সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে শেখ হাসিনার উন্নয়ন

    0
    358

    নজরুল ইসলাম তোফা: কাজের পরিকল্পনার চেয়ে কাজে লেগে যাওয়ার গুরুত্বটাই অনেক বেশি। তাই ভাবনা-বাহুল্যের প্রয়োজন নেই প্রয়োজনীয়তা হলো কর্মের সাফল্য কিংবা অর্জন। সুতরাং যাকে ভাবতে হবে, তা কাজে রূপদান করে সে ভাবনাকেই সার্থক করতে হবে। প্রাচীন শাস্ত্রে রয়েছে,- ”কর্মহি সত্যমেব জীবন” অর্থাৎ কর্মের মধ্যেই সকল মানব জীবনের সাফল্যের বীজ নিহিত। সে জন্য কাজ করতে হবে। কাজের মাধ্যমেই এই মানবজীবন ধন্য করতে হবে। আমরা শুধুই জ্বালানি কাঠকে আগুন বলি না, আর তাতে আগুন না দিলে তা কখনোই জ্বলে না। ফলে, তা কাঙ্ক্ষিত ফলও দেয় না। প্রগতিশীল সমাজের মানুষের চাওয়াটাই হলো নানাবিধ আদর্শিক কর্মের মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়ন। পক্ষান্তরে তারা এও চায় নিজকে অন্যের কাছে কর্মের মাধ্যমেই তুলে ধরতে।
    তাই তো, আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি মহৎ উদ্যোগ নিয়েছে তা হলো, দেশে সামাজিক নিরাপত্তার কর্মসূচি’। এমন এ কর্মসূচিতে সমাজের বঞ্চিত অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়নের একটি সর্ব বৃহৎ পদক্ষেপ রয়েছে। সমাজ পরিবর্তন কিংবা উন্নয়নের জন্য বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিল বাঙালি জাতি এবং বাংলাদেশের লক্ষ্যে। এই লক্ষ্য অর্জনে তিনি জীবনের ধাপে ধাপে বহু ত্যাগ আর তিতিক্ষার চিহ্ন রেখে গেছে। দেশ বা মানুষের স্বার্থেই তাঁর কন্যা জননেত্রী- ‘শেখ হাসিনা’, সেই একই পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলছে। বৈশ্বিক ও দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি বা সময়ের চাহিদাকেই বিবেচনা করে বিগত চার দশক রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের মূলধারায় ফিরিয়ে এনেছে। বিশেষ করে, মুক্তিযোদ্ধাদের কিংবা তাদের স্বজনকে আওয়ামীলীগ সরকার যেন পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত রেখেছে। তাই সামাজিক নিরাপত্তা আইনে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা কিংবা মুক্তিযুদ্ধে আহত ব্যক্তিদের এমন ভাতার আওতাতেই আনা হয়েছে। প্রায়- “দশ হাজার” উপকার ভোগী এমন বেষ্টনীর আওতা ভুক্ত হয়েছে।
    দেশ এবং সমাজের গণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেই তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশের দারিদ্র্যকে দূরীকরণ করার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ অথবা পূর্ণ ও সহনীয় কর্মের মাধ্যমেই সুযোগ সৃষ্টি করা, লিঙ্গ বৈষম্যহীনতা এবং সকলকেই এই সামাজিক কল্যাণের আওতায় নিয়ে আসার সহিত জনগণের ন্যায় বিচারের সুযোগ করে দেয়াটাই যেন তাঁর মৌলিক উদ্দেশ্য এবং ইচ্ছা। এই ইচ্ছা পোষণ করেই যেন ক্ষান্ত নন, এই কর্মসূচিকেই মানবিক দৃষ্টি কোণ থেকে বিবেচনা করে বাস্তবায়িত করেছে এবং আগামীতে করে যাবে। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র বক্তব্য তাহলো সামাজিক ন্যায় বিচারের পাশাপাশি দারিদ্র্য নিরসন ও দূরীকরণ, বেকারত্ব কিংবা সমাজে সমাজে বন্ধুত্ব, হৃদ্যতা এবং সমতার সুযোগ সৃষ্টি করণের গুরুত্ব’কে সমুন্নত করতে এমন ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি’। ‘সামাজিক নিরাপত্তা’ মানুষের উন্নয়ন ও মর্যাদাকেই যেন অনেকাংশে বৃদ্ধি করে। এমনধরণের কর্মসূচির ভিত্তি হচ্ছে- ‘স্বচ্ছতা’, ‘বৈচিত্র্যের প্রতিই যেন ‘সম্মান বোধ’ এবং ‘সামাজিক সুুুুরক্ষার সুযোগ’ বা জীবনের সকল ক্ষেত্রে মানবাধিকারের প্রয়োগ ঘটানোই যেন তাঁর প্রবল আকাঙ্ক্ষা। সুতরাং বলতেই হয়, এখানে কর্মক্ষেত্রের বিষয়টি তাঁর চিন্তাচেতনায় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হিসেবে বিবেচ্য। যেহেতু বিশ্ব অর্থ এবং অর্থনৈতিক মন্দার মুখো মুখি হচ্ছে কিছু কিছু দেশ, তা থেকে বাংলাদেশের মানুষরা যেন পরিত্রাণ পায়। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ দেশ পরিচালনার লক্ষ্যে অগ্রীম ভাবেই যেন, তরুণ প্রজন্মের বেকারত্ব কিংবা দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি গ্রহণ বা সামাজিক বিচ্ছিন্নতার মতো অনেকগুলো প্রেক্ষাপট নিয়ে বৃহৎ একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি’ বিষয়টিকেই আগামীতে অধিক প্রাধান্য ও গুরুত্ব দিয়ে স্ব-রাষ্ট্র পরিচালনার ইচ্ছা পোষণ করে।
    আওয়ামী লীগ সরকার ‘সামাজিক উন্নয়ন’ সংক্রান্ত বিষয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইসতেহারেই দারিদ্র্য দূূূরীকরণ ও বেকারত্বের বিরুদ্ধেই যেন বৃহৎ প্রতিশ্রুতি দিয়ে অগ্রসর হতে চান। এরই সঙ্গে স্হির এবং নিরাপদ সমাজ গঠনে সচেষ্ট থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। তাঁর সরকার সব মানুষকেই যেন উন্নয়ন পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সম্মত হয়।
    জানা যায় যে, এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে সমাজ সেবা অধিদফতর কার্যকর ভূমিকা দীর্ঘ দিন ধরেই পালন করে আসছে। এমন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন প্রকারের কর্মসূচি রয়েছে, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য যা তার মধ্যে হচ্ছে: বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধীর ভাতা ও স্বামী পরিত্যাক্তা ভাতা সহ মুক্তি যোদ্ধাদের ভাতার পাশা পাশি আরও অনেক কিছু নিয়েই যেন জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ‘দশটি’ উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে এ একটি প্রকল্প সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি। শুধু মাত্র সামাজিক নিরাপত্তার দিক যদি তুলে ধরি, তা হলে দেশের সামাজিক এবং অর্থনীতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি হতদরিদ্র মানুষের কথাগুলো আগে চলে আসে। এর গুরুত্ব অনেকাংশেই যেন বেশি। ভূমিকা রাখবে এ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, গ্রামাঞ্চলের সকল মানুষের সমস্যার সমাধানের মধ্য দিয়েই যেন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী রাষ্ট্র কর্তৃক হতদরিদ্র বা সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে আগেই আর্থিক বা অন্য কোন সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা চালু করে। তাই এই বিষয়টি রূপায়ণের লক্ষ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক আত্মবিশ্বাসী, তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের কাজে সফলতাও দেখিয়েছে। “জাতীয় সংসদ” নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগণের জন্যেই সামাজিক নিরাপত্তা বলয় বাড়িয়েছে। এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে আরও ১১ লাখ মানুষকে। জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত হয়- ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট নতুন করেই প্রায় ১১ লাখ হতদরিদ্র মানুষকেই এমন সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় আনার কথা বলেছে। এই তথ্যকে যত সহজভাবেই জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া যাবে ততই জনগণের জন্য মঙ্গল। সরকারের এ কাজের অংশীদারিত্ব বাড়াতে সাংবাদিকদের ভূমিকা রাখতে পারে। দেখা যায়, সরকার অনেক সময় কী কাজের মধ্যে আছে বা কি কাজ করছে তা জনগণের কাছে পৌঁছায় না।
    সমগ্র দেশের সকল মানুষের নিজস্ব সম্পদ অনেক অপ্রতুলতার কারণে উন্নত দেশের তুলনায়, অনুন্নত দেশে এমন ধরনের ব্যবস্থা অপেক্ষাকৃত কমই বলা চলে। সামান্য “খাদ্য” সহায়তা ছাড়া সত্তরের দশকে বাংলাদেশে এই ধরনের কোন ব্যবস্থা ছিলনা। উন্নত দেশের অনুরূপ বেকার ভাতা প্রদানের কোন প্রথাই বাংলাদেশে ছিল না। তবে বিগত প্রায় ‘তিন দশ’কে বাংলাদেশ এই ব্যবস্থার মাত্রা, আকার এবং ধরনের প্রসার ঘটিয়েছে। দরিদ্র মানুষের জন্যেই সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির বিস্তৃত করতে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত ও দুঃস্থ মহিলা ভাতা, অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃকালীন ভাতাসহ বিভিন্ন ভাতার হার এবং তার আওতাকেই ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছে। ২০০৮ -২০০৯ সালে এ খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা, বর্তমানে এই কার্যক্রমে বরাদ্দের পরিমাণ ২৫ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা দরকার যে, বাজেটে মাতৃত্বকালীন ভাতা ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করা হচ্ছে। এমন ভাতার মেয়াদ ২ বছর থেকে বৃদ্ধি করে, তা ৩ বছর করারও প্রস্তাব করা হয়েছে। এরই পাশা পাশিতেই কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মায়েদের ভাতাও ৩০০ টাকা থেকে করা হবে ৫০০ টাকা হবে। খানা আয়-ব্যয় জরিপ, ২০১০ এর সমীক্ষায় দেখা যায় যে, মোট জন সংখ্যার প্রায় ২৪.৫% এই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বেষ্টনির আওতাভুক্ত ছিল। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার নতুন করে এগারো লাখ সাধারণ মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে, এই কর্মসূচির আওতায় উপকার ভোগীর মোট সংখ্যা দাঁড়াবে ৮৬ লাখ। তাই শেষ হতে যাওয়া ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেটে এমন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতাতেই ৮টি খাতে মোট ৭৫ লাখ মানুষকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে।
    দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র (পিআরএসপি) ১৮টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চিহ্নিত করেছে। এসব কর্মসূচি নগদ অর্থ সহায়তা ও অন্য কোন সহায়তার সাথে যুক্ত। এমন কর্মসূচিগুলি হলো:- বয়স্ক ভাতায় সরকারি তথ্য অনুযায়ী মোট জন সংখ্যার শতকরা সাত ভাগ লোক বয়স্ক হিসেবে চিহ্নিত। এর শতকরা বিশভাগ লোক এ বেষ্টনীর আওতাভুক্তদ্ধ। এবারের বাজেটে বয়স্ক ভাতা কর্মসূচির আওতাতে পাঁঁচ লাখ মানুষ, বিধবা ভাতা কর্মসূচিতে ১ লাখ ৩৫ হাজার ও ‘অসচ্ছল প্রতিবন্ধী’ ১ লাখ ৭৫ হাজার মানুষদেরকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আবার দেশের দরিদ্র মাতাদের ভাতাও যেন অন্যান্য বেষ্টনীর মতো এ বেষ্টনীর পরিধি সীমিত হওয়া সত্ত্বেও এই কর্মসূচি পর্যায়ক্রমেই বাস্তবায়িত হয়েছে এবং আগামীতেও হবে। কমিউনিটি পুষ্টি কর্মসূচি’র উদ্দেশ্য গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে পুষ্টিহীনতা থেকে রক্ষা করা। এ খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি প্রধানত দুই ধরনের। প্রথমটি হলো সনাতনী টেস্ট রিলিফ, আর দ্বিতীয়টি কাজের বিনিময়ে খাদ্য। আবার দ্বিতীয় কর্মসূচির মধ্যেই দুই প্রকার কার্যক্রম রয়েছে। ১মটি হচ্ছে- ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং। এরই আওতাতে একেবারেই হতদরিদ্র মানুষকে- বিনামূল্যে খাদ্য’ সহায়তা প্রদান করা হয়। অন্যটি হলো ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট। এর আওতায় দল গঠন, প্রশিক্ষণ, দক্ষতা বৃদ্ধি বা সঞ্চয় কার্যক্রমও রয়েছে। এ ভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাময়িক বেকারত্ব দূরীকরণ কর্মসূচির আওতাতেই সহায়তার হাত বাড়িয়েছে। এই দেশের উত্তরাঞ্চলের পাঁচটি জেলায় এ ধরনের বেকারত্ব প্রকট হয়েছিল। বেকার ব্যক্তিদের সহায়তার জন্যে এ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল। সাময়িক এ বেকারত্ব সমস্যাটি ‘মঙ্গা’ নামেই পরিচিত। তাই, আওয়ামী লীগ সরকার নতুন বাজেটে ভাতাভোগীর দৈনন্দিন চাহিদার কথা ভেবে আরো বেশি পরিমাণ ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব রাখে।
    ঝরেপড়া ছাত্রভাতা, স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে এমন ছাত্রদের প্রদেয় ভাতায় প্রাথমিক স্কুলের প্রায়-পাঁচ লক্ষ ছাত্র আওতা ভুক্ত হয়েছে। ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে এর জন্য মোট ৫,৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রদের ভাতা প্রদানের কর্মসূচির আওতায় সমগ্র বাংলাদেশে প্রায় ৫৫ লক্ষ ছাত্রকে সাহায্য দেওয়া হবে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরেই এর জন্য বরাদ্দ ছিল ৫০০ কোটি টাকা। ছাত্রীভাতা এমন কর্মসূচির আওতাতেই ত্রিশ লক্ষ সুবিধাভোগী রয়েছে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে এর জন্য বরাদ্দ ছিল ২৩২৪ কোটি টাকা। প্রতি অর্থবছরেই এর জন্য যেন বরাদ্দ বাড়ছে এবং আগামীতেও বাড়বে। এসরকার প্রাথমিক স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের ‘সু-শিক্ষার প্লাটফর্ম’ সৃষ্টি করতেই এমন ধরণের উদ্যোগ হাতে নিয়ে ছিল এবং আবার জনগণের ভোট পেয়েই ক্ষমতায় এলে আরও কাজ করতে চান। “আওয়ামী লীগ সরকার” প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩ ও নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট- ২০১৩ নামে দুটি আইন পাস করেছে। ইতিমধ্যে এর বিধিমালাও প্রণয়ন করেছে। এসরকারের নির্দেশনা, যত স্থাপনা হবে, সেইখানেই প্রতিবন্ধীদের যাতায়াত এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও থাকতে হবে। বিশেষ করে টয়লেটের ব্যবস্থা সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা অন্য সকল স্থানেই তাদের জন্য সুযোগ-সুবিধা থাকে সেই নির্দেশনাও দেওয়া আছে। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বাংলা ও ইংরেজি ‘নববর্ষ’, দুটি ‘ঈদ’ এবং ‘বড় দিন’ উপলক্ষে তিনি যে “শুভেচ্ছা কার্ড” পাঠায়। তা এমন প্রতিবন্ধীদের আঁকা ছবি দিয়ে করা হয়। ১৬ লাখের বেশি প্রতিবন্ধীদেরকে সরকারের পক্ষ থেকেই ভাতা দেওয়া হয় এবং এই প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্যেও বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রাথমিক স্তরে ৭০০ টাকা করে, মাধ্যমিক স্তরে ৭৫০, উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ৮৫০ ও উচ্চ স্তরে যারা পড়াশোনা করছে তারা ১ হাজার ২০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আমরা আশা করতেই পারি, প্রতিবন্ধী এবং দেশের পিছিয়ে পড়া অংশকে এগিয়ে নিতে সরকার আরও পদক্ষেপ নেবে। তা ছাড়া অনেকাংশে অনাথ আশ্রম কর্মসূচিতে যেন এই আওয়ামী লীগ সরকার অনেক নান্দনিকতার সহিত কাজ করছে। এমন এই কর্মসূচির “দুইটি অংশ”, প্রথমটি হলো সরকার দ্বারা পরিচালিত ‘শিশু পরিবার আশ্রম’ ও দ্বিতীয়টি হলো, ‘বেসরকারি অনাথ আশ্রম’ কেন্দ্র। সুতরাং, প্রথমটির আওতায় প্রায় ১০ হাজার অনাথ শিশু সুবিধা ভোগ করে। আর দ্বিতীয়টিতে সুবিধা ভোগীর সংখ্যা- প্রায় ৪৫,০০০ হাজার। জানা যায় যে বর্তমানে বয়স্কভাতা পাচ্ছে ৩৫ লাখ মানুষ। নতুন বাজেটে এই খাতে ৪০ লাখ মানুষকে যুক্ত করবার প্রস্তাব করেছে সরকার। আবার বর্তমানে এ দেশে বিধবা ভাতা পান ১২ লাখ ৬৫ হাজার নারী। নতুন বাজেটে এ সংখ্যা ১৪ লাখে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে। একইভাবে বর্তমান অর্থবছরে প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে ৮ লাখ ২৫ হাজার জন। নতুন বাজেটে এর সংখ্যা বাড়িয়ে দশ লাখের মতো করবার প্রস্তাব হয়েছে। তাছাড়া মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়া ৬ লাখ বাড়িয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে ৭ লাখ। ভিজিডি কার্ড ধারীর সংখ্যা দশ লাখ থেকেই বাড়িয়ে যেন ১০ লাখ ৪০ হাজার করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবন্ধীর প্রতি দায় আওয়ামী লীগ সরকারের রয়েছে। সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের তেমনি ভাবেই সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে। এ দেশের কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হলেও যেন প্রতিবন্ধী, সংখ্যালঘু নৃ-গোষ্ঠী সহ বহু অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করতে এমন সরকার বদ্ধপরিকর। এউদ্দেশ্যেই যেন সরকার নীতিমালাও প্রণয়ন করেছে। এদেশের প্রতিবন্ধীরা, সংখ্যালঘু নৃ-গোষ্ঠী এবং অনগ্রসর জাতি তারা যেন যথাযথভাবে চাকরি পায় কিংবা তাদের এই চাকরিতেই অধিকার নিশ্চিত হয়। নীতিমালায় সেই ব্যবস্থা অবশ্যই তাঁরা প্রনয়ণ করবে। এই প্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি কল্যাণ ফাউন্ডেশন রয়েছে এবং যারা আবার খেলা-ধুলাতে সম্পৃক্ত তাদের বিশেষ অলিম্পিকে সম্পৃক্ত করা সহ আরও নানা ধরনের সুযোগ আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে। তারা বিদেশ থেকে দেশের জন্যে স্বর্ণ জয় করে আনছে। এর মাধ্যমেই বোঝা যায় তাদের মধ্যে সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে। তারা এই প্রতিভা দেশের কাজে তারা লাগতে পারবে সে জন্য তাদের অবশ্যই মূল্যায়ন প্রয়োজন। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের “উপবৃত্তি ১০ হাজার টাকা” করে প্রদান করছে। তাছাড়াও বহু হিজড়া, বেদে কিংবা অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর ভাতাও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এদেশে অনেক অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনকে উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতাসহ হিজড়া, বেদের উপবৃত্তি প্রাথমিক স্তরেই ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৪৫০ থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা এবং উচ্চতর স্তরে ১০০০ থেকে বাড়িয়ে ১২০০ টাকা নির্ধারণ হবে বলে জানা গেছে। প্রস্তাবিত এই বাজেটে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় ‘ক্যানসার’, ‘কিডনি’, ‘প্যারালাইজড’, ‘স্ট্রোক’ কিংবা জন্মগত হৃদরোগীদের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচিতে অর্থ বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে। এমন এই নতুন বাজেটের খাতে ৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। জানা যায় যে, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বাজেটে এখাতে বরাদ্দ ছিল ৫০ কোটি টাকা।
    প্রতিবন্ধী “ছাত্র ভাতা” বাংলাদেশের সকল পর্যায়ের প্রতিবন্ধী ছাত্র/ছাত্রী এমন কর্মসূচির আওতা ভুক্ত। ভাতার পরিমাণটুকু পর্যায়ভিত্তিক কমবেশি নির্ধারণ করেই প্রদান । ২০০৭-০৮ অর্থ বছরের জন্যে বরাদ্দ ছিল ৫ কোটি টাকা। তা ছাড়াও বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের- ‘নগদ অর্থ’ এবং ‘খাদ্য সহায়তা’ কর্মসূচির আওতায় ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে প্রায়- ৮.৫ মিলিয়ন দরিদ্র পরিবার কিংবা ৪২.৫ মিলিয়ন ব্যক্তি উপকৃত হয়েছে। জানা যায় যে, টেস্ট রিলিফ এবং কাবিখার উপকারভোগীরা এর অন্তর্ভুক্ত নয়। আওয়ামী লীগ সরকার এর প্রধানমন্ত্রীর তথ্য মতে অথবা সরকারি তথ্য অনুযায়ী এই দুইটি কর্মসূচির আওতাতেই- ৯.৩ মিলিয়ন সুবিধাভোগী ছিল। পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে ভিজিএফ-এ সবচেয়ে বেশিই (শতকরা ২৮) উপকারভোগী ছিল। এর পরেই নগদ অর্থ সহায়তা ছিল শতকরা ৯.৯ ভাগ এবং ভিজিডি ছিল শতকরা- ৩.৭ ভাগ এবং এ দেশের গণমানুষের জন্য অন্যান্য কর্মসূচির উপকারভোগীর সংখ্যা ছিল শতকরা ১ ভাগেরও কম বলা চলে। আসলেই দেখা যায়, জনগণের মৌলিক চাহিদার ব্যয়ভিত্তিক দরিদ্র জনসংখ্যার মধ্যে শতকরা মাত্র ৪০ ভাগ জনগোষ্ঠী বিভিন্ন কর্মসূচির আওতাভুক্ত হয়েছে। পোশাকশিল্প শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা তহবিলের এমন কর্মসূচিটি ২০০৭-২০০৮ অর্থ বছরেই চালু হয়ে ছিল এবং বরাদ্দ ছিল ২০ কোটি টাকা। সুতরাং বর্তমানে অতীতের চেয়ে নতুন বাজেটে অনেক বৃদ্ধি করেছে।জীবন মান উন্নয়ন কর্মসূচিতে চা শ্রমিক ১০ হাজার, দারিদ্র্য মাতৃত্বকালীন মাদের ১ লাখ টাকা, কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদের ৫০ হাজার টাকা এবং ভিজিডির সুবিধাভোগী ৪০ হাজার টাকা দেয়ার চিন্তা রয়েছে। সরকারের শেষ বা নতুন বাজেটের এমন কর্মসূচির আওতায় সুবিধা পাবেন চোদ্দ লাখ নারী। তাছাড়াও বর্তমানে ৩০ হাজার ‘চা’ শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ভাতা পাচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এমন সংখ্যা আরও দশ হাজার বাড়িয়ে ‘৪০ হাজার’ করা হচ্ছে। সুুতরাং সমসাময়িক চেতনায় সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে শেখ হাসিনার সামাজিক উন্নয়ন ইতিহাস হয়ে রবে।লেখক,নজরুল ইসলাম তোফা, টিভি ও মঞ্চ অভিনেতা, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিক, কলামিষ্ট এবং প্রভাষক।