সিলেটে আন্দোলনরত শিক্ষকদের পেটাল ছাত্রলীগ নামধারীরা

    0
    227

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,৩০আগস্ট : সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) ভিসির পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের পেটাল ছাত্রলীগ নামধারীরা। আজ রোববার সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে আন্দোলনরত শিক্ষকরা অবস্থান কর্মসূচি পালনে ভিসির প্রশাসনিক ভবনের সামনে এলে ছাত্রলীগ কর্মীরা তাদের ব্যানার কেড়ে নেয় এবং শিক্ষকদের গলা ধাক্কা দিয়ে মারধর করে সরিয়ে দেয়।

    আহতরা হলেন- আন্দোলনরত শিক্ষকদের নেতা অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল ইসলাম, অধ্যাপক ইয়াসমিন হক, শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনূস, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল গণি, অধ্যাপক এ ন ক সমাদ্দার, মোস্তফা কামাল মাসুদ ও সহযোগী অধ্যাপক মো: ফারুক উদ্দিন।

    মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল ইসলাম বলেন, “আমাদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা করেছে। আমাদের অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। ভিসি ছাত্রদের আমাদের ওপর লেলিয়ে দিয়েছে।”

    এদিকে, শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাফর ইকবাল।

    তিনি বলেন, “যে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, সে স্লোগানের এতো বড় অপমান আমার জীবনে দেখিনি। হামলাকারীরা যদি আমার ছাত্র হয়ে থাকে, তাহলে আমার গলায় দড়ি দিয়ে মরে যাওয়া উচিত।”

    রোববার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা ছিল আন্দোলনরত শিক্ষকদের এই সংগঠনের। গত কয়েক মাস ধরে তারা এ কর্মসূচি পালন করে আসছে।

    এদিকে ভিসি আমিনুল হক ভূইয়া একই দিনে বিকেল ৩টায় অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক ডাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এরইমধ্যে ভিসিকে সমর্থন দিয়ে আসা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভোর সাড়ে ৫টার দিকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। আন্দোলনরত শিক্ষকরা ব্যানার নিয়ে সেখানে যান সকাল সাড়ে ৭টার দিকে।

    সকাল সাড়ে আটটার দিকে ভিসি তার কার্যালয়ে ঢুকতে গেলে আন্দোলনরত শিক্ষকেরা তাকে ঢুকতে বাধা দেন। তখন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শিক্ষকদের ব্যানার কেড়ে নিয়ে ও মারধর করে সরিয়ে দেয়।

    এ ফাঁকে  ভিসি  ভবনে ঢুকে দোতলায় নিজের কার্যালয়ে চলে যান। ভিসি ভেতরে চলে যাওয়ার পর ছাত্রলীগ কর্মীরা শিক্ষকদের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে নতুন করে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। তাদের ধাক্কায় অধ্যাপক ইয়াসমিন হক মাটিতে পড়ে যান।

    এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি অঞ্জন রায়ের দাবি, ‘ছাত্রলীগ কোনো হামলার ঘটনা ঘটায়নি। এখানে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ভিসিবিরোধী শিক্ষকদের পৃথক কর্মসূচি চলছে। ভিসি ভেতরে যেতে চাইলে আন্দোলনরত শিক্ষকেরা বাধা দেন এবং ধাক্কা দিয়ে তাঁকে ফেলে দেন। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভিসিকে তার কার্যালয়ে ঢুকিয়ে দেয় মাত্র।‘

    ভিসি আমিনুল হক ভূইয়া বলেন, ‘আজ একাডেমিক কাউন্সিলের সভা হওয়ার কথা ছিল। সেখানে যোগ দেওয়ার জন্য যাওয়ার পথে আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা আমাকে বাধা দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা আর ঘটেনি।’

    কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের  ভিসি পদত্যাগের দাবিতে ১২ এপ্রিল থেকে ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’ ব্যানারে আন্দোলন শুরু করেছেন শিক্ষকদের একাংশ।

    আবার এই আন্দোলনকে বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা হিসেবে আখ্যা দিয়ে  সরকার-সমর্থক শিক্ষকদের একটি অংশ ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তার চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’ ব্যানারে ভিসির পক্ষে অবস্থান নেন।

    পাশাপাশি আন্দোলনরত শিক্ষকদের আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানোর দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আন্দোলন করছে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের  ছাত্রলীগ নামধারীরা।