা সচেতন মহল দেখেও না দেখার ভান করে আছেন।

    বেশির ভাগ সুদখোর স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় নিরীহ চা শ্রমিকরা কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। এসব সুদখোরদের অত্যাচার ও চক্রবৃদ্ধি সুদের রোষানলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে গ্রামাঞ্চলে সাধারণ অসহায় মানুষও। সুদখোরদের খপ্পরে পড়েছে মধ্যবিত্ত কৃষক, বর্গাচাষী, স্বল্প আয়ের লোকজনসহ হাইস্কুল, মাদ্রাসা, বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণও চড়াসুদে ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

    দৈন্দিন খাবার, চিকিৎসা ও শিক্ষাক্ষেত্রে খরচ যোগাতে ব্যাংক ঋণ হাতের নাগালে না থাকায়,অভাবের তাড়নায় বাধ্য হয়ে নরপিশাচ সুদখোরদের নিকট চড়াসুদে ঋণ নেয়ার কারণ বলে জানা গেছে। ১৫০ টাকার ননজুডিশিয়াল সাদা ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর বা টিপসই দিয়ে জিম্মি করে রাখা হচ্ছে তাদের। আর সাদা ষ্ট্যাম্পে সাক্ষর নিয়ে নিজের পছন্দের লোকদের সাক্ষী নেয়া হচ্ছে। সময় মত টাকা পরিশোধ করতে না পারলে সাদা ষ্ট্যাম্পে অতিরিক্ত টাকা উল্লেখ করা হচ্ছে। আবার অনেকেই জমির দলিলপত্র বা স্বর্ণালংকার, চাকরিজীবীদের মাসিক বেতনের চেক বন্ধক রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রতিদিন সুদখোর বা দাদন ব্যবসায়ীরা হাজারে ১৫০ টাকা হারে মাসিক সুদ আদায় করছে বলে কয়েক জন শ্রমিক পরিবারের লোকজন জানিয়েছে।

    নির্যাতনের শিকার চা বাগানগুলো হচ্ছে রশিদপুর, রামপুর, বৃন্দাবন, ইমাম বাওয়ানী, কামাইছড়া, মধুপুর, ফয়জাবাদ চা বাগান। শুধু চা বাগানই নয়, বাহুবল উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও রয়েছে সুদখোরদের দৌরাত্ম। নিরীহ চা শ্রমিকরা ভয়ে ওইসব সুদখোরদের পূর্ণ পরিচয় না দিয়ে শুধু নাম প্রকাশ করে কেঁদে ফেলেন। ওইসব সুদখোরদের মধ্যে রয়েছে নূর মিয়া, খালেক, মৌলা, ইউনুছ, আইয়ুব আলী, আব্দুল কাইয়ুম, দরবেশ আলী, এখলাছ, শুকুর, হরিয়া কুর্মী, আম্বিয়া, আছমা, দুলাল, মায়া, রামদাস, সত্যনারায়ণসহ আরো অনেক।

    তাদের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে এমন চা শ্রমিকরা হচ্ছে শর্মা কর্মকার, শিবরাম, নিরঞ্জণ কল, দয়াল চাষা, বিমল কর্মকার, সাধুরাম ভর, জয়নারায়ণ ভর, গিরিদারী মির্ধা, নমভর, দীনেশ সাওতাল ও জওহর লাল প্রমুখ। খোজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ হাজার টাকা সুদি নিয়ে টাকা ফেরত দিতে না পারায় এক বছরে প্রায় ৭০ হাজার টাকা দাবী করছে সুদখোররা। এক্ষেত্রে চা বাগান কর্তৃপক্ষও উদাসীন।

    তাদের বাগানে ওইসব সুদখোররা কিভাবে ঢুকে তা ভাবনার বাইরে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন- সুদখোরদের বা দাদন ব্যবসায়ীদের সুদের টাকা আদায না করলে বাড়ী-ঘরের টিন, গরু, ছাগল লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের ভয়ে বাগানের অসংখ্য পরিবার আজ বাড়ি ছাড়া হয়ে অজানা স্থানে পাড়ি জমিয়েছে।

    এলাকার সচেতন মহল ওইসব সুদখোর দাদন ব্যবসায়ীদের হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য অর্থাৎ তাদের জীবন যাপনে সহজিকরণের জন্য অভাবী পরিবারগুলোকে সহজ শর্তে যেমন ঋণ দেয়া প্রয়োজন, তেমনি ওইসব সুদখোরদের প্রতিহত ও আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকার ও প্রভাবশালী বিত্তবানদের হস্তক্ষেপ কামনা করছে এলাকার নিরীহ পরিবারগুলো। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও জরুরী হয়ে পড়েছে।

    অন্যতায় সুদখোরদের অমানবিক নির্যাতন ও লুটপাটে মানুষ ও মানবতা হয়ে পদদলিত। এখনই ওইসব গরীব পরিবারগুলোকে রক্ষা করতে হবে।