সবচেয়ে মেধাবী সাংবাদিকরাই অনলাইন সাংবাদিকতায় কাজ করতে পারেনঃতথ্যমন্ত্রী

    2
    269

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৩এপ্রিল,সাইফুর তালুকদারঃ অনলাইন পোর্টালগুলোর ওপর সরকারের পুরোপুরি সমর্থন রয়েছে। আমরা চাই ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অনলাইন পোর্টালগুলো টিকে থাকুক। আমরা জানি, শুরু থেকে পোর্টালগুলো ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তথ্য-খবর, ছবি, ভিডিও সহ সবকিছু একত্রে দেখার জন্য অনলাইন পোর্টালগুলোর বিকল্প নেই। যারা অনলাইনে কাজ করে তাদের অত্যন্ত মেধাবী, উদ্ভাবনী শক্তির অধিকারী হতে হয়। সবচেয়ে মেধাবী সাংবাদিকরাই অনলাইন সাংবাদিকতায় কাজ করতে পারেন।

    রোববার দুপুরে সচিবালয়ের তথ্য অধিদপ্তরের মিলনায়তনে বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ পোর্টাল এ্যাসোসিয়েশন (বনপা’র) উদ্যোগে বাংলাদেশের উন্নয়নে অনলাইন গণমাধ্যমের ভূমিকা শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু একথাগুলো বলেছেন।

    তিনি বলেন, তথ্য কোন পণ্য নয়, এখানে সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে। আপনাদেরকে দায়বদ্ধতার ভেতরেই কাজ করতে হবে। পৃথিবীর যেখানেই আপনি বাস করেন সেখানেই দায়বদ্ধ থাকতে হবে। দায়বদ্ধতা মেনেই আপনাকে অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। নারী, শিশু, মানসম্মত পণ্য সম্পর্কে অবহিত করার দায়বদ্ধতা, দেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ধর্মের প্রতি, ধর্মের অনুভূতির প্রতি আপনাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। আপনারা তা সবাই জানেন, তার পরও মাঝে মাঝে অনেকে এই দায়বদ্ধতা ভুলে যান বলেই পুনরায় এই দায়বদ্ধতার কথা জানাতে হচ্ছে। ধর্মীয় উস্কানিমূলক কোন নিউজ প্রকাশ করা যাবে না।

    দেশের গণতন্ত্র তার নিজস্ব গতিতে এগুচ্ছে। গণমাধ্যম কর্মীদের সে বিষয়ে সংবাদপ্রকাশ করতে হবে। গণমাধ্যমকর্মীরা যখন দস্যুদের মতো বক্তব্য রাখেন তখন তা দেশের জন্য ক্ষতিকর। রাজনীতিবিদরা ভুল করতে পারেন, কিন্তু গণমাধ্যমকর্মীরা ভুল করতে পারেন না। হলুদ সাংবাদিকতা, বিক্রিত তথ্যপ্রকাশ দেশের জন্য, মানুষের জন্য বিপদ। যুদ্ধাপরাধী, সন্ত্রাস, আগুন বোমা থেকে যেমন দূরে থাকতে হবে, তেমনি অনলাইন কর্মীদের হলুদ সাংবাদিকতা থেকে দূরে থাকতে হবে। একদিকে নারী-শিশুর প্রতি, সমাজ সচেতনার প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে হবে, অন্যদিকে নিজের স্বকীয়তাকে টিকিয়ে রাখতে হবে।

    গণমাধ্যম হলো গণতন্ত্রের অতন্ত্র প্রহরী। গণমাধ্যম কর্মীরা ভুল করলে গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়বে। সূতরাং গণমাধ্যম কর্মীদেরকে দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য কাজ করতে হবে, মানুষের পক্ষে কাজ করতে হবে।

    তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, রাজনীতিবিদ এবং সমাজকর্মীরা যদি আইনের উর্ধ্বে না হয়, গণমাধ্যমকর্মীরাও আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যদি কেউ নারীর সম্ভ্রমহানী, শিশু নির্যাতন করে, দেশদ্রোহীতা করে, মিথ্যা-বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধেও যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

    দুষ্ককর্ম করলে কেউ বাঁচতে পারবে না। খালেদা জিয়াও দুষ্ককর্ম করছে। তাকেও অবশ্যই আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। আগুন সন্ত্রাসের নেত্রী বেগম জিয়াকেও শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। কোন মানুষ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। গণতন্ত্রের জন্য, দেশের জন্য কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

    ইনু বলেন, অনলাইন নীতিমালা নিয়ে আমরা দ্রুত বসবো। বিশেষজ্ঞদের সাথে বসে তার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এই নীতিমালা বাস্তবায়নে সময় প্রয়োজন। তবে অনলাইন গণমাধ্যমকর্মীদের স্বীকৃতি দরকার। সেটাও আমরা গভীরভাবে ভেবে দেখছি। আশা করছি, আপনাদের দ্রুত নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হবে।

    মন্ত্রী যোগ করেন, আমি অবাধ তথ্যপ্রবাহের পক্ষের লোক, আমি সংবিধান রক্ষার পক্ষে, নারী-শিশু, মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র এবং সাম্যের পক্ষের লোক। আমি নিরপেক্ষ নই। কেউ নিরপেক্ষ নয়, আপনারাও নন। আপনারা এগিয়ে যাবেন। অনলাইন পোর্টালগুলোও বিকাশ হচ্ছে এবং হবে। তবে একটি বটমলাইন অবশ্যই মানতে হবে। সর্বে্চ্চা দায়বদ্ধতা থেকে আপনাদের সংবাদপ্রকাশ করতে হবে।

    বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও জাতীয় অনলাইন প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক মোস্তফা জব্বার বলেন, বাংলাদেশ সম্ভবত একক মাইলফলক অতিক্রম করতে যাচ্ছে। কেন না, পৃথিবীর কোথাও কোন অনলাইন নীতিমালা নেই, কিন্তু বাংলাদেশে তা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত আমাদের নীতিমালার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পরামর্শ প্রার্থনা করছে।

    আমরা ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছি, ইংল্যান্ড আমাদের অনেক পরে ২০০৯ সালে তা বলছে। ভারত তো আরো পরে, ২০১৪ সালে ডিজিটাল দেশের কথা বলছে। ইদানিং মালদ্বীপ আমাদের কাছ থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা নিচ্ছেন। এই যে ভাবনাগুলো আমরা বিশ্ববাসীর কাছে দিতে পেরেছি, তাই আমাদের স্বাধীনতার অর্জন।

    বিজয় বাংলা ফন্টের এই জনক আরো বলেন, এদেশে ক্রমান্বয়ে প্রিন্ট মিডিয়া, শব্দযন্ত্র, টেলিভিশন এসেছে। কিন্তু অনলাইন মিডিয়া এই তিনটা মাধ্যমকে সমন্বয় করতে সক্ষম হয়েছে। যেখানে একটি মাধ্যমে তিনটিই পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে আমরা কেন একটি মাধ্যমে সীমাবদ্ধ থাকবো? শুধুমাত্র একটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যেভাবে রাজনীতিতে প্রভাব ফেলছে, আমার মনে হয় কোন প্রিন্ট মিডিয়াই সেরূপ প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। এখান থেকেই অনলাইন পোর্টালগুলোর গুরুত্ব ফুটে উঠে। দেশের প্রায় ২০ হাজার অনলাইন পোর্টালকে অবহেলা করার কোন সুযোগ নেই। ১২শ প্রিন্ট পত্রিকা এবং ২৬টি চ্যানেলকে যেভাবে তদারকী করা হচ্ছে, একইভাবে অনলাইনকেও গুরুত্বের সাথে তদারকী করতে হবে। দেশে দ্রুত ইন্টারনেটের বিস্তার বাড়ছে। ইন্টারনেটের প্রচার যখন আগামী ২ বছরে ১১ লাখে পৌঁছে যাবে, তখন অনলাইন মিডিয়ার গুরুত্ব প্রিন্ট পত্রিকার চেয়ে বহুগুণে বেড়ে যাবে।

    তিনি আরো বরেন, ২০হাজার পোর্টাল কিভাবে টিকে আছে তাও আমাদের দেখতে হবে। তারা বহু চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে এগিয়ে যাচ্ছে। গুগল এখন ফ্রি বিজ্ঞাপন দেয়। কাজেই অনলাইন মিডিয়াগুলো কারো ওপর নির্ভরশীল থাকবে না। সরকার সহযোগিতা করুক আর না করুক, তারা দুনিয়া থেকে আয় করে এগিয়ে যাবে। তবে ৫লাখ টাকা দিয়ে অনলাইন পোর্টালগুলোর রেজিস্ট্রেশন ফি দেয়ার যে গুঞ্জন উঠেছিল, তা ছিল কায়েমী স্বার্থবাদীদের অসৎ প্রচারণা। ১৬কোটি মানুষের দেশে ২টি অনলাইন পত্রিকা নয়, ২০ হাজার পত্রিকাই প্রয়োজন।

    প্রাচীন কৃষিভিত্তিক সমাজের চিন্তা করে ডিজিটাল দেশ বা বিশ্ব গড়া সম্ভব নয়। পশ্চাৎপদ চিন্তা বাদ দিয়ে সামনের দিকে তাকান। আমরা আশা করি একদিন বিশ্বের মানুষ বাংলাদেশের কাছ থেকে ডিজিটাল সাংবাদিকতার শিক্ষা নিতে আসবে।

    বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এস এম মাহবুবুল আলম বলেন, দেশে আজ অনলাইন গণমাধ্যমের বিপ্লব ঘটে গেছে। ডিজিটাল দেশ বাস্তবায়নে এর প্রয়োজন ছিল। প্রিন্ট মিডিয়ার মতো অনলাইনের জন্য নীতিমালা প্রয়োজন। আমরা আশা করছি খুব দ্রুত অনলাইন নীতিমালা সম্পন্ন করা হবে। একটি দেশের উন্নয়নে অনলাইন গণমাধ্যমের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। অনেক পরিসংখ্যান বলছে এর মধ্যে অনলাইন পোর্টাল ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এটা ইতিবাচক। ধীরে ধীরে সবগুলোকে একটা নীতিমালার মধ্যে আনা হবে এবং প্রত্যেকের পেশাগত গুরুত্বের দিক বিবেচনা করা হবে।

    তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা তছির আহমেদ বলেন, আপনারা ডিজিটাল দেশ গড়ার কারিগর।  আপনারা প্রতি আমাদের সহযোগিতার আরো ৫ বছর আগেই আপনারা দাঁড়িয়ে গেছেন। আমরা আপনাদের জন্য এগিয়ে এসেছি ৫ বছর পর। তার জন্য আপনাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। তবে আপনারা নিউজ পোর্টালগুলোতে দেশদ্রোহী, অশ্লীল সংবাদ প্রকাশ করবেন না। আমরা অশ্লীলতা প্রতিরোধে পোর্টালগুলো তদারকী করছি।

    বনপা’র সভাপতি শামসুল আলম স্বপনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সারাদেশের ৫০টি অনলাইন পোর্টালের সম্পাদক-প্রকাশক উপস্থিত ছিলেন। উক্ত সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বনপা’র সভাপতি শামসুল আলম স্বপন।

    তিনি বলেন, অনলাইন নীতিমালা চূড়ান্তকরণে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু’র ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমরা মুগ্ধ। তথ্যমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় বাংলাদেশে অনলাইন জগতে ঘটে গেছে এক নীরব বিপ্লব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে তথ্য মন্ত্রণালয় যুগান্তকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করায় বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ পোর্টাল এ্যাসোসিয়েশন (বনপা’র) পক্ষ থেকে তথ্যমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

    তিনি বলেন, সারা দেশে হাজার হাজার অনলাইন পোর্টালের মধ্যে ৩হাজার পোর্টালই বনপার সদস্য। যেসব ন্উিজ পোর্টাল রাষ্ট্রদ্রোহী এবং অশ্লীল সংবাদ প্রকাশ করে, সেসব পোর্টালগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

    বনপা’র সহ-সভাপতি ও কক্সবাজার নিউজ ডটকমের সম্পাদক অধ্যাপক আকতার চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় অনলাইন প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক ও বনপা’র প্রধান উপদেষ্টা, প্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বার, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এস এম মাহবুবুল আলম, পিআইডি’র প্রধান তথ্যকর্মকর্তা তছির আহমেদ, বনপা’র সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান হেলাল।

    মতবিনিময় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিশের বাঁশি ডটকমের সম্পাদক শুভাষ সাহা, বাংলাপোস্ট বিডি ডটকমের সম্পাদক এম আলী হোসেন (চট্টগ্রাম), বিডি টুয়েন্টি ফোর লাইভ ডটকমের সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আসাদ (ঢাকা), উত্তরা নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকমের সম্পাদক মোহাম্মদ তারেকউজ্জামান খান (প্রস্তাবিত ময়মনসিংহ বিভাগ), সিলেটের খবর টুয়েন্টি ফোর ডটকমের সম্পাদক গুলজার আহমেদ হেলাল ও আজকের সিলেট ডটকমের প্রধান সম্পাদক সাইফুর রহমান তালুকদার (সিলেট), উত্তর বাংলার ডটকমের সম্পাদক মুরাদ মাহমুদ (রংপুর), বাঘা নিউজ ডটকমের সম্পাদক সেলিম ভান্ডরী (রাজশাহী) প্রমুখ।