সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে পর্যটকদের ভিড়

    0
    357

    আমার সিলেট  24 ডটকম,অক্টোবর,এস. এম. সুলতান খানঃ লোকবল সংকট, ছিনতাই, অসামাজিক কার্যকলাপসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হবিগঞ্জের একমাত্র সরকারী পর্যটন কেন্দ্র সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঈদ ও পূজায় পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছিল সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। প্রতিদিন দুর দুরান্ত থেকে প্রকৃতি প্রেমীরা সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে আসলেও তাদের জন্য নেই কোনো আবাসন ব্যবস্থা ও খাবার হোটেল। প্রায় ৪ হাজার একর জায়গা জুড়ে সাতছড়ি রেঞ্জ। এর মধ্যে ৬শ একর গভীর অরণ্যকে জাতীয় উদ্যান ঘোষনা করা হয়। ১৪৯ প্রজাতীর পাখি, ২৪ প্রজাতীর স্তন্যপায়ী প্রাণী, ১৮ প্রজাতীর সাপ আর ৮ প্রজাতীর উভয়চর প্রাণী ছাড়াও জাতীয় উদ্যানে রয়েছে প্রায় দেড়শ জাতের ফল ফুল ঔষধী ও কাঠের গাছ। জাতীয় উদ্যানকে ঘিরে রেখেছে আকর্ষনীয় চা বাগান। ৩টি ট্রেইলে গভীর অরণ্যে পায়ে হাটা যায় ৩ কিলোমিটার।

    সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে পর্যটকরা প্রায়ই ছিনতাইয়ের শিকার হন। গভীর অরণ্যে অনেক সময় অসামাজিক কর্মকান্ডেরও অভিযোগ উঠে। প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা সরকার রাজস্ব আদায় করলেও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানকে আরও আকর্ষনীয় করতে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। সরকারী বেসরকারীভাবে গড়ে উঠেনি আবাসন ব্যবস্থা। নেই কোনো খাবার হোটেল। বিদ্যুৎ না থাকায় জাতীয় উদ্যান এলাকা সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই অন্ধকারে ছেয়ে যায়। রাতের আধারে চুরি ডাকাতিসহ প্রাকৃতিক সম্পদ উজার করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

    বাংলাদেশের জীব ও জীব বৈচিত্র সংরক্ষনের উদ্দেশ্যে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ২০০৩ সালে নিসর্গ কাজ শুরু করে। দেশের যে ৫টি জায়গা নিসর্গ নির্বাচন করে এর মধ্যে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান অন্যতম। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে রয়েছে উল্লুক, খরগোশ, হনুমান, অসমী বানর, চশমা বানর, দাড়িওয়ালা বানর। দেখা মিলতে পারে হরিণেরও। কক্সবাজারের সাপারি পার্কের পর সাপের স্বর্গরাজ্য বলা হয়ে থাকে সাতছড়িকে। তবে এখন পর্যন্ত সাপে দংশনের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। পাম গাছ বাগানে শতশত বানরের হুলিখেলা পর্যটকদের নিয়ে যায় অন্য জগতে। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে শতশত বানর নেমে আসে পুরোপুরি রাস্তায়। তখন যানবাহন চালাতেও হিমসিম খেতে হয়। ৩ দিকে চা বাগান বেষ্টিত সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের একদিকে রয়েছে ভারত সিমান্ত। উদ্যানের ভেতরেই রয়েছে ত্রিপুরা বস্তি। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ত্রিপুরা বস্তিতে প্রবেশ নিষেধ। সাহায্যের জন্য রয়েছে ইকু ট্যুর গাইড। বন সংরক্ষন, জীব বৈচিত্র রক্ষা ও ইকু ট্যুরিজম শিল্পের বিকাশে কাজ করছে এনজিও সংস্থা আইপ্যাক। সাত ছড়ি বনের উপর নির্ভরশীল চুনারুঘাট উপজেলার পাইকপাড়া ও দেওরগাছ ইউনিয়ন ও মাধবপুর উপজেলার শাহজাহানপুর ইউনিয়নের কর্মজীবি নারী পুরুষ। জাতীয় উদ্যান পরিচালনার জন্য রয়েছে বন সহ ব্যবস্থাপনা কমিটি। পর্যটক তানিয়া আক্তার জানান- সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে আসলে একই সাথে চা বাগান, উচু নিচু পাহাড়, পশু পাখি, জীব বৈচিত্র দেখা যায়। একটি জায়গায় এতো বৈচিত্র আর কোথাও নেই। সাতছড়িতে অনেক পাখির দেখা মিলে যা অন্য কোথাও দেখা যায় না। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ওয়াহেদ আলী মাস্টার বলেন দেশ এবং বিদেশ থেকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে অনেক পর্যটক আসেন। তাদের থাকা খাওয়ার জন্য সরকারী বেসরকারীভাবে কোনো ব্যবস্থা নাই। তাছাড়া এখানে অনেক সময় পর্যটকরা ছিনতাইর শিকার হন। অসামাজিক কর্মকান্ডও হয়। পর্যটক পুলিশ থাকলে হয়তো সমস্যার সমাধান করা যেত। পর্যটক ফারুক উদ্দিন চৌধুরী জানান, সাত ছড়িতে ৩টি ট্রেইল রয়েছে। পায়ে হাটার এসব ট্রেইলে ৩০ মিনিট, ১ ঘন্টা ও ৩ ঘন্টা করে হাটা যায়। গভীর অরণ্যে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে প্রকৃতি কত সুন্দর। জাতীয় উদ্যানের গভীরে দিনের বেলায়ও অনেক জায়গা অন্ধকার। এর কারণ শতশত ফুট উচু গাছ গাছালি সুর্য্যরে কিরণ মাটিতে প্রবেশ করতে দেয় না। টিকিট বিক্রেতা সন্ধা রাণী দেব বর্মা জানান- প্রতি দিন প্রচুর দর্শক আসেন। প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য প্রতি টিকিট ২০ টাকা, শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ টাকা এবং বিদেশী পর্যটকদের জন্য ৩৫০ টাকা করে রাখা হয়। প্রায়ই বিদেশী পর্যটকরা সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে বেড়াতে আসেন। তাদের জন্য নির্দিষ্ট দু’ভাষী নাই। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের এতোসব উজ্জল সম্ভাবনা থাকার পরও কেন নানা অভিযোগ এমন প্রশ্নের জবাবে সাতছড়ি রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মনির উদ্দিন খান বলেছেন- স্বল্প সংখ্যক কর্মী দিয়ে বাউন্ডারীবিহীন ৪ হাজারের অধিক একর জায়গা নিয়ে গঠিত সাতছড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা খুবই কঠিন। স্থায়ীভাবে পর্যটক পুলিশ রাখা গেলে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে। মাঝে মাঝে ছিনতাইসহ অসামাজিক কর্মকান্ডের অভিযোগের কথা স্বীকার করে মনির উদ্দিন খান জানান- আমাদের টহল দল অপরাধ ঠেকানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি জানান-সাতছড়িতে ১জন গার্ড রয়েছে। তাছাড়া একজন স্কাউড গাইড, ১জন মালি ও একজন এমএলএসএস রয়েছেন। একটি শার্টার গান ও একটি থ্রি নট থ্রি রাইফেল রয়েছে। তাও অফিসে সংরক্ষিত। গার্ডরা থাকে নিরস্ত্র। এমতাবস্থায় কিভাবে জাতীয় উদ্যানের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব?

    অবস্থানঃ

    ঢাকা থেকে সড়ক পথে হবিগঞ্জের মাধবপুর হয়ে সাতছড়ির দুরত্ব প্রায় ১শ ৩০ কিলোমিটার। সিলেট থেকে সড়ক পথে দুরত্ব প্রায় ১শ ১০ কিলোমিটার। হবিগঞ্জ শহর থেকে সাতছড়ির দুরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলা সদরে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সেখান থেকে সড়ক অল্প সময়েই পৌছা যাবে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে। সন্ধ্যা নামার পূর্বেই সাতছড়ি এলাকা ত্যাগ করার নির্দেশনা রয়েছে। তাছাড়া বন বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের আকর্ষনীয় বাংলো ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। সেখানে রাত্রী যাপনেরও সু-ব্যবস্থা রয়েছে।