শ্রীমঙ্গলে সিন্দুরখান চা বাগানে বসন্ত বুনার্জীর মৃত্যুবার্ষিকী পালিত  

    0
    396

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০১অক্টোবর,জহিরুল ইসলাম: আধুনিক চা শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক বসন্ত বুনার্জীর ৪৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ আর গভীর শ্রদ্ধার সাথে পালিত হয়েছে। গতকাল বুধবার  সিন্দুরখান চা বাগানের শহীদের স্মৃতিস্তম্ভে সকাল ৮ টায় বিভিন্ন চা বাগানের শত শত ছাত্র ও শ্রমিক শ্রদ্ধা নিবেদন করেন । শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে একটি র‌্যালী সমগ্র বাগান প্রদ্ধক্ষিণ করে ।এ সময় উপস্থিত থাকেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় স্বভাপতি মাখন লাল কর্মকার, ৭ নং রাজঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিজয় বুনার্জী, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট এর কেন্দ্রীয় সদস্য মোঃ আবুল হাসান, চা শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা ডাঃ আব্দুস সাত্তার, সিন্দুরখান চা বাগানের শ্রমিক নেতা সুরেশ দাস, চন্দন বুনার্জী, শ্যামল দাস, রাজঘাট এর শ্রমিক নেতা মানস মাদ্রাজী, হরিণছড়ার স্বভাপতি পরেশ নায়েক, স্কুল শিক্ষক সুরেন্দ্র তাঁতী, খোকন নায়েক, ছাত্র নেতা মিঠুন বুনার্জী, সয়ন তাতী, রাজকুমার শীল, সজীব বুনার্জী, রঞ্জিত তাঁতী, কাজল নায়েক, পলাশ তাঁতী সহ সিন্দুরখান, রাজঘাট, কেজুরিছড়া, হরিণছড়া, টিপড়াছড়া, পুটিয়াছড়া, ফুশকুড়ি, কালিঘাট, উদনাছড়া, বর্মাছড়া, বিদ্যাবিল, আমড়াইল সহ বিভিন্ন চা বাগানের প ায়েত, ছাত্রনেতা ও আপামর জনসাধারণ।

    সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন ষাটের দশকে যখন চা শ্রমিকদের শিক্ষিত প্রজন্ম মালিক শ্রেণীর শোষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের হাতিয়ার হিসাবে আধুনিক চা শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু করেন বসন্তবুনার্জী তখন ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। সক্রিয়ভাবে তিনি সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন । নিজের সহকর্মী বন্ধুদের সাথে নিয়ে চা জনজাতির  ভাষায় নিজে গান রচনা করে বাগানে বাগানে প্রচারকার্য চালিয়ে শ্রমিকদের স্বাধিকারের আন্দোলনে সচেতন করে তোলেন । সেই গানে উঠে আসত বাগান মালিকপক্ষের ব না ও শোষণের চিত্র। ৭০ এর নির্বাচনে রাজেন্দ্র প্রসাদ বুনার্জী মাছ মার্কা নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তিনি সেই নির্বাচনের প্রচারকার্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। কিন্তু চা শ্রমিকদের এই স্বতন্ত্র সাংগঠনিক বিকাশ মালিক শ্রেণী ও তৎকালীন ক্ষমতাসীনরা মেনে নিতে পারেনি। ১৯৭২ সালে লাল বাহিনী গঠন করে চা শ্রমিকদের এই ন্যায্য আন্দোলনকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র করা হয়।

    ৭২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তিনি স্কুল থেকে ট্রাকযোগে বাড়ি ফেরার পথে লালবাহিনীর সন্ত্রাসী কতৃক কালিঘাট চা বাগানে আটক হন। পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর তার ক্ষতবিক্ষত দেহ কালিঘাট চা বাগানের কালিটিলা থেকে উদ্ধার করা হয় ।তাঁর এই হত্যাকান্ড শ্রমিকদের আন্দোলনকে আরও তীব্র করে তোলে , এর পথ ধরেই চা শ্রমিক ইউনিয়নে চা শ্রমিকদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় । বক্তারা আরও বলেন শহীদ বসন্তবুনার্জী যে স্বপ্ন নিয়ে চা শ্রমিক আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন, ৪৩ বছর অতিক্রান্ত হলেও সেই স্বপ্ন আজও বাস্তবায়িত হয়নি, নূন্যতম মানবিক সুযোগ সুবিধা, মন্যুষ্যচিত মজুরী, আধুনিক শিক্ষা ও চিকিৎসা থেকে চা শ্রমিকরা আজও বি ত।  এমনকি বিচার হয়নি তাঁর হত্যাকান্ডেরও। বক্তারা শহীদ বসন্ত বুনার্জীর বিপ্লবী চেতনাকে ধারণ করে চা শ্রমিক আন্দোলনকে আরও বেগবান করে সকল শোষণ মুক্তির লড়াইকে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান।