সন্তান গর্ভে বাবা নিয়ে সন্দেহ,অবশেষে থানায় অভিযোগ

    0
    305

    রেজওয়ান করিম সাব্বির,জৈন্তাপুর (সিলেট) প্রতিনিধি: সিলেটের জৈন্তাপুরে সাড়ে ৮মাসের গর্ভের সন্তানের বাবা নিয়ে সৃষ্ট হয়েছে ধুম্রজ্বাল। মানবাধিকার কমিশনের সহায়তায় জৈন্তাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়েরের পর এলাকায় চলছে তোলপাড়।

    সরেজমিনে ঘুরে জানাযায়- প্রায় ৮বৎসর পূর্বে জৈন্তাপুর উপজেলার গোয়াবাড়ী আদর্শগ্রামের বসিন্ধা গ্রামের রবি দাসের মেয়ে বাবিতা দাসের বিয়ে হয় ভারতের চাঁনঘাট বস্তির কালা নায়েকের ছেলে শংকর নায়েকের সাথে। সংসার জীবনে ববিতা-শংকরের ঘরে একটি ছেলে সন্তান জন্মগ্রহন করে। আনন্দের সাথে দাম্পত্য জীবন চলতে থাকে। স্বামী পেশায় গাড়ী চালক হওয়ায় কাজের সূত্রে বিভিন্ন সময় বাড়ীর বাহিরে থাকতে হয়। এই সুযোগে ববিতা পরকিয়া সর্ম্পকে জড়িয়ে ভারতের আমকী বস্তির কুলি সম্প্রদায়ের ১ছেলের হাত ধরে পালিয়ে যায়। নানান ঝামেলার পর পুনরায় ববিতা ফিরে আসে পূর্বের স্বামী শংকরের ঘরে। পরবর্তীতে শংকর-ববিতার ঘরে জন্মনেয় আরেকটি কন্যা সন্তান। হঠাৎ করে ২বৎসর পূর্বে গোয়াবাড়ী গ্রামের ২ব্যক্তির সহায়তায় ববিতা ছেলেকে ভারতে রেখে মেয়েকে নিয়ে পিতার বাড়ী গোয়াবাড়ীতে চলে আসে। বাংলাদেশে আসার পর একাধিক বার স্বামী ববিতাকে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং দেখা সাক্ষাৎ সহ তন্তরঙ্গ আলাপচারিতা হয়। চলিত বৎসরের ১৫ রমজানে দিকে স্ত্রী সন্তানকে ফিরিয়ে নিতে শংকর শশুর বাড়ীতে আসলে শশুর রবি দাস থাকে তাড়ীয়ে দেন। এরপর হতে দীর্ঘ ৩মাস যাবৎ শংকর আসা যাওয়া করেছেন না। গত আগষ্ট মাসের শেষের দিকে ববিতার গর্ভের সন্তান নিয়ে মিশ্র কথা শুরু হলে এলাকায় চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়।

    একপর্যায়ে ববিতার পিতা রবি দাস এলাকাবাসীর নিকট বিচারপ্রার্থী হন। বিষয়টির সত্যতা যাচাই জন্য বৈঠকে ডাকে স্থানীয়রা। ঐ বৈঠকে ববিতা গোয়াবাড়ী গ্রামের আব্দুস ছালামের ছেলে দিলু তার সর্বনাশ করেছে বলে জানায়। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাঁধে বৈঠকে থাকাবস্থায় ববিতা একই গ্রামের মৃত গিয়াছ উদ্দিনের প্রবাসী ছেলে সাজিদ উদ্দিনের কথাও বলে থাকে। বৈঠকের মুরব্বীরা রবি দাসকে জানান আপনার মেয়ের নিকট হতে প্রকৃত ব্যক্তির নাম কিংবা এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কি-না জানার জন্য। তাছাড়া এঘটনায় কারা কারা জড়িত রয়েছে তাদের নাম বলার অনুরোধ করেন। রবি দাসকে গ্রামবাসী আশ্বস্ত করেন প্রকৃত দোষী ব্যক্তিকে খুঁজে তার মেয়ে এবং গর্ভের সন্তানের দায়িত্ব নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। এদিকে বৈঠক হতে চলে গিয়ে রবি দাস গ্রামবাসির সাথে আর কোন আলোচনা না করেই ববিতা বাদি হয়ে সাজিদের নাম উল্লেখ করে আর্ন্তজাতীক মানবাধিকার কমিশনের সিলেট অফিসের সহায়তায় জৈন্তাপুর মডেল থানায় একটি অভিযোগ করে। অভিযোগের পর হতে বিষয়টি নিয়ে গ্রামবাসির মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তাদের দাবী তাহলে অনাগত গর্ভজাত সন্তানটি কার, এনিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা ও নানান জল্পনা কল্পনা।

    এনিয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত দিলু জানান- আমার সাথে এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। আমি এঘটনায় কোন ভাবে জড়িত নই। ববিতার অতিত কর্মকান্ড সকলেই কমবেশি জানেন, তার অপকর্ম গোচাতে বিষয়টি নিয়ে সে অপবাদ রটাচ্ছে।

    এবিষয়ে জানতে চাইলে সাজিদের পরিবার জানায়- আমাদের ছেলে প্রায় ৮মাস পূর্বে গ্রামের সবাইকে জানিয়ে দেশের বাহিরে গেছে। তখন ববিতা তার গর্ভের সন্তানটি সাজিদের বলে গ্রামবাসীকে কাউকে তো জানায় নি বা কাহারো কাছে এনিয়ে বিচারপ্রার্থী হয়নি। বরং ববিতা বিভিন্ন সময় তার গর্ভের সন্তানটি স্বামীর বলে এলাকার মহিলাদের নিকট জানায়। সালিশ বৈঠকে আবার গ্রামের অন্য ব্যক্তির নাম সে বলছে। এখন আমাদের ভাইয়ের নাম জড়িয়ে থানায় অভিযোগ করেছে এতেই আমরা বিচলিত। সে কাহারও সলা পরামর্শে তার কুকর্মের বিষয়টি দিয়ে বা স্বামীর ঔরসজাত সন্তানটি আমাদের ভাইয়ের বলে দাবী তুলেছে। সে মুলত আমাদেরকে সামাজিক ভাবে হেও প্রতিপন্ন করতে মানবাধিকারের সহায়তায় ভাইয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা ভিত্তিহীন অভিযোগ দায়ের করেছে। আমরা আইনের মাধ্যমে তার গর্ভের সন্তানের প্রকৃত বাবার পরিচয় জানতে চাই।

    এবিষয়ে জানেত ববিতার স্বামী শংকর নায়েক প্রতিবেদকে জানায়- আমি স্ত্রী সন্তান নিতে অনেক চেষ্টা করেছি। আমি আসা যাওয়া করেছি, অন্তরঙ্গ মুহুত্বে স্ত্রীর সাথে কথা বার্তা বলেছি। কিন্তু আমার শশুর আমাকে বার বার তাড়ীয়ে দিয়েছে যাহা গোয়াবাড়ী গ্রামের লোকজন দেখেছে। এক পর্যায়ে স্ত্রীর গর্ভের সন্তানটি তার বলে তিনি দাবী করেন। অতিতে ভারতে তার স্ত্রী এরকম ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।

    এবিষয়ে জানেত ববিতার পিতা রবি দাস বলেন- শংকর এখানে আসলে আমি দেখিনি। তবে যে দিন তাকে দেখেছি তখন তাকে আমার বাড়ীতে না আসার জন্য বলে দিয়েছি। দীর্ঘ সাড়ে আট মাস যাবৎ আপনার মেয়ে অসুস্ত এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কিছু জানতেন না বলে প্রতিবেদককে বলেন। এমনকি আমার স্ত্রী আমাকে কিছু জানায় নি। গ্রামবাসীর কাছে বিষয়টি বলায় তারা আমাকে ভয় ভীতি দেখালে আমি মেয়েকে নিয়ে মানবাধিকারের সহায়তা নেই। আমার মেয়ে বাদী হয়ে অভিযোগ করেছে।

    এবিষয়ে ববিতা জানান- আমি আমার বাবার ভয়ে বিষয়টি কাউকে জানাইনি। বিষয়টি প্রকাশ হয়ে গেলে গ্রাম্য সালিশে সাজিদের নাম বলেছি। সালিশ বৈঠকে দিলু ও সাজিদের নাম বললে আর অভিযোগ শুধু সাজিদের নামে কেন? প্রশ্নের জবাবে ববিতা বলে জনৈক্য মহিলা তাকে দিলুর নাম বলতে বলেছে। তারপর আমি সাজিদের নামে অভিযোগ করেছি। তোমার ক্ষতি করে সাজিদ বিদেশে চলে যাচ্ছে তুমি বাঁধা দেওনি কেন বা তখন অভিযোগ করনি কেন? প্রশ্ন করা হলে- ববিতা বলে আমার পিতা রবি দাশের ভয়ে আমি কিছু বলিনি বা তখন অভিযোগ করিনি। তোমার স্বামী সন্তানের দাবী করেছে প্রশ্ন করা হলে ববিতা জানায় শংকর যাওয়া আসা করেছে কথা বলেছে তার সাথে শারিরিক সম্পর্ক হয়নি।

    এবিষয়ে জৈন্তাপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ খাঁন মোঃ মাঈনুল জাকির বলেন- অভিযোগ এসেছে এবং ওসিসি থেকে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। বিষয়টি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত কাজ চালাচ্ছি। তদন্ত শেষে যত দ্রুত সম্ভব আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন প্রেরন করব।