সার্বিক উন্নয়নের প্রধান বাধাই হলো দুর্নীতিঃমেনন

    0
    240

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৭মেঃ বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী কমরেড রাশেদ খান মেনন এমপি বলেছেন, সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী বিএনপি-জামাতের সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়ে এদেশের গরিব মেহনতী সাধারণ মানুষের পরিশ্রমের উপর ভিত্তি করে দেশের প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলেও সেই গরিব মানুষের উন্নয়নে সার্বিক পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা সুষম রাখতে পারার মতো মৌল নীতিমালাগুলি কার্যকর নেই। সার্বিক উন্নয়নের প্রধান বাধাই হলো দুর্নীতি।

    তাই দুর্নীতি দমনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে বাজেটে সারাদেশের শ্রমজীবী গরিব মানুষের সার্বিক উন্নয়নের বিষয়কে প্রাধান্য দিতে হবে। দেশীয় শিল্পের বিকাশ, কৃষিতে ভর্তুকি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের আবাসন, সামাজিক সুরক্ষা, পল্লী রেশনিং সহ সাধারণ মানুষের স্বার্থকে বাজেটে প্রাধান্যে আনতে হবে।

    আগামী অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে ৭ দফা দাবিতে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত এক সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে কমরেড মেনন একথা বলেন। আজ ১৭ মে বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে কয়েক হাজার মানুষ লাল পতাকা ও ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে অংশগ্রহণ করেন।

    বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পরিকল্পনা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে সমাবেশে কমরেড মেনন আরো বলেন, বিদ্যুত সংকটের স্থায়ী সমাধানের দিকে যেতে কুইকরেন্টাল অস্থায়ী ব্যবস্থায় অধিক হারে ভর্তুকি দিয়ে বিদ্যুৎ খাতে অহেতুক ব্যয় বাড়ানো যাবেনা। এর বদলে স্থায়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে স্থায়ী সমাধানের দিকেই আমাদের নজর দিতে হবে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে গণশুনানীতেও মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধেই অভিমত এসেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্যও কমেছে। ঐ অভিমতকে ধারণ করেই বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি থেকে বিরত থাকতে হবে।

    সমাবেশে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থ বাদ দিয়ে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা হতে পারে না। বাজেট আসার আগ থেকেই অর্থমন্ত্রী দেশের সব মানুষকে করের আওতায় আনার যে ভীতিকর পরিকল্পনার গল্প শোনাচ্ছেন, তা বন্ধ না করলে সাধারণ মানুষ সরকারের উপর আস্থা হারাবে। দেশের সাধারণ কৃষকরা হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে ধান-গম উৎপাদন করে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করলেও সরকারের ভুল নীতি অনুসরণ ও প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজদের কারণে কৃষক তার ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। তার উপরে আবার করের বোঝা চাপিয়ে দিলে এই সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? সরকার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নতুন পে-স্কেল দিচ্ছে, সরকার-বেসরকারী সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অভিন্ন বেতন কাঠামো দিতে হবে। আমরা একে স্বাগত জানাই, কিন্তু বেসরকারি চাকরিজীবী বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের জন্য মজুরি স্কেলের কোনো খবর নেই। এটা হতে পারে না। এর ফলে বাজারে খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের

     দামের উপর যে প্রভাব পড়বে দেশের সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ তা সামলাতে পারবেন না। তাই সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করাই জরুরি। বাজেটে এই নি¤œবিত্ত, শ্রমজীবী, কৃষক, খেতমজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তা, গরিব মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে হবে।

    সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য কমরেড বিমল বিশ^াস, নুরুল হাসান, নুর আহমদ বকুল এবং কামরূল আহসান। সমাবেশ পরিচালনা করেন পার্টির ঢাকা মহানগর সাধারণ সম্পাদক কমরেড কিশোর রায়।

    সমাবেশে উত্থাপিত ৭দফা দাবীসমূহ :

    ১. বিদ্যুৎ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা যাবেনা, বিদ্যুৎখাতে চুরি, দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। পল্লী বিদ্যুৎ এর মূল্য কমাতে হবে পল্লী অঞ্চলের বিদ্যুতের জন্য বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে।

    ২. গ্রাম-শহরে গরীবদের জন্য পূর্ণাঙ্গ রেশনিং ব্যবস্থা চালু সহ নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য স্বল্পমূল্যে আবাসন ব্যবস্থা করতে হবে, উন্নয়ন বিকেন্দ্রীকরণে গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। কালো টাকা সাদা করা বন্ধ ও দুর্নীতি দমনে কার্যকর উদ্যোগ চাই।

    ৩. সমতল আদিবাসী আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ৫০০০ কোটি টাকা থেকে বরাদ্দ দাও। পার্বত্য চুক্তির পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে উন্নয়ন বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।

    ৪. শিক্ষা উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষাখাতে বাজেট বাড়াও। সরকারী-বেসরকারী শিক্ষকদের অভিন্ন বেতন কাঠামো নিশ্চিত কর। শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও জাতীয় নি¤œতম মজুরি নির্ধারণ করতে হবে।

    ৫. আন্ত:জেলা রেল যোগাযোগ গড়ে তোল, গণপরিবহন সহ রেল উন্নয়নে বাজেট বাড়াও। হাওড়-বাওড়-চরাঞ্চল-উপকূল অঞ্চলের উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দ দাও। বেকার যুবকদের প্রশিক্ষিত করে সহজ শর্তে ঋণ দাও।

    ৬. কৃষি ও কৃষকের স্বার্থে কৃষি আদালত প্রতিষ্ঠা কর। মাছ, মুরগি, পশুপালন খাতে সহজ শর্তে ঋণ দাও- বাজেট বাড়াও। খেত মজুরদের মজুরি কাজ সহ সকল সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত কর। জামাত-শিবিরের সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের এককালীন ক্ষতিপূরণ দাও।

    ৭. নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা প্রজনন ও স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বাড়াও। জাতীয় স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতিবন্ধ সহ চিকিৎসা খাতে বরাদ্দ বাড়াও। শিশু-নারী, মানব পাচার রোধে নিরাপত্তা বিধানের কার্যকর উদ্যোগ চাই। দুস্থনারী ও বয়স্ক ভাতা বৃদ্ধি কর, দুর্নীতি বন্ধ কর। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধসহ নারীনীতি বাস্তবায়নে বাজে বাড়াও।প্রেস বিজ্ঞপ্তি