সাভারে জীবিতদের উদ্ধারে ভারী যন্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত

    0
    430

    সাভার, ২৮ এপ্রিল : সাভারে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে উদ্ধারকাজ চালাতে ভারী যন্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি যন্ত্রের ব্যবহার ছাড়া প্রচলিত পদ্ধতিও বহাল রাখা হবে।

    সাভারে জীবিতদের উদ্ধারে ভারী যন্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত
    সাভারে জীবিতদের উদ্ধারে ভারী যন্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত

    আজ রবিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে দুর্ঘটনাস্থলের পাশে সংবাদ ব্রিফিংয়ে নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী এ কথা জানান। তিনি জানান বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে উদ্ধার সমন্বয় কমিটির বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
    জানা গেছে, আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে প্রথমে ভবনের ওপরের কংক্রিট সরানো হবে। পরে জীবিতদের সন্ধান করা হবে। আজ দুপুর নাগাদ এ যন্ত্রপাতি ব্যবহার শুরু হতে পারে। এরই মধ্যে ভেতরে থাকা সবাইকে সরিয়ে আনা হয়েছে। আজ রবিবার সকালে উদ্ধার কাজে ভারী যন্ত্র ব্যবহার নিয়ে সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর নেতৃত্বে বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। বৈঠকে অংশ নেয় সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী, র‌্যাব, রেড ক্রিসেন্টসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা। আজ রবিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এ বৈঠক শুরু হয়।
    পরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বলেন, উদ্ধার অভিযানে এ ক’দিন দেশপ্রেম, সাহস, দক্ষতা, শারীরিক শক্তিই ছিল মূল চালিকা শক্তি। এখন আমরা ম্যানুয়াল পদ্ধতির পাশাপাশি কিছু প্রযুক্তির সহায়তা নিতে চাচ্ছি। যেখানে প্রাণের স্পন্দন অছে সেখানে আর ম্যানুয়ালি এগোনো সম্ভব নয়। কারণ উদ্ধারকর্মীরা ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। তিনি আরও বলেন, আমরা সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রযুক্তি ব্যবহারের। এ অভিযানে ক্রেনসহ রিকভারি ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করা হবে। এটা অত্যন্ত কঠিন একটি প্রক্রিয়া। সব উদ্ধারকর্মীকে এরইমধ্যে বের করে আনা হয়েছে। উপর থেকে হাইড্রোলিক ক্রেন ব্যবহার করে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করা হবে। এতে সময় কম লাগবে। এটা জীবিতদের উদ্ধারে ইকুয়েপমেন্টের ব্যবহার। এখানে ভুল বোঝার অবকাশ নেই। এ কাজে যুক্ত থাকবেন সেনাবাহিনীর স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার্স, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, ফায়ার সার্ভিস। বাইরে থেকে সহযোগিতা করবে বিমান বাহিনী, পুলিশ, র‌্যাবসহ স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এছাড়া ডিসিসি, বেক্সিমকো, আনন্দ শিপইয়ার্ডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও সম্পৃত্ত থাকছে।
    চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বলেন, প্রথম থেকেই আমরা জীবিত বা উদ্ধারকর্মীদের জীবনের নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছি। নিহতদের দেহ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকেও আমরা লক্ষ রেখেছি। আমরা প্রচলিত পদ্ধতিতে কাজ করেছি। এটা ছিল উদ্ধার অভিযানের প্রথম পর্যায়। তবে দ্বিতীয় পর্যায়ে ম্যানুয়ালি উদ্ধার-প্রক্রিয়া কিছুটা কঠিন হয়ে গেছে। আমরা ম্যানুয়ালের পাশাপাশি কিছু প্রযুক্তির সহায়তা নেব।
    নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি বলেন, যেসব স্তরে প্রাণের অস্তিত্ব আছে, সেখানে প্রচলিত পদ্ধতিতে পৌঁছানো সম্ভব নয়। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, জীবিতদের উদ্ধারের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করব। এটা অত্যন্ত কঠিন একটি প্রক্রিয়া। এ জন্য আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ধ্বংসাবশেষগুলো সরানো হবে। এরপর যদি কেউ জীবিত থাকেন, হাইড্রোলিক ক্রেনের সাহায্যে উদ্ধারকর্মীরা তাদের উদ্ধার করবেন। তিনি আরও বলেন, উদ্ধার অভিযানে প্রথম থেকে যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছিল, তার কোনো বিকল্প ছিল না। এখন যন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। অভিযানের জন্য যা যা প্রয়োজন, সবকিছুই আমাদের আছে। সবচেয়ে বেশি আছে জনগণের সাহস, সামর্থ্য ও দেশপ্রেম।
    গত বুধবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামে বহুতল ভবনটি ধসে পড়ে। রবিবার সকাল পর্যন্ত এ ঘটনায় ৩৯৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৪৮ জনের লাশ স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অন্য লাশগুলো হস্তান্তরের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় আরো ৪৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। আহতদের এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ আশপাশের অন্য হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতাল, সিএমএইচ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।