সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক আট লেনের সুবিধা রেখে ছয় লেনে হবে

    0
    274

    আমার সিলেট ডেস্কঃ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক। বিশেষ করে সিলেটের পর্যটন আর শিল্পায়ন বিকাশের জন্য দীর্ঘদিন ধরে এই সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার দাবি ছিল এ অঞ্চলের মানুষের। সেই দাবি অবশেষে পূরণ হচ্ছে । আট লেনের সুবিধা রেখে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। চলতি বছরের জুন-জুলাইয়ে এ কাজের টেন্ডার আহবান করা হবে।

    আজ বুধবার দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সাংসদ ড. এ কে আব্দুল মোমেনের উদ্যোগে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য ওঠে আসে। সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ নিয়ে এ মতবিনিময় সভা হয় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায়। বৈঠকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলীরা জানান, সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক দুটি সার্ভিস লেনসহ ছয় লেন করা হবে।

    তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভবিষ্যতে এ সড়কটি আট লেনে উন্নীত করতে চাইছেন। এজন্য দুই লেনের জায়গা রাখা হবে। সার্ভিস লেন এমনভাবে করা হবে, যাতে মহাসড়ক আট লেনে উন্নীত হলে এ লেনকে মূল সড়কে যুক্ত করা যায়। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘১৯৯২ সালে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক চার লেন হওয়ার কথা ছিল। টাকাও পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু সড়কে যানবাহনের চাপ কম থাকার অজুহাত দেখিয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান দুই লেনের কাজ করান। আমি জাতিসংঘ থেকে দেশে ফেরার পরে সড়কটি চার লেন করার জন্য কাজ শুরু করি। শুরুতে চীনা একটি কোম্পানির কাজ করার কথা ছিল।

    তবে শেষপর্যন্ত তাদের সাথে সমঝোতা হয়নি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী সড়কটি ছয় লেনে করার আগ্রহ দেখান। বর্তমানে এ সড়কের কাজে এডিবি অর্থা বরাদ্দ দেবে। আজ বৃহস্পতিবার এডিবির একটি প্রতিনিধিদল সড়ক পরিদর্শনে আসছে।’ মন্ত্রী বলেন, ‘সড়কটি ছয় লেনে উন্নীত হলে সিলেটের পর্যটন সম্ভাবনা পুরো কাজে লাগবে, শিল্পায়নে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’

    সভায় প্রকৌশলীরা আরো জানান, সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের জন্য আগে যে চার লেনের নকশা করা হয়েছিল, তাতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ সড়কের রূপসী, বড়পা, পাঁচদোনা, মাধবদীবাজার, ইটাখোলা, মাখন চত্বর, শায়েস্তাগঞ্জসহ ১০টি জায়গায় নকশায় পরিবর্তন এসেছে। আঁকাবাঁকা পথ এড়িয়ে সোজা পথ বেছে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে বর্তমানে ২২৬ কিলোমিটার দূরত্ব আছে, কাজ শেষে তা কমে ২১০ কিলোমিটারে দাঁড়াবে। আগের নকশায় সড়কে ৫টি ওভারপাস ও ৪টি রেল ওভারপাস নির্মাণের কথা ছিল। নতুন নকশায় ১৫টি ওভারপাস ও ফ্লাইওভার এবং ৪টি রেল ওভারপাস থাকবে। আঁকাবাঁকা রাস্তা সোজা করায় যানবাহনের গতিও বাড়বে। বর্তমানে ৪০-৬০ কিলোমিটার গতিতে যান চলে এ সড়কে।

    কাজ শেষে ৮০-১২০ কিলোমিটার গতিতে চলবে যানবাহন। এতে যাতায়াতে সময় প্রায় অর্ধেক বাঁচবে। সড়ক ও জনপথের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলম জানান, আগামী মার্চের মধ্যে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের নকশা সংশোধন শেষে প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করা হবে। এরপর জুন-জুলাইয়ের মধ্যে কাজের টেন্ডার আহবান করা হবে। সড়কের কাজ শেষ হবে ২০২৩ সাল নাগাদ। বৈঠকে উপস্থিত জনপ্রতিনিধিরা দূরত্ব কমানোর দিকে গুরুত্ব দেন, যাতে যাতায়াতে সময় কম লাগে।

    এছাড়া মহাসড়কের সাথে আশপাশের সড়ক সংযুক্ত করারও পরামর্শ দেন তারা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের সাংসদ বদরুদ্দোজা মো. ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম ছয় লেনের মহাসড়কটিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল দিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন। এতে আরো ২৫ কিলোমিটার দূরত্ব কমবে বলে জানান তিনি। তাঁর এ প্রস্তাব খতিয়ে দেখতে সড়ক ও জনপথের প্রকৌশলীদের নির্দেশ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

    সড়ক ও জনপথের প্রকৌশলীরা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার অভিজ্ঞতা তাদের আছে। এ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কটিকে নিরাপদ মহাসড়ক হিসেবে ছয় লেনে উন্নীত করা হবে। মহাসড়কে যাত্রী ওঠা-নামার জন্য বিশেষভাবে সড়ক তৈরি করা হবে। সড়কের পাশে লোকালয়, জেলা ও উপজেলা সদর থাকায় সার্ভিস লেন যুক্ত করা হচ্ছে।

    এছাড়া নকশায় পরিবর্তন আসায় কিছুটা বেশি জায়গা অধিগ্রহণ করা প্রয়োজন। তবে অধিগ্রহণে কোনো সমস্যা হবে না বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এছাড়া ৫০ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে সড়কটি করা হবে বলেও জানান তারা। বৈঠকে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বীর প্রতীক গোলাম দস্তগীর গাজী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে সিলেটের সাংসদ নুরুল ইসলাম নাহিদ, মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, হাফিজ আহমদ মজুমদার, মোকাব্বির খান, সুনামগঞ্জের সাংসদ মুহিবুর রহমান মানিক, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, জয়া সেন গুপ্তা, পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, মৌলভীবাজারের সাংসদ সুলতান মনসুর ও উপাধ্যক্ষ ড আব্দুস শহীদ, নেছার আহমদ, হবিগঞ্জের সাংসদ শাহ নেওয়াজ মিলাদ গাজী, আব্দুল মজিদ খান, এডভোকেট আবু জাহির উপস্থিত ছিলেন।

    এছাড়া সুনামগঞ্জের মহিলা সাংসদ শামীমা শাহরিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মহিলা সাংসদ শিউলী আক্তার, সিলেটের আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দও ছিলেন এই বৈঠকে।