শ্রীমঙ্গলে শেখ রাসেল শিশু উদ্যানটি কবে আলোর মুখ দেখবে ?

    0
    259

    সাদিক অাহমেদ,নিজস্ব প্রতিনিধিঃ অযত্নে অবহেলায় ও সংস্কারের অভাবে দিনের পর দিন অবহেলিত ভাবে পড়ে অাছে শ্রীমঙ্গলের একমাত্র শিশু বিনোদন কেন্দ্র শেখ রাসেল শিশু উদ্যান।শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনের হাত ধরে ১৯৮৪ সালে শ্রীমঙ্গলের ঐতিহ্যবাহী ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ সংলগ্ন প্রায় অাড়াই একর জায়গা জুড়ে স্থাপিত হয় শ্রীমঙ্গলের একমাত্র এই শিশু বিনোদন কেন্দ্রটি।

    স্থানীয় কয়েকজন প্রবীনদের সাথে কথা বলে জানা যায়,পার্কটি প্রতিষ্ঠার পর শ্রীমঙ্গলের জনগণের মধ্যে তৎকালীণ বেশ উদ্দীপনা বিরাজ করেছিলো।প্রতিষ্ঠা কালীন সময়ে উদ্যানটিতে শিশুদের জন্য বেশ কয়েকটি রড সিমেন্ট দিয়ে তৈরি বেঞ্চ স্থাপন করে কতৃপক্ষ।পার্কটিতে একটি পুকুর খনন করা হয়েছিলো।পার্কটির নাম তৎকালীণ শেখ রাসেল শিশু উদ্যান ছিলো না বলে অামাদের জানান তারা।পরবর্তীতে অাওয়ামীলিগ সরকার ক্ষমতায় এলে পার্কটির নামকরণ করা হয় “শেখ রাসেল শিশু উদ্যান”।
    স্থানিয়রা আক্ষেপ করে বলছে যে,১৯৮৪ সালে স্থাপিত ও প্রতিষ্ঠিত এই পার্কটিতে বর্তমান ২০১৮ সাল অর্থাৎ প্রায় ৩৪ বছর ধরে লাগেনি কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া।
    সরেজমিনে পার্কটি ঘুরে দেখা যায় সম্পূর্ণ বেহাল দশায় পড়ে অাছে এটি।পার্কটির মুল গেটটিও প্রায় নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।পার্কটির ভেতরের পুকুরটি ময়লা অাবর্জনা ও কচুরিপানায় ভরে সম্পূর্ণ অন্যরকম এক বিশ্রী পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে পার্কটিতে।অারোও লক্ষ্য করা যায় পার্কটি সংলগ্ন শ্রীমঙ্গল জয়নগর অাবাসিক এলাকার বসত বাড়ির ময়লা আবর্জনা ও উচ্ছিষ্ট এলাকাবাসীরা পার্কটির পশ্চিম দিকে পুকুরের পাশে ফেলছে।পার্কটির ভেতরের মাঠটিতে ঘাসগুলো বড় হয়ে ও বৃষ্টির পানিতে প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।মুলত শিশুদের জন্য স্থাপিত হলেও দিন রাত ২৪ ঘন্টা পার্কটির মুল গেটে তালা ঝুলে থাকে।যে কারণে শিশুরা পার্কটিতে খেলাধুলা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
    স্থানীয় জনগণ অভিযোগ করে বলেন প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেও কোনো লাভ হয়নি।নানরকম প্রতিশ্রুতি দিলেও দিনের পর দিন অবহেলিত ভাবেই পড়ে অাছে পার্কটি।
    বর্তমান শিশু বান্ধব অাওয়ামীলিগ সরকারের আমলেও উন্নয়নের বিন্দুমাত্র লেশ খুঁজে পাওয়া যায়নি  শেখ রাসেল নামের এই পার্কটিতে।অন্যদিকে একটি কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবনের কয়েকটি কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে পার্কটির সীমানার ভেতরে অথচ কোনো ধরনের শিশু বিনোদন ব্যবস্থা নেই।
    এ ব্যাপারে উপাধ্যক্ষ অাব্দুস শহীদ কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইমতিয়াজ অাহমেদের সাথে কথা বললে তিনি বলেন “শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন মানুষের কল্যানের জন্য করা হয় পার্কও তেমনি বিনোদনের জন্য করা হয়।এটা অামাদের অস্থায়ী ক্যাম্পাস।এটা পৌরসভার দায়িত্বে।যেহেতু এটা পৌরসভার দায়িত্বে তাই পৌরসভার অনুমতি সাপেক্ষে এটার চাবি সংরক্ষণ বা পার্কের দেখভাল করছি অামরা।মূলত পৌরসভার পক্ষে এটা কলেজ এডিশনাল কাজ করছে।এখানে পৌরসভার কোনো ওয়াচম্যান কিংবা দারোয়ান নেই।
    তিনি অারও বলেন ”এটা অামাদের অস্থায়ী ক্যাম্পাস।অামরা অচিরেই এখান থেকে চলে যাব।ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার্থে অামাদের নিজস্ব অর্থায়নে পৌরসভার সাথে স্যাটেলম্যান্টের মাধ্যমে কয়েকটি অস্থায়ী কক্ষ খোলা হয়েছে।শিশুপার্ক এটাও মানুষের বিনোদনের জায়গা এটাও দরকার।”

    ঘুরে দেখা গেছে,পার্কটির ভেতরে বর্তমানে একটি মুক্তমঞ্চ রয়েছে।যেটি প্রতিবছর বিজয় মেলা ও বৈশাখী মেলার সময় হলে মঞ্চটি সংস্কার করা হয়।প্রতিবছর এই সময়টাতেই পার্কটি কিছুটা সংস্কার করা হয় মেলার উপযোগী করার জন্য।মেলা ব্যতিত অন্যান্য সময় পার্কটি সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়।
    সম্পূর্ণ পার্কটি ঘুরে দেখা যায় পার্কটির পশ্চিম পাশে জয়নগর অাবাসিক এলাকার মুড়ে দেয়াল ভেঙে সুড়ঙ্গের মতো একটি রাস্তা করা হয়েছে।
    স্থানীয়দের সাথে এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা  পার্কের সীমান্তবর্তি কলেজের একজন দাড়োয়ানের উপর অভিযোগ এনে বলেন”নিজের গরু ছাগলকে ঘাস খাওয়ানোর জন্য সে নিজের সুবিধার জন্য দেয়াল ভেঙে রাস্তা তৈরি করেছে এখানে।”
    এ ব্যাপারে কলেজ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইমতিয়াজ অাহমেদ এই প্রতিনিধিকে অাশ্বাস দেন এবং বলেন “অামাদের কলেজের দারোয়ানের উপর অানিত অভিযোগ প্রমাণ হলে অবশ্যই অামরা সেটা দেখবো।
    পার্কের সম্পূর্ন বিষয় নিয়ে সদ্য বিদায়ী শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবাশশেরুল ইসলাম এর সাথে ফোনালাপে গত (৯ সেপ্টেম্বর)  জানতে চাইলে তিনি জানান “এটা সম্পর্কে অামার বক্তব্য ক্লিয়ার। অামাদের জানামতে এটা পৌরসভা কতৃক একটা শিশু পার্ক করার কথা ছিলো।এটুকু অামরা জানি,এর বাইরে কিছু জানিনা।এটা সরকারি খাস জমি।
    শেখ রাসেল শিশু উদ্যানের কতৃপক্ষ বর্তমানে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার কিনা এ ব্যাপারে তিনি বলেন, “না এটা অামাদের জমি।সরকারী খাস জমি।কোনো একসময় এখানে সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছিলে এবং পৌরসভা কতৃক পার্ক করার কথা ছিলো।যেহেতু এটা পৌরসভার এরিয়ার ভিতরে তাই যেকোনো বিনোদন কেন্দ্র  করার দায়িত্ব হচ্ছে পৌরসভার।”
    শিশু পার্ক অর্থাৎ শিশু বিনোদন কেন্দ্র যেখানে শিশুদের বিনোদনের জন্য থাকার কথা ছিলো বিভিন্ন উপকরণ সেখানে অযত্নে অবহেলায় কালক্রমে হারিয়েই যাচ্ছে শ্রীমঙ্গলের এই পার্কটি।এভাবে আর কত কাল অযত্ন অার অবহেলায় পড়ে থাকবে এটি ? কবে আলোর মুখ দেখবে শেখ রাসেল নামের এই শিশু উদ্যানটি প্রশ্ন বিভিন্ন অভিভাবকের।