সংরক্ষিত বনাঞ্চল লাউয়াছড়ায় আগুণের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি ধোঁয়াশার বেড়াজালে

0
925
সংরক্ষিত বনাঞ্চল লাউয়াছড়ায় আগুণের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি ধোঁয়াশার বেড়াজালে
সংরক্ষিত বনাঞ্চল লাউয়াছড়ায় আগুণের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি ধোঁয়াশার বেড়াজালে

জহিরুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টারঃ যে বনে হৈচৈ করা আগুন লাগানো বন্য প্রাণীদের বিরক্ত করা যাবে না বলে বনের ভিতরে বিভিন্ন স্থানে সাইন বোর্ড টাঙ্গিয়ে রাখা হয়েছে সকলের জন্য। আর সেই বনে কিনা শুটিং, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বড় বড় জেনারেটর ২ টির বিকট শব্দ, বনের ভিতরে বাস,মাইক্রোবাস, মটর সাইকেল নিয়ে প্রবেশ, আগুন জ্বালিয়ে ধোঁয়ার সৃষ্টি, এটি অপরাধের শামিল।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের সংরক্ষিত বনাঞ্চল লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে গত ৮ জুন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত শুটিং বিজ্ঞাপনের চিত্রগ্রহণ করার সময় আগুণ জ্বালানো, জেনারেটর চালানো, ধোঁয়া সৃষ্টি করা ও পরিবেশের ক্ষয়-ক্ষতি তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে৷

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এই তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন বলে গণমাধ্যমের কাছে জানালেও সেই কমিটি নিয়ে তৈরী হয়েছে ধোঁয়াশার বেড়াজাল ৷

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে জানান, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষন কর্মকর্তা মীর্জা মেহেদী সারোয়ারকে প্রধান করে তিন সদস্যদের কমিটি করে দিয়েছি৷ কমিটিকে একদিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্যও বলা হয়েছে৷
তবে কমিটি গঠন নিয়ে ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষন কর্মকর্তা মির্জা মেহেদী সারোয়ার৷
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আমি গতকাল তদন্ত করার জন্য মৌখিক নির্দেশ পেয়েছি কোন লিখিত নির্দেশ আমি পাইনি৷ এই তদন্ত দলে আমি একাই আছি আমার সাথে আর কেউ নেই৷ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য আমাকে কোন নির্ধারিত সময়ও বেঁধে দেওয়া হয় নি৷তিনি আরও বলেন, মৌখিক নির্দেশ পেয়ে গতকাল রাতেই আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি, রাত সাড়ে আটটা থেকে রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত সেখানে তদন্তের কাজ করে এসেছি৷
এদিকে গতকাল লাউয়াছড়ায় আগুণ জ্বালিয়ে বিজ্ঞাপনের চিত্রগ্রহণ করার খবরটি গণমাধ্যমে আসার পর প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিজ্ঞাপনচিত্রটির চিত্রগ্রহণের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বনবিভাগ৷
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগের মৌলভীবাজারের রেঞ্জ অফিসার শহিদুল ইসলাম জানান, গতকাল বনের ভেতর চিত্রগ্রহণের সময় আগুণ জ্বালানো, জেনারেটর চালানোসহ নানান বিষয় জানতে পেরে আমরা গতকালই বিজ্ঞাপনচিত্রটির চিত্রগ্রহণের কাজ বন্ধ করার প্রোডাকশন টিমকে নির্দেশ দেই৷
এদিকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর এরকমভাবে আগুণ জ্বালিয়ে চিত্রগ্রহণ করার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো৷লাউয়াছড়া জীব বৈচিত্র্য রক্ষা আন্দোলনের যুগ্ম সদস্য সচিব প্রিতম দাশ বলেন, যেখানে আমরা লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জীব বৈচিত্র্য রক্ষার জন্য পর্যটক নিষিদ্ধ করার দাবী জানিয়ে আসছি, সেখানে বনে শুটিং এর নামে আগুন জ্বালিয়ে ধোয়া তৈরী করে বনের পরিবেশকে নষ্ট করা হচ্ছে। লাউয়াছড়া এখন বানিজ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন শত শত পর্যটক এখানে বনের পরিবেশ নষ্ট করছেন। প্রাণীরা বন ছেড়ে লোকালয়ে চলে আসছে। মারা যাচ্ছে। প্রাণীদের প্রজননে সমস্যা হচ্ছে। বন বিভাগ কিভাবে এসব বিষয়ে অনুমতি দেয় ? এই বিষয়ে বন বিভাগের যথেষ্ট গাফিলতি রয়েছে।
উল্লেখ্য, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের সংরক্ষিত বনাঞ্চল “লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে” গতকাল (৮ জুন) আগুণ জ্বালিয়ে চিত্রগ্রহণ করে একটি চিত্রগ্রহণকারী সংস্থা৷ বুধবার (৮ জুন) সকাল থেকে লাউয়াছড়া বনের অভ্যন্তরে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর, লাইট, ভারী যন্ত্রপাতি এবং ট্রাক ও মাইক্রোবাস নিয়ে লাউয়াছড়া বনে চিত্রগ্রহণের জন্য প্রবেশ করে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের নিজস্ব প্রোডাকশন হাউজের লোকজন৷
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের কোমল পানীয় “পাওয়ার এনার্জি ড্রিংক” এর চিত্রগ্রহণের জন্য তারা লাউয়াছড়ায় এসেছিলেন৷ এই নিয়ে সামাজিক সংঘঠনে ও দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় উঠে কারা দিলো এমন অনুমতি।