সিলেটে বেরী বাঁধের ২৫কোটি টাকা আত্মসাৎ! তদন্তে দুদক

    0
    218

    “পহেলা বৈশাখ শুরু হলেও হাওর তীরের ২০ লাখ কৃষক পরিবারের অধিকাংশ ঘরেই আজ চুলায় রান্না বসেনি, এর দায় দুর্নীতিবাজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তিন প্রকৌশলী, তাদের  লালিত ঠিকাদার ও পিআইসিদেরকেই নিতে হবে”

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,১৪এপ্রিল,বিশেষ সংবাদদাতা সিলেট থেকেঃ   চলতি বোরো মৌসুমে সুনামগঞ্জের হাওর রক্ষা বেরীবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের নামে দুর্নীতি অনিয়ম ও অর্থ আত্বসাতের অভিযোগ আমলে নিয়েছেন দুর্নীতিদমন কমিশন (দুদক)। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তিন প্রকৌশলী ও স্থানীয় এবং বহিরাগত বেশ কটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পরস্পরের যোগসাজসে বোরো ফসল রক্ষার ২৮টি বাঁধে বরাদ্দের প্রায় ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে দুদক প্রাথমিক পর্যায়ে নিশ্চিত হতে পেরেছেন।

    তদন্তর বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সহ সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীল সংস্থার মনিটরিং করবেন বলে সরকারের উ”্চ পর্যায়ের একাধিক সুত্র গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে রাষ্ট্রীয় সফর থেকে ফিরে আসার পর পরই সরকারের নীতি নির্ধারণি মহল হাওরের বাঁেধর সরকারি বরাদ্দের কোটি কোটি টাকা লুপাটের বিষয়ে দুদককে তদন্ত কাজ চালিয়ে যেতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

    সুনামগঞ্জ  পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঘুষ দুর্নীতির বরপুত্র হাওর খেকো নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন, সিলেটের আ লিক প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল হাই ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নূরুল ইসলামসহ তিন প্রকৌশলীর বাঁধ নির্মাণের দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই তিন প্রকৌশলী মিলে কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে কাজ পাইয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ভুয়া বিলও পরিশোধ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। গণমাধ্যমকে  বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য।’

    দুদকের দায়িত্বশীল সুত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের ২৮টি বাঁধ নির্মাণের জন্য ১২৬টি প্যাকেজের মধ্যে ১১৬টি প্যাকেজের দরপত্র আহ্বান না করে প্রায় ২৫ কোটি টাকার বিল আত্মসাৎ করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের আফসার সহ আরো বেশ ক’জন পাউবোর কর্মকর্তা। এ বিষয়ে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে দুদক। তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন, দুদকের পরিচালক মো. বেলাল হোসেন, উপ-পরিচালক আব্দুর রহীম ও সহকারী পরিচালক সেলিনা আক্তার মণি। তদন্তের বিষয়টি তদারকি করবেন দুদকের মহাপরিচালক আসাদুজ্জামান (তদন্ত)।১৫ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে কমিশনে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।’

    এদিকে বোরো ফসল ডুবির ঘটনাগুলো জাতীয় দৈনিক যুগান্তর সহ অন্যান্য জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে সংবাদ প্রকাশিত হলে দুদক এ অনিয়ম-দুর্নীতির অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। এসব অভিযোগের সাথে দুর্নীতির সুই সুতোয় গাথা রয়েছেন স্থানীয় ও বহিরাগত বেশ কটি প্রভাবশালী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানও।

    দুদকের উপ পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য গণমাধ্যকে বলেন, আফসার উদ্দিন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তিন প্রকৌশলীর সাথে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গুলো গত দুই বছরে জেলার বিভিন্ন স্থানে ২৮টি বাঁধ নির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে দুদকের নিকট সুনিদ্রিষ্ট তথ্য রয়েছে।

    । হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ জনসম্মুখে উঠে আসলে জেলার সকল পেশার লোকজন তাদের বিচারের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে সভা সমাবেশ . মানববন্ধন কর্মসুচী পালনের মধ্য দিয়ে সোচ্চার হয়ে উঠেন ।’ অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে সুনামগঞ্জ পাউবোর প্রকৌশলী মো. আফসার উদ্দিনকে গত বছরই সুনামগঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি তার প্রত্যাহার ঠেকান নানা কৌশলে।

    বোরো ফসল ডুবিতে হাওর তীরের ফসল হারা কৃষক পরিবারের সম্পর্কে বলতে গিয়ে সিলেট গণদাবী পরিষদের সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সদস্য সচিব সাংবাদিক হাবিব সরোয়ার আজাদ এ প্রতিবেদনকে শুক্রবার বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্র  শেখ হাসিনা কখনো দুর্নীতিকে প্রশ্নয় দেননি এ বিশ^াস ও আস্থা ফসলহারা কৃষক পরিবারের মধ্যে রয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, শুক্রবার পহেলা বৈশাখ শুরু হলেও হাওর তীরের ২০ লাখ কৃষক পরিবারের অধিকাংশ ঘরেই আজ চুলায় রান্না বসেনি, এর দায় দুর্নীতিবাজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তিন প্রকৌশলী, তাদের  লালিত ঠিকাদার ও পিআইসিদেরকেই নিতে হবে আমি মনে করি ওরা ২০ লাখ কৃষকদের ধান দিনদুপুরে ডাকাতি করে বাঁধের টাকা লুটে নিয়ে অহেতুক সরকার ও প্রকৃতির উপর দায় চাপানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে।’

    কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের নেত্রী অ্যাডভোকেট শামীমা শাহরিয়ার বলেন, ফসলহারা কৃষক পরিবারগুলোর মধ্যে চরম দুর্দিন বইছে, তাদেও ছেলে মেয়ের লেখা-পড়াও অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে , আমি দাবি জানাই জাতীর জনকের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সফল অর্থমন্ত্রী আবুল  মাল আবদুল মুহিত এমপি ও শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সহ সরকারের সংশ্লিস্ট দফতর প্রধানদের নিকট যেসব এলাকায় বোরো ফসল ডুবে গেছে সেই সব কৃষক পরিবারের ছেলে মেয়েদের শিক্ষা জীবন থেকে ঝড়ে পড়ে রোধে আগামী বোরো ফসল না উঠা পর্য্যন্ত সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেতন , রেজিষ্ট্রেশন , পরীক্ষা ফি মওকুফ করা, তাদেরকে বিশেষ বিচেনায় শিক্ষা উপকরণ ক্রয়ের জন্য আর্তীক সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি ওইসব এলাকায় সব ধরণের কোচিং সেন্টার দ্রুত বন্ধ করে দিয়ে শিক্ষকদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পাঠদানে নির্দেশনা প্রদানের জন্য।’

    সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন বলেন, বাঁধ নির্মাণ প্রসঙ্গে দুদকের অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তর বিষয়টি আমি শুনেছি।