শ্রীমঙ্গল মুসলিমবাগের এই মাঠটি হাজারো শিশু-কিশোরের ভরসাস্থল

    0
    358

    নিজস্ব প্রতিনিধি:  মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা শহরের অদূরে মুসলিমবাগ আবাসিক এলাকার সম্মুখস্থ এই খেলার মাঠটি দশ গ্রামের হাজারো শিশু-কিশোরের খেলাধুলার জন্য একমাত্র ভরসাস্থল।

    খেলাধুলা ও শরীরচর্চা বিহীন শিশু-কিশোরদের জীবন মারাত্মক অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হয়। বর্তমান সময়ে ডিজিটাল জগতে গেম আর মুভিতে শিশু থেকে যুব শ্রেণি ডুবে যাচ্ছে আলস্য জগতে।

    অন্যদিকে হাতছানি দিচ্ছে মাদকের বাহারি ছলনা অপরদিকে জনসংখ্যা বাড়ছে ; ব্যবহারের জমি কমে আসছে , ফলে শিশু-কিশোরেরা বেড়ে ওঠার জন্য যে খেলাধুলা ও শরীরচর্চার প্রয়োজন তা ব্যাহত হচ্ছে সর্বস্থানে।

    শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে আগের মতো আর খেলার মাঠ দেখা যায় না। এমন অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে যা প্রতিষ্ঠানের উঠোনের মধ্যে সীমাবদ্ধ । মুসলিমবাগ এলাকার জন্য এর ব্যতিক্রম নয় এই এলাকায় আট-দশটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের কোন নিজস্ব মাঠ নেই এটি ছাড়া।

    প্রায় এলাকার সরকারি খাসজমি বিভিন্ন কলাকৌশলে  নিজেদের দখলে নিয়ে যাচ্ছে ভূমি খেকোরা। এখন আর ইচ্ছা করলেই কোন এলাকায় একটি শ্মশান, কবরস্থান, খেলার মাঠ গড়ে তোলা সম্ভব নয়।

    অতীতের দানশীল ব্যক্তিদের মত দারাজ দিল এখনকার সমাজে অনুপস্থিত।

    পাহাড় থেকে হাওড় পর্যন্ত শত শত একর খাস জমি সিন্ডিকেটের দখলে, নানা কৌশলে গ্রাস করে ফেলেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও ভাগ বাটোয়ারায় কম এসেছে । বেড়েছে মানুষ কমেছে জমি,এর মধ্যেও প্রাণ খুলে মুক্ত হাওয়ায় বেঁচে থাকার সংগ্রাম করে যাচ্ছে হাজার শিশু কিশোর।

    এরই মধ্যে কখনো কখনো অজানা শক্তি চেপে ধরে মুক্ত হাওয়ায় ঘুরে বেড়ানো প্রজন্মের টুটি।

    সম্প্রতি শ্রীমঙ্গল শহরের অদূরে মুসলিম ভাগ এলাকায় দেখা গেছে চা-বাগানের পাদদেশে একটি খেলার মাঠ। মাঠটি জরাজীর্ণ হলেও প্রতিদিন শতাধিক শিশু-কিশোরদের প্রাণভরে খেলতে দেখা গেছে। যা আদৌ এ অঞ্চলের অন্যান্য এলাকায় খুব একটা দেখা যায় না।

    মাঠ নেই শিশু-কিশোররা পাড়া-মহল্লার রাস্তায় আর বাড়ির উঠোনে কেউবা ছাদের উপরে সামান্য পরিসরে খেলাধুলা করার চেষ্টা করলেও এতে তাদের তৃপ্তি মিটে না বরং জীবনের ঝুঁকি বেড়ে যায় বহুলাংশ।

    কিন্তু কে দিবে তাদের তৃপ্তি যেখানে বনভূমি দখলে, রেলওয়ে সম্পদ দখলে, শহরের আনাচে-কানাচে খোলা জায়গা এখন আর পাওয়া খুব দুষ্কর ।

    সরেজমিনে দেখা গেছে মুসলিম ভাগ এলাকা থেকে তার আশপাশের আরও প্রায় দশটি এলাকার অর্থাৎ জালালিয়া রোড, কালীঘাট রোড, সিন্দুরখান রোড, আফতাব উদ্দিন সড়ক, মুসলিমবাগ, মুসলিমবাগ পূর্ব পাড়া, পশ্চিমপাড়া, খাসগাঁও সহ মাঠটি ঘিরে আশপাশ ও অন্যান্য এলাকার বেশ কয়েকটি স্কুল, মাদ্রাসা ও রয়েছে যাদের একমাত্র শেষ ভরসাস্থল এই খেলার মাঠটিই।
    চা বাগান কোম্পানির শুভদৃষ্টি না থাকলে একসময় এই অঞ্চলের শিশু-কিশোরদের প্রাণভরে নিঃশ্বাস ফেলার জায়গা থাকবেনা সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে বাগান কর্তৃপক্ষ খেলার মাঠের আশেপাশে প্লান্টেশন করতে চাচ্ছে এমনকি সরেজমিনে দেখা গেছে এর আশপাশের কিছু এলাকা প্লান্টেশন করে ফেলেছে। এলাকার যুবক, কিশোর ও বয়স্কদের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্বাধীনতার পর থেকে এ জায়গাটি খালি ছিল এখানে এ অঞ্চলের শিশু-কিশোরেরা খেলাধুলা করে আসছে । এই মাঠের সাথে তাদের প্রাণের সম্পর্ক রয়েছে একসময় যারা এখানে খেলাধুলা করেছে তারা আজ বৃদ্ধ।

    এমতাবস্থায় প্রায় অর্ধশত বছর এর ঐতিহাসিক এই মাঠটিকে রক্ষা করার জন্য একদিকে বাগান কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি প্রয়োজন অন্যদিকে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্যোগের মাধ্যমেই  শিশু-কিশোরদের স্বপ্ন বেঁচে যেতে পারে, বেঁচে যেতে পারে একটি দুঃস্বপ্ন টেকের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের।

    যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা শিশু-কিশোরের মানসিক বিকাশের জন্য বিভিন্ন জায়গায় বিনোদনের জন্য বা খেলার মাঠের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন এবং যুব সম্প্রদায়কে বিভিন্ন আসক্তি ও সামাজিক অবক্ষয় থেকে বিরত রাখার জন্য ঘর বন্দী না হয়ে বিভিন্ন খেলার সাথে সম্পৃক্ত থাকার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন। অতীত থেকে এই খেলার মাঠে ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টসহ বিভিন্ন খেলার আয়োজন হয়ে আসছে এবং উক্ত টুর্ণামেন্টে শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন এলাকা থেকে এমনকি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্রীড়াপ্রেমীদের অংশগ্রহণে পরস্পরের প্রতি সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে। যদি এই মাঠ না থাকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরের স্বপ্ন অধরাই থেকে  যাবে।

    এলাকাবাসীর দাবি দীর্ঘ চল্লিশ বছরের অধিক কাল ধরে পরম্পরা খেলাধুলা চলে আসছে যে মাঠে সেটিকে যথাযথ কর্তৃপক্ষ যেন রক্ষায় আমাদেরকে সহযোগিতা করেন এটা আমাদের প্রাণের দাবী। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দাবি’ ।

    উল্লেখ্য কোন কারণে যদি এই খেলার মাঠটি বন্ধ হয়ে যায় শত বছরেও এই অঞ্চলে খেলার মাঠ তৈরি করা সম্ভব নয় ,যার শেষ পরিণতি হবে শিশু-কিশোর যুবরা, খেলাধুলা ভুলে গিয়ে নেশায় মেতে উঠবে এতে করে সমাজের এবং রাষ্ট্রের এমনকি অত্র অঞ্চলের সামাজিক অবকাঠামো ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম রয়েছে। খেলাধুলা বন্ধ হয়ে গেলে শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হবে নিশ্চয়ই বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিপাত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ সময়ের দাবি সচেতন মহলের।