সরকারের ফর্মুলা আমিই দিয়েছিলামঃনতুন নাটকে এরশাদ

    0
    242

    আমারসিলেট24ডটকম,০ডিসেম্বরঃ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আরেকটি নতুন নাটকের জন্মের  ঘোষণা দিলেন। এবার তিনি নির্বাচনের ফিরে আসার জন্য ২টি শর্তজুরে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমার মন্ত্রিরা গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেছেন। তারা তফসিলের মেয়াদ ১০ দিন বাড়ানোর আবেদন করেছেন। যদি মেয়াদ বাড়ানো হয় এবং সব দল অংশ নেয় তাহলেই আমি নির্বাচনে যাব। আজ শুক্রবার রাত পৌনে ৮টার দিকে বারিধারাস্থ প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসভবনে সাংবাদিকদের তিনি এসব শর্তের কথা জানান। এর আগে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে নিজ বাসভবনে এরশাদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নির্বাচনে ফেরার আর কোনো উপায় নেই। নির্বাচনে ফিররেই মৃত্যু। দেশের মানুষকে মুখ দেখাতে পারবো না। সারাদেশের মানুষ আমার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। সরকার থেকে চাপ আসছে। চাপ তো আসবেই। তবুও কিছু করার নেই। প্রয়োজনে মরবো। তবু মাথা নত করবো না।
    সেসময় আক্ষেপ করে এরশাদ বলেন, ১৮ বছর ধরে আমার মামলা চলছে। দুবার বিএনপি ও দুবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু আমার একটি মামলাও প্রত্যাহার হয়নি। বরং মঞ্জুর হত্যা মামলার বিচার কাজ শেষ হওয়ার পরেও ইচ্ছাকৃতভাবে এ মামলার রায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। মহাজোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগ আমার প্রতি সুবিচার করেনি। আমার নিজের ছেড়ে দেয়া আসন কেড়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, সর্বদলীয় সরকারের ফর্মুলা আমিই দিয়েছিলাম। দেশ যাতে অনিশ্চয়তার দিকে না যায় তাই আমি বলেছিলাম সব দল থেকে প্রতিনিধি নিয়ে একটি সর্বদলীয় সরকার গঠন করতে। সেখান থেকে একজনকে প্রধান করতে বলেছিলাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আমার কথা রাখেননি। প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে এলো না। দেশে এখন সংঘাত চলছে। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব। নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।
    এদিকে এইচএম এরশাদের জাতীয় পার্টির নেতারা নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় মন্ত্রিপরিষদে যোগ দেন। পাশাপাশি গত ৫ জানুয়ারির ভোটে অংশ নিতে বনানীস্থ জাতীয় পার্টির কার্যালয় থেকে সপ্তাহব্যাপী উৎসব আমেজে দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রি করেন। জাপা প্রার্থীরা যথাসময়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করে। এরশাদ নিজেও ঢাকা-১৭, লালমনিরহাট-১ ও রংপুর-৩ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন। কিন্তু গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বিরোধী দল বিএনপিসহ সব দল না আসায় এবং পরিবেশ না থাকার অজুহাতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। পাশাপাশি জাতীয় পার্টির মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পদত্যাগ করতেও নির্দেশ দেন। এর পরপরই জাপার ৪ মন্ত্রী পদত্যাগপত্র তুলে দেন তার হাতে ।
    কিন্তু জাপা প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এখনো পদত্যাগপত্র জমা দেননি বলে এরশাদ জানান। তবে তিনি আশাবাদী ওই দুজনের পদত্যাগপত্র পেয়ে যাবেন। এরশাদ দলে কোনো কোন্দল নেই বলেও দাবি করেন। অথচ এরশাদের ওই দুই মন্ত্রী জাপা নির্বাচন থেকে সরে যাওয়া ঘোষণার পরও গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেন। তবে এরশাদ বলছেন, আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। আমার কাছে মন্ত্রিদের পদত্যাগপত্র জমা আছে। সময় মতো রাষ্ট্রপতি অথবা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তা জমা দেয়া হবে। এ বিষয়ে রওশন এরশাদকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
    অন্যদিকে আজ শুক্রবার সকালে নিজ বাসভবনে এরশাদ সাংবাদিকদের বলেন, আমি সুইসাইড করবো এ কথাটি সত্যি নয়। আমি দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং একটি দলের চেয়ারম্যান। নির্বাচন থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয়ার পর বাসায় এসে র‌্যাব এবং পুলিশের কয়েকশ’ সদস্য দেখে আমি ভেবেছি ওরা আমাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাবে। আমি বলেছিলাম- জোর করে মত পরিবর্তন করতে বাধ্য করা হলে আত্মহত্যার পথ বেছে নেব। কিন্তু কথাটি গণমাধ্যমে অন্যভাবে এসেছে। ওই সময় তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের পর বিএনপি ক্ষমতায় আসলেও দেশের কোনো পরিবর্তন হবে না। এভাবে থাকলে দেশের মানুষ সাফার হবে। তাই দেশের স্বার্থে স্থায়ী একটি পরিবর্তন প্রয়োজনবলে তিনি জানান।